জলপাইগুড়ি, ১২ মে : পোশাকি নাম ওয়ার্ল্ড ইজ ইয়োর্স। সংক্ষেপে ডব্লিউওয়াই। ইয়াবা নামেও অনেকে একে চেনেন। নাম সাদামাঠা হলেও এই মাদকের প্রভাব মারাত্মক। বেশি ব্যবহার মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। মিয়ানমার থেকে এই মাদক মণিপুর, অসম হয়ে জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গ তো বটেই, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ রুটেও এই মাদক উত্তরবঙ্গে ঢুকছে। অন্য মাদকের তুলনায় দামে অনেকটাই সস্তা হওয়ার দরুন অনেকেই এতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। জলপাইগুড়ি ড্রাগ কনট্রোলের সহকারী নির্দেশকের পদ থেকে সদ্য বদলি হয়ে হুগলি জেলা ড্রাগ কনট্রোলের সহকারী নির্দেশক পদে যোগ দেওয়া উত্পল মিশ্র জানাচ্ছেন, মিথ অ্যানফিটামিন এবং ক্যাফিন দিয়ে ইয়াবা নামের এই মাদকটি তৈরি করা হয়। স্নাযুতন্ত্রের ক্ষতি করে বলে চিকিত্সা ক্ষেত্রে মিথ অ্যানফিটামিন ব্যবহার করা হয় না বলে চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গে এই মাদকের ব্যবহার বেড়ে চলায উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে তাঁরা অবগত বলে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি জানান। তিনি বলেন, ডব্লিউওয়াই নামে এই মাদক কীভাবে জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গে আসছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি আনন্দ কুমার বলেন, পুরো বিষযটি খতিয়ে দেখতে সমস্ত জেলার পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
ঘোড়া যাতে বেশি করে মাল টানতে পারে সেজন্য প্রাণীটিকে উত্তেজিত করতে ইয়াবা নামে এই ড্রাগসের ব্যবহার মিয়ানমারে প্রথম শুরু হয়। পরে মাদক হিসাবে এটির ব্যবহার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই মাদক ইতিমধ্যেই বেশকিছু দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারে ভারতেও এই মাদকের অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, এই মাদক মিয়ানমার থেকে প্রথমে মণিপুরে আসছে। তারপর অসমে হাতবদল হয়ে প্রথমে কোচবিহার, পরে শিলিগুড়িতে আসে। শিলিগুড়ি থেকে এই মাদক পরবর্তীতে জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। কোচবিহারকে কেন্দ্র করে ক্যারিয়ারকে কাজে লাগিয়ে কোচবিহারের পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারে এই মাদক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য একটি রুটে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলিতে এই মাদক পৌঁছে যাচ্ছে। ইদানীং চাহিদা বাড়ায় বিহার ও ঝাড়খণ্ডে নকল ইয়াবা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। জলপাইগুড়ি শহরে ক্যারিয়ারের মাধ্যমে উকিলপাড়া, পান্ডাপাড়া বউবাজার এলাকা, টাউন স্টেশন, ২ নম্বর গুমটি এলাকায় এই মাদক বিক্রি হচ্ছে। এই মাদক ট্যাবলেট আকারে বিক্রি হয। মাদক মিয়ানমারের তৈরি হলে ১০টি ট্যাবলেটের একটি পাতার দাম ১৫০-২০০ টাকা পড়ে। মাদক অন্য জাযগার তৈরি হলে সেক্ষেত্রে ১০টি ট্যাবলেটের একটি পাতার দাম ১০০-১৫০ টাকা পড়ে। এই ট্যাবলেট গিলে খাওয়া যায়।
যারা নেশা করে তাদের অবশ্য দাবি, ট্যাবলেটটি ফয়েল পেপারের উপর রেখে নীচে আগুন দিয়ে সেই ধোঁয়া সেবন করলে নেশার আমেজ অনেকটাই বেশি হয়। অনেকে আবার ইনজেকশনের মাধ্যমেও এর নেশা করে।
উত্পলবাবু বলেন, মিথ অ্যানফিটামিন আমাদের দেশে শিডিউল এক্স তালিকাভুক্ত ড্রাগ। মাদক হিসাবে ব্যবহারের জন্যই এটি ব্যবহার করে ডব্লিউওয়াই তৈরি করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিত্সক বরুণকুমার বিশ্বাসের কথায়, মিথ অ্যানফিটামিন বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের স্নাযু নষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। জলপাইগুড়ি শহরের একটি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের কর্ণধার দীপঙ্কর সেন বলেন, এধরনের কোনো মাদকাসক্ত এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে না এলেও ইয়াবা নামে নতুন এক মাদক কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা ও দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে আমাদের দেশে ঢুকছে বলে জানতে পেরেছি।
সৌজন্যে উত্তরবঙ্গ সংবাদ