নাগরিক সংশোধনী বিল এখন আইন। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। উদ্বাস্তুদের এই আইনি নাগরিকত্বের দাবি দীর্ঘদিনের, চার দশকের পুরানো দাবি। নাগরিক সংশোধনী আইনের ফলে বাংলাদেশ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুরা নাগরিক হয়ে গেলে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমানদের বেআইনি চিহ্নিত করতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস নাগরিক সংশোধনী আইন ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার শুরু করে দিয়েছে।
ইতিহাস সাক্ষী, তলোয়ার, হিংসা, লুণ্ঠনের জোরেই ইসলামের প্রসার হয়েছিল দ্রুত। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা কেবলমাত্র তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেসের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের। উপর ভরসা রাখতে পারে না। ফলে গত ১৩ ডিসেম্বর জুম্মাবার থেকে তারা শুরু করেছে একেবারে ১৯৪৬-এর কলকাতা দাঙ্গার পুনরাভিনয়। একেবারে পরিকল্পনা মাফিক না হলে একই দিনে, প্রায় একই সময়ে পার্ক সার্কাস, মেটিয়াবুরজ, উলুবেড়িয়া, বেলডাঙ্গা, গার্ডেনরিচ, নিউটাউন, ধর্মতলা, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ— আরও অনেক স্থানে একই ধরনের সহিংস বিক্ষোভ ঘটা সম্ভব নয়। ঠিক যেরকম ১৬ আগস্ট, ১৯৪৬, জুম্মাবার মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগ কলকাতায় ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র নামে কলকতায় দাঙ্গা শুরু করে। ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র ঘোষণায় জিন্না বলেছিলেন যে এতদিন ব্রিটিশ মেশিনগান ও কংগ্রেস অসহযোগের অস্ত্র দিয়ে আমাদের শাসিয়েছে। এবার আমাদের হাতেও আছে। পিস্তল এবং আমরা তা ব্যবহার করতে প্রস্তুত। ১৩ ডিসেম্বরের শুক্রবারের সহিংস বিক্ষোভের ছবি টেলিভিশনে ও পরের দিনের কাগজে সবাই দেখেছেন। সেই লুঙ্গি-টুপি পরিহিত হাজার হাজার মানুষ কোথাও আগুন লাগাচ্ছে, কোথাও ট্রেন আটকে আস্ফালন করছে, কিছুক্ষণ অবরোধ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলে যাওয়া— এসব নিরামিষ ব্যাপার নয়। জানিয়ে দেওয়া হলো— হাতে পিস্তল আছে। কোনো সংগঠন এর দায় নিচ্ছেনা, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এসব ঘটনার কোনো নিন্দা করেননি, বরং তিনি হুমকি দিয়েছেন। তিনিও পথে নামছেন।
১৬ আগস্ট ৪৬ -এর দাবি ছিল মুসলমানদের জন্য হোমল্যান্ড পাকিস্তান গঠনের। আর তার জন্য সহিংস আক্রমণ। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯-এর দাবিও পশ্চিমবঙ্গকে পাকিস্তান বানানোর ও তার জন্য সহিংস আক্রমণ। এই আক্রমণের পরোক্ষ সমর্থনে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বামপন্থীরা। মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ও পেশী শক্তি এখন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল ও তা ধরে রাখার প্রধান চাবিকাঠি। সুতরাং ১৩ ডিসেম্বরের ডাইরেক্ট অ্যাকশন পাকিস্তান তৈরির আন্দোলনে আবার ১৯৪৬ ফিরে এসেছে।
১৯৪৬-এর ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-তে সরকার থেকে দাঙ্গাকারীদের লরি পেট্রোল, কেরোসিন জোগান দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দি ১৬ আগস্ট নিজে লালবাজার কন্ট্রোল রূমে বসে থেকে পুলিশ যাতে কিছু না করে তা দেখতে থাকেন। নির্বিবাদে চলে হত্যা লুণ্ঠন। মৌলানা আজাদ বা ফজলুল হক, দুজনেই দাঙ্গার জন্য লিগ সরকারকে দায়ী করেন। বাঙ্গলার আইনসভায় (বিধানসভা) শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি সুরাবর্দিকে প্রশ্ন করেন কেন সেদিন তিনি শহরটিকে গুন্ডা, অপহরণকারী ও লুণ্ঠনকারীদের হাতে তুলে দিলেন? সুরাবর্দির বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে লুণ্ঠনকারীদের ছাড়িয়ে আনার অভিযোগ ছিল। শ্যামাপ্রসাদ সুরাবর্দিকে আইনসভায় বলেছিলেন ‘গুন্ডার সর্দার। আজকের পশ্চিমবঙ্গে ‘গুন্ডার সর্দার’ কে?
অনেকটা আজকের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে না! ঠিক যেরকম ২০০৭ সালে মধ্য কলকাতায় ইসলামি মৌলবাদী গুন্ডারা তসলিমা নাসরিনের বিতাড়নের দাবিতে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে ভাঙচুর, লুণ্ঠন অগ্নিসংযোগ দিনভর চালিয়ে গেল, কমিউনিস্ট বুদ্ধিবীজী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিছুই করলেন না, পরে মিলিটারি এল। ২০১০-তে দেগঙ্গায় ইসলামি মৌলবাদী গুন্ডারা ভাঙচুর, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ চালালেও মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পুলিশ কিছুই করেনি। এরপর তৃণমূল। ২০১৭-এত কলকাতার পাশেই ভাঙড়ে এক সম্প্রদায়ের মানুষ ১০টি পুলিশ ভ্যান জ্বালিয়ে বা পুকুরে ফেলে পুলিশ পেটালেও পুলিশ কিচ্ছু করেনি। কালিয়াচকে হাজার হাজার ইসলামি মৌলবাদী থানা জ্বালিয়ে দিলেও কিছু করা হয় না। আর ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, আবার টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে ভাঙচুর, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ চলল দিনভর। পুলিশ দেখা যায়নি।
কিন্তু ১৯৪৬ সালের কলকাতার ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে একতরফা সফল হয়নি। শুরু হয় প্রতিরোধ। শুরু হয় প্রতিশোধ। মানুষের মুখে মুখে ঘুরেছে বাঙ্গালির ত্রাতা গোপাল মুখার্জি (গোপাল পাঁঠা)-র নাম। হিন্দুদের এই সক্রিয় প্রতিরোধ ইসলামি আক্রমণকে পর্যুদস্ত করল। ফলে কলকাতা বা পুরো পশ্চিমবঙ্গটাই পাকিস্তানে যায়নি, বরং গঠিত হলো বাঙ্গালি হিন্দুর হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গ। আজ তাই নাগরিক সংশোধনী আইনের সুবিধায় যাঁরা উজ্জ্বল জীবনের পথে এগোবেন, তাঁদের দায়িত্ব এক ইসলামি হিংসার বিরুদ্ধে পথে নামা। দিকে দিকে উদ্বাস্তু কলোনি থেকে মিছিল বেরুকে, বাজুক শঙ্খ, ঢাক, উড়ুক গেরুয়া পতাকা— ঘোষণা দিন— পশ্চিমবঙ্গে ইসলামি দৌরাত্মের দিন শেষ। আবার চলতে শুরু করেছে শশাঙ্ক, প্রতাপাদিত্যর রথ।
মোহিত রায়
2019-12-27