আজকের এই ভারতবর্ষ প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে বর্ণিত ঐক্যবদ্ধ অখণ্ড ভারতবর্ষ নয়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে চাণক্য রচিত অর্থশাস্ত্র থেকে অখণ্ড ভারতের রূপ আমরা অনুধাবন করতে পারি। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে আজকের আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বার্মা, তিব্বত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, এই আধুনিক দেশগুলাে ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
চাণক্য একটি অখণ্ড ভারতের ধারণা প্রকাশ করেছিলেন। তার পরিকল্পনা ছিল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে ভারতবর্ষের সমস্ত গণরাজ্য এক কর্তৃত্ব, শাসন এবং প্রশাসনের অধীনে আনা। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বার্মা, তিব্বত, ভুটান, বাংলাদেশ, ভারত-এই আধুনিক দেশগুলাে খ্রিস্ট পূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে অনেকগুলি স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে মৌর্য সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসতে সহযােগিতা করেন। তারপর অখণ্ড ভারত গঠনের পরিকল্পনায় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে পরামর্শ ও নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধ, বুদ্ধি এবং জোটের মাধ্যমে খণ্ড খণ্ড রাজ্যগুলিকে নিয়ে তার এই অখণ্ড ভারত গঠনের প্রয়াস অনেকাংশে সফল হয়েছিল। যদিও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পতনের পর অস্থিরতা দেখা দেয় এবং অখণ্ড ভারত গঠনের পরিকল্পনা ব্যাহত হয়। মুঘল আগ্রাসনের সময় অনেকগুলি রাজপরিবার তাদের ক্ষমতা সমর্পণ করলেও রাজপুত ও মারাঠাদের মতাে অনেক ভারতীয় রাজা লড়াই জারি রেখে মুঘল আগ্রাসনের বিরদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিলেন। অর্থাৎ অখণ্ড ভারত গঠনের স্বপ্ন কোন নতুন ধারণা নয়—এই ধারণা ভারতের অতীতের আদর্শ।
ব্রিটিশদের ভারত আগমনের ফলে ভারতবর্ষে নিদারুণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ব্রিটিশরা ভারতের ইতিহাসকে চিরতরে বদলে দেয়। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্রিটিশরা ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ‘বিভাজন এবং শাসন’এহেন হুমকি কখনাে আলােচনারমাধ্যমে ভারতের প্রতিটি রাজ্যকে আক্ষরিক অর্থেই ব্রিটিশ শাসনাধীন নিয়ে আসে। ভবিষ্যতে এই রাজ্যগুলাের একত্রীকরণের প্রতিরােধে ব্রিটিশরা দেশীয় রাজ্যগুলাের পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে মতপার্থক্য সৃষ্টি করে একের বিরুদ্ধে অন্যকে শত্রুতে পরিণত করেছিল। অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ ভারতের সম্মুখে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হাজির করেছিল। অনেক বলিদানের ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে খণ্ডিত ভারত তার স্বাধীনতা ফিরে পায়।
হিন্দু মহাসভার নেতা বিনায়ক দামােদর সাভারকর একটি অখণ্ড ভারত ও একটি অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণা প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখদের ভারতীয় উপমহাদেশ কাশ্মীর থেকে রামেশ্বর এবং সিন্ধু থেকে অসম সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এব রাজনৈতিক ঐক্যের উপর জোর দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রচারক এবং ভারতীয় জনসঙ্ঘের নেতা পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় অখণ্ড ভারতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “অখণ্ড ভারত শব্দটিতে জাতীয়তাবােধের সমস্ত মূল মূল্যবােধ এবং একটি অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অখণ্ড ভারত শুধুমাত্র একটি ধারণা নয়, এটি একটি সুচিন্তিত নির্ধারিত লক্ষ্য। যারা অবিচ্ছেদ্য স্তম্ভ হিসাবে বিভাজনকে বিবেচনা করে তারা সকলেই বিপথগামী ও বিভ্রান্ত হয়। এই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি কেবলমাত্র মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতা ও ভালবাসার অভাবের প্রতিফলকে বােঝায়। অটক থেকে কটক, কুচ থেকে কামরূপ এবং কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত পুরাে ভূভাগ জন্মভূমি। এই বিস্তীর্ণ ভূভাগ শুধুমাত্র আমাদের জন্মভূমি নয়, এই সমগ্র অঞ্চল আমাদের পবিত্র ভূমি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা এখানে জন্মগ্রহণ এবং কালক্রমে বসবাস করেছেন। এই ভূমি আমাদের চরম পবিত্র ভূমি। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক শ্রীগুরুজী ১৯৪৯ সালের ২৪ আগস্ট দিল্লিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানকে একটি “অনিশ্চিত দেশ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, “বিভাজন যদি নিস্পত্তি হয় তবেই আমরা তা নিষ্পত্তি করতে এখানে এসেছি। বাস্তবে এই বিশ্বে ‘স্থির সত্য বলে কিছু নেই। মানুষের ইচ্ছার দ্বারা বিষয়গুলাে নিষ্পত্তি বা অমীমাংসিত হয়ে থাকে। যদি কোনাে মানুষ নিজের ইচ্ছাকে উৎসর্গ করার মনােভাব দ্বারা চালিত করেন, তবে তিনি নিজেকে ধার্মিক ও গৌরবান্বিত করতে পারেন।”
আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় আলাদা হলেও ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের বসবাসকারী সমস্ত মানুষ একই জাতির অন্তর্ভুক্ত দেশভাগের ফলস্বরূপ আমরা কেউ লাভবান হতে পারিনি। বরং আমাদের শক্তি ক্ষয় হয়েছে। যদি আজকে অখণ্ডভারত বিরাজমান থাকতাে, তাহলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তিধর দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারত, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা গ্রহণ করতে পারতাে। অখণ্ড ভারতের ধারণা না থাকলে মহাভারত নামে কোনাে মহাকাব্য রচিত হওয়া সম্ভব ছিল না। মহাভারতে সমস্ত ভারতীয় রাজাদের জড়িয়ে রেখেছে। ভারতবর্ষ বা আর্যাবর্তের ধারণা প্রাচীন গ্রন্থগুলি থেকে আমরা পাই। প্রাচীন গ্রন্থগুলি থেকে আমরা জানতে পারি হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী, গান্ধার থেকে ব্রহ্মদেশ হলাে অখণ্ড ভারত। মহাভারত থেকে আমরা জানতে পারি, গান্ধার থেকে আগত ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারী (বর্তমান আফগানিস্তানের কান্দাহার), পাঞ্চালের দ্রৌপদী (বর্তমান জম্মু ও কাশ্মীর), পূর্বে মণিপুরের চিত্রাঙ্গদা, নাগাভুমির রাজকন্যা উলুপী এই মজার বিষয়গুলাে।
রামায়ণে একইভাবে অযােধ্যা থেকে রামেশ্বর পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণের যােগসূত্রটি বর্ণনা করা আছে। যেখানে লঙ্কার (বর্তমানে শ্রীলংকা নামে পরিচিত) উল্লেখ করা আছে। অর্থাৎ রামায়ণের কাহিনি বর্ণনাকারীদের ভারতবর্ষকে সাংস্কৃতিকভাবে অন্তঃসংযােগ সত্তা হিসাবে ধারণাটি বর্তমান ছিল। এখানে উত্তরাঞ্চলের তিরুপতি এবং দক্ষিণাঞ্চলের কুম্ভ মেলার উল্লেখ পাওয়া যায়।
ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভক্তি আন্দোলনের শিকড় দাক্ষিণাত্যের তামিল ও কানাড়া ভাষায়ও ছিল। রাজ্যগুলির সীমা পরিবর্তন হয়ে গেলেও ভারতবর্ষ জুড়ে প্রচুর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐক্য অব্যাহত ছিল। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐক্য আমাদের অবাক করে দেয়। আমরা দেখতে পাই, যখন দক্ষিণে শিব ভক্তির জন্য মহান আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তখন কাশ্মীরের শৈবধর্মের ভ্রান্ত দর্শন উত্তরে বিকাশ লাভ করেছিল। দক্ষিণের কবি কুম্বন প্রথম রামকাহিনিকে প্রধান আঞ্চলিক ভাষায় নিয়ে গিয়েছিলেন। এর বহু পরে তুলসীদাসের আন্দোলন শুরু হয়। ভক্তি আন্দোলন আমাদের প্রাচীন কাহিনিগুলিকে সংস্কৃত ভাষা থেকে সাধারণ মানুষের ভাষায় অর্থাৎ আঞ্চলিক ভাষায় ফিরিয়ে দিয়েছিল। বাংলা , মারাঠি, অবধি (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ), ভােজপুরি (বর্তমান বিহার), গুজরাটি, পাঞ্জাবি, রাজস্থানি ভাষায় বিভিন্ন দর্শন ও মহাকাব্যগুলি রচনা হতে থাকে। চৈতন্যদেব যখন বঙ্গদেশে বৈষ্ণবধর্মের প্রচার করছিলেন তখন তুকারাম বিঠলদেবের কীর্তন করছিলেন। ভারতীয় উপাসনার জগতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রূপে, যথা—রাম, কৃষ্ণ, জগদম্ব, বেঙ্কটেশ্বর, দুর্গা বা কালী রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কোনাে ধর্মীয় নির্দেশ ছাড়াই এই সাধারণ কাহিনিগুলি ভারতবর্ষ জুড়ে সাংস্কৃতিক তথা ধর্মীয় ঐক্যের সূচনা করেছিল। সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীতে তামিল সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রচার আলবার এবং নায়নারদের সাথে শুরু হয়েছিল, যা দ্বাদশ শতাব্দীতে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন কামবান। দ্বাদশ শতাব্দীতে কন্নরে বসবেশ্বর, পঞ্চদশ শতকে বঙ্গদেশে মহাপ্রভ চৈতন্যদেব, রামানন্দ; ষষ্ঠদশ শতকে রসখান, ব্রজমণ্ডলে সুরদাস, রাজস্থানে মীরাবাঈ, পাঞ্জাবে তুলসীদাস, নানক এক সাংস্কৃতিক ঐক্যের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছিলেন।
ভারতবর্ষের পবিত্র ভূমিতে এই সাংস্কৃতিক ঐক্যের ধারণাটি শঙ্করাচার্যকে বেদান্তের রহস্য উদঘাটনে ভারতবর্ষ ভ্রমণ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এই পবিত্র ভূমি যদি দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদানে যুক্ত না থাকতাে তাহলে শঙ্করাচার্য কখনােই দেশব্যাপী ভ্রমণ করতেন না। পশ্চিমে দ্বারকা (গুজরাটে), পূর্বে পুরী (ওড়িশায়), উত্তরে বদ্রীনাথ (উত্তরাঞ্চল) ও দক্ষিণে (কর্ণাটক) মঠ স্থাপনের জন্য উৎসাহিত হতেন না। শঙ্করাচার্য কাশ্মীরের শ্রীনগরে (শ্ৰী বা শক্তির বাসস্থান) গিয়েছিলেন। হাজার বছরের বেশি আগের ভৌগােলিক তথা সাংস্কৃতিক ঐক্যের বেঁচে থাকার একটি সুনিদর্শন।
আমরা ভক্তি ও বেদান্ত এবং রামায়ণ-মহাভারতের সম্পর্কে আলােচনা করেছি। ঐক্যের এই ধারণাগুলাে আমাদের বিভিন্ন বিস্তৃত দর্শনকে ঘিরে রেখেছে। তন্ত্রবিদ্যা জনপ্রিয় উপাসনার উপর এক বিরাট প্রভাব পড়েছিল। বর্ণিত হয়েছে ৫১টি শক্তিপীঠের স্থান মাহাত্ম্য। অসমের কামাখ্যা মন্দির, গুজরাটের পাবাগড়, জম্মুর বৈষ্ণোদেবী থেকে তামিলনাড়ুর নীলাদীক্ষি সহ মােট ৫১টি জায়গায়। এই গল্পগুলি প্রকৃত বা প্রতীকী যাই হােক না কেন, তাদের কাছ থেকে এটা পরিষ্কার যে এই গল্পগুলাে যারা বলেছিলেন এবং যারা শুনেছিলেন তাদের মনে ভারতবর্ষের ধারণা বিদ্যমান ছিল। মানব বন্ধনের গল্পে অন্যান্য সংস্কৃতিতে অভিবাসন, বিবাহ এবং ধারণাগুলির বিনিময়ের পাশাপাশি এই সমস্ত গল্পগুলি আমাদের একত্রে আবদ্ধ করেছে।
ভারতের ধারণাটি ভারতীয় উপমহাদেশে অবস্থিত একটি সভ্যতা। ভারতের বিশাল অংশগুলাে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীভূত শাসনের অধীনে ছিল। সত্য প্রকাশের পরিবর্তে এই তথ্যগুলাে ততক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা আমাদের দেশের ঐতিহাসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুধাবন করতে পারব, আমরা নিছকই একটি দেশ নই; আমরা একটি সুসভ্য রাষ্ট্র। পৃথিবীর অন্যতম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম।
ভারতবর্ষ খণ্ডিত স্বাধীনতা লাভের পর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল খণ্ডবিখণ্ড ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি সংযুক্ত ভারতের ধারণা দিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত ১৯৫০ এর দশকের গােড়ার দিকে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করেন। তবে একসময় যে ভারত ছিল, সেই অখণ্ড ভারত তা নয়। চাণক্য স্পষ্টভাবে অখণ্ড ভারত বলতে বুঝিয়েছেন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বােডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং এমনকী ইন্দোনেশিয়ার কিছু অংশ একই শাসনতান্ত্রিক ও প্রশাসন ব্যবস্থার অধীনে ছিল। এই অঞ্চলগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগােষ্ঠী হিন্দু ধর্ম পালন করত। আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধ হলেও থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, বার্মার মতাে অনেকগুলাে দেশে হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান করছে। মালয় লােককাহিনীতে বিদাডারী, জেন্টায়ু, গরুড় এবং নাগা জাতির প্রচুর ভারতীয় প্রভাবিত প্রাচীন চরিত্র রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, কম্বােডিয়া, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের ধ্রুপদী নৃত্য-নাটক রামায়ণ ও মহাভারতের পর্বগুলি থেকে গল্প নিয়েছিল। ফিলিপাইনের পৌরাণিক কাহিনিতে পরমেশ্বর দেবতা বাখালা এবং দেওয়ার ধারণা এবং কর্মের উপর বিশ্বাসগুলি হিন্দু বৌদ্ধ ধারণার দ্বারা উৎপন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্য এবং একই ধরনের হিন্দু মন্দিরের স্মৃতিস্তম্ভ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি মন্দিরে ব্যবহৃত হতাে। যা উৎসর্গীকৃত হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর কাছে। ইন্দোনেশিয়ার মধ্য-জাভাতে প্ৰাম্বানন ত্রিমূর্তি উৎসর্গিত হয়েছে ব্রহ্মা বিষ্ণু এবং মহেশ্বরকে। ইন্দোনেশিয়ার মধ্য-জাভাতে বােরােবুদুর বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। এই স্থূপগুলির সঙ্গে মুকুটযুক্ত একটি বিশালাকার পাথর মান্ডালা আকার নিয়েছিল। পূর্ববর্তী এই ঐতিহ্যের সহেগ ভারতীয় বংশােদ্ভূত বৌদ্ধ ধারণার সংমিশ্রণ রয়েছে। পঞ্চদশ থেকে ষােড়শ শতাব্দীতে ইন্দোনেশিয়ার মসজিদগুলির সঙ্গে হিন্দু মন্দিরগুলির সাদৃশ্য রয়েছে। মালয়েশিয়া বাট গুহাগুলি ভারতের বাইরে অন্যতম জনপ্রিয় হিন্দু মন্দির। ব্রহ্মাকে উৎসর্গীকৃত ইরান শ্রীণ থাইল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় ধর্মীয় মন্দির।
আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় আলাদা হলেও ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে বসবাসকারী সমস্ত মানুষ একই জাতির অন্তর্ভুক্ত। দেশভাগ আমাদের কাউকেই লাভবান করে তােলেনি, বরং আমাদের শক্তিক্ষয় হয়েছে। তাই ভারতবর্ষ যদি অখণ্ডরূপে বিরাজমান থাকত তবে বিশ্বের একক শক্তিধর দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারত এবং বিশ্ব শান্তির নির্মাতা হতাে। তবে আমরা আশাবাদী, নিকষকালাে অন্ধকার ভেদ করে যেমন পূর্ব দিকে সূর্য উদয় হয়, তেমন করেই ভারতবর্ষ আবার,অখণ্ডরূপে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে। তাই, ঋষি অরবিন্দ ঘােষের সেই অমােঘ বাণীই আমাদের স্বপ্ন—“আমি পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি যে ভারতমাতা পুনরায় একত্রিত হবার পরে বিশ্বগুরুর আসনে আবার সিংহাসন প্রাপ্ত হবে।”
রুদ্রপ্রসাদ