গত সপ্তাহেই ভারতে কোভিডের দু’টি ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, বিশ্বের বৃহত্তম কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হতে চলেছে ভারতে। ভারতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারার জন্য তিনি বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের প্রশংসা করেন। এদিন ন্যাশনাল মেট্রোলজি কনক্লেভে তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা করতে হবে যাতে বিশ্ব জুড়ে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়। বিদেশের মানুষ ভারতে তৈরি নানা পণ্য গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “কোয়ান্টিটির সঙ্গে কোয়ালিটিও চাই। অর্থাৎ কোনও পণ্য শুধু বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করলেই হবে না, তার মানও ভাল হতে হবে।”
রবিবার অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয় ড্রাগ কন্ট্রোল। ভারতে যে সংস্থা ওই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, তার সিইও আদর পুনাওয়ালা বলেন, “সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। ভ্যাকসিন মজুত করে রাখার জন্য যে ঝুঁকি নিতে হয়েছিল তা অবশেষে সফল হয়েছে। ভারতের প্রথম কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই ভ্যাকসিন সুরক্ষিত ও কার্যকরী। টিকাকরণের জন্য এই ভ্যাকসিন তৈরি।”
পুনাওয়ালা অনেক দিন আগেই টুইট করে বলেছিলেন, তাঁদের সংস্থায় খুব তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিনের অনেক বেশি পরিমাণ ডোজ তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে। সেইমতো আগে থেকেই সরকারকে অর্থ বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। মাস খানেক আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও ফ্যাক্টরিতে গিয়ে টিকা তৈরির পদ্ধতি দেখে আসেন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তারপরেই তিনি জানিয়েছিলেন নতুন বছরের শুরুতেই ভারতের বাজারে চলে আসবে ভ্যাকসিন। সেইমতোই অনুমতি পেয়ে আদর পুনাওয়ালা জানালেন, ভারতে টিকাকরণ শুরু করার জন্য তাঁরা তৈরি।
শুধু কোভিশিল্ড নয়, ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাকসিনকেও অনুমতি দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল। বিশেষজ্ঞরা ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘জনস্বার্থে জরুরি পরিস্থিতিতে কোভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
কোভ্যাকসিন ইতিমধ্যে কেবল তিনটি পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করেছে। গত নভেম্বরে ভারত বায়োটেক তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপযুক্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের অভাবে রেজিস্ট্রেশনের তারিখ পিছিয়ে গিয়েছে।
প্রথম দফার পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, কোভ্যাকসিন মানুষের দেহে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি তৈরি করে। তার গুরুতর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই ভ্যাকসিন নিলে মানুষের শরীরে যে অ্যান্টিবডি দেখা যায়, তা ছয় থেকে ১২ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
রবিবার সকালে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ভি জি সোমানি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চালিয়েছে। সেই রিপোর্ট তারা পেশ করেছিল ড্রাগ কন্ট্রোলের কাছে। তা সন্তোষজনক মনে হওয়ার পর এই দুই টিকাকে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।