বিগত ছ’ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী মােদীর নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে ভারতের এক অভাবনীয় ও বিস্ময়কর যাত্রা শুরু হয়েছে। এই প্রথম দেশের মানুষ ২০১৪-র আগের সময়ের থেমে থাকা, মিথ্যে প্রতিশ্রুতির জায়গায় নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ সম্পূর্ণ হওয়া প্রত্যক্ষ করল। এর কারণ সুদৃঢ় নেতৃত্ব। একই সঙ্গে দেশের মানুষের বিশ্বাস অর্জন, তাদের সহযােগিতা নিঃসন্দেহে এটা প্রমাণ হয় যে চলতি মােদী সরকার ৬ দশকের নিষ্কর্মের ফারাক ৬ বছরে ভরাট করে একটি আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণের শক্তপােক্ত ভিত তৈরি করেছে।
বিশ্বের ক্ষণভঙ্গুর ৫টি অর্থনীতির আওতা থেকে ভারতকে অন্যতম অগ্রণী অর্থনীতির স্তরে তুলে নিয়ে যাওয়া, সন্ত্রাসবাদের আগ্রাসী কবল থেকে বের করে এর বিরুদ্ধে একটি নির্ণায়ক সফল লড়াই গড়ে তােলা কম কথা নয়। স্বচ্ছতাকে। দেশবাসীর জীবনযাত্রার অঙ্গ করে তােলা থেকে গ্রামগুলির পরিবর্তন ঘটিয়ে গরিব কৃষকের জীবনে প্রাচুর্যের মুখ দেখানাে কয়েকটি উদাহরণ। দেশবাসী মােদী সরকারের প্রথম দফায় দেখেছে, এই সরকার যে কোনাে চ্যালেঞ্জের পরিস্থিতি থেকেই সুযােগ তৈরি করে নিতে পারে। সেইসূত্র ধরেই দ্বিতীয় পর্বের প্রথম বছরেই মানুষ সরকারের কাজেকর্মে তাদের স্বপ্নপূরণের নিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছে।
বিজেপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনী ইস্তাহারে থাকা প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতিকে রূপায়িত করেছে ও করছে। ইস্তাহার যে নিছক কথার কথা নয়, কাজে তার প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তিকেই আরও মজবুত করল। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বহু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত যেমন জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলােপ করা, বহু প্রতীক্ষিত রামমন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত করা তার মধ্যে অন্যতম।
মুসলমান মহিলাদের তিন তালাক দিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ করে দেওয়ার অভিশাপ থেকে মুক্তি ও দশকের পর দশক ধরে বঞ্চিত। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রদান স্বাধীনতার পরের ঐতিহাসিক ভুলগুলির সাহসী সংশােধন। কেবলমাত্র বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘আয়ুষ্মন ভারত’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৫০ কোটি গরিব মানুষ আজ চিকিৎসার খরচ জোটানাের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত। উজ্জ্বলা যােজনার মাধ্যমে কোটি কোটি মহিলা আজ খুশি। বার্ষিক ৬ হাজার টাকা কৃষকদের খাতায় সরাসরি চলে যাওয়া তাদের ক্ষমতায়নেরই প্রমাণ। প্রত্যেক গরিব ভারতীয়র নিজস্ব আবাস ও ‘জনধন’-এর মাধ্যমে ব্যাঙ্কে যাওয়ার অধিকার প্রদান সারা ভারতকে জোড়ার পরিকল্পনারই অঙ্গ। এই কাজগুলির মাধ্যমে মােদী সরকার এ যাবৎ অচিন্তনীয় ‘কাজের সঙ্গে সংস্কারের অসাধারণ মেলন্ধন ঘটিয়েছে। মনে রাখা দরকার, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি সংসদের উভয় সভার সম্মতিক্রমেই পাশ হয়েছে। যদিও রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না।
সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির ওপর কঠোরতম আঘাত দেশের মধ্যে এক অন্য ধরনের আত্মবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করেছে। নতুন প্রবর্তিত ইউএপিএ এবং এনআইএ আইনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের মুখ ভোতা করে দেওয়া হয়েছে। ভারতের সাহসী বিদেশ ও প্রতিরক্ষা নীতি দেশকে বিশ্বের প্রথম সারিতে নিয়ে এসেছে। বাস্তবে সারা বিশ্বে ভারত সম্পর্কে ধারণায় আজ আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। দ্বিতীয় দফায় সরকার প্রথম বছরেই সারা বিশ্বে চলা অর্থনৈতিক মন্দার আবহে অর্থনীতিকে বেগবান করে তুলতে বেশ কতকগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্য অসামরিক বিমানক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়ােগে ছাড়পত্র, কোম্পানি করে ছাড়, অনেকগুলি ব্যাঙ্কের একত্রীকরণ, কোম্পানি আইনের ধারায় প্রয়ােজনীয় সংশােধন এনে ছােটো ও মাঝারি উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির সহজে ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।
অনাদিকাল থেকে আটকে থাকা বােড়াে জনগােষ্ঠীর সমস্যার ইতিবাচক সমাধান মােদী সরকার-২ এর প্রথম বছরেই হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের তিনটি অংশ স্থল, আকাশ ও নৌবাহিনীর এক মিলিত প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের পদ তৈরি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত যা যুগান্ত ধরে অনিশ্চিত ছিল। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়ােগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় হবে (আমদানি কমায়)। কৃষক, শ্রমিক ও ছােটো ছােটো ব্যবসা চালানাে নিম্ন ও মধ্যমবর্গের লােকেদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করা থেকে এক দেশ এক রেশন কার্ড’ প্রথা চালু করা, ফসল ও শস্যের সহায়ক মূল্য দেড়গুণ বৃদ্ধি থেকে নির্দিষ্টবহু জেলায় বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয়েছে যে জনহিতকর প্রকল্প সঠিকভাবে চালানাের মাধ্যমেও জিডিপি-র সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটানাে যায়। সৌভাগ্য, উজ্জ্বলা বা স্বচ্ছ ভারত। অভিযানের প্রকল্পগুলিও তাে এরই অঙ্গ।
দেশে ভয়ংকর করােনা মহামারীর প্রকোপ থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে ‘লকডাউন’ জারি করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তব্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কী শিল্প, কী কৃষিক্ষেত্র বা অন্যান্য অর্থনীতি সম্পৃক্ত সকল বিভাগ বিঘ্নিত হয়েছে তা যথাযথ উন্নয়নের পথে ফেরাতে সরকার ২০ লক্ষ কোটি টাকার এক বিশাল বিনিয়ােগ পরিকল্পনা নিয়েছে। এর পরিণতিতে এক নতুন আত্মনির্ভর ভারত গড়ে ওঠার দিশা দেখা যাচ্ছে। বিগত দু’মাসের মধ্যেই এই প্রকল্পগুলির আওতায় শ্রমিক, কৃষক, বিধবা, বয়স্ক বা দিব্যাঙ্গদের ব্যাঙ্ক খাতাগুলিতে সরাসরি ৬০ হাজার টাকা পৌঁছে গেছে। এই অতি মহামারীতে প্রভাবিত গরিব পরিবারগুলিকে বাঁচাতে ৫ মাস বিনামূল্যে রেশন দেওয়া ও তাদের মনরেগা প্রকল্পে বাড়তি কাজ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা আগাম মজুত রাখা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে, মাত্র এপ্রিল মাসের গােড়াতেই ‘করোনা ভাইরাসের মােকাবিলায় প্রথম সারির যােদ্ধাদের উপযােগী পিপিই কিট, এন-৯৫ মাস্ক, ভেন্টিলেটর প্রভৃতি সরঞ্জামের জন্য আমরা আমদানির উপর পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলাম।। কিন্তু আজকের দিনে আমরা ইতিমধ্যেই ৫ লক্ষ পিপিই কিট, ২.৫ লক্ষ এন-৯৫ মাস্ক দেশের অভ্যন্তরেই তৈরি করছি। এই পরিমাণ প্রতিদিন বাড়ছে। ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভেন্টিলেটার এখন বিভিন্ন কোম্পানিতে তৈরি হচ্ছে যার দাম বাজার চলতি দামের চেয়ে অনেক কম। ১০ লক্ষেরও বেশি করােনা রােগীর জন্য শয্যা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিদিন ১.৫ লক্ষ সম্ভাব্য রােগীকে পরীক্ষা করা যায় এমন ল্যাবরেটরিও আমাদের প্রস্তুত।
বলতেই হবে, সময়মতাে লকডাউন ঘােষণার ফলে ভারত অনেককাংশেই করােনার বৃহত্তর সংক্রমণকে ঠেকাতে পেরেছে। মােদীর নেতৃত্বে ভারত আজ এমন একটি জাতি হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে চলেছে যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রােজগার ও প্রগতির অধিকার সকলের জন্য হবে সমানভাবে প্রযােজ্য।
একথা বলা পুনরাবৃত্তি হবেনা যে, বিগত ছ’ বছরে ভারত অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলেছে। ছয় দশকের কর্মণ্যতার শূন্যতাকে মাত্র ছ’বছরের মধ্যে মুছে ফেলে নতুন ভারত গড়ার যাত্রায় অবিসংবাদিত কারিগর নিশ্চিতভাবেই শ্রীনরেন্দ্র দামােদর দাস মােদী।
অমিত শাহ
(লেখক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)