শ্রীকৃষ্ণদা আমাদের মধ্যে নেই। তিনি চিরশান্তির পথে বিরাজমান হয়েছেন। ব্যক্তি তাে অমর নয়, তাকে এক সময় চলে যেতেই হবে। এটাই স্বাভাবিক। মৃত্যু আছে বলেই জীবনের আনন্দ। তবুও এমন কিছু ব্যক্তি থাকেন যাঁর চলে যাওয়ায় আমাদের মন বিচলিত হয়ে যায়। শ্রীকৃষ্ণ মােতলগজী তেমনই একজন ছিলেন। তিনি এমন একজন প্রচারক ছিলেন যার লক্ষ্য ছিল ‘ওয়ান লাইফ ওয়ান মিশন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর নাগপুর থেকে সঙ্ঘের প্রচারক হিসেবে বের হন। জীবনের সব চেয়ে স্বর্ণিল সময় পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের সঙ্ঘ কাজে নিয়ােজিত ছিলেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রান্ত প্রচারক, ক্ষেত্রপ্রচারক, অখিল ভারতীয় সহ প্রচারক প্রমুখের দায়িত্ব সামলে শেষের দিকে বছর চারেক আগে নাগপুর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলে যান এবং সেখানেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কয়েকবছর আগে একটি কেন্দ্রীয় বৈঠকের পর আমরা নাগপুর কার্যালয়ে শ্রীকৃষ্ণদার সঙ্গে দেখা করতে যাই। নাগপুর কার্যালয় তখন সুরক্ষার ঘেরাটোপে বন্দি। আমরা যথাযােগ্য নিয়ম পালন করে কলকাতা থেকে এসেছিসমর্পণ শ্রীকৃষ্ণদার সঙ্গে দেখা করতে চাই বলে অনুমতি পেলাম। তখন তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। বিছানার পাশে বসে অনেক কথা হলাে। পুরাতন পরিচিতদের খোঁজ খবর নিলেন। কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাঁর কলকাতা আগমন উপলক্ষ্যে ফেরার পথে মুম্বই দূরন্ত এক্সপ্রেসে নাগপুরের আগে ট্রেনে অনেক কথা হয়। শেষের দিকটায় আর বেশি দেখা হয়নি। কিন্তু ২৫-৩০ বছর বিভিন্ন। সময় নানান ঘটনার সাক্ষী থেকেছি। অনেক কথা মনে পড়ছে। ভারাক্রান্ত মনে সব কথা লেখা যায় না। আমরা যখন জুনিয়র প্রচারক ছিলাম, জেলা/বিভাগের দায়িত্ব ছিল, তখন তিনিও আমাকে অনেক কাছ থেকে দেখেছেন। অনেক বছর এক সঙ্গে প্রবাস করেছি। তার যেমন ব্যক্তিত্ব ছিল, তেমন দৃষ্টিতে ছিল গাম্ভীর্য। তাকে বিব্রত অবস্থায় দেখেছি যখন ত্রিপুরায় আমাদের বঙ্গপ্রদেশের চারজন কার্যকতার অপরহরণ হয়। তদানীন্তন সরকার, স্বয়ংসেবক এবং সমাজের আশা নিরাশার দ্বন্দ্বে, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের নাগরদোলায় কার্যকর্তাদের যােগ্য পথনির্দেশ তিনি শান্ত ভাবে করেছেন। তিনি সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। একটা কথা শ্রীকৃষ্ণদা বলতেন, মাত্র এক বছরের জন্য সঙ্রে প্রচারক হয়ে বেরিয়েছিলাম, প্রতি বছর এক্সটেনশন করতে করতে কবেই যে প্রচারক জীবনের ৫০ বছর পেরিয়ে গেল তা বুঝতেই পারলাম না।
এইরকম নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণদা। এটাই হলাে প্রচারকের গুণ— সমর্পণ, মন সমর্পণ এবং জীবন সমর্পণ।
ডাঃ শচীন্দ্রনাথ সিংহ
(লেখক বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যকর্তা)
2020-08-31