তাঁর সুন্দর মুখের দিকে যে একবার তাকাত, তাকে দেখতেই থাকত। লম্বা, স্বাস্থ্যবান, সৌম্য মুখমণ্ডল— যেখানে রয়েছে সবাইকে আপন করে নেবার মতো অনন্য দীপ্তি আর তার সঙ্গে অভয় প্রদানকারী মৃদুহাস্য। দেহে যজ্ঞোপবীত, পায়ে খড়ম, মাথায় কুড়ি হাত লম্বা। পাগড়ি। গায়ের রঙে সোনালি মাটির আভা। —এরকম ছিলেন সেই ধরতী আবা (ধরিত্রীর পিতা) দেবপুরুষ বিরসা
তার জন্মের সময় আকাশে পুচ্ছযুক্ত তারা দেখা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবারে। জন্ম— তার নাম রাখা হলো বিরসা। বয়স্ক ব্যক্তিরা, বললো—দেখো দেখো, ধরতী আবা জন্ম নিয়েছেন। এবার তিনি আমাদের উদ্ধার করবেন।’ ‘উদ্ধার, হু? —অবিশ্বাসে হেসে ফেলেছিল পিতা সুগনা মুণ্ডা। যে ঘরে একদানা খাবার নেই, শরীরে পরিধানযোগ্য বস্ত্র নেই সেই ঘরে কখনও কোনো দেবপুরুষ জন্মায় নাকি? কিন্তু মায়ের অন্তরের একটি কোণে আশা জেগে উঠত— সত্য একদিন বাস্তব হবেই। সবাই যখন বলেছে তখন আমার বিরসা নিশ্চয়ই একদিন ধরতী আবা’ হবে। আমাদের নিজেদের রাজত্ব কায়েম করবে। এই সাদা চামড়ার ইংরেজ, এই মিশনারি জার্মান সবাইকে মেরে তাড়াবে। ওরে, বিরসা, তুই কবে বড়ো হবি রে? ব্যাকুল সন্ত্রস্ত মায়ের আর্তস্বর ছড়িয়ে পড়ত গ্রামে।
যে গৃহে বিরসা জন্মেছিল, সেটা ছিল বাঁশের তৈরি। চালকাডের পাশে উলিহাতু ও বম্বা, দুটি গ্রামই বিরসার জন্মস্থান হবার গৌরবের দাবিদার। এমনটাই বিরসার জন্মতিথির বিষয়েও ভ্রমপূর্ণ প্রচার রয়েছে। কিন্তু চার্চে ব্যাপ্টিম নেবার সময় যে জন্মতিথি (১৫/১১/১৮৭৫) দেওয়া হয়েছিল তাই পরে সর্বজনস্বীকৃত হয়।
বিরসার বাল্যকাল অন্যান্য শিশুদের মতো ধুলোয় গড়িয়ে, বনে ঘুরে এবং পশু চরিয়ে কাটলেও অসামান্য ছিল। ওর বন্ধুরা মাঝে। মাঝেই অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা শুনত ওর মুখ। থেকে। এত সুন্দর বাঁশী বাজাতে পারত বিরসা যে বনের পশু-পাখিও মুগ্ধ হয়ে তা শুনত। গ্রামের আখড়ায় যখন সে ঝুমঝুম করে নাচত তখন মনে হতো স্বর্গীয় কেউ যেন পৃথিবীর মঙ্গল কামনা করছে।
কিন্তু এ সবে তো পেট ভরবে না। সেজন্য চাই খাদ্য। দারিদ্র্য তার পিতামাতাকে বাধ্য করল তাকে তার মাসির বাড়ি খুঁটি থানার । খটঙ্গা গ্রামে রেখে আসতে। বিয়ের আগে থেকেই মাসি ওকে খুব ভালোবাসত। সেখানে সে সারাদিন। ঘুরত আর মেসোর ছাগল চরাত। কিন্তু বাঁশি বাজাতে বাজাতে সে এত তন্ময় হয়ে যেত যে ছাগল অন্যের জমিতে ঢুকে ফসল খেল কিনা তা খেয়াল থাকত না। এই রকমই একটি ঘটনার পর মেসো একদিন প্রচণ্ড মারল বিরসাকে। ভয়ে বিরসা পালিয়ে এলো বাবার কাছে। পিতা সুগনা আবার বিরসাকে রেখে এলো দাদুর কাছে আয়ু ভাতু গ্রামে। এখানে থাকাকালীন বিরসা পাশের গ্রামে সাদ্গার জয়পাল নাগ নামে এক শিক্ষকের পাঠশালায়। লেখাপড়া ও অঙ্কের প্রাথমিক পাঠ শেষ করল। ওই পাঠশালা সরকার স্বীকৃত না হওয়ায় নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ। হবার জন্য বুজুর জার্মান মিশনে বিরসা ভর্তি হলো। ইতিমধ্যে দারিদ্র্য বিরসার । পিতাকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করলো। তার নাম হলো মসীহ দাস। বুর্জু মিশনে বিরসার ব্যাপ্টিম হলো। নাম। রাখা হলো দাউদ বিরসা। এরপর আরো পড়ার জন্য বিরসাকে যেতে হলো। চাইবাসার সুথেরান মিশনে। এখানেই বিরসা খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পারল এবং তার শরীরে মনে খ্রিস্টান মিশনারি ও ইংরেজের প্রতি ঘৃণার আগুন জ্বলে উঠলো। চাইবাসা মিশনের । পাদরি ডাঃ নট্রোটের সামনেই বিরসা মিশনারিদের নিন্দা করে । ঘোষণা করল—‘সাহেব সাহেব এক টোপি’…
চাইবাসা থেকে ফিরে শুধু বিরসাই নয়, তার সম্পূর্ণ পরিবার। মিশনারিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এরপর প্রায় এক বছর বিরসা কণ্ডের গ্রামে এক মুণ্ডা পরিবারে কাজ করেছিল। ১৮৯১ সালে তোড়ন থানার গোড়বেড়া গ্রামে আনন্দ পাণ্ডের সঙ্গে পরিচয় হয়। আনন্দ পাণ্ডে বন্দগাঁওয়ের। জমিদার জগমোহন সিংহের মুন্সী ছিলেন। তিনি ছিলেন পরম বৈষ্ণব। তিনি বিরসাকে রাতে। রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি শোনাতেন। একজন বৈষ্ণব সাধুও সেখানে প্রায়ই আসতেন। এঁদের সকলের প্রভাব পড়ল বিরসার ওপর। বিরসা শিকার করা ছেড়ে দিল আর তার অন্তরে প্রথম থেকেই যে ভক্তিধারা সুপ্ত ছিল এই সব সৎসঙ্গে তা আরও পুষ্ট ও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। আনন্দ। পাণ্ডেকে গুরুরূপে স্বীকার করে বিরসা নিজের ধ্যেয়পথে সাফল্য লাভের জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করলো। কী ছিল ধ্যেয় বিরসার ? আমাদের দেশকে বিদেশির শাসন থেকে মুক্ত করা। গুরুও গল্প কণ্ঠে অশ্রু পূর্ণ নয়নে বিরসাকে আলিঙ্গনবদ্ধ করে আশীর্বাদ দিলেন।
এরপর বিরসা সরদারি লড়াইয়ে অধিক সক্রিয় হলো। এখানে সরদারি লড়াই সম্পর্কে কিছু বলা আবশ্যক। এতদ অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারিদের আসার পর থেকে বনবাসীদের সমস্যা বেড়ে যায়। তারা নিজেদের বনবাসীদের হিতরক্ষক বলে। ঘোষণা করেছিল আবার লোভ দেখিয়ে সরল সাদাসিধে বনবাসীদের খ্রিস্টানও করেছিল। লোভ ছিল— যদি বনবাসীরা ক্রসকে মেনে নেয় তো ইংরেজ সরকার তাদের পক্ষে থাকবে এবং তাদের জমি ছিনিয়ে নেওয়া হবে না। তারা জমিদারের শোষণের বিরুদ্ধেও সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, এ সবই ছিল ইংরেজ অফিসার ও পাদরিদের কুটিল ষড়যন্ত্র। পরিণামস্বরূপ, যারা খ্রিস্টান হলো সেই বনবাসীদেরই সব সুবিধা মিলতে লাগলো যা আগে ছিল সকলের অধিকার। অতএব, ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে জমি ও নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য বনবাসীরা আন্দোলন শুরু করেছিল যা ইতিহাসে সরদারি লড়াই’ নামে প্রসিদ্ধ। এই সরদারি লড়াইয়ের গভীর প্রভাব পড়েছিল বিরসার ওপর।
গুরুর আশীর্বাদ নিয়ে বিরসা গ্রামে গ্রামে কোম্পানির সরকার ও পাদরিদের বিরুদ্ধে গণসংগঠন তৈরি করা শুরু করলো। সেই সঙ্গে আয়ুর্বেদ, পুরাণ ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ। অধ্যয়নও চলতে থাকলো। বনবাসীরা তার প্রতিজ্ঞা ও জ্ঞানে প্রভাবিত হয়ে তার প্রতি অধিক আকৃষ্ট হতে লাগলো।
কিন্তু পরিবারের আর্থিক স্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে লাগল। আর আন্দোলনে ব্যস্ত বিরসা ঘরের খাবার কোথা থেকে জুটাবে? এমনই অবস্থা হলো যে, বিরসা ভাই-বোনদের নিয়ে বাবা-মার সঙ্গে না। খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ত। বিরক্ত হয়ে একদিন খাবারের সন্ধানে বিরসা বাইরে ঘুরছিল। ক্ষুধা ও চিন্তায় ব্যাকুল বিরসা শ্মশানে গিয়ে পৌঁছালো। সেখানে সে এক গর্ভবতী মহিলাকে গয়নাগাটিসহ কবর দিতে দেখলো। ক্ষিধের জ্বালায় মানুষ কী না করে ! সবাই চলে গেলে বিরসা সেই তাজা কবর। খুঁড়ে মৃতার শরীর থেকে গয়না নিয়ে। বাজারের দিকে গেল। গয়না বিক্রি করে চাল-ডাল-নুন কিনলো। ভাবলো—আজ সবার পাতায় গরম ভাত দেওয়া হবে। আহা! কতদিন পর আজ অন্ন জুটবে ভাগ্যে। খাবারের চিন্তায় বিরসা কাজের পরিণামও চিন্তা করতে ভুলে গেল। একবারও ভাবলো না এই গয়না বিক্রি করতে গ্রামের লোক দেখে থাকতে পারে এবং গ্রামের সবাই হয়তো জেনে গেছে যে, বিরসা কবর থেকে তোলা মৃতদেহের গয়না বিক্রি করে চাল ডাল কিনে আনছে ঘরে। গ্রামে আসার সঙ্গে সঙ্গে সবাই বিরসার দিকে ঘৃণাভরে তাকালো। ঘরে যেতেই মা চীৎকার করে। বলে উঠলো— হায়রে বিরসা। মরা মানুষের পয়সায় তুই এবার আমাদের খাওয়ার। খাওয়াবি? তোর এই চাল নিয়ে যা, নিজের মুখ কালো করবি যা।’ স্তব্ধ, আহত বিরসা হাত থেকে চাল-ডাল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। পালিয়ে গেল। গ্রামের লোক তাকে ‘বলু বিরসা’ (পাগল বিরসা) বলতে লাগল।
বিরসা জঙ্গলে গিয়ে ১২/১৩ দিন কাটালো। জঙ্গলে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর বিরসা নিজের জীবন, সমাজের অবস্থা এবং সময়ের আহ্বান কী—এই গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো। এই সময়েই সে এক স্বপ্ন দেখলো যা তাকে পরবর্তীকালে সত্যিই ধরতীর দেবতা বানিয়ে দিল।
জঙ্গল থেকে ফিরে বিরসা গ্রামবাসীদের ডেকে বললো— “স্বপ্নে আমি এক পক্ককেশধারী বৃদ্ধকে দেখেছি যিনি হাতে একটি ছড়ি নিয়ে চলছিলেন। ওই বৃদ্ধ। ক্ষেতের মধ্যে একটি চেয়ারের ওপর বসলেন এবং একটি মহুয়া গাছ তৈরি করলেন। ওই গাছটা এতটা চকচক করছিল যেন তাতে মাখন আর তেল লাগানো হয়েছে। ওই গাছের মাথায় অতি মূল্যবান। বস্তু ছিল। ওই বৃদ্ধ চারজনকে ডাকলেন এবং ওই গাছে উঠে মূল্যবান বস্তুটি পেড়ে আনতে বললেন। প্রথমে এক আত্মা। তারপর এক রাজা, তারপর একজন বিচারক এবং চতুর্থ ছিলাম আমি স্বয়ং। ওরা তিনজনই চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। কিন্তু আমি ওই বস্তুটা পেয়ে গেলাম। কিন্তু যেই বস্তুটা নিয়ে গাছ থেকে নেমে সেটা ভালে করে। দেখতে গেলাম আমার ঘুম ভেঙে গেল।”
বিরসা এও বলেছিল যে, ‘সিঙ্গ বোঙ্গা তাকে দিব্য শক্তি প্রদান করেছেন এবং এখন সে সবরোগীকে রোগমুক্ত করতে পারে। আরও বললো—‘এবার আমি খুব তাড়াতাড়ি মুণ্ডাদের বিদেশির বন্ধন থেকে মুক্ত করবো, এখন থেকে কেউ যেন কোম্পানি সরকারের আদেশ না মানে। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, জমিদারদের অবজ্ঞা করবে আর কেউ বেগার খাটবে না।
বিরসার কাছে দূরদূরান্ত থেকে দুঃখী, পীড়িত, রোগী বনবাসীরা আসতে লাগলো। যাদের কখনও মন্ত্রবলে, কখনও বা। শিকড়বাকড় দিয়ে ও রোগমুক্ত করে দিতো। বনবাসীদের মধ্যে দাবানলের মতো এই খবর ছড়িয়ে পড়লো যে বিরসার মধ্যে দৈবশক্তি রয়েছে এবং সে সবাইকে দুঃখ-ক্লেশ থেকে মুক্ত করতে পারে। বিরসার এই আশ্চর্য্য শক্তির বর্ণনা পাদরিও খুব অদ্ভুতভাবে করেছে—‘অসুস্থ, কানা, বোবা, খোঁড়া মাইলের পর মাইল দূর থেকে আসত বিরসাকে দর্শন করতে। ভীষণ গরম থাকুক বা ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক না কেন সেই ভক্তদের ওপর কোনো প্রভাব পড়তো না। তারা কেবল বাঁশের তৈরি ছাতা নিয়েই সব বিপদের সম্মুখীন হবার সাহস করতো।
আকাশে এক নতুন নক্ষত্র উদিত হয়েছে— ‘ধরতী আবা। যিনি বনবাসীদের । বাঁচাতে, উদ্ধার করতে এসেছেন— সকলের ধমনীতে নবীন প্রেরণার রক্তস্রোত প্রবাহিত হতে লাগলো। নতুন উৎসাহের সঞ্চার হলো। ওরাঁও, মুণ্ডা, খাড়িয়া— সবাই চালকড়ে নিজেদের নতুন দেবতাকে দর্শন করার জন্য ভেঙে পড়লো। আর সেই ধীর গম্ভীর পুরুষ সবাইকে বলেছিলেন— “সেদিন আর বেশি দূরে নেই যেদিন পাদরি, সরকারি অফিসার আর মহারানি (ভিক্টোরিয়) আমার চরণে পড়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইবে। এসো, আমরা সংগঠিত হই, এই। মহারানির রাজত্ব শেষ করি। এবার শুরু হবে আমাদের রাজত্ব। আবুয়া রাজ এয়তে জনা, মহারানি রাজ টুণ্ডু জনা।” আর শত শত কণ্ঠ অমনি চিৎকার করে উঠতো— “আবুয়া রাজ এয়তে জনা, মহারানি রাজ টুণ্ড জনা।”
এটা ছিল ১৮৯৫। যখন কংগ্রেস ইংরেজের কোলে শুয়ে ব্রিটিশ দুধে প্রতিপালিত হচ্ছিল, যখন তিলকের ‘স্বরাজ আমার জন্মসিদ্ধ অধিকার-এর মন্ত্র দেশে গুঞ্জিত হয়নি, যখন গান্ধী, সুভাষ, নেহরুর নাম দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হয়নি, সেই সময় ছোটোনাগপুরের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র বনবাসী ক্ষেত্রের এই দেবদূত ‘স্বরাজ্য’ ঘোষণা করে ব্রিটিশ প্রশাসনকে প্রচণ্ডভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। আশ্চর্য! একই সঙ্গে বিরসা অত্যন্ত মনোবৈজ্ঞানিক ঢঙে বনবাসী সমাজে পরিব্যাপ্ত অন্ধবিশ্বাস ও কুরীতির বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
এই সমস্ত ঘটনায় খ্রিস্টান মিশনারিরা। হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। প্রথমে তারা এটাকে ‘মুখতাপূর্ণ অস্থায়ী উত্থান’ বলে ভেবেছিল। কিন্তু পরে সব কিছু গম্ভীরভাবে চিন্তা করে নিজেদের ইংরেজ অফিসারদের কাছে ছুটে গেল। ওদিকে তামাড় থানার দারোগা ডেপুটি কমিশনারের কাছে রিপোর্ট পাঠালো—একজন নতুন হিন্দু রাজা হয়েছে। যে বনবাসীদের ইংরেজ রাজত্বের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে এবং জবরদস্তি হিন্দুদের ধর্মীয় নিয়মকানুন চালু করছে। চক্রধরপুরের থানা থেকেও রিপোর্ট গেল— ‘একজন সন্ন্যাসী বনবাসীদের মধ্যে বিদ্রোহ চড়াচ্ছে।
এ দিকে বিরসা বিদ্রোহের প্রথম। পদক্ষেপ হিসাবে এক অভিনব অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলেন। তিনি বনবাসীদের চাষ করতে নিষেধ করলেন এবং ঘোষণা করলেন যে, ইংরেজ সরকার এখন শেষ হয়ে গেছে। চাষ না করার খবরে ব্রিটিশ অফিসাররা ভীত হয়ে পড়লো এবং যথাশীঘ্র বিরসাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ জারি করল ৮ আগস্ট ১৮৯৫ বিরসাকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ চালকাড এল। কিন্তু বিরসাকে ছুঁতেও পারল না। গ্রামবাসীদের সশক্ত প্রতিরোধ এবং তাদের মেরে ফেলার হুমকি শুনে বন্দুকধারী পুলিশরাও কাপতে থাকলো। কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক পলুস-এর নেতৃত্বে প্রায় দুশো খ্রিস্টান বনবাসী পুলিশদের সাহায্য করতে এসেছিল। তাদের সবাই প্রায় মুণ্ডা বনবাসী। ধর্মান্তরিত হলেও তারা রক্তের আসল পরিচয় রাখলো। আশপাশের গ্রাম থেকে আট-নশো বনবাসী একত্রিত হয়ে পুলিশদলকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিল।
বৈষ্ণব সাধুদের শিক্ষার প্রভাবে বিরসা অহিংসার পথেই চলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের হিংসামূলক মনোভাব দেখে ‘বিষস্য বিষমৌষধ নীতি গ্রহণ করে নিজের বিশ্বস্ত সহচরদের নিয়ে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের যোজনা তৈরি করলেন এবং তার প্রস্তুতিতে লেগে পড়লেন। ইংরেজ অফিসারদের কাছে এ খবর। পৌঁছালে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ২৩ আগস্ট কমিশনার একটি জরুরি বৈঠক ডেকে বিরসার বিদ্রোহ দমন করার আদেশ দিলেন। বিরসাকে গ্রেপ্তার করার দায়িত্ব দেওয়া হলো জেলা সুপারিন্টেন্ডেন্ট জি আর. কে. মিয়ার্সের ওপর। বিরসার তিনশত্রু— পাদরি লাস্টি, জেনারেল মিয়ার্স এবং জমিদার জগমোহন হাতিতে চেপে বাছাই করা ২০ জন সৈনিক নিয়ে সন্ধ্যাবেলা চালকাড পোঁছাল। চারিদিক থমথমে। চুপচাপ গ্রাম। ঘিরে পুলিশ বিরসার ঘরে হামলা করতে ঢুকে পড়ল। সারা দিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত বিরসা ঘরে তখন বিশ্রাম করছিলেন। চটপট দশজন পুলিশ বিরসাকে জাপটে ধরলো এবং হাতকড়ি পরিয়ে দিল। বিরসা। প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। ওই সময়ে তার সহযোগী যোদ্ধারা সুদূর গ্রামাঞ্চলে। অস্ত্রশস্ত্র একত্রিত করা এবং বিদ্রোহের ডাক দেবার জন্য চলে গিয়েছিল। তারা ভাবতেও পারেনি ব্রিটিশ পুলিশ এরকম চুপিসারে । বিরসাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবে। কিন্তু বিরসাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এ খবর দাবানলের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। চতুর্দিক থেকে হাজার হাজার বনবাসী। চালকাডের দিকে ছুটল। কিন্তু ততক্ষণে বিরসাকে অনেকদূর নিয়ে গেছে—রাঁচী জেলে। বনবাসীদের ক্ষোভ এবং নিজেদের দেবতার দুঃখের পীড়া চরম সীমায় পৌঁছে। গেল। তাই হাজার হাজার বনবাসী খালি। পায়েই ছুটলো রাঁচী জেলের দিকে। কিন্তু পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের হটিয়ে দিল। মৃণ্ডাদের উৎসাহ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে। কমিশনার বিরসার মামলা ঢালকাডেই চালাবার পরিকল্পনা করলেন যাতে প্রমাণ করা যায় যে, ওই সব জংলি লোকেদের। দেবতা প্রকৃতপক্ষে একজন অপরাধী। হাতকড়ি পরানো অবস্থায় বিরসাকে চালকড়ে আনা হলো। আর খবরও ছড়ানো হলো যাতে দূরদূরান্ত থেকেই সবাই এসে এ মামলার পরিণতি দেখে। হাজার হাজার । বনবাসী এই অপমানে প্রস্তরবৎ হয়ে পড়ল। বন্দি বিরসাকে দেখেই তাদের রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করলো। ডেপুটি কমিশনারের গোঁফ উপড়ে ফেলা হলো আর হাজার হাজার বনবাসী হিংস্র হয়ে উঠল। বেগতিক দেখে হঠাৎ মামলার শুনানি বন্ধ । করে অতিরিক্ত পুলিশের সাহায্যে বিরসাকে রাঁচিতে ফিরিয়ে আনা হলো। ১৯ নভেম্বর ১৮৯৫ বিরসার বিচারের রায় বের হলো এবং তাতে বিরসার দু’বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয়মাস জেলের সাজা হলো। ৩০ নভেম্বর, ১৮৯৭ বিরসা জেল থেকে ছাড়া পেলেন।
বিরসার মুক্তিতে ব্যাধিগ্রস্ত, ক্লান্ত শ্রান্ত বনবাসীদের মধ্যে প্রাণ ফিরে এল। সারা এলাকার বনবাসীদের প্রাণে মনে আগুন জ্বলছিল। অন্তিম আঘাতের আগে বিরসা দেবতার আশীর্বাদ নেবার জন্য নিকটবর্তী নওরতনগড়, চুটিয়া ও জগন্নাথপুরে তীর্থ করতে গেলেন। এও শোনা যায় যে, বিরসা নিজের সঙ্গীসাথীদের নিয়ে বৃন্দাবন যাত্রাও। করেছিলেন। অবশ্য এই বৃন্দাবন রাঁচির কাছে অবস্থিত একটি গ্রাম।
চুটিয়া মন্দিরের কাহিনি ঐতিহাসিকরা বিকৃত ভাবে বর্ণনা করেছেন। বিরসা চুটিয়া মন্দিরে গিয়ে তুলসীগাছ, নওরতনগড়ের । মন্দির থেকে যজ্ঞোপবীত এবং জগন্নাথপুরের মন্দির থেকে চন্দন এনে সহযোগীদের মধ্যে প্রসাদ রূপে বিতরণ করেছিলেন আর নিজেদের গৌরবময় অতীত ইতিহাস বর্ণনা করেছিলেন। বলেছিলেন—“ধৈর্য ধরো, খুব তাড়াতাড়ি সত্যযুগ আসছে। এই জগন্নাথপুর মন্দিরে। (রাচী থেকে ৬ মাইল দূর) মহিষবলির প্রথা ছিল। বিরসা এই ক্রুর প্রথার বিরুদ্ধে জনমত জাগ্রত করেছিলেন।
এরপর বিরসা ওড়িশার জগন্নাথপুরীতে। গিয়ে ১৫ দিন তপস্যা করেন। এই সময় তিনি অন্ন গ্রহণ করেননি এবং পৃথিবীকে পাপমুক্ত করার জন্য ভগবানের কাছে। প্রার্থনা করেছিলেন। জগন্নাথপুরী থেকে ফিরে বিরসা গ্রামে গ্রামে সেনা তৈরির কাজে লেগে যান। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি। মাসে ডোম্বারী পাহাড়ে নিজের অনুগামীদের এক বড়ো সভায় আহ্বান করেন। চারদিক। থেকে হাজার হাজার বনবাসী বিরসার । মহিমাগান করতে করতে কপালে চন্দনের তিলক, হাতে লাল ও সাদা পতাকা নিয়ে ডোম্বারীতে একত্রিত হলো। সাদা পতাকা পবিত্রতা ও স্বদেশির প্রতীক ছিল আর লাল পতাকার অর্থ ছিল বিদেশির রক্তে সাদা পতাকাকে লাল করতে হবে। সেদিন বিরসা বনবাসীদের মহান পূর্বপুরুষ, ধর্ম সংস্কৃতি। এবং মাটির দোহাই দিয়ে ইংরেজ অফিসার, পাদরি ও তাদের দেশি এজেন্টদের সমাপ্ত । করার উদাত্ত আহ্বান রাখেন। নিজের বিশ্বস্ত সঙ্গীদের মধ্য থেকে সেনাপতি ও মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন। এটকে গ্রামের গয়া মুণ্ডাকে প্রধান সেনাপতি ও মন্ত্রীর পদ দিলেন।
সেনাদের মূল ঘাঁটি করা হলো খুঁটিকে। শত্রুদের ওপর হামলা করার উপযুক্ত দিন নির্দিষ্ট করলেন ২৪ ডিসেম্বর, ১৮৯৯ সালে। ২৪ ডিসেম্বর রাত, ১৮৯৯। প্রধান। সেনাপতি গয়ামুণ্ডা গুটু হাতু, সোইকো, কুড়াপূর্তি এবং আশপাশের গ্রামের বিরসা সেনানীদের ডোম্বারী পাহাড়ে ডাকা হলো। নিজের বাহিনীকে গয়া মুণ্ডা তিনভাগে ভাগ করে প্রথম ভাগ নিজের নেতৃত্বে রেখে সরবাদাগ মিশনে হামলা করতে প্রস্থান। করলো। দ্বিতীয় ভাগকে মুটু এবং তৃতীয়। ভাগকে বুড়ু মিশন আক্রমণ করার নির্দেশ দিয়ে গেল। ২৫ ডিসেম্বর গয়ামুণ্ডা নিজের ১০০ সঙ্গী নিয়ে সরবাদাগ মিশন আক্রমণ করলেন। মিশন কম্পাউণ্ড জ্বালিয়ে দিল এবং ঘরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিল। ফাদারের বাংলোতে এসে ফাদার কারবেরি এবং ফাদার হাফম্যানের ওপর তির ছুড়লো। কারবেরীর বুকে তির লেগে ছিল কিন্তু গরম মোটা কোট পরে থাকায় মরলো না। ফাদার হাফম্যান তো একটুর জন্য বেঁচে গেল। দ্বিতীয় দল সেদিন মুটু মিশন আক্রমণ করে, এখানকার ফাদার লাস্টি ছাত্রদের গান । শুনছিল। স্বাধীনতার এই সেনানীদের তির চললে কোনো রকমে পালিয়ে প্রাণ নিয়ে বাঁচলো লাস্টি। বুর্জু মিশনের পাদরি সরবাদাগ ও মুটু-র খবর পেয়ে খুঁটি থেকে পুলিশ চেয়ে খবর পাঠালো। ২৬ ডিসেম্বর তৃতীয় দলটি সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করে ৫ জন পুলিশকে খতম করলো জার্মান। পাদরির কান ফুটো করে তির বেরিয়ে গেলেও সে প্রাণে মরলো না।
এই আক্রমণের পর সব দল ফিরে এল। ডোম্বারী পাহাড়ে। ডোম্বারী ছিল বিরসার । প্রধান কেন্দ্র। এখানে বসে বিরসা ও গয়ামুণ্ডা খুঁটি থানা আক্রমণের পরিকল্পনা করলেন। সেনাদের আবার কয়েকটি দলে ভাগ করা হলো। প্রথম দলটির পরিচালনার দায়িত্ব নেন স্বয়ং বিরসা। দ্বিতীয় দলের। দায়িত্ব আসে গয়া মুণ্ডার ওপর। বিরসা ৩০০ সেনা নিয়ে খুঁটি থানা আক্রমণ করেন। সেখানকার দারোগাকে মেরে ফেলা হলো। ৪/৫ জন পুলিশ আহত হলো। সংঘর্ষে বিরসার একজন সৈনিকও বীরগতি লাভ করে।
এদিকে গয়া মুণ্ডা দ্বিতীয় দলটি নিয়ে রাঁচীর দিকে যাত্রা করে। সেখানে তারা জার্মান মিশন আক্রমণ করে। একজনই কেবল তির বিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আক্রমণ সফল হয়নি। গয়ামুণ্ডা বাহিনী নিয়ে ডোম্বারী ফিরে আসে। হামলার খবর রাঁচী শহরে ছড়িয়ে পড়লো। বিরসার আক্রমণের খবর পেয়ে রাঁচীর কমিশনার ফিয়ার্স ও ডেপুটি কমিশনার ফিল্ড আন্দোলনের দমন করার জন্য ইংরেজ বাহিনী নিয়ে খুঁটির দিকে অগ্রসর হলেন।
৯ জানুয়ারি ১৯০০। বেলা ১১ টায় ডোম্বারী পাহাড়ের ওপর গুলি চালানোর আদেশ দেওয়া হলো। পাহাড়ের উত্তর পূর্ব ও পূর্ব ভাগ থেকে গুলিবৃষ্টি হতে থাকলো। বনবাসী বাহিনী বিরসার জয়ধ্বনি দিয়ে। পাহাড় থেকে নামতে লাগলো আর তির ও পাথর ছুঁড়তে লাগলো। কিন্তু গুলির কাছে। তাদের তির ব্যর্থ হতে লাগল। পাহাড়ের ওপর প্রায় ২০০০ লোক ছিল। এর মধ্যে মহিলা, শিশুও ছিল। এই গুলি চালনায় প্রায় ২০০ ব্যক্তি মারা যায়। তাদের মধ্যে শিশুও বেশ কিছু ছিল।
এই ঘটনার পর ডি.সি. সেনার সাহায্যে বিরসার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা শুরু করলো। এই পরিস্থিতিতেও খ্রিস্টান। পাদরিদের চরিত্র সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। তারা বিরসার অনুগামীদের ধরিয়ে দিতো এবং যারা খ্রিস্টান হবে তাদের ছেড়ে দিত। গ্রেপ্তারির ভয়ে লোকেরা দলে দলে খ্রিস্টান হতে লাগলো। পাদরিরাও গ্রামে গ্রামে ঘুরে গ্রেপ্তারির ভয় দেখিয়ে খ্রিস্টান করতে লাগলো।
গ্রামে গ্রামে, জঙ্গলে-জঙ্গলে বিরসাকে ইংরেজ পুলিশ খুঁজতে লাগলো। কিন্তু বিরসাকে তারা ধরতে পারলো না। বিরসা সিংভূম জেলার জোমেকাপাই জঙ্গলে পালিয়ে গেলেন আর নতুন করে সেনা সংগঠনের কাজ শুরু করলেন। সারাদিন জঙ্গলে ঘুরে রাতে গ্রামে আসতেন।
এই সময়ে রোগোতী গ্রাম ছিল তার প্রধান কেন্দ্র। এদিকে কিছু লোক বিরসাকে ধরিয়ে দেবার তালে ছিল। তারা রোগোতীর জঙ্গলে গিয়ে বিরসার সঙ্গে দেখা করতে চায়। নিজেদের তারা বিরসার শিষ্য বলে পরিচয় দেয়। বিরসা তাদের সঙ্গে দেখা করে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে শুরু করলেন। তারা ছিল দলে সাতজন। হঠাৎ তারা বিরসাকে জাপটে ধরে। বিরসা বুঝতে পারলেন যে, এরা সরকারি গুপ্তচর। কিন্তু বলবান বিরসা ওদের থেকে নিজেকে মুক্ত করে পালিয়ে গেলেন। কিন্তু মাইলখানেক যাবার পর আবার ওরা বিরসাকে ধরে। ফেললো। পরে পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে। যায়। পুলিশ বিরসাকে গ্রেপ্তার করে । বন্দগাঁওয়ের ডাকবাংলোয় আটকে রাখলো।
এখানে বিরসাকে দর্শন করতে বনবাসীরা দলে দলে আসতে থাকে। বিদ্রোহের সম্ভাবনা দেখে শীঘ্রই পুলিশ তাকে পালকিতে চাপিয়ে রাঁচী নিয়ে আসে। বিরসা ও তার ৮০ জন সঙ্গীকে রাঁচী জেলে রাখা হলো। কিছুদিন পরই সরকার ঘোষণা করে যে, বিরসা মারা গেছে। বলা হয়ে। থাকে কলেরায় মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের বিশ্বাস যে, তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। বিরসার মৃতদেহ রাঁচী ডিস্টিলারির কাছে দাহ করা হয়। তার । সঙ্গীদের ওপর মোকদ্দমা চালানো হয়। দুই জনের ফাঁসি হয় আর বাকিদের ৩/৪ বছরের কারাবাস ভুগতে হয়। জনপ্রবাদ যে, জেলাশাসক বিরসাকে জমিদারির প্রলোভনও দিয়েছিলেন এবং আন্দোলন বন্ধ করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বিরসা কোনো প্রলোভনে পড়েননি আর দরিদ্র, নিপীড়িতদের উদ্ধারের জন্য শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষ করার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে প্রকৃতই ‘ধরতী কা আবা’ হয়ে গিয়েছেন।
তারু মুণ্ডা
(জনজাতি গৌরব দিবস উপলক্ষ্যে প্রকাশিত)
2019-11-15