কুলটির বরাকরে পুলিশি হেফাজতে ২১ বছরের এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। গোটা ঘটনার জন্য পাঁচ জন পুলিশ আধিকারিক ও পাঁচ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে সাসপেন্ড করলেন আসানসোলের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর।
সাসপেন্ড হওয়া পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে রয়েছেন চার জন এসআই ও একজন এএসআই। এসআই র্যাঙ্কের ওই চার অফিসার হলেন অমরনাথ দাস, প্রশান্ত পাল, সুভাষ দাস এবং আর্মড পুলিশের আলি রেজা। এ ছাড়া এএসআই সরোজ কুমার তিওয়ারিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রবি রাণা, কার্তিক রুইদাস, পুষ্পল বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্নু যাদব, রঞ্জিত সাউ নামের পাঁচ সিভিক ভলেন্টিয়ারকেও কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক মহলের অনেকের মতে, বর্ধমান জেলা ভাগ হওয়ার পর একটি জেলায় একসঙ্গে এত জন পুলিশকে সাসপেন্ড এই প্রথম। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
সোমবার রাতে বরাকরের এক যুবককে ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরের দিন তাঁকে আদালতে তোলার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে খবর পাওয়া যায়, ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি, রাতে বরাকর পুলিশ ফাঁড়ির লকআপে থাকার সময়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে ধৃত। তাকে সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কিন্তু যুবকের মৃত্যুর খবর চাউর হতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বরাকর। ফাঁড়ি ভাঙচুর থেকে পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। স্থানীয়দের দাবি, ফাঁড়ির লক-আপে পুলিশি অত্যাচারেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। সেই মর্মে মৃত যুবকের বাবাও থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ঘটনায় সেদিনই দুই পুলিশ আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছিল কমিশনারেট। এদিন আরও ১০ জনকে সাসপেন্ড করা হল।
ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত। হাইকোর্টের নির্দেশে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা অভিযোগের তদন্ত করছেন। বরাকরের ঘটনায় রাজনীতির যোগ নেই। প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে প্রশাসন দেখাতে চাইল প্রকৃত অভিযোগের সুরাহা করা হয়। তাছাড়া পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মানবধিকার কমিশনের কাছে সবিস্তার রিপোর্ট দিতে হয় প্রশাসনকে।
এমনিতে পুলিশি হেফাজতে বন্দিমৃত্যু দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই আকছাড় ঘটে। যা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলি বহুদিন ধরেই সোচ্চার। মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য, হেফাজতে বন্দিমৃত্যু আসলে ‘সাইলেন্ট এনকাউন্টার।’ বরাকরের ঘটনা পুলিশ প্রশাসনের উপরও চাপ তৈরি করেছিল। দেখা গেল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বড়সড় পদক্ষেপ করল পুলিশ।