আমরা যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি সংসদে উপস্থিত করেছিলাম, তখনই আমরা বলেছিলাম এই বিলটি সেই বিপর্যস্ত শরণার্থী বন্ধুদের কষ্টলাঘব করার জন্যই তৈরি। এই বিলটি প্রস্তুত করার পর থেকে সংসদে পেশ করা পর্যন্ত সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বিলটিকে নিয়ে চর্চা করেছেন এবং বারবার তারা বলেছেন এই বিলটি ভারতীয় সংবিধানের ধারা ১৪ উলঙ্ঘন করেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বারবার বলছি এই বিলটি প্রস্তুত করার এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সমস্ত শরণার্থীর যাতনাপূর্ণ নরকযন্ত্রণার অবসান ঘটানো। আমি আজ খুব আনন্দিত যে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী যারা ভারতবর্ষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের দেশে এসেছেন তাদের নাগরিকত্ব তথা সংবিধানিক সম্মান দেওয়ার কাজ আমরা এই বিলের মাধ্যমে করতে চলেছি। যখন এই বিলটি সংসদে পাশ হয়ে যাবে এই নরকযন্ত্রণা থেকে তাদের মুক্তি দিতে পারব। এই বিলটির সম্বন্ধে অনেক অপপ্রচার ও ভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমি চাই না এই সদনে চর্চার মাধ্যমে ভারতবর্ষের কোনো স্থানে কোনো রূপ ভ্রান্তি। প্রচারিত হোক। আমি আপনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সংসদকে এবং সংসদের মাধ্যমে সারা দেশকে এটা জানিয়ে দিতে চাই যে কোনো অবস্থাতেই এই বিল অসাংবিধানিক নয়। চর্চা চলাকালীন। অনেক সাংসদই বলেছেন, এই বিলটি ধারা-১৪-কে উলঙ্ন করেছে। ধারা-১৪-তে যে সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে তা যুক্তিসঙ্গত শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে আইন বানালে উলঙ্ন হয় না। এটাকে বিশ্লেষণ করার জন্য আমাদের পুরানো ইতিহাসে যেতে হবে তাহলেই আমরা বুঝতে পারব কেন এই বিল। অসাংবিধানিক নয়।
যদি এই দেশের বিভাজন ধর্মের ভিত্তিতে না হতো, তাহলে এই বিলের প্রয়োজনীয়তা ছিল না। এই কঠোর বাস্তব সত্যটিকে সংসদে উপস্থিত সমস্ত সদস্যকে মেনে নিতে হবে। আপনি এটিকে স্বীকার না করে ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে পারবেন না। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের ফলে যে স্থানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেই স্থান পাকিস্তান নামে পৃথক দেশে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এবং বাকি অংশ ভারত হিসেবে রয়ে যায়। পরে পাকিস্তান ভেঙে পূর্বপাকিস্তান বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর মাঝখানে একটি বিভীষিকা এসেছিল যার মধ্য দিয়ে দুই দেশে শরণার্থীরা মারদাঙ্গা, লুট, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন—বহু পরিবার এই নরকযন্ত্রণা সহ্য করেছেন। কিন্তু এর পরে নেহরু-লিয়াকত চুক্তির ফলে ১৯৫০ সালে দিল্লিতে এটি ঠিক হয় যে দুইদেশ নিজের সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। আমি এইসব বর্ণনা করছি শুধুমাত্র এই জন্যই যে এই বিলটির পৃষ্ঠভূমি হলো এই ঘটনার প্রভাব। সেই সময় দুইদেশের সরকার পরস্পরকে কথা দিয়েছিল যে সেই দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, পার্সি এদের সংরক্ষণ করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ১৯৫০ সালের নেহরু-লিয়াকত চুক্তি শুধু খাতাকলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।
যে তিন দেশের সংখ্যালঘুদের আমাদের দেশে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে ঠিক করেছি সে বিষয়ে সংবিধান নিয়ে একটু চর্চা করতে চাই এবং তাদের বর্তমান স্থিতি আপনাদের জানাতে চাই। আফগানিস্তান তাদের ধর্ম। ‘ইসলামিক অব আফগানিস্তান’অর্থাৎ ওখানে ইসলামকে ওই রাজ্য ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান-ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান’অর্থাৎ পাকিস্তানের রাজ্য ধর্ম হলো ইসলাম। বাংলাদেশ যখন তৈরি হয় তখন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ছিল কিন্তু ১৯৭৭ এবং ১৯৮৮ সালে বদল করে রিপাবলিক অব ইসলাম করে দেওয়া হয়েছে। এই তিন দেশেরই ধর্ম ইসলাম। ওদের সংবিধানে তা লেখা আছে। এই তথ্যগুলি দেওয়া জরুরি, কারণ এর থেকেই জানা যায় ওই দেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা।
এই চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের ঘটনাবহুল ইতিহাসে পাকিস্তানে ১৯৪৭ সালে সংখ্যালঘুরা ২৩ শতাংশ ছিল যেটি ক্রমশ হ্রাস পেয়ে ২০১১-তে এসে দাঁড়িয়েছে শুধুমাত্র ৩শতাংশ। পূর্ববঙ্গে ছিল ২২ শতাংশ, ২০১১-তে হয়ে দাঁড়াল ৭.৮ শতাংশ। কোথায় গেলেন এঁরা? হয়তো তাঁদের ধর্ম পরিবর্তন হয়ে গেছে নয়তো তাদের মেরে ফেলা হয়েছে অথবা ভারতে পালিয়ে এসেছেন। আমি প্রশ্ন করতে চাই, যাঁরা বিরোধিতা করছেন তাদের, কী দোষ ছিল ওই দেশের সংখ্যালঘুদের তাদের জীবনকে নরকে পরিণত করা হয়েছিল? আমরা চাই তাদের অস্তিত্ব ফিরিয়ে দিতে এবং সম্মানের সঙ্গে তাঁরা জীবনযাপন করুক।
অনেকেই বলেছেন যে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার চেষ্টা চলছে। ভারতের সংবিধান পক্ষপাতী হয়ে উঠছে। আমি আপনাদের জানাতে চাই ভারতে হয়েছে কী? ভারতে ১৯৫৯ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৮৪ শতাংশ। ২০১১ সালে হয়েছে ৭৯ শতাংশ। এখানে সংখ্যা বাড়েনি কিন্তু মুসলমানদের সংখ্যা ১৯৫৯ সালে ছিল ৯.৮ শতাংশ, এখন ১৪.২৩ শতাংশ। আমরা কারো সঙ্গে ধর্মের ভিত্তিতে ভেদভাব করিনি। এবং ভবিষ্যতেও ধর্মের ভিত্তিকে কোনো ভেদভাব হবে না। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে ধর্মের ভিত্তিতে তখনকার সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের সঙ্গে অত্যাচার, প্রতারণা হলে ভারত সরকার মূক দর্শক সেজে বসে থাকবে না। তাদের বাঁচানোর জন্য যা-যা করণীয় তা করবে। তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। এই জন্য আমি আবার ধারা ১৪-র কথা বলব, যেখানে বলা হয়েছে সমান অধিকার খর্ব হয় এমন নিয়ম-কানুন সংসদ বানাতে পারবে না। কিন্তু এখানে কোনো বিশেষ ধর্মের জন্য হচ্ছে না, হচ্ছে একটি বিশেষ শ্রেণীর জন্য, সংখ্যালঘু শরণার্থীর জন্য যার মধ্যে বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি এরা সবাই আছেন। শুধু একটি বিশেষ। ধর্মের জন্য হলে ধারা উলঙ্ন হতো। কিন্তু এটি হচ্ছে প্রতারিত সংখ্যালঘু শ্রেণীর সংরক্ষণের জন্য তাই সেখানে ধারা ১৪ খর্ব হচ্ছেনা। এমন অনেক নিয়ম আইন আছে যেখানে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আলাদা আইন তৈরি করা হয়েছে, সেখানে কি ১৪ ধারা উলঙ্গন করা হয়নি? কিন্তু এই বিলে কোনো ধর্মের প্রতি ভেদভাবের সম্পর্ক নেই। এইবিল আনা হয়েছে কেবল তিন দেশের প্রতারিত সংখ্যালঘু শরণার্থীদের জন্য। তারা শরণ নেওয়ার জন্য এসেছেন। তারা অনুপ্রবেশকারী হতে পারেন না। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে এসেছেন।
এই বিল ভারতীয় সংবিধানের কোনো ধারাকে উলঙ্ঘন করে না। সংবিধানের দৃষ্টিতে এই বিল সম্পূর্ণ সঠিক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ভারত সরকার ইউ এন কমিশনের চুক্তি অনুযায়ী কোনো রিফিউজি পলিসি তৈরি করেছে কিনা? তাদের স্পষ্ট জানাতে চাই আমরা কোনো আইন তৈরি করছি না— আমাদের সংবিধান স্বয়ং সম্পূর্ণ।
যখন পার্সি সম্প্রদায় ইরান থেকে ধর্মের ভিত্তিতে প্রতারিত হয়ে ভারতে এসেছিল ভারত শরণ দিয়েছিল। আজও ধর্মের ভিত্তিতে প্রতারিত শরণার্থীদেরই এখানে সম্মানের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা আমরা করতে চলেছি। একজন ব্যক্তিকে তার পরিবার পরিজনকে বাঁচাতে ভারতে আসতে হয়। আমাদের দায়িত্ব তাদেরকে গ্রহণ করা, সংরক্ষণ করা।
মনীষ তেওয়ারি বলেছেন দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা সাভারকর দিয়েছেন, এই তর্কে আমি যেতে চাই না। কিন্তু মহম্মদ আলি জিন্না দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রচার প্রসার করায় দেশ বিভাজন হলো। আপনারা কংগ্রেসের সদস্য সেই বিভাজনকে স্বীকার করলেন কীভাবে? তাকে আটকানো হয়নি কেন?
মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন এই দেশে যদি বিভাজন হয় আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে হবে। ওদিকে কংগ্রেস পার্টি ধর্মের ভিত্তিতে হওয়া দেশ-বিভাজনে সায় দিয়েছিল। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাজনে কংগ্রেসের মত ছিল কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না।
দয়ানিধি মারান প্রশ্ন করেছেন, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের অঙ্গ হিসেবে মানলেও আমরা নাকি সেখানের বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিক বলে মানি না। তার উত্তরে আমি তাকে বলতে চাই। পাক অধিকৃত কাশ্মীরও আমাদের, সেখানকর বাসিন্দাও আমাদের। তাই ওখানের ২৪টি আসন বিধানসভা সংরক্ষিত আছে। বলা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার অধিবাসীদের কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। তার উত্তরে বলি, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন বিভাজনের পরে সবাইকে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে আগতদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কা থেকে আগতদেরও দেওয়া হয়েছে। এইবার শুধুমাত্র পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন ‘সংখ্যালঘু’র সংজ্ঞা নিয়ে। বলেছেন সংজ্ঞা সংকুচিত অর্থে ব্যবহার করা হচেছ। স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সাংবিধানিক ধর্ম ইসলাম, তাই সংখ্যালঘু বলতে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদিদের এই বিলে ব্যবস্থা । আছে। এর সঙ্গে এদেশের সংখ্যালঘুদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই দেশের মুসলমানদের সঙ্গে এই বিলের কোনো সম্পর্ক নেই। এমন চিহ্ন প্রস্তুত হচ্ছে যেন এই দেশেরমুসলমানদের সঙ্গে ভেদভাব করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ হয়ে ভারতে আসে। মায়ানমার একটি সেকুলার দেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢুকছে। এদের কখনো স্বীকার করা হবে না।
কেউ কেউ বলছেন এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভয় পাচ্ছে। তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে কারো ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এই সরকার সবাইকে সুরক্ষা ও সমানাধিকার দিতে প্রতিবদ্ধ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দের উদাহরণ দিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন, ওই মনীষীরা এই বর্তমান বাঙ্গলার কল্পনা করেছিলেন যেখানে সরস্বতী পূজা করার জন্য আদালতে যেতে হয়? তার বক্তব্য এনআরসি ও ক্যাব হলো একটা ফঁদ। মনে হচ্ছে কারণ বাঙ্গলার ভোটব্যাঙ্কের জন্য অনুপ্রবেশকারীদের শরণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই অভিসন্ধি সফল হতে দেব না। এই বিলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থী নাগরিকত্ব পেতে চলেছেন। তারা বাঙ্গালি, তাই বাঙ্গলার বিপক্ষ সদস্যদের আমি জানাতে চাই এই অপপ্রচার চালাবেন না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী সমস্ত শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবেন। তার জন্য কোনো বিশেষ কার্ডের প্রয়োজন নেই। সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কাগজ থাক বা না থাক।
অধীর রঞ্জন চৌধুরী তার ভাষণে বলেছেন এই বিল সাম্প্রদায়িক। সত্য এই যে তার পার্টি এতটাই অসাম্প্রদায়িক যে কেরলে তারা মুসলিম লিগের সঙ্গে এবং মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে জোটবদ্ধ। আমি আমার জীবনে এত অসাম্প্রদায়িক পার্টি দেখিনি।তিনি বলছেন এই বিলের মধ্যে চীন, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার ইত্যাদি দেশের উল্লেখ নেই কেন? শুধুমাত্র পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ কেন? তার উত্তরে বলছি প্রত্যেকবার নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিলের ক্ষেত্রে এই তিন দেশের জন্য নির্ণয় করা হয়েছে বাকি দেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ১৯৫০ সালে ভারত ও নেপালের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুসারে নাগরিকত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।
ওয়েসি বলছেন—এনআরসি-র পৃষ্ঠভূমি তৈরি করা হচ্ছে। তাকে বলা বলা হচ্ছে কোনো পৃষ্ঠভূমির প্রয়োজন নেই। এনআরসি হবেই। আরও বলেছেন যে, মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা কেন? তাঁকে জানাতে চাই—আমাদের কোনো ঘৃণা নেই, তিনিও যেন কোনো ঘৃণার সূত্রপাত না করেন। আবারও আমি বলছি, এই বিলের সঙ্গে এদেশের মুসলমানদের কোনও সম্পর্ক নেই।
শ্ৰী গগৈ বলছেন, সমস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু আশা করি তিনি সমস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সদস্যদের ভাষণ শুনেছেন—সবাই বিলের সমর্থনেই বলেছেন। সিকিমের সদস্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত কথার মধ্যে এবং এখানেও জানাতে চাই যে তাদের আইনেও কোনো বাধা ক্যাব দ্বারা হবে না। ৩৭১-এফ ধারার মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকবে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কেউ কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। কিন্তু শুনে নিন, সেখানে ইনার লাইন পারমিট দ্বারা সংরক্ষিত আছে। মণিপুরকেও ইনার লাইন পারমিট দেওয়া হবে। মণিপুর, অরুণাচল, মেঘালয়, অসম সিএবি-এর আওতার বাইরে থাকবে। প্রান্তস্তরে কোনো কারও চিন্তার কারণ নেই। মহারাষ্ট্র, বিহার, ওড়িশার মানুষ যারা সেখানে আছেন তাদের ভয়ের কিছু নেই।
লিয়াকত-নেহরু চুক্তি বিফলে যাওয়ার কারণেই এই তিন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর উৎপীড়ন আর তাদের এই দেশে চলে আসা। এবং আজ আমাদের এই সমস্যার সমাধানে এই বিল নিয়ে আসা। ১৯৪৭ সাল পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠশিখ, হিন্দুদের স্বাধীনতা সংগ্রামের গভীর ইতিহাস আছে।ইউ এন রিপোর্ট অনুযায়ী সারা পাকিস্তানে শুধুমাত্র ২০টি ধর্মীয়স্থান অবশিষ্ট আছে। এটাই প্রমাণ করে ওখানকার নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা।
১৯৭২ বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া শান্তি-মৈত্রী চুক্তি যেটি তক্কালীন প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে হয়েছিল। তার মৃত্যুর পরই তাও ভেস্তে যায়। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈনদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হ্রাস পায়। তারা শরণ নেওয়ার জন্য ভারতে এসেছেন।
সেরকমই আফগানিস্তানের হিন্দুরা তালিবানি অত্যাচারেই অতিষ্ঠ হয়ে ভারতে এসেছেন, তাদের শরণ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাদের প্রতিদিনের জীবন ছিল দুঃসহ। তাদের জোর করে ইসলাম মানার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হতো। অমুসলমান হওয়ার জন্য তাদের বিশেষ কাপড়ের ব্যবহার করা হতো। শুক্রবার নমাজ পড়তে হোক বা না হোক, মসজিদে যেতেই হতো। না হলেই দণ্ডিত হতে হতো।
তাদের স্বাধীন স্বাভিমানী জীবন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিল এনেছেন যাতে এরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায় ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন।
আমার বিনীত নিবেদন, ভোটব্যাঙ্কের লালসায় অন্ধ হয়ে বসে না থেকে দেখুন। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতারিত মানুষ রাস্তায় ও রেললাইনের ধারে বাস করছেন। তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা নেই, থাকার জায়গা নেই। আমাদের সরকার এদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
আগামী প্রভাত এই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য উজ্জ্বল প্রভাত হতে চলেছে। নরেন্দ্র মোদীজীর জন্য তাদের জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।
অমিত শাহ
(লোকসভায় অমিত শাহের ভাষণ। অনুবাদক : সৌরভ সিংহ)
2019-12-27