স্বদেশী আন্দোলনের অগ্নিযুগ সবে শেষ হয়েছে। তখনো বাঙ্গালি এত বিলাসী ছিল না। আজকের এই অকর্মণ্যতা, মানসিক দুর্বলতা আর নিস্তেজ স্বভাবও ছিল না। লড়াইটা ছিল বীর ধর্ম। কারণ জাতিটা বিশ্বাস করত, যুদ্ধ এড়িয়ে গিয়ে শান্তি আসে না। শান্তি আনতে গেলে যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় পেতে হয়। প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে হয়। তাহলেই দু’পক্ষের শান্তি আসে। পরাজিতের জন্য শ্মশানের শান্তি এবং জয়ীর জন্য শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ। বাঙ্গালি তখন রক্ত দেখে ভয় পেত না। ক্ষণে ক্ষণে ‘এত রক্ত কেন’ বলে চমকে উঠত না। সুশীলতা তখনো আমাদের মনের ভিতর এইভাবে গেড়ে বসেনি। প্রয়োজনে নির্মম হতে লজ্জা পেত না বাঙ্গালি। কারণ, নৃশংসতাকে হারাতে গেলে আরও বেশি নৃশংস হতে হয়। এই দৃঢ় চরিত্রের জন্যই সেদিন কলকাতা শহরটাকে ভারতের মধ্যে ধরে রাখা গেছিল।
১৯৪৬ সালটা ছিল বাঙ্গালির ভাগ্য নির্ধারণের বছর। ১৯০৫-এ যে বঙ্গভঙ্গ আটকে গিয়েছিল বাঙ্গালির অসীম চেষ্টায়; দেশভাগের ঠিক আগের বছর, কলকাতা-সহ বঙ্গপ্রদেশের পুরোটা দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে মুসলিম লিগ। আগস্ট মাসে কলকাতার হিন্দু বিরোধী দাঙ্গা এবং অক্টোবরে নোয়াখালিতে হিন্দু গণহত্যা এই দুটোই ছিল এক ধরনের শক্তি পরীক্ষা। দুটোয় জিতলে পুরো বাঙ্গলা আর একটায় জিতলে অর্ধেক বাঙ্গলা। যুদ্ধজয়ের এটাই হতো পুরস্কার। নোয়াখালিতে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও কলকাতার লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছিল বাঙ্গালি সমাজ। তবে জেতাটা সহজ ছিল না। লিগ নেতারা যখন কলকাতার ময়দান থেকেই প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেয়, তখনও বাঙ্গালির চৈতন্য হয়নি। তারা ভেবেছিলেন, এটাও বুঝি এক ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন। কংগ্রেসি রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ পরিচয় থাকার সুবাদেই হয়তো এরকম ধারণা তৈরি হয়। তাই আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচবার কোনো ব্যবস্থাই তারা করেননি। কিন্তু কংগ্রেস আর মুসলিম লিগ যে একেবারেই সমগোত্রীয় নয়, সেটা প্রথম টের পাওয়া গেল ১৬ আগস্ট ১৯৪৬-এ।
বাঙ্গালি এবং অন্যান্য হিন্দুদের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে কখনো কোনো অবস্থাতেই হিন্দুরা প্রথমে আক্রমণ করে না। আগে আক্রান্ত হয়, বিরাট ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে, তবেই পালটা আক্রমণে যায়। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। শুর তিনদিন কলকাতার রাস্তায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। জেহাদি গুন্ডার দল। বাঙ্গলার শাসন ক্ষমতায় তখন মুসলিম লিগের সরকার। পুলিশ-প্রশাসন সবই তাদের হাতে। তাই । জেহাদি প্রশাসন যোগসাজশে অবাধে চলতে লাগল হিন্দু গণহত্যা। কেশোরাম কটন মিলসের ৩০০ ওড়িয়া শ্রমিকের গলা হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা হয়েছে। বিহারি গয়লাদের ধরে ধরে কচুকাটা করা হয়েছে। হিন্দু মেয়েদেহমৃতদেহ উলঙ্গ করে ঝোলানো হয়েছিল মাংস রাখার হুকের উপর। রাস্তায় রাস্তায় চলছিল উন্মত্ত জিহাদিদের হিংস্র উল্লাস।
প্রথম কদিনে প্রায় ১৫,০০০ হিন্দু নিহত ও নিখোঁজ হন। আহত, ধর্ষিত, লুণ্ঠিত আরও বহু। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে কলকাতাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন ব্যায়ামবীর গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তার ব্যায়াম সমিতিতে প্রায় ৮০০ যুবক ছিল। এসব যুবকদের নিয়েই তিনি গঠন করেন হিন্দু প্রতিরোধ বাহিনী। হিন্দু যুবকদের প্রতি তার আদেশ ছিল— ‘ওরা একটা মারলে তোমরা দশটা মারবে।” জেহাদি তাণ্ডব থামাতে উৎসাহ দেবার জন্য যুগল ঘোষ আরও ঘোষণা করেন— ‘হাফ মার্ডার করলে ৫ টাকা, ফুল মার্ডার করলে ১০ টাকা’! প্রতিরোধ শুরু হতেই কলকাতার সমস্ত বাঙ্গালি ব্যায়াম সমিতি এবং আখড়াগুলো স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে শহর বাঁচাতে ঝাপিয়ে পড়ে। কলকাতার শিখ সমাজ, বিহারি গোয়ালারাও আত্মরক্ষার্থে গোপাল মুখার্জির দলে যোগ দেন।
তখনকার বাঙ্গালি একেবারে অস্ত্রহীন ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কলকাতায় আসা মার্কিন সেনাদের থেকে কেনা বন্দুক অনেকের সংগ্রহে ছিল। এমনকী, এসব বন্দুকের কালোবাজারি এবং অ্যাসিডের ব্যবসাও ছিল বাঙ্গালিদের দখলে। বোতলে পেট্রোল ভরে কীভাবে পেট্রোল বোমা বানাতে হয়, কীভাবে দেশি পেটো বানাতে হয়, অগ্নিযুগের এসব শিক্ষা বাঙ্গালি ভোলেনি। অ্যাসিড, পেট্রোল, মার্কিন বন্দুক ও পেটো, এসব নিয়ে শুরু হলো জেহাদিদের প্রতিরোধ। পুলিশ, প্রশাসন, সরকার সবাই যখন বিপক্ষে, গভীরভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটা জাতি উলটে দিয়েছিল মুসলিম লিগের সব হিসেব-নিকেশ। শুরুটা ওরা করেছিল ঠিকই। তবে শেষটা হিন্দুদের হাতেই হয়েছিল।
সেদিনকার বাঙ্গালির সাফল্যের রহস্য ছিল তিন ‘ব’-এর সঠিক ব্যবহার। বুদ্ধি, ব্যায়াম ও ব্যবসা। আজকের বাঙ্গালির জাতীয় দুর্বলতার পিছনেও ঠিক তিনটে ‘ব’ রয়েছে। বিশ্ব-মানবতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও বাবুসোনা সংস্কৃতি। বিশ্বমানবতা বাঙ্গালিকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে, পৃথিবীর সমস্ত সংস্কৃতি, জাতি এবং ধর্মই একদম একরকম। কেউ কারো থেকে ভালো বা খারাপ নয়। বাঙ্গালি বাবা-মায়েরা খুব একটা ইতিহাস সচেতন নন। তারা ভুলে গেছেন মুসলিম লিগের করা কলকাতার হিন্দু নরসংহার, নোয়াখালির হিন্দু গণহত্যা। পূর্ববঙ্গীয় উদ্বাস্তুদের বংশধররা ভুলে গেছেন, কাদের জন্য, কী কারণে বাপ-ঠাকুরদার ভিটে ছেড়ে এই পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসতে হলো। আমাদের সরকার, শিক্ষা ব্যবস্থাও আমাদের এই ইতিহাস জানানোর কোনো ব্যবস্থা করেনি। আমাদের সমাজ আমাদেরকে চিনতে দেয়নি বাঙ্গালি সংস্কৃতির সঙ্গে আরবি সংস্কৃতির পার্থক্যগুলো। আমাদের গণমাধ্যমগুলোও পেট্রোডলারের লোভে ক্রমাগত এই সংক্রান্ত মিথ্যাচার করে চলেছে। প্রতিটা বাঙ্গালি ভুল শিখছে এবং বিভ্রান্ত হয়েছে।
৩৪ বছরের বাম-শাসন বাঙ্গালিকে আরও শিখিয়েছে যে জাতীয়তাবোধ খুব খারাপ জিনিস। এমনকী অন্যায়। দেশকে নিয়ে গর্ব করার বা দেশের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার আসলে কোনো দরকার নেই। এসবের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। যাতে দেশের কোনো বিপদে-আপদে আমরা দেশরক্ষায় রুখে না দাঁড়াই। এমন ভাবে মগজধোলাই চলতে থাকলে, আমরা নিজেরাই একদিন দেশটাকে, রাজ্যটাকে টুকরো টুকরো করে রেখে দেব। দেশ, রাজ্য এগুলো নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় একটা গুরুত্বহীন জিনিস হয়ে দাঁড়াবে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিয়ে বাঙ্গালি হয়তো রাজ্যটাকে এমন সব সংস্কৃতির মানুষ দিয়ে ভরিয়ে তুলবে, যারা ভিতরে ভিতরে এই রাজ্যটাকে লুটতে ও ধ্বংস করতে চায়। বিশ্বমানবতা আমাদেরকে এরকমই আত্মঘাতী কাজে ব্যবহার করতে চায়।
বিশ্বমানবতা আসলে এক ধরনের সাম্রাজাবাদী ধারণা। শক্তিশালী জাতিগুলো নিজেদের সংস্কৃতি ও ধ্যান ধারণা দুর্বল জাতিগোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেয়। এভাবে শক্তিশালী জাতির সংস্কৃতি গ্রহণ করে দুর্বল জাতিগুলো পরনির্ভর এক মানসিক দাসে পরিণত হয়। এই বিশ্বমানবতাই পরোক্ষে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতাকে বৈধতা দিয়েছে। জাতি, দেশ, রাষ্ট্র ইত্যাদির ধারণা যখন কোনো সমাজ অন্যায্য বলে ধরে নেয়, ব্যক্তির ইচ্ছা, ব্যক্তির লাভই সেখানে একমাত্র মোক্ষ হয়ে ওঠে। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সামাজিক লাভ, জাতীয় স্বার্থকে নির্দ্বিধায় বলিদান দেওয়া যায়। এভাবেই বাঙ্গালি শিখেছে গা বাঁচিয়ে চলতে, দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যেতে। কারুর সাহায্যে এগিয়ে না আসতে, কারুর সমস্যায় পাশে না দাঁড়াতে। প্রতিটি বাঙ্গালি পরিবার একেকটি ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা শিক্ষার কারখানা। বাঙ্গালি বাড়িতে যখন কোনো শিশুর জন্ম। হয়, ছোটো থেকেই তাকে শেখানো হয় সমস্ত রকম ঝঞ্ঝাট থেকে দূরে থাকতে। অন্যায় দেখলেও প্রতিবাদ না করতে। প্রতিবাদ করলে যদি কোনো সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে হয়! অন্য সমস্ত জাতি যখন একতাবদ্ধ হচ্ছে, বাঙ্গালি তখন একে অপরের থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। বাঙ্গালি যতই একাই একশো হোক, একশো বাঙ্গালি কিন্তু কিছুতেই এক হতে পারে না। আর একলা মানুষ যত বীর, যত মহানই হোক না কেন, তার সাধ্য সীমিত। সমষ্টির কাছে একা মানুষ অসহায়। সেই কারণেই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ভুলে জাতি হিসেবে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়া এত প্রয়োজন। যে কোনো বিপদে স্বজাতির পাশে দাঁড়ানো দরকার। যাতে নিজের বিপদেও অন্যদের পাশে পাওয়া যায়।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমাদের বাঙ্গালি মায়েরা সন্তান অন্তপ্রাণ। নিজের আদরের শিশুটিকে নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনার শেষ নেই। উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে, হাসতে-মিশতে সদাসর্বদা শিশুটির চারপাশে ঘুরে বেড়ায় এক অদৃশ্য মায়ের আঁচল। যতদিন সম্ভব শিশুটিকে সমস্ত দায়িত্ব, সমস্যা থেকে আগলে রাখা হয়। জাতির কাজ তো অনেক পরের কথা, তার নিজের সব কাজও তাকে করতে দেওয়া হয় না। যেহেতু মায়ের সঙ্গে তার সন্তানের বয়সের পার্থক্য চিরকাল একই থাকে, ফলে মায়ের কাছে তার সন্তানটি কখনোই বড়ো হয়ে উঠতে পারে না। সে চিরকাল মায়ের ‘বাবুসোনা’ হয়েই থেকে যায়। এভাবে সারাজীবন মায়ের ছত্রছায়ায় বড়ো হবার কারণে বাঙ্গালি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব কখনোই পূর্ণতা পায় না। ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগই দেওয়া হয়নি। সন্তানস্নেহে অন্ধ মায়েরা এটা ভুলে যান যে, সমস্যা জীবনের অন্যতম অঙ্গ। সমস্যার মোকাবিলা করতে করতেই মানুষ শক্ত-সমর্থ হয়ে ওঠে। বাঙ্গালি মায়েদের নিজের আঁচল বাড়িয়ে আদরের বাবুসোনাটিকে জীবনের সমস্ত ব্যথা-বেদনা থেকে আড়াল করার চেষ্টা সেই শিশুটির যতটা ক্ষতি করে ততটা ক্ষতি আর কিছুই করে না। দুঃখ-যন্ত্রণা এগুলো জীবনের অভিশাপ নয়, জীবনের শ্রেষ্ঠ দান। এগুলোর সঙ্গে যুঝতে যুঝতেই মানুষ নিজের দুর্বলতাগুলো চিনতে পারে, কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে।
কিন্তু মায়ের যে বাবুসোনাটিকে জীবনে কোনোদিন কোনো দায়িত্ব নিতে হয়নি, সমস্ত বিপদ থেকে আড়াল করে এসেছেন তার মাতারানি, সেই ছেলে বা মেয়েটির দুর্বল ব্যক্তিত্বের দায় আসলে কার? পড়াশোনার ক্ষতি হবার অজুহাতে যার বাবা ছেলেকে কোনোদিন নিজের ব্যবসায় সাহায্য করতে ডাকেননি; সে ছেলের বৈষয়িক বুদ্ধি কোন দৈবশক্তি এসে পাকিয়ে দিয়ে যাবে? যে ছেলেটিকে কোনোদিন কোনো পাড়ার কাজে হাত লাগাতে দেওয়া হয়নি, সমস্ত সামাজিক কাজে শ্রমদান করা থেকে যাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে, কীভাবে এসব ছেলেরা দলবদ্ধ হতে শিখবে? দল তৈরি হয় সমমনস্ক মানুষের সঙ্বদ্ধ ইচ্ছায়। যার দুনিয়া আবদ্ধ বই ও খাতায় এবং ইন্টারনেটের পাতায়, সে দল গড়ার মতো বাকি মানুষগুলো পাবে কোথায় ? যাকে কোনোদিন বাবার সঙ্গে রবিবারের বাজারে যেতে হয়নি, পাছে মাছ কাটা, মুরগি কাটার নৃশংসতা’ দেখে তার মনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, সেই বাবুসোনারা যে চিরকাল শিশুর মতো নিস্পাপ এবং ফুলের মতো কোমল হয়ে থাকবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়? সহ্যশক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হবার অন্যতম অঙ্গ। কারণ ছোটো থেকে বড়ো হওয়াটা কেবল শরীরে ঘটে না, মনের ভিতরেও ঘটে। মধ্যবিত্ত বাড়ির বাঙ্গালি বাবুসোনারা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আড়ে বহরে বাড়ে ঠিকই, মনের বৃদ্ধি কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ থাকে। জীবনের সবরকম অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে রাখলে মানসিক বিকাশের গতি সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে যায়। সমাজ পায় একটা জড়দগব ডিগ্রিবোঝাই বাবুমশাই, যে নিজের ছাড়া অন্য কারুর কোনো কাজে আসে না।
বাঙ্গালির মনের এই বিশ্বমানবতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, শত্রুকে ভ্রাতৃজ্ঞান করার ভাবনা, সর্বধর্মসমন্বয়ের স্বপ্নালু আদর্শ, এর সবটাই মূলত বাস্তব থেকে পালাতে চাওয়ার ফল। জগৎটা আসলে যেমন, বাঙ্গালি তাকে তেমনভাবে দেখতে চায় না। বরং তার কল্পনায় জগৎটাকে সে যেরকম ভাবে, ঠিক সেভাবেই অন্যদের সেটা দেখাতে চায়। এই আবেগ সর্বস্বতাই আমাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজনিয়ন্ত্রণের ভূমিকা নেওয়া তো দূরের কথা, নিজের জীবন নিজে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। যত দ্রুতগতিতে বাঙ্গালির নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন ঘটছে, ততই দুর্বার গতিতে পশ্চিমবঙ্গের দিকে দিকে আবার মাথা তুলছে। জেহাদি অপশক্তি। আজকের এই দুঃসময়ে খুব কম বাঙ্গালি পাওয়া যাবে, যাঁরা বাস্তবটা দেখতে এবং দেখাতে ভয় পান না। ধ্বংসের খুব কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একটা জাতিকে, যারা আরও একবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস জোগাতে পারেন। জাতীয় জীবনে সমস্যা আসবেই। জীবন যত কঠিন হয়, জাতি ততই নিজের সেরাটা দিতে বাধ্য হয়। কঠিন জীবনই সার্থক জীবন।
স্মৃতিলেখা চক্রবর্তী