স্বামী বিবেকানন্দ নচিকেতা সম। তিনি ও তার গুরু শ্রীরামকৃষ্ণদেব সেই সময়ের দূত যখন ধর্মান্তরণের বিষাক্ত বাতাস ভারতের হিন্দু সমাজকে ক্ষত বিক্ষত করছিল। আপন শ্রদ্ধার বলে নচিকেতা যমরাজের কাছ থেকে ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করেন। নচিকেতার সেই সনাতনী সমাজ আজ নিজেকে নষ্ট করছে। কারণ তারা নিজেরদের শিকড়টাকে শ্রদ্ধা করতে ভুলে গেছে, নিজেদের ইতিহাস ভুলে গেছে। স্বামীজী বলেছেন, যে সমাজ আত্মবিস্মৃত হয়। সে সমাজের অন্তিমক্ষণ দ্রুত ঘনিয়ে আসে। তিনি বিশ্বের দরবারে ভারতের তথা হিন্দুত্বের জয়গান গেয়েছিলেন। হিন্দু কী, ভারত কী? দুনিয়ার বাকি দেশ ও ভারত এক নয়। ভারত একটি রাষ্ট্র। রাষ্ট্র এক, রাজ্য। অনেক। হিন্দুত্ব ও ভারত একে অপরের পরিপূরক। ভারত একটি জীবনযাত্রা। একটি সনাতনী যাত্রা। পশ্চিমের দেশগুলি ভারতকে বুঝবে না। গান্ধার হতে শ্রীলঙ্কা অখণ্ড ভারতের অংশ ছিল। এই অখণ্ড ভারতের উপর বার বার বৈদেশিক আক্রমণ হয়েছে। শক্, হুন, কুষান, এমনকী গ্রিক সকলে এসে এই একদেহে লীন হয়েছে। পারেনি কেবল মোগল-পাঠানরা। তারা এসে অকথ্য অত্যাচার করেছে। মন্দির ধ্বংস করেছে। আমাদের স্বাভিমানে হাত দিয়েছে। তবুও আজকের বিকৃত ঐতিহাসিকরা। তাদেরই বন্দনা করেন। আত্মবিস্মৃতি ও পরানুকরণই এর কারণ। মুনিঋষিদের এই সুপ্রাচীন ভারত ছিল সোনার পাখি (সোনে কী চিড়িয়া)। মরুদস্যু, ইংরেজ, ওলন্দাজ, পর্তুগিজ যে যেখান থেকে পেরেছে সেই সোনার পাখির লোভে ভারতকে আক্রমণ করেছে। তার সঙ্গে অবশ্যই আক্রমণ হয়েছে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উপরও। এই সব প্রাচীন দেশ থেকে মানুষদের পশুর মতো ধরে এনে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করেছে। কিন্তু আমরা সুপ্রাচীন জাতি কেন ক্রীতদাস হয়ে থাকব? তাই বার বার আমরা বিদ্রোহ করেছি। নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি। কিন্তু আমেরিকার ইতিহাস ক’জন জানেন? মাত্র দু’শো-আড়াইশো বছরের ইতিহাসে সাদা চামড়ার মানুষ নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছে। তার থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়েছে। ইতালির বয়স ১৫০ বছর। জার্মানির বয়সকালও তাই। ব্রিটিশদের প্রকৃত বয়স মাত্র হাজার বছর। যুদ্ধ, যন্ত্রণা, স্বার্থ থেকে এদের উত্থান। এরা কী জানে ভারতকে ? এর সুপ্রাচীন ঐতিহ্য, এর সংস্কৃতিকে?
ভারতীয় ভাবনায় এখানে সবাই ব্ৰহ্ম। প্রাচীন ভারতে বৈদিক মুনিঋষিরা তাই উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করতেন ‘অহম্ ব্রহ্মাস্মি’ ‘আমিই ব্রহ্ম’ বা ‘আমি দিব্য। এখানে দেহ হলো খোলস, ভেতরে পরমাত্মা। সবার মধ্যে পরমাত্মা বাস করেন। জীবে প্রেম করে যে জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর। এখানে কেউ ছোটো বা বড়ো নয়। সমাজ গড়ে উঠেছে কর্মের ভিত্তিতে। এখানে সবাই সবার মঙ্গল। কামনা করেন। সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ। সর্বে ভদ্ৰানি পশ্যন্তু, মা কশ্চিৎ দুঃখমাপুয়াৎ। ওম শান্তি শান্তি শান্তি। অর্থাৎ সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কেউ যেন কখনও দুঃখ না করেন। সকলেই শান্তি লাভ করুন। আমরাই বেদ মন্ত্র উচ্চারণ করে তাই বিশ্বের মঙ্গল কামনা করে বলতে পারি বসুধৈব কুটুম্বক—অর্থাৎ গোটা বিশ্ব আমার আত্মীয় অর্থাৎ বিশ্বের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। এটি ভারতবর্ষের সার্বিক মন্ত্র।
গুরুগৃহে আমরা শিক্ষা পাই যে, ত্যাগ ও সেবাই জীবনচর্যার সূত্র। ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ এই রাষ্ট্রের চার পুরুষার্থ। ধর্মেচ অর্থে চ মোক্ষে চ ভারতৰ্ষভ। যদিহাস্তি তদন্যত্র যন্নেহাস্তি ন তত্ত্বচিৎ। ভারতে রাজ্য অনেক, রাষ্ট্র এক। মানুষ এক। এক রাষ্ট্র, এক জাতি, এক সংস্কৃতি। আমি যখন নেপাল গেছিলাম তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নেপাল-ভারত সম্পর্ক ভালো নয় কেন? আমি তখন বলেছিলাম, তিব্বত ও নেপাল যুদ্ধ করত। কিন্তু উভয়ের প্রজাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। কারণ নেপাল ও তিব্বত কোনো না কোনো ভাবে সনাতনী ছিল। নেপাল হিন্দুরাষ্ট্র। হিন্দুত্ব সেখানকার শক্তি এবং অখণ্ড ভারতের অংশ। সেভাবে দেখলে ভারত তাই অদ্ভুত দেশ। ভারতের প্রাণ হলো ধর্ম। স্বামীজী বলেছেন— ঈশ্বর প্রদত্ত ধর্ম দ্বারা চালিত ভারতের লক্ষ্য বিশ্বের কল্যাণ করা। আমরা পৃথিবীতে উপনিবেশ বানাইনি। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সারা পৃথিবীতে পৌঁছে দিয়েছি। খোটান থেকে কুচা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আমাদের সাংস্কৃতিক উপনিবেশ ছিল।
ব্রিটিশদের নিকট দীর্ঘ পরাধীনতার গ্লানি ভোগ করার পর বহু রক্তের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা তো পেল কিন্তু দেশ ভাগ হলো। কেন? কীসের ভাগ? ভারত তো অখণ্ড নতুন রাষ্ট্রনয়। রাষ্ট্র এক সাংস্কৃতিক ধারণা। তাহলে ইংরেজ ভাগ করবে কী ? বহুত্ববাদ ভারতের সনাতন ঐতিহ্য। তাহলে তার দেহ কেটে কেটে বার বার নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের চেষ্টা কেন? যারা আজাদির লড়াই চেয়ে ভারতের ভাগ চায় তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী অশুভ শক্তি। তারা সন্ত্রাসী। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভারত এক। তাহলে কেন ৩৭০ ধারা লাগু করে অখণ্ডতার অপমান করা হলো? আমরা সবাই এক ভারতের। কোনো এক ধর্ম, ভাষা, প্রাদেশিকতা কারুর কারুর পরিচয় নয়। ১৯৫২ সালে সেই স্বাভিমানে আবার আঘাত লাগল জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা চালু করে। মুসলমান অধ্যুষিত জম্মু-কাশ্মীর সাংবিধানিক গ্যারান্টি চাইল। যদিও কাশ্মীরে আগে কোনোদিনও মুসলমান সংখ্যাধিক্য ছিল না। সে এক বৃহৎ ইতিহাস। ১৯৪৭এ যখন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তান পেয়ে গেল, তারপরেও কাশ্মীরে আলাদা সংবিধান কেন? ড. শ্যামাপ্রসাদ প্রতিবাদ করলেন। প্রতিবাদের মূল্য চুকিয়েছেন তিনি জীবন দিয়ে। ১৪ মে ১৯৫৪ সালে ৩৫-এ লাগু হলো। দেশের মানুষকে আবার দু’ভাগ করা হলো। এক, ভারতের এক দল মানুষ জম্মু কাশ্মীরের। দুই, ভারতের বাকি মানুষ জম্মু-কাশ্মীরের নয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা এল, ভারতের পতাকা উড়ল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে কিন্তু ধর্মপ্রচার করতে আসেনি। পরে এসেছে। সেই মিশনারিদের নােংরা ইতিহাস অনেক বড়ো। ভারতের এমন ম্লেচ্ছরাই ইতিহাসকে নষ্ট করেছে। তাই ভারতের ইতিহাসের নায়ক ম্লেচ্ছ আক্রমণকারীরা হতে পারে না।
বহু বছর ধরে এভাবেই ভারতের মানুষকে নানা ভাবে ভাগ করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন নতুন ভারতের রূপান্তর ঘটছে। মুসলমান মহিলাদের অবমাননাকর তিন তালাক প্রথা রদ হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর ২০১৯ শ্রীরামজন্মভূমির পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতের রায় এসেছে। সেকুলাররা বলল কী দরকার এসবে? একদল বলল ওখানে ভারতের প্রথম মসজিদ ছিল। ইতিহাস সাক্ষী— ওখানে কখনো মসজিদ ছিল না। ভারতের পরিচয় রাম, কোনো বিদেশি অত্যাচারী সুলতানের সেনাপতি দ্বারা তৈরি বাবরি মসজিদ নয়। ঈশ্বর এক। তাঁকে যেমনভাবে খুশি ডাক। কিন্তু মন্দির নষ্ট করে মসজিদ? নাঃ, বহু হয়েছে। জমি রামলালার। তাই বাবরি ধাঁচা ধ্বংস হলো। ১৫ কোটি মানুষ রামজন্মভূমি উদ্ধার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। সারা দেশে শিলাপূজা হলো। এভাবেই রাম। জন্মভূমির পক্ষে রাস্তা প্রশস্ত হলো।
গত ডিসেম্বরে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (CAB) পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)। চালু হলো। সেইসব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসিকরা ভারতে থাকতে পারবেন, যারা আফগানিস্থান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে অত্যাচারিত হয়ে এসেছেন। কিন্তু মুসলমানদের হয়ে কয়েকজন স্বার্থপর লোক বলল, তাদের তাড়ানোর জন্য এসব করা হয়েছে। দেশ স্বাধীনতার সময় পাকিস্তান যারা চাইত, যারা ভাগ করেছে। দেশ এখন আবার তারাই পাকিস্তান নামক দেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং নিজেদের নােংরা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য এখানে এসে দলে দলে জুটতে লাগলো। এর জন্যই দরকার হয়েছে ভারতের নাগরিকত্ব আইন। সেই সময় একথা বলা হয়েছিল যে, ভারতে যেদিন থেকে সংবিধান রচিত হয়েছে এবং সংবিধান কার্যকরী হয়েছে সেইদিন থেকে সাধারণ মানুষ ভারতের নাগরিক বলে পরিগণিত হবেন। তবে এর ভবিষ্যৎকী হবে বা পরবর্তীকালে কীভাবে নাগরিকত্ব তালিকা তৈরি করা হবে তা একমাত্র ভবিষ্যতের অবস্থার উপর নির্ভর করবে। ১৯৫০ সালে ২৬ জানুয়ারিতে সংবিধান রচিত হলো এবং ১৯৫০ সালের ৫ নভেম্বর The immigrants (Expulsion from Assam) ACT -এর খসড়া বাবাসাহেব আম্বেদকর প্রস্তুত করলেন। সংবিধান প্রস্তাবনার ১০ মাস পর এটা শুরু হলো। নেহরু বললেন, “যারা পাকিস্তান থেকে অত্যাচারিত হয়ে এসেছে। তারা আমাদের ভাই। তাদের এখানে আশ্রয়। দেওয়া আমাদের কর্তব্য। বাকিদের তাড়ানো হবে।”
এরপর ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল। বিশ্ব জুড়ে দেখল পূর্ব পাকিস্তানে ভয়ংকর হিন্দু নরসংহার। ১ কোটি লোক প্রাণ ও মান বাঁচাতে পালিয়ে এল ভারতে। ৩০ লক্ষ হিন্দুকে হত্যা করা হলো। ইন্দিরা গান্ধী বললেন, অত্যাচারিত এই হিন্দুদের ভারতে থাকতে দেবেন। কী হলো তার? এক সময় কংগ্রেসের মনমোহন সিংহ থেকে বামপন্থী নেতা প্রকাশ কারাট পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানের দাবিতে রাষ্ট্রপতির নিকট অবধি গেছিলেন। আজ কেন তাঁদের এমন উলটো সুর? পাকিস্তান হলো। আমরা কিন্তু জনবিনিময়ের কথা বললাম না। গান্ধীজী জিন্নাকে বিশ্বাস করতে বারণ করলেন। দেশভাগের সময় মানুষ ভাবতেও পারেনি কী হবে। একদিকের মানুষ এক রাতে ভারতীয় থেকে পাকিস্তানি হয়ে গেল। ওরা তো মন থেকে ভারতীয় ছিল, আছে, থাকবে। চার যুগ কেটে গেছে, তারা স্বাধীন হয়ে আবার পরাধীন হলো। তাদের ধর্ম, আস্থা সব নষ্ট হলো। লিয়াকত-নেহরু চুক্তি হলো। শ্যামাপ্রসাদ হিন্দুদের জন্য ভূভাগ চাইলেন, সম্পত্তির দাম চাইলেন, প্রতিবাদ করলেন। অতপর তিনি পদত্যাগ করলেন। সর্দার প্যাটেল প্রতিবাদ করলেন। কেউ শুনলেন না। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আইন মন্ত্রী যোগেন মণ্ডল পালিয়ে এসে নিজের ভুল স্বীকার করলেন।
সব ধর্ম, সব জাতির মানুষের ইসলামি দেশে অধিকার নেই। সেখানে সেকুলার শব্দটি অচল। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান আইনি ভাবে ইসলামিক দেশ হলো। ১৯৭১ সালে ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ হিন্দুর অত্যাচারের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশও ইসলামিক হলো। এখন অত্যাচারিত হিন্দুরা ভাবছেন। তঁাদের সন্তানদের সঙ্গে যেন এমন না হয়। তাই তারা ভারতে আসছেন বাঁচার তাগিদে। তাদের গ্রহণ করা আমাদের কর্তব্য। আমরা গঙ্গাজল হাতে নিয়ে বলি আমরা অখণ্ড ভারতের অধিবাসী। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে থাকা অত্যাচারিত লোকগুলোর আইডেন্টিটি বদলে গিয়েছে। কেন? প্রশ্ন করুন নেতাদের।
দুদিন আগে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বললেন, চার দিনের মধ্যে নাকি নাগরিকত্ব বিল এসেছে। কিন্তু সংসদে তো এ আলোচনা দীর্ঘ দিনের। ২০১৬ তে প্রথম এই অ্যাক্ট নিয়ে আসার প্রস্তাব রাখা হয়। ৯ হাজার সংশোধনী হয়। ২০১৮-তেও বিল পাশ হয়নি। অবশেষে ২০১৯-এ তা হলো। এটি মানবিক বিষয়। গত ৭০ বছর ধরে নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী ও মনমোহন সিংহ-সহ নানা দল নাগরিকত্ব নিয়ে যা বলেছেন সেগুলো তবে কি ভুল?
১৯৭৬-এ সংবিধানে সেকুলার শব্দ এল। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে তা লাগু হলো না। সাহস হলো না সরকারের। গুলাম নবি। আজাদ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেখানে হিন্দুদের কোনো অধিকার দেওয়া হলো না। সেকুলারিজম ইসলাম-বিরোধী তাই? অবশেষে ৫ আগস্ট ২০১৯ তা লাগু হলো। এর আগে কোনো দল কেন করার সাহস দেখায়নি? আন্তর্জাতিক নানা কাগজ বলল ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানাবার প্রক্রিয়া। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নাকি সেকুলারিজমের বিরোধী ? রাশিয়া ভাগ হলো। খ্রিস্টান ও ইহুদিরা মাইনরিটি হলো। নানা ছোট ছোটা দেশে তারা ছড়িয়ে পড়ল। তাদর কেউ রাশিয়া গেল, কেউ আমেরিকায় গেল। সেখানে মাইনরিটি বিল পাশ হলো। ১৯৮৯ সালে তা হলো। ইরানের সখ্যালঘুদের জন্য আমেরিকা বিল আনতে পারে, কিন্তু আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য নয়। ভারত তা করলে কটাক্ষ করে। ভাবুন। একবার, কংগ্রেস এক দেশের জন্য ভোটে লড়লেও কিন্তু জেতার পর বেইমানি করল।
কেউ ভাবল দেশ ভাগ হলে অন্য অংশের মানুষের কী হবে? এভাবে চললে তো দেশ টুকরো হবে। দেশভাগে ১০ লাখ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। ১.৫ কোটি হারিয়ে গিয়েছে। এসব চিন্তা করার সময় এসেছে। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতার নামে যে সন্ত্রাসী শক্তি এখন দেশে অশান্তির সৃষ্টি করছে তারা কারা? তাদের বুঝুন। ছাত্র আন্দোলনের পিছনে কারা ? পিএফআই, আইসিস-রা আবার ভারতকে ভাগ করতে চায়। গত ৬ বছর লিনচিং, ইন্টলারেন্সের কাজ এরাই করেছে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য। বিরোধীরা যদি নাগরিকত্ব আইন সবার জন্য চান তাহলে দেশবিভাগ সমাপ্ত করে দেওয়ার আওয়াজ তুলুন। তাহলে এসব কিছুই থাকবে না। দুনিয়ার সব দেশে NRC আছে। নিজের মতো করে আছে। ১৯৫০-এ নেহরু প্রথম বিষয়টি আনেন। সব দেশের একটি নাগরিক তালিকা আছে। ভারতের কেন থাকবে না? আমাদের ঐতিহ্য আছে। ইতিহাস আছে। ভারত সেপথে অগ্রণী হয়েছে। সন্ত্রাসীদের সামনে আমরা ঝুকব না। আমাদের একদেশ, এক সংস্কৃতি। সবাই এক সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে বাঁচবো। আমরা দেশের নাগরিকদেরও এরটি তালিকা (NRC) চাই। ভারত জাগছে। নিজেকে জানছে। শক্ত ভারত, সমর্থ ভারতের দিকে এগিয়ে চলেছে। পুরনো ভারত এখন নতুন হয়ে উঠছে।
অরুণ কুমার
2020-02-12