আমফানের তাণ্ডব চলছে, সেই সঙ্গে সক্রিয় হচ্ছে দেশবিরোধী শক্তি- এমন ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল রাজ্যবাসী। এবার তাদের নতুন অস্ত্র হলো সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে কেন আমফানের খবর কভারেজ না করে করোনার খবর করা হচ্ছে। এত গেল বাহ্যিক অভিযোগ। অভিযোগের আসল উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার ধুয়ো তুলে, পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশের সঙ্গে। মিলিয়ে দেওয়া। প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার, যে সর্বভারতীয় মিডিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ তাদের কর্ণধাররা কিছুদিন আগেও পর্যন্ত এই শ্রেণীর দেশবিরোধীদের কাছে অতি প্রিয় মানুষ ছিলেন তাদের দেশবিরোধিতায় মদত জোগানোর কারণে। আজ পন্থা পালটেছে কিন্তু উদ্দেশ্যের বদল হয়নি। তাই কিল খেয়ে কিল হজম করার মতো দু’পক্ষই পারস্পরিক সহাবস্থানে আছে। আপামর বাঙ্গালির এই জাতীয় মিডিয়াকে চিনে রাখা উচিত, এরা কতটা পশ্চিমবঙ্গ বিরোধী। বিজেপি বিরোধিতার মুখোশ পরে যারা আসলে পাকিস্তান ও চীনের দালালি করে, ভারত বিরোধিতাই যাদের মূল লক্ষ্য। এই টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং মিডিয়া বাদ দিলে আরও বেশ কিছু সর্বভারতীয় মিডিয়া আছে আমফানের সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছিল। হ্যা, তার মধ্যে বর্তমানে টুকরে টুকরে গ্যাঙের চক্ষুশূল অর্ণব গোস্বামীর রিপাবলিক টিভিও আছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া নিয়মিত আমফানের সংবাদ দিয়েছে, এমনকী পশ্চিমবঙ্গে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার বিশদ বিবরণও। তারপরেও এই ঘোলাজলে মাছ ধরা কীসের তাগিদে? এর উত্তর খোঁজার আগে আমাদের দেখতে হবে এর পেছনে কারা আছে? এর পেছনে আছে একটি নকশালি গোষ্ঠী যারা আপাতত উগ্র আঞ্চলিকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে দেশ জুড়ে ভাষা দাঙ্গা লাগাতে চায়, মূল উদ্দেশ্য পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করা। এদের আরও বড়ো লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিয়ে। দিয়ে স্বাধীন বাংলাস্তান’ গঠন করা। এক দশক আগেই এই বাংলাস্তান গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। মূলত পেট্রোডলারের কারবারিরা, আরব সাম্রাজ্যের দালালরা এই পরিকল্পনা। করেছিল। লক্ষ্য ছিল আরও একটি জিহাদি ইসলামিক দেশ গঠন করে বাঙ্গালি হিন্দুদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করা। সেইমতো বাংলাদেশে জামাত গোষ্ঠী কাজ করে চলেছে। এপার পশ্চিমবঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করছে। উপরোক্ত নকশালি গোষ্ঠী। তাদের সবাই চেনে কোনো এক পক্ষ’ নামে। আরব দুনিয়ার দালালরা এদের প্রত্যক্ষ মদত জুগিয়ে চলেছে।
এই সংগঠনের প্রধান ‘চট্টোপাধ্যায়’ পদাধিকারী ব্যক্তিটির সঙ্গে জামাত গোষ্ঠীর দহরম-মহরম অনেকেরই জানা। বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টিও সে। এরা রাজনৈতিক আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে রাজ্যের শাসকদলকে। প্রথমত, সেই দলের কোনো নীতি আদর্শের বালাই নেই, ক্ষমাতাই টিকে থাকাই মুখ্য উদ্দেশ্য। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু মানুষের সেন্টিমেন্টকে। অসুদ্দেশ্যে ব্যবহার করে শাসকদলের রাজনৈতিক দুর্বলতা সুকৌশলে কাজে লাগিয়েছে এরা। কিছুদিন আগে রাজ্যের এক মন্ত্রীর ‘ক্যাব ও একটি বাঙালি মৃগয়া প্রকল্প শিরোনামে একটি সভার আয়োজন বুঝিয়ে দিয়েছিল, শাসকদল কাদের অঙুলি হেলনে পরিচালিত হয়। এনআরসি, সিএবি, সিএএ বিরোধিতার সময়ে ও এরা বাঙ্গালি সেন্টিমেন্টের ধুয়ো তুলে পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াস নিয়েছিল, কিন্তু সেভাবে যুত করতে পারেনি। তারও আগে এরা ভোটের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়েছিল, কিন্তু রাজ্যবাসী নির্বিচারে গোহারা করায় উসকানি দেওয়ার পরিকল্পনা আপাতত মুলতুবি রাখতে হয়। আগেই বলা হয়েছে, এরা প্রত্যক্ষ ভাবে রাজ্যেরশাসকদলকে রাজনৈতিক মদত দেয়, ফলে আরও একটা সুবিধা পায়। এদের দুষ্কর্মগুলো অনায়াসে অনুমোদন পেয়ে যায় প্রশাসনের। কিন্তু মতাদর্শভাবে এরা প্রত্যেকেই কমিউনিস্ট, একেবারে উগ্র অতিবাম। অর্থাৎ মাও সমর্থক। চীনের প্রতি দরদ এদের উথলে ওঠে। এই করোনা সংকটকালে সারা বিশ্ব যখন চীনের প্রতি ঘৃণা ছেটাচ্ছে, তখন এরা চীন কত মহান, সে দেশ কেমন সমাজতন্ত্রী– নিরন্তর এই তত্ত্ব। আউড়ে চলেছে সোশ্যালমিডিয়ায়। এদের পূর্বজরা মতাদর্শভাবে এক হলেও যেহেতু সিপিআই(এম) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ঢুকে তার সুযোগসুবিধা পুরো ভোগ করছে, তাই এরা তাদের ধান্দাবাজ মনে করত, পোশাকি নাম দিয়েছিল শ্রেণীশত্রু। আজ এদের উত্তরসুরিরা বুঝে গিয়েছে সিপিএমের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। আজও এদের গণতন্ত্রে আস্থা নেই।তৃণমূলে আশ্রয় নিয়ে এরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যতটা বিঘ্নিত করা যায় তা করে চলেছে। অর্থাৎ এরা সেই আদি অকৃত্রিম নকশাল যারা ভারতীয় সেনাকে আক্রমণ করাকে তাদের একমাত্র মোক্ষ বলে মনে করে, অনেকটা জিহাদিদের ‘হুর’ প্রাপ্তির মতো। আজ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাপ্রেমের মুখোশ পরে কী একটা ‘পক্ষ’ নাম নিয়েছে। মাঝে মধ্যে অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাত যে এদের মধ্যে বাধে না তা নয়। তবে দেশবিরোধিতার প্রশ্নে এরা এককাট্টা।
একটা জিনিস বুঝতে হবে। এরা আরব দুনিয়ার স্বার্থে পরিচালিত হয়। তাই এদের উদ্দেশ্য হিন্দুস্বার্থের পরিপন্থী, আরও একটা ইসলামিক দেশ নির্মাণই এদের লক্ষ্য। এরা জাতে বামপন্থী। আর বামৈস্লামিক শক্তি বঙ্গভূমির কতটা সর্বনাশ করতে পারে তার সাক্ষী আমরা হয়েছি ১৯৪৭ সালে। এখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। কারণ বাংলাপ্রেমের মুখোশ পরে নিয়েছে এরা। খেয়াল করলে দেখা যাবে, কয়েক বছর যে ধুয়ে উঠেছে বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা নাকি আকবর; গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক নয়, তা এদেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। এর সপক্ষে রয়েছে শুধু অপযুক্তি যার কোনো বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। তবু প্রচার চলছে জোরদার। এই পক্ষের কেউ কেউ আবার কারিগরদের নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে রটাচ্ছে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ছিলন কারিগরদের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু। তারপর থেকে নাকি তাদের অবস্থা পড়তির দিকে। এমনতর নানা কিসিমের নকশাল ‘পক্ষ’অবলম্বনই হয়ে হিন্দুরাষ্ট্রের জুজু দেখিয়ে আপামর বাঙ্গালিকে পথভ্রষ্ট করে চলেছে। ইসলামিক দেশ গঠনের পরিকল্পনাটা এবার স্পষ্ট হচ্ছে তো?
গিরগিটির চাইতেও দ্রুততায় রং। পালটানোর ক্ষমতা রাখে এরা। তাই যুক্তিবাদের ভেক ধরে কখনো এরা ভারতীয় সংস্কৃতি, কৃষ্টি, এমনকী মানুষের সেন্টিমেন্টকে আঘাত করতে উদ্যত। লকডাউন কালে আমরা তা বার বার দেখেছি। তাই এদের সম্পর্কে সমগ্র ভারতীয়, বিশেষ করে হিন্দু বাঙ্গালির বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। রাজ্যের বর্তমান শাসকদল ‘দুধেল গাই’দের যেমন চটাবে না, সেই একই কারণে এদেরকে হাতে রাখতে চাইবে। কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শ উদ্দেশ্য এদের সঙ্গে মেলে, রাজনীতির ব্যবধান যাই হোক। ফলে এই মুহূর্তেপক্ষ’দের রাজনৈতিক অবস্থান যথেষ্ট সুদৃঢ়। ১৯৪৭ সালের পদধ্বনি কিন্তু আবার শোনা যাচ্ছে, বরং আরও মারাত্মকভাবে।
অভিমন্যু গুহ