কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে / এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপে/দেখেছিল।সত্যি সত্যিই বহুদিন পরে এমন সময় আসে। যখন চম্পক নগরীর কাছে প্রাণচঞ্চল বাঙ্গলার মুখ দেখা যায়। যে বাঙ্গলা ভারতবর্ষকে নবজাগরণের পথ দেখিয়েছিল।
যেদিন হতাশ সমাজের উদ্ধারের জন্য নদীয়ার নিমাই পণ্ডিত ভগবান শ্রীচৈতন্য হয়ে উঠেছিলেন, সেদিন বাঙ্গলায় এমন দিন এসেছিল। কলকাতার সিমলাপল্লীর ছেলে নরেন্দ্রনাথ দত্ত যেদিন জগৎ কাপিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে এসেছিলেন সেদিনও সারা ভারতবর্ষ তাকিয়ে দেখেছিল বাঙ্গলার মুখ।
যেদিন বার্লিন রেডিয়ো থেকে বাঙ্গলার সুভাষ বলেছিলেন, “আমি সুভাষ বলছি, সেদিনও বাঙ্গলার মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু সুভাষ ঘরে ফেরেননি। ভারতকেশরী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নেকড়ের মুখের থেকে পশ্চিমবঙ্গকে ছিনিয়ে এনেছিলেন। তিনি একদেশে এক বিধান, এক প্রধান, এক নিশানের দাবি নিয়ে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। আজ অন্য সব প্রদেশের মতো কাশ্মীর ভারতে বিলীন হয়ে গেছে, কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ তার প্রাণ আহুতি দিয়েছেন। বারবার দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে। বাঙ্গলার মানুষ। সুখ যেন তার কপালে লেখেননি বিধাতা। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই নতুন দেশ বাংলাদেশের জন্মের আনন্দে ব্রিগেড ভরিয়ে দিয়েছিল বাঙ্গলার মানুষ। আজ পর্যন্ত সেই জনজোয়ারের রেকর্ড ভাঙা যায়নি। সেদিন ভারত আর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়ছিল মঞ্চে। দুই দেশের প্রধান বন্ধুত্বের শপথ নিয়েছিলেন। বাঙ্গলা মনে করেছিল তার দুঃখের দিন শেষ হলো।
কিন্তু তা হলো না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভেবেছিল তাদের আত্মীয় বন্ধু যারা ওপার বাংলায় আছেন তারা এবার শান্তি পাবে। তাদের দুঃখের দিন শেষ হলো। কিন্তু তা হলো না। বঙ্গবন্ধু নিজেও বাংলাদেশের সংবিধানকে সম্পূর্ণ মৌলবাদ মুক্ত করতে পারলেন না। নতুন বাংলাদেশের নতুন সংবিধানের প্রথম লাইনেই লেখা হলো, ‘বিসমিল্লাহ রহমান-ইর-রহিম’। পাকিস্তান সরকার যে শত্রু সম্পত্তি আইন প্রণয়ন করেছিল, তার বদলে এল অর্পিত সম্পত্তি আইন। হতভাগ্য হিন্দুরা তাদের সম্পত্তি ফিরে পেল না। এরপরেই ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ খুন হলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান। হিন্দুদের উপর অত্যাচার আবার শুরু হলো। ঢাকার একেবারে হৃদয়স্থলে অবস্থিত রমনা কালীমন্দির কয়েকশো বছরের পুরাতন। খান সেনারা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল রমনা কালীমন্দির। রমনায় মায়ের মন্দির আজও তৈরি হলো না।
এরপর থেকে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পরিণত হলো এক সম্পূর্ণ ইসলামি দেশে। সত্যি বা মিথ্যা কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেবলমাত্র হিন্দুদের উপরই অত্যাচার শুরু হলো। ফিরে এল ১৯৭১ সালের আগের পরিস্থিতি।
ওপার বাংলা থেকে ধর্ষিতা, লুণ্ঠিত, অত্যাচারিত হিন্দুর স্রোত এপারের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ভরে গেল। এরমধ্যেই ১৯৭৯ সালে ঘটে গেল সুন্দরবনের মরিচঝাপির নারকীয় হত্যাকাণ্ড। বামফ্রন্টের পুলিস নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করল পূর্ববঙ্গ থেকে আসা শতশত নিরীহ নিরস্ত্র তপশিলি জাতিভুক্ত হিন্দুকে। যারা এবার ভারতে এলেন তাদের অতিরিক্ত অসুবিধা হলো, ‘ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি। এই অত্যাচারিত বাঙালি হিন্দুরা নাগরিকত্ব পেল না। বারাসত, নদীয়া, রায়গঞ্জ, ক্যানিং কিংবা কুচবিহার সর্বত্র উদ্বাস্তু মানুষকে সহ্য করতে হলো পুলিশের অত্যাচার। রাজনৈতিক দলগুলি এই মানুষগুলির অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাদের বিনে মাইনের ভৃত্যের মতো ব্যবহার করেছে।
বিগত অর্ধশতক ধরে এক ভয়ানক রাজনৈতিক ভাবনা সমাজকে আচ্ছন্ন করে রাখে। বাঙ্গলার যে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গর্বের ধন তার মূলে ছিল তার শক্তিশালী সমাজ ব্যবস্থা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার স্বদেশী সমাজ রচনায় তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেছিলেন। এই সমাজই এত ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যেও বাঙ্গলাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। রবীন্দ্রনাথ সেই সমাজ বীথির মিলনস্থলে দাঁড়িয়ে ‘মা’ বলে ডাকার আহ্বান দিয়েছিলেন। বামপন্থীরা এই ‘মা’-কে ভুলিয়ে, দেশের সব ঐতিহ্য মুছে ফেলে, সমাজকে শেষ করে ফেলার কাজ শুরু করেছিলেন।
সমাজের স্থান নিল পার্টি। মানুষে মানুষে সম্পর্ক, গ্রামের মানুষের ভালোবাসা, পাড়া প্রতিবেশীর আন্তরিকতাকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো। পার্টি মনে করত যে জীবনের কোনো কিছুই রাজনীতি ছাড়া হয় না। তাই পরিবারের সমস্যার সমাধানেও ঢুকে গেল পার্টি। বাবা-ছেলের সম্পর্ক, ভাই-ভাইয়ের সম্পর্ক, ভাই-বোনের স্বাভাবিক সম্পর্ক, জায়ে-জায়ের সম্পর্ক সবকিছুকে ছিন্ন করে দিল পার্টি। সাতের দশকের থেকে চারদশকে হত্যা করা হলো পশ্চিমবঙ্গের ‘স্বদেশী সমাজ’কে। তার জায়গা নিল পার্টি অফিস।
শিক্ষা ক্ষেত্রে কেবল নিজেদের লোক খোঁজার ঠ্যালায় মান নেমে গেল। প্রাথমিক শিক্ষাকে শিকেয় তুলে পার্টিতন্ত্রের দলদাস তৈরি করা হলো। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন করা হলো ভারতীয় সংস্কৃতিকে। সংস্কৃত শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেল। ১৯৯৪ সালে ভারতবর্ষে প্রথম মাদ্রাসা বোর্ড শুরু হলো পশ্চিমবঙ্গে। ভারতীয় সংবিধানে। সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীর জন্য ভিন্ন পাঠ্য সিলেবাসের ব্যবস্থা নেই। খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলও সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেখানে পাঠক্রম আলাদা নয়। মৌলবাদ এরজন্যেই প্রথম সরকারি স্বীকৃতি পেল।
কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে একইরাজনৈতিক ভাবনার পুরুষ ও মহিলাই অধ্যাপনার সুযোগ পেতেন। তারাও তিরিশ বছর ধরে তাদের ভাবনার ছাত্র-ছাত্রীকেই চাকরি দিয়েছেন। ফলে একটা সময় কোনো এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেবল বামপন্থীই শিক্ষক ভর্তি হয়ে গেল। তখন তাদেরই একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হলো। স্যার আশুতোষ মুখার্জির মতো, ঋষি অরবিন্দের মতো শিক্ষাবিদদের বাঙ্গলা একটু একটু করে ভারতবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে গেল।
পার্টির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভোটে জেতা। তাই ভোটার লিস্ট থেকে শুরু করে বুথ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক রিগিং করার ব্যবস্থা ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন মুসলমান অনুপ্রবেশকারীকে পশ্চিমবঙ্গে আসতে দেওয়া হলো। ফলে ধীরে ধীরে সীমান্তবর্তী সব জেলাগুলিতে জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে গেল।
গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ এক নতুন মাত্রা পেল। জেহাদি সন্ত্রাসবাদী চক্র অনুপ্রবেশের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে স্লিপার সেল তৈরি করতে শুরু করল। যেমন শাকিল আহমেদ। শাকিল নদীয়ার করিমপুরে বামদলের সাহায্যে ভোটার লিস্টে নাম তুলেছিল। এরপরে ভারতীয় মেয়েকে সিমুলিয়ার মতো খারিজি, মাদ্রাসার মাধ্যমে সংগ্রহ করেছিল। এরপরে বর্ধমানের কাছে খাগড়াগড়ে ইম্প্রোভাইড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বানাবার কারখানা তৈরি করেন। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবরেই ভীষণ বিস্ফোরণে মারা গেল শাকিল আহমদ। কিন্তু আজও সঠিকভাবে জানা নেই পশ্চিমবঙ্গে কতশত শাকিল আহমেদ কতগুলি স্লিপার সেল তৈরি করেছে? কালিয়াচকের থানা আক্রমণ থেকে শুরু করে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভেও এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর উপস্থিতি স্পষ্ট।
মানুষ অনেক আশা করে পরিবর্তনের দিকে তাকিয়ে ছিল। মানুষে মানুষে ভালোবাসা ফিরে আসবে, গরিব মানুষের অর্থ চুরি বন্ধ হবে, পুলিশ প্রশাসন দলদাসের মতো কাজ করবে না। কিন্তু বাঙ্গলার মানুষের দুঃখ যেন চিরসঙ্গী হয়ে গেছে। পরিবর্তনের পরে পরেই যেন পশ্চিমবঙ্গ গরম তাওয়ার থেকে একেবারে গনগনে আগুনের মধ্যে পড়ে গেল।
৩৪ বছরের শাসনে বাঙ্গলা নিজের সমাজকে হারিয়েছিল, আর এই কয়েক বছরে বাঙ্গলা তার চরিত্র হারালো। কয়েক বছর আগেও গ্রাম বাঙ্গলার কোনো এক দরিদ্র মানুষকে কিছু টাকা এমনি এমনি দিলে সে লজ্জা পেত, প্রতিবাদ করত। টাকা নেওয়ার পরে বারবার প্রশ্ন করত যে এই টাকার বিনিময়ে তাকে কী কাজ করতে হবে। ভিক্ষার টাকা বাঙ্গালি নিতে চাইত না। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরে বাঙ্গালির এই সম্মানবোধ যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে। টাকা দিয়ে ক্লাবের পর ক্লাব, গ্রামের পর গ্রাম, হাজার হাজার মানুষকে কেনা যায় বলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। মানুষ যেন মনে করছে অসৎ উপায়ে টাকা নেওয়াটা ঘুষ নেওয়াটা, পরিশ্রম না করে টাকা পাওয়াটাই দস্তুর। গ্রামের থেকে শহরে সর্বত্রই যেন চরিত্র হারিয়েছে বাঙ্গলা।
ইসলামি মৌলবাদ বিগত কয়েক বছরে এরাজ্যে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে। সিমির মতো নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মৌলবাদী, জামাতের বহুদিনের দায়িত্বে থাকা নেতারা কলকাতায় জেহাদি আক্রমণে প্রকাশ্যে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারাই সংসদ থেকে বিধানসভায় রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাই ইসলামি মৌলবাদ আজ আর এরাজ্যে লুকোছাপা করে কাজ করছে না। কালিয়াচকে থানা লুঠ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। স্কুলে স্কুলে সরস্বতী পূজা বন্ধ করে দেওয়া হলো, হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো, কলকাতার রাস্তায় মিছিল করে কলকাতার মেয়র পদে, পুলিশ কমিশনার পদে মুসলমান করার দাবি করা হলো। ১৯৪৬ সালের মতো ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরি হয়েছে আজ পশ্চিমবঙ্গে।
২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরির অধিকর্তা সি.এন. ভট্টাচার্য এক ভয়ানক তথ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে আনলেন। মাওবাদীরা কাশ্মীরের মুজাহিদিন জঙ্গিদের সহযোগিতায় আফগানিস্তানের তালিবান উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে রেডিয়ো কন্ট্রোল্ড এক্সপ্লোসিভ টেকনোলজিআররিমোট কন্ট্রোল এক্সপ্লোসিভ প্রযুক্তি ভারতে এনেছে। এর মধ্যে ভারতে ঢুকে গিয়েছে প্রচুর বাংলাদেশি জেহাদি অনুপ্রবেশকারী। রাজনৈতিক শক্তি কেবল নিজেদের দুর্নীতি সামলাতেই ব্যস্ত। গদিতে টিকে থাকার জন্য জেহাদিদের সব দাবি মানতে প্রস্তুত। অনুমোদন দেওয়া হলো ১০৪০০ খারিজিমাদ্রাসাকে। সেখানে তৈরি হলো সিমুলিয়ার মতো ভয়াবহ প্রতিষ্ঠান, যেখানে কেবল উগ্র জঙ্গি প্রশিক্ষণই দেওয়া হতো।
এই সাংঘাতিক জেহাদি উন্মাদনার বিস্ফোরণ ঘটল প্রথমে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায়, তারপর ক্যানিং মহকুমার নলিয়াখালিতে। বাংলাদেশি লেখিকার নামে কলকাতাতে দাঙ্গা করে তিনদিন অচল রাখা হলো, কলকাতা ময়দানে মুক্তিযুদ্ধে নরসংহারকারী মৌলবাদীদের সমর্থনে মিটিং হলো। এইসব দেশবিরোধী মৌলবাদী কাজের মূল চেহারাগুলিই ছিল উর্দুভাষী রাজাকাররা। সেই ব্যক্তিরাই ক্ষমতার একেবারে অলিন্দে এসে গেল। পশ্চিমবঙ্গে যেন আবার হুসেন মহম্মদ সোহরাওয়ার্দির শাসন ফিরে এল। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের প্রমাণ প্রথমে রাজ্য প্রশাসন লোপাট করতে চেষ্টা করেছিল। কালিয়াচক, ধুলাগড়ের একতরফা হিন্দু নির্যাতন পুলিশ নির্বিকার নিশ্চল হয়ে দেখল। নদীয়ার জুড়ানপুরে দিনের আলোয় খুন করা হলো তপশিলি গরিব ভূমিহীন প্রান্তিক হাজরা পরিবারের নিরপরাধ। ৩ জন মানুষকে। তারা আজও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। স্কুলে স্কুলে সরস্বতী পূজা বন্ধ হলো। সরস্বতী পূজার আবদার করাতে স্কুল ছাত্রীকে মেরে রক্তাক্ত করা হলো।
ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা, সুচেতা কৃপালনীরা বেঙ্গলি হোমল্যান্ড চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গকে। সেখানে হিন্দু হয়ে জন্মানোটাই যেন অপরাধ হয়ে উঠল। দারিভিট স্কুলে বাংলাভাষার শিক্ষকের বদলে উর্দু শিক্ষক পাঠানো হলে ছাত্ররা প্রতিবাদ করায় পুলিশ গুলি চালিয়ে দুজন ছাত্রকে হত্যা করল।
হিন্দুদের উপরে এই অত্যাচারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্বল তপশিলি জাতি ও উপজাতির মানুষেরা। মরিচঝাপিতে যারা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের শতকরা ১০০ জনই নমঃশূদ্র সমাজের। বামফ্রন্ট বিদায়ের ঠিক আগে অসাংবিধানিক ভাবে মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রায় সবটুকুকেই অন্য অনগ্রসর শ্রেণী (ওবিসি-এ) করে গিয়েছিল। তথ্যের অধিকার আইনে দেখা গেছে যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের মাত্র তিনজন অধ্যাপক পার্টিতন্ত্রের মাধ্যমে চারমাসে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গকে সার্ভে করেছিলেন। প্রায় ১ কোটি টাকা এই মুষ্টিমেয় কয়েকজন কয়েকমাসে খরচ করে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণ এরাজ্যে চালু করেছিলেন। তারপর কোনো কাগজ প্রমাণ ছাড়াই মুসলমান সম্প্রদায়ের সকলেই এই সুযোগ পায়। এই পাপের ফলশ্রুতিতে সরকারি প্রায় কোনো প্রতিষ্ঠানে এস সি/এস টি রোস্টার ঠিকমত মানা হয় না। বঞ্চিত হতে শুরু করল পশ্চিমবঙ্গে তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের দরিদ্র হিন্দুরা।
যেসব জায়গাতে তপশিলি জাতি ও উপজাতির মানুষেরা সীমান্তবর্তীস্থানে জনবিন্যাসের পরিবর্তন রুখে দিয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করে আক্রমণ করা হলো, খুন করা হলো। সন্দেশখালি, গোসাবা তপশিলি জাতি প্রধান, হিঙ্গলগঞ্জও তপশিলি উপজাতির মানুষের আধিক্য, গোসাবাতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের জেলা কার্যবাহের বাড়ি সশস্ত্র আক্রমণ হলো। ২০০১ সালে বাসন্তী থানার সোনাখালির মোকামবেড়িয়ার ৪ জন স্বয়ংসেবকের হত্যার অপরাধীরা আজও শাস্তি পায়নি। সেই ধারা সমানে চলেছে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরে পরেই প্রদীপ মণ্ডল, দেবদাসের মতো সাহসী হিন্দু প্রতিবাদী ছেলেদের হত্যা করা হলো সন্দেশখালিতে। হিঙ্গলগঞ্জের অস্বাভাবিক দারিদ্রের জন্য প্রতিনিয়ত শোষিত হচ্ছে তপশিলি উপজাতির হিন্দুরা।
১৯৪৬ সালে অখণ্ড বাঙ্গলায় শতকরা ৪৪ শতাংশ হিন্দু ছিল। এখন বাংলাদেশের ১৬.৪৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৮.৫ শতাংশ হিন্দু আর পশ্চিমবঙ্গের ৯.৩ কোটি মানুষের ৭০.৫৪ শতাংশ হিন্দু। তাই সরকারি ভাবে দুই বাংলায় ২৫.৭৫ কোটি বাঙ্গালির মধ্যে ৭.৯৬ কোটি মানে হিন্দুর সংখ্যা কমে হয়েছে ৩০.৯১ শতাংশ। তাই বাঙ্গালি হিন্দু ৩০ শতাংশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে গাণিতিক হিসাবেও বেশিদিন লাগবে না। বাঙ্গালি হিন্দু আজ প্রকৃত অর্থে ‘আত্মঘাতী বাঙ্গালি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন আচার্যকে বের হয়ে যেতে হয়। রাজ্যপাল অপমানিত হন তখন বাঙ্গলার এগিয়ে থাকা সংবাদপত্র হাততালি দেয়। পঞ্চাশ বছর ধরে পূর্ববঙ্গের হতভাগ্য হিন্দু উদ্বাস্তুদের সম্মানজনক নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চিৎকার করছে এক দুষ্ট চক্র। সামান্য অর্থের প্রলোভনে নিজের সমাজ, ধর্মকে বিক্রি করতে প্রস্তুত। রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জেহাদিদের সাহায্যে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড পুড়িয়ে দিতে বা বাস ট্রাকে আগুন লাগাতেও দ্বিধা করছে না। বুঝতে পারছে না স্বামী বিবেকানন্দের, বঙ্কিমচন্দ্রের বাঙ্গলা ধ্বংস হয়ে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর কয়েক প্রজন্ম পরে কেউ রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করবে না, সমগ্র বাঙ্গলায় কোথাও শঙ্খধ্বনি হবে না কোনো সন্ধ্যায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালানোর মতো কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।
কিন্তু বাঙ্গলার সংস্কৃতির মূলে ছিল অধ্যাত্মবাদ। রাজা রামমোহন রায় আধুনিক ভারতে প্রথম ‘হিন্দু কলেজ স্থাপন করেছেন কলকাতায়। বেদান্তের সারগ্রন্থ তুফাত-উল-মুওয়াহহিদিন লিখেছিলেন, ঠাকুর শ্রীরামকষ্ণের পরিবারের কুলদেবতা ছিলেন রঘুবীর রামচন্দ্র। জমিদারের হয়ে মিথ্যে সাক্ষ্য দেবেন না বলেই গদাধরের পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় রঘুবীরের বিগ্রহবুকে নিয়ে দৌড়ে গ্রাম ত্যাগ করেছিলেন। রামকৃষ্ণদেবের অন্যতম গুরু জটাধারী তার বিগ্রহ রামলালাকে ঠাকুরের কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন। রামলালা ঠাকুরের সঙ্গে খেলা করতেন, লীলা করতেন।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আদেশেই স্বামী বিবেকানন্দ সারা পৃথিবীতে হিন্দুত্বের বিজয়তুর্য বাজিয়েছিলেন। বিশ্ববাসী জানতে পারল যে সবধর্ম সমভাবের মূল তত্ত্বই আছে হিন্দুধর্মে। বাঙ্গলা তথা সারা ভারতের জাগরণের কেন্দ্র হয়ে উঠল স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত বেলুড় মঠ।
অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সঙ্গে লালকাপড়ে বাঁধা থাকত দুটি বই ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’ আর ‘স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা। ভগিনী নিবেদিতা হয়ে উঠলেন বিপ্লবীদের প্রেরণাস্থল। তার প্রচেষ্টাতেই ইংরেজ সরকারের হাত এড়িয়ে বেরিয়ে গেলেন শ্রীঅরবিন্দ।
১৯০৫ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম ভারতমাতার চিত্র আঁকলেন। বেদ, বস্ত্র, কমণ্ডলু আর ধান্য হস্তে চতুর্ভুজা গৈরিক বসনা এক দেবী, পদ্মশোভিত সরোবর থেকে উঠে আসছেন। নিবেদিতা এই ছবি নিয়ে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ভারতভক্তি বিস্তারের কথা বলেছিলেন। প্রকৃত অর্থেই স্বদেশি আন্দোলনের উষ্ণতায় বাঙ্গলাদেশের পাড়ায় পাড়ায় তৈরি হয়েছিল ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের কল্পনার ‘ভবানী মন্দির। তাই বাঙ্গলার অগ্নিযুগের স্বদেশি আন্দোলন প্রকৃতঅর্থে ছিল হিন্দুত্বের জাগরণ।
সেই অগ্নিযুগের অগ্নিকুণ্ডে নিজেকে পুড়িয়ে চকচকে ইস্পাতে তৈরি হতে মধ্যভারতের নাগপুর থেকে এসেছিলেন এক মারাঠা যুবক কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার। ন্যাশেনাল মেডিক্যাল কলেজে তাঁর ডাক্তারি পড়াটা ছিল নিছক ছুঁতো। আসলে সে বিপ্লবী হতে চেয়েছিল। পুলিনবিহারী দাসের অনুশীলন সমিতিতে যোগ দিয়েছিল কেশবরাও। রামকৃষ্ণ মিশন যখন দামোদর নদীর বন্যায় ত্রাণকার্য করেছিল তখন দিনরাত এক করে সেই দলের হয়ে কাজ করেছিলেন কেশবরাও। তিনি তৈরি করলেন ভারতবর্ষের ইতিহাসের যুগান্তকারী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ।
স্বামী বিবেকানন্দের গুরুভাই স্বামী অখণ্ডানন্দ মুর্শিদাবাদ জেলার সারগাছিতে তৈরি করেছিলেন রামকৃষ্ণ আশ্রম। দারিদ্র্যক্লিষ্ট গ্রামবাঙ্গলার মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য তৈরি করেছিলেন এই আশ্রমকে গঙ্গাধর মহারাজ। এখানে স্বামীঅখণ্ডানন্দের শিষত্ব নিয়ে এসেছিলেন মাধবসদাশিব গোলওয়ালকর। অখণ্ডানন্দজীর তিরোধানের পরে তার নশ্বরদেহ নিয়ে বেলুড় মঠে এসেছিলেন শিষ্য মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর। ইনিই পরবর্তীকালে হয়েছিলেন সঙ্রে দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক। বাঙ্গলার মাটি থেকে উদ্ভূত রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ ভাব আন্দোলনকে শ্রীগুরুজী তাই খুব কাছ থেকে অনুধাবন করেছিলেন। শ্রীগুরুজীর ভাষায়। “শ্রীরামকৃষ্ণদেব সকলের হৃদয়ে এই বিশ্বাস জাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে আধুনিক শিক্ষার আড়ম্বরকে ছিন্ন করে প্রত্যেকের অন্তরে সৎপ্রবৃত্তি ও সজ্ঞানের আলোক প্রজ্বলিত করা সম্ভব। সকল ধর্মের সমন্বয় করে শুধুমাত্র ভারতেরই নয় সমগ্র বিশ্বের মানব সমাজের মধ্যে একাত্মতা স্থাপনের উদ্দেশ্যে আবির্ভূত হন। ওই অবতার। সেইজন্যই তো স্বামী বিবেকানন্দ তাকে ‘সর্ব-ধর্ম-স্বরূপ’ বলে বন্দনা করেছেন। তাঁর সম্পূর্ণ শক্তি এখনও প্রকাশ পায়নি। ঐশী শক্তি ধীরে ধীরে প্রকাশ পাবে।”
তাই এভাবে বোধ হয় শেষ করা যাবে না বীর বাঙ্গলাকে। রাজা প্রতাপাদিত্যের বাঙ্গলা, রাজা গৌরগোবিন্দের বাঙ্গলা, বাঘা যতীনের বাঙ্গলা এত সহজে হার মেনে নেবে না। প্রবল প্রতাপশালী মোগলদের কাছে যাদের পূর্বপুরুষ হার মানেননি, তারা ২০২০ সালে জেহাদি আর তাদের রাজনৈতিক ফেউদের ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে নেবে? বাঙ্গালি কেবল সংহত হতে পারলে অসাধ্য সাধন করতে পারে।
স্বামী বিবেকানন্দ সেই জাগ্রত বিবেকের প্রতীক। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ ২০১৩ সালের ১০, ১১, ১২ জানুয়ারি কল্যাণীর গয়েশপুরে ১৫ থেকে ৪০ বছরের ১০ হাজার হিন্দু যুবকের তিনদিনের শিবির করেছিল। এই ১০ হাজার যুবক স্বামীজীর মন্ত্র নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম থেকে শহরে ছুটেছে। স্বামীজী শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তিতে এরাজ্য কেঁপে উঠেছে হিন্দুত্বের আহ্বানে। এই তো ২০১৭ সালের ঘটনা।
বাঙ্গালি ছোট্টবেলা থেকে ছড়া কাটে ‘ভুত আমার পুত’ পেত্নী আমার ঝি, রামলক্ষ্মণ সাথে আছে ভয়টা আমার কী?
এই ছড়া যে কতটা সত্যি তা পশ্চিমবঙ্গেরমানুষ এবার প্রতক্ষ করলেন। হিন্দুসমাজ যেদিন শ্রীরামচন্দ্রের নামে পথে নামল সেদিন জেহাদি মৌলবাদ, রাজনৈতিক ধান্দাবাজি, মাওবাদ, উগ্ৰ অসহিষ্ণু বামপন্থা সবাই পাততাড়ি গুটিয়ে ঘরে ঢুকে গেল। যারা সংবাদ পরিবেশনের নামে মিথ্যার বেসাতি করেন তারা কয়েকদিন বাংলার ঐতিহ্য’হারিয়ে গেল, হারিয়ে গেল বলে চিৎকার করতে করতে হাঁপিয়ে উঠলেন। বাঙ্গলার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখলেন, বাংলাদেশে নরহত্যার সময় আপনারা কোথায় ছিলেন? কলকাতায় ২০০৭ সালে দাঙ্গার সময় আপনারা একটি লাইনও লেখেননি কেন? কলকাতার সংবাদমাধ্যমের সাহস, সততা, গৌরবকে আপনারা ক্ষুদ্র কায়েমি স্বার্থে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। এক তরফা মনোভাব আর মেরুদণ্ডহীন সাংবাদিকতার জন্যই আজ পশ্চিমবঙ্গে মৌলবাদ এত ভয়ানক আকার নিয়েছে। ফলত এইসব কাগুজে বাঘেদের যেন উপহাস করেই পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীর উৎসব, শোভাযাত্রা বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয়েছে, গ্রাম থেকে শহরে এরাজ্যে যেন এক সামাজিক উৎসবের চেহারা নিয়েছে। যেখানে যেখানে রামনবমীর শোভাযাত্রা বড়ো হয়েছে হিন্দু সমাজ সুরক্ষিত হয়েছে। রামনাম যেন মৃতপ্রায়, ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু সমাজের কাছে সঞ্জীবনী মন্ত্র হিসেবে উঠে এসেছে। ভগবান রামচন্দ্রও যেন বাঙ্গলার এই জাগরণের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। তাই এই জাগরণের পরেই যেন ১৭২ বছরের পুরাতন মামলা শেষ হলো। শ্রীরামচন্দ্র যেন কৃপা করেই তার মন্দির নির্মাণের সময়টা বাঙ্গলার নবজাগরণের সময়টাই বেছে নিলেন।
এবছর বাঙ্গলার আর এক অভিশাপের সমাপ্তির বছর। এবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর হবে। এই আইনে সারা ভারতবর্ষেসবচেয়ে উপকৃত হবেন পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বাঙ্গালি উদ্বাস্তুরা। সেই ধর্ষিতা, লাঞ্ছিতা, নিপীড়িত মায়েরা সম্মান পাবেন, যাদের পরিবারের আপনজনকে হারিয়েছেন তারা নিশ্চিন্তে থাকার জায়গা পাবেন। যেসবতপশিলি জাতিভুক্ত গরিব হিন্দু সব হারিয়ে এখানে এসে পুলিশের আর পার্টির নেতাদের ভয়ে থাকতে হবে না। পশ্চিমবঙ্গ আজ হয়ে উঠবে সত্যিকারের ‘হিন্দু হোমল্যান্ড’। পশ্চিমবঙ্গের সংগঠিত হিন্দু সমাজ দেশের বাইরের এবং ভেতরের হাঙর ভাঙরের মুখ থেকে শরণার্থী ভাই-বোনদের রক্ষা করে এবার ভারতীয় নাগরিকের মর্যাদা দেবেন।
পশ্চিমবঙ্গের হৃদয় হতে বঙ্গজননী অপরূপ রূপে বাহির হয়েছেন। বীর বাঙ্গালি আর হারবে না। জেহাদের টুটি চেপে ধরে, দেশদ্রোহিতার মূল থেকে উৎপাটন করে, রাজনৈতিক ধান্ধাবাজির চিরতরে অবসান। ঘটানোর সময় এসেছে। আজ একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, হিন্দু বিরোধী সবশক্তির কাছে, ভারতবিরোধী সবমতবাদের সামনে, পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে এটাই তাদের শেষ লড়াই। এই লড়াইতে হিন্দুরাই জিতবেন।
১৯৭৩ সালে অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার সমাপ্তি ভাষণে শ্রীগুরুজী যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার মূল বিষয় ছিল, ‘বিজয় হি বিজয়। এই সর্বস্পর্শী বিষয় বাঙ্গলার পুনর্জাগরণ ছাড়া সম্ভব নয়।
দেশদ্রোহীদের জন্য যেহেতু এটাই শেষ লড়াই, তাই তাদের নৃশংসতাও বাড়বে। গত দেড় বছর সময়ে বাঙ্গলার কত দেশপ্রেমিক তরতাজা প্রাণ মায়ের পায়ে বলিদান হয়েছে। ভাইয়ের সেই তাজা রক্ত নিয়ে কপালে তিলক করে সহস্র বীর আজ আবার স্বামী বিবেকানন্দের সেই মন্ত্র বজ্রনির্ঘোষে ঘোষণা করছে, ‘গর্ব করে বলো, আমি হিন্দু। তাদের হৃদয়ে অভয়বাণী বাড়ছে, “ভুলিও না তুমি জন্ম হইতেই মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত। এবার বিজয় সুনিশ্চিত।
ড. জিষ্ণু বসু
2020-03-13