ভারতের জনবিচ্ছিন্ন বিরােধী নেতারা ক্রমশই দেশের শত্রুদের হাতের পুতুল হয়ে উঠছেন


পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন ভুয়াে সােশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে টুইটারে ট্রেন্ড করিয়েও জেইই, এনইইটি রখে দেওয়া গেল না। ১ সেপ্টেম্বর নির্বিঘ্নেই দেশ জুড়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা শুরু হলাে। করােনা অতিমারী আবহে যােগাযােগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার জন্য পৌঁছতে সমস্যা হলেও পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থা দেখে এবং শেষপর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পেরে পরীক্ষার্থীরা খুশি। দেশ জুড়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সামান্যতম ক্ষোভ বা অসন্তোষও পরিলক্ষিত হয়নি। পরীক্ষা নেওয়ার বিরােধিতা করে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীর বিক্ষোভের ছবি সােশ্যাল মিডিয়ায় পােস্ট করা হয়েছিল তারা যে প্রকৃত পক্ষে পরীক্ষার্থীই নয় তার প্রমাণ হয়ে গেল। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত হওয়ায় সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের দিয়ে দেশের ভেতর রক্ত ঝরাতে ব্যর্থ হয়ে এখন সােশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভারতবিরােধী যুদ্ধে শামিল হয়েছে।
৩০ আগস্ট রবিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদীর মন কী বাত ইউটিউব চ্যানেলে আপলােড করা হয়। ৩১ আগস্ট সােমবার বিকেল পর্যন্ত লাইক বেশি থাকলেও ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার অর্থাৎ জয়েন্টএন্ট্রান্স পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে দেখা আপলােড করা যায় বক্তৃতার ভিডিয়ােতে ‘ডিসলাইক’ ছাপিয়ে গিয়েছে ‘লাইক’কে। বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য অবশ্য টুইট করে দাবি করেন, ‘ইউটিউবের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে ওই ডিসলাইকের মাত্র ২ শতাংশ ভারত থেকে
করা হয়েছে। বিজেপির অভিযােগ, কংগ্রেসের উদ্যোগেই নিট – জেইই আয়ােজনের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে ভুয়াে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অপপ্রচার করা হয়েছে। নাে এক্সামিনেশন গ্যাং-কে তােল্লাই দেওয়া সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ এই ‘অপছন্দ’আসলে সরকারের পরীক্ষা-নীতির সিদ্ধান্তের বিরােধিতা বলেই মনে করছেন অনেক। যেমন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান টুইটারে এই সংক্রান্ত খবর শেয়ার করে একে পড়ুয়াদের অনাস্থা হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। আনন্দবাজারকে নুসরত বলেন, ‘পড়ুয়াদের এই অতিমারীতে যেভাবে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হলাে, তার বিরােধিতার জন্যই এই ডিসলাইক।
পাকিস্তান ও চীনের মতাে দেশ থেকে তৈরি করা এই কৃত্রিম সরকার বিরােধী ‘জনমত’কে রাহুল গান্ধী, মমতা ব্যানার্জিরা নিজের জয় বলে উচ্ছাস প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। এর আগে রাহুল গান্ধী মমতা ব্যানার্জিদের বিভিন্ন বক্তব্য পাকিস্তান বিশ্বের দরবারে ভারত বিরােধী জনমত গঠনে কাজ লাগিয়েছে এমন দৃষ্টান্ত অনেক আছে। এই ঘটনাবলি থেকে স্পষ্ট যে ভারতের মাটিতে জনবিচ্ছিন্ন এই বিরােধী নেতারা ক্রমশই দেশের শত্রুদের হাতের পুতুল হয়ে উঠেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নব্য ‘জয়চঁাদদের’ আবির্ভাব ভারতের ভাগ্যাকাশে আবার কোনাে অশনি সংকেত বয়ে আনছে না তাে ?
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতি বছর এপ্রিল মাসেই জেইই, এনইইটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং জুলাই মাস থেকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। করােনা অতিমারীর জন্য এবার সময় মতাে এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রতি বছরের মতাে এ বছরও লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঘরে বসে অধীর আগ্রহে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছে। গত ১৭ আগস্ট সেপ্টেম্বরেন্যাশনাল ইলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (এনইইটি), জয়েন্ট এন্ট্রান্স এক্সামিনেশন (জেইই) আয়ােজন করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে ১ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর জেইই ও ১৩ সেপ্টেম্বর নিট পরীক্ষার আয়ােজন করতে নির্দেশ দিয়েছে। ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)।
ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির তরফ থেকে জানানাে হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের থার্মালস্ক্রিনিং করা, স্যানিটাইজার, গ্লাভস, টুপি সরবরাহ করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, পরীক্ষা কেন্দ্র সেনিটাইজ করার মতাে সমস্তরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রয়ােজনে করােনা সংক্রমিত পরীক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এবার সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষা হওয়ার ফলে এই শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বর মাসের আগে শুরু করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ডিসেম্বরে প্রথম সেমিস্টার অনুষ্ঠিত হতাে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম সেমিস্টারের সঙ্গে আপােশ করেই শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে। যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না আরও দেরি করে পরীক্ষা নেওয়া হলে এই শিক্ষাবর্ষকে নিরবচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব নয়। এই শিক্ষাবর্ষ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে না পারলে আগামী শিক্ষাবর্ষে চলমান বছরের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বিগুণ সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতিযােগিতা করতে হবে। যাতে অনেকেরই ভবিষ্যৎ অন্ধকার হওয়ার সম্ভাবনা, সেই সঙ্গে একটি বছর দেশ কোনােরকম ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার পাবে না।।
এই নির্দেশ আসতেই দেশজুড়ে রাজনৈতিক ঝড় তুলে দিলেন বিরােধী দলগুলি। নিট-জেইই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার দাবিতে শীর্ষ আদালত হাজির হলাে ছয়টি রাজ্য। দেশের অ-বিজেপি ছয়টি রাজ্যের মন্ত্রীসভার একজন করে সদস্য এই আবেদন করেছেন। এই ছয়টি রাজ্য হলাে– পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড়। ১৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল,“কেরিয়ার নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না। করােনা আগামী এক বছর চলতে পারে। এই এক বছর পরীক্ষা বন্ধ থাকবে? জীবন থেমে থাকতে পারে না। তাই সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।” এই রায় পুনর্বিবেচনার দাবিতে ২১ আগস্ট ফের সুপ্রিম কোর্ট
দরবার করেছে ওই ছয়টি রাজ্য। এদিকে, চলতি সপ্তাহেই অবিজেপি দলগুলােকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন সােনিয়া গান্ধী। জিএসটি খাতে রাজ্যগুলাের বরাদ্দ বৃদ্ধি ও নিট -জেইই স্থগিত রাখতে রণকৌশল তৈরির জন্যই ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে এই রাজনৈতিক আয়ােজন। এই দুই নিয়ে বিস্তর আলােচনা হয়েছিল বিরােধী জোটের এই বৈঠকে। তারপর এদিন সুপ্রিম কোর্টে এই দরবার।
বিরােধী দলগুলির হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে জেইই, এনইইটি ওরা যেন পড়ে পাওয়া ষােল আনা’রমতাে রাজনৈতিক ইস্যু হাতে পেয়ে গিয়েছেন। খুব সস্তায় জনদরদি হয়ে উঠারমতাে এতবড়াে সুযােগহাতছাড়া করা যায়? একদিকে যখন আনলকের সময় যানবাহন চলতে শুরু করেছে, রাস্তা-ঘাটে প্রচুর ভিড় হচ্ছে, কলকারখানা খুলছে, পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাচ্ছে, সেই সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে ছাত্র-ছাত্রীরা, অভিভাবক-অভিভাবিকারা সংক্রমিত হয়ে যেতে পারেন এই আশঙ্কা ছড়িয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির ছবি তুলে একটি কৃত্রিম আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। মাস্কহীন মানুষের ভিড় জমিয়ে ‘হেলথ বিফোর এক্সামিনেশন’ ব্যানার ঝুলিয়ে মিছিল করা হচ্ছে। শুধু সুপ্রিম কোর্টেই নয়, বিরােধী দলগুলির দাবিকে যথার্থ প্রমাণ করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে সােশ্যাল মিডিয়ায় এমনসব মিথ্যে খবর ট্রেন্ড করাচ্ছে যা দেখলে এটাই মনে হবে যে পরিকল্পনা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে। জি নিউজ এরকম বেশ কয়েকটি খবরের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখেছে সােশ্যাল মিডিয়ায় যে একটি বিক্ষোভ প্রদর্শনের ছবি পােস্ট করে বিরােধীরা এটা প্রমাণ করার প্রয়াস হয়েছে যে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরীক্ষার্থীরা লড়ছে, সেই ছবিটি আসলে ২০১৮ সালের অন্য একটি বিক্ষোভ প্রদর্শনের ছবি। এক পরীক্ষার্থী ওর বাবার করােনা পজিটিভ রিপাের্টের ছবি তুলে ধরে বলছে, আমি কীভাবে পরীক্ষা দেব? জি নিউজের ময়না তদন্তের রিপাের্টে বেরিয়ে আসে যে ওই কোভিড পজিটিভ রিপাের্টটি আসলে লাহােরের। হাতের শিরা কেটে এই পরীক্ষার প্রতিবাদ করছে এরকম একটি পােস্টের ময়না তদন্তে উঠে আসে যে অনেক দিন আগে সােশ্যাল মিডিয়ায় পােস্ট করা ওই ছবিটি অন্য কারণে পােস্ট করা হয়েছিল। বিভিন্ন মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার ময়না তদন্তে উঠে এসেছে যে সােশ্যাল মিডিয়ায় নাে এক্সামিনেশন মতের পক্ষে যে সমস্ত বিষয় ট্রেন্ড করানাে হচ্ছে তাতে পাকিস্তানিদের বড়াে ভূমিকা রয়েছে। নিট জেইই বন্ধের দাবিতে পাকিস্তানিদের আগ্রহ দেখে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই এই প্রতিবাদের উদ্দেশ্য। সরকার যদি এই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিতাে তাহলে হয়তাে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আন্দোলন হতাে এবং এই আন্দোলনের জন্য একই ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হতাে। কারণ করােনার মধ্যেই বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে এই দলগুলি ইতিমধ্যেই সােচ্চার হয়েছে।
আজ যারা জেইই, নিট নেওয়ার বিরােধিতা করছে এই তারাই কিছুদিন আগে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও ৩৫-এ পুনরায় লাগু করার দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘােষণা করেছিল। এই ইস্যুতেও পাকিস্তান এই দলগুলির পাশে দাঁড়িয়েছিল। বিভিন্ন ইস্যুতে বিশেষ করে কেন্দ্র সরকার বিরােধী যে কোনাে ইস্যুতে এই বিরােধী দলগুলির পাশে যেভাবে সন্ত্রাসবাদের আতুড়ঘর পাকিস্তান দাঁড়াচ্ছে তাতে এই প্রশ্নটি উঠে আসছে দেশ বড়াে না ক্ষমতার রাজনীতি বড়াে?
এদিকে কেরলে একেবারে নীরবে এই করােনার মধ্যেই ১৩ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেল। মে মাসে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা আয়ােজন করা হলেও পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কোভিডের সংক্রমণ ধরা পড়ল না। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী তমাস আইজ্যাক গত ১৫ জুন একটি টুইট করে তিনি জানান, ১৪ দিন আগে ১৩ লক্ষ স্কুলপড়ুয়া তাদের স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। একজন পড়ুয়াও কোভিডে আক্রান্ত হয়নি।
দেশের অন্য রাজ্যগুলি যখন পরীক্ষার সূচি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে, তখন কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর থমকে থাকার পরীক্ষা শুরু করার ঘােষণা করে দিয়েছিল কেরল। গত ২৬ মে এই পরীক্ষা শুরু হয়। অবশ্যই পরীক্ষা আয়ােজন করার জন্য কেন্দ্রের অনুমতির প্রয়ােজন ছিল আর সে অনুমতি কেন্দ্র দিয়েও দিয়েছিল। পরীক্ষা শেষ হয় ৩১ মে। রাজ্যের তিন হাজারটি পরীক্ষাকেন্দ্রে এই পরীক্ষার আয়ােজন করা হয়। প্রত্যেক কেন্দ্রেই দু’জন করে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ােগ করা হয়। পরীক্ষার্থী-সহ যাঁরা যাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকছেন, তাদের স্বাস্থ্যের দিকে কড়া নজরদারি চালানাে হয়। করােনা সংক্রমণ প্রকাশিত হতে প্রায় ১৪ দিন লেগে যায়। সেজন্য পরীক্ষা শেষের ১৪ দিন পর কেরলের অর্থমন্ত্রী থমাস আইজ্যাকের টুইট করে জানান :
14 days ago 13 lakh school students completed school final exams in Kerala. Not a single student affected by Covid. It was meficulously planned : schools sanitised. Masks distributed to all. Thermal readings mandatory. Physical distancing ensured. Operation success. #covidkerala Thomas Isaac (@drthomasisaac) June 15, 2020′
সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা চালালে যে সংক্রমণ এড়ানাে যায় সেটা আইজ্যাকের এই দাবিতেই স্পষ্ট। আনলক সেপ্টেম্বরের তুলনায় সম্পূর্ণ লকডাউনের মে মাসে করােনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ছিল। সে সময় কিন্তু কোনাে রাজনৈতিক দল কোনাে প্রতিবাদ করেনি, কোনাে মিছিল হয়নি, কেউ সুপ্রিম কোর্টে যায়নি কিংবা সােশ্যাল মিডিয়াতেও কোনাে ফেক নিউজ চালায়নি। অতি বিপ্লবী বামপন্থী সংগঠনগুলিও শীত ঘুমে চলে গিয়েছিল। এর থেকে স্পষ্ট বােঝাই যায় নিপাপ পরীক্ষার্থীদের বলির পাঁঠা বানিয়ে বিজেপি বিরােধিতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এদিকে ভারত ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেড় শতাধিক শিক্ষাবিদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদীকে এই পরীক্ষা আয়ােজনের পক্ষেই সায় দিয়ে চিঠি। লিখেছেন। তাঁদের মতে, জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন) (JEE Mains) এবং নিট নিয়ে। আরও দেরি করা মানে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের সঙ্গে আপােশ করা হয়ে যাবে। তারা আরও লেখেন, ‘কিছু মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে একথাও বলা হয়েছে, “যুবসমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীরা জাতির ভবিষ্যৎ, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনেও অনিশ্চয়তার মেঘ জমে উঠেছে। ভর্তি ও পঠনপাঠন। সম্পর্কে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে প্রাথমিক ভাবে তার সমাধান করা দরকার।”
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে সরকার জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন) এবং নিট পরীক্ষার দিন ঘােষণা করে দিয়েছে… এখন পরীক্ষা নিতে আরও দেরি করা মানে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যবান একটি বছর নষ্ট করে দেওয়া। আমাদের যুবসমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে কোনও মূল্যেই আপােশ করা যাবে না। তবে কেউ কেউ তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে এবং সরকারের বিরােধিতা করার জন্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের সঙ্গে খেলার চেষ্টা করছে।
ওই বিশেষ চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ইগনু, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়, জেএইইউ, বিএইচইউ, আইআইটি দিল্লি এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় , বেন গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকী ইজরায়েলের মতাে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কর্মরত ভারতীয়। শিক্ষাবিদরা।
“আমরা দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করি যে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের সম্পর্কে যত্নশীল হবে এবং ২০২০-২১ সালের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারটি বজায় রাখা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করেই জয়েন্টের মেন এবং নিট পরীক্ষা সফলভাবে পরিচালনা করবে।” গত ২৬ সেপ্টেম্বরই জাতীয় পরীক্ষক সংস্থার প্রকাশিত অ্যাডমিট কার্ড ইতিমধ্যেই ডাউনলােড করেছে ১৪ লক্ষেরও বেশি পরীক্ষার্থী। ওড়িশা সরকার যে সমস্ত শহরে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে সে রকম ৭টি শহরে পরীক্ষা চলা পর্যন্ত লকডাউন বাতিল বলে ঘােষণা করেছে। পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য রাজ্যজুড়ে যাতায়াতের অনুমােদন দিয়েছে। পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড হাতে নিয়ে তারা ব্যক্তিগত গাড়ি, ভাড়া করা গাড়ি কিংবা পাবলিক ট্রান্সপাের্টে ভ্রমণ করতে পারে। ওড়িশা রাজ্য সরকার ঘােষণা করেছে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানাের জন্য বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থাও করবে। অন্যদিকে এই লেখা পাঠানাের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, করােনা ভাইরাসের প্রকোপ কমাতে সেপ্টেম্বরের ৭, ১১ ও ১২ তারিখ রাজ্যজুড়ে কমপ্লিট লকডাউন হচ্ছেই। এদিকে ৭ তারিখ লকডাউন হওয়ার জন্য ৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শেষ করে পরীক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা এবং ১১, ১২ লকডাউন হওয়ার জন্য ১৩ তারিখ নিট পরীক্ষার জন্য পড়ুয়ারা পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবে কিনা এই নিয়ে প্রবল চাপে রয়েছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের পরীক্ষা বিরােধী অবস্থানে পরীক্ষার্থীরা আদৌ নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা এইনিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এই সংশয় এ রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের উপর একটি বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি করেছে, যা অবশ্যই প্রতিযােগিতায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে বড়াে প্রতিবন্ধকতা। রাজ্য সরকারের এই মানসিকতা সমস্ত দিক থেকে পিছিয়ে থাকা একটি রাজ্যকে যে আরও পিছিয়ে দেবে এই বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই।
সাধন কুমার পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.