একসময় বঙ্গদেশে অনেক বিখ্যাত নেতৃত্বের জন্ম হয়েছিল যারা আধ্যাত্মিকতা এবং জাতীয়তাবাদের বিকাশে যথেষ্ঠ অবদান রেখেছিলেন। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো যে কেন এখানে আর তেমন নেতৃত্বের জন্ম হয় না।
বাঙ্গালার নেতারা ভারতের ইতিহাসে কি বিশাল অবদান রেখেছেন তা বিবেচনা করে
ভারতের জনগণকে পশ্চিমবঙ্গে এমন একটি সরকারকে সমর্থন করতে হবে যারা আবার এই জাতীয় প্রতিভার বিকাশে সাহায্য করবে।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচারের ভাষন শুনতে শুনতে আমার মনে পড়ছিলো যে এখানে বেশ কয়েক দশক ধরেই কোনো আধ্যাত্মিক নেতা জন্মাননি। শেষ যে আধ্যাত্মিক নেতার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন ১৯৬০ এর দশকে ইসকন এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীলা প্রভুপাদ।
তাহলে কেন পশ্চিমবঙ্গে আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের জন্ম হচ্ছে না? এর কারণ কি পশ্চিমবঙ্গের সমৃদ্ধির অবনতি নাকি কমিউনিস্ট শাসন? প্রবন্ধটি পড়ে দেখুন।
১৮-২০ শতাব্দীর বাঙ্গালী নেতারা ছিলেন বৌদ্ধিক নেতা বা শিক্ষাবিদ কিংবা সমাজ সংস্কারক‚ যাদের চিন্তাভাবনা সারা ভারতেই প্রভাব বিস্তার করেছিলো।
এখন আমাদের নজর পশ্চিমবঙ্গের উপরেই দেওয়া উচিৎ কারণ বর্তমানে পূর্ব বাঙ্গালা কিংবা বাঙ্গালাদেশ একটি আলাদা দেশ। এবং পরপর দুটি গনহত্যা ও অসংখ্য দাঙ্গার ফলে সেখানে বাঙ্গালী হিন্দুর সংখ্যাও অতি সামান্য। এই প্রবন্ধে ১০-১৪ শতাব্দীর ও ১৮ শতকের শুরুর দিকের কয়েক আধ্যাত্মিক ও জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রবন্ধের ঐতিহাসিক অংশগুলো লেখা হয়েছে ভারতীয় বিদ্যা ভবন কর্তৃক প্রকাশিত ভারতীয় জনগণের ইতিহাস ও সংস্কৃতি থেকে নেওয়া তথ্যের সাহায্যে ।
১. অতীশ দীপঙ্কর ( আনুমানিক ৯৮০ – ১০৫৩) – তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ গুরু। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁকে নিয়ে লিখেছেন –
বাঙালী অতীশ লঙ্ঘিল গিরি তুলারে ভয়ঙ্কর, জালিল জ্ঞানের দীপ তিববতে বাঙালী দীপঙ্কর ।
তাঁর সম্পর্কে বিশদে জানতে এখানে দেখুন –
মুসলমান আগ্রাসনের ফলে বাঙ্গালা এবং বিহার থেকে বৌদ্ধ ধর্ম মুছে যায়। ফলে দক্ষিন বাদে বাকি সমস্ত অঞ্চল থেকে তাঁর শিক্ষা মুছে গিয়েছিলো। দক্ষিন দীর্ঘদিন অন্ধকার থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছিল কারণ সমুদ্র বানিজ্যর মাধ্যমে তারা বহির্দেশের সাথে সম্পর্ক রেখেছিলো।
ভলিউম ৫‚ পৃষ্ঠা – ৬৭৫.
২. চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬-১৫৩৩)
কবীর এবং চৈতন্যের মতোন ভক্তিবাদী সাধকদের মহৎ জীবনাদর্শ এবং ধর্মীয় শিক্ষা হিন্দু ধর্মকে অনেক উচ্চ স্থান দিয়েছিলো। ভলিউম ৬‚ পৃষ্ঠা – XXVII
কবীর ছিলেন রামানন্দের অন্যতম শিষ্য। রামানন্দের অন্য আরেজন বিখ্যাত শিষ্য ছিলেন সন্ত রবিদাস ( মুচি)! যদিও নিম্ন বর্ণের প্রতি সহানুভূতি ছিলো বৈষ্ণব আন্দোলনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য‚ কিন্তু রামানন্দ এটাকেই তাঁর মতবাদের সার করে নিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি সংস্কৃতের জায়গায় আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ শুরু করেন। তৃতীয় যে পরিবর্তন তিনি এনেছিলেন তা হলো রাধা-কৃষ্ণের পরিবর্তে রাম-সীতার আরাধনা শুরু করা। তবে চৈতন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কবীর এবং রামানন্দের তুলনায় ভিন্ন পথ নিয়েছিলেন।
ইসলামী অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চৈতন্যের ( সম্পূর্ণ নাম কৃষ্ণ চৈতন্য) পরিবার বর্তমান বাঙ্গালাদেশের সিলেটের থেকে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় চলে আসেন। ২২ বছর বয়সে তাঁর সাথে সন্ন্যাসী তোতাপুরীর সাক্ষাৎ হয়। এই তোতাপুরী চৈতন্যের জীবন পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন।
কীর্ত্তন নামে এক নতুন ধরনের ভক্তিমূলক গানের প্রবর্তন করেন চৈতন্য। যাতে প্রধানত বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র সহযোগে হরি এবং কৃষ্ণের নাম জোরে জোরে উচ্চারণ করা হতো।
চৈতন্য পুরীতে বসবাস করতেন। সেখানে উড়িষ্যার রাজা গজপতি এবং প্রখ্যাত বৈদান্তিক বাসুদেব সার্বভৌম তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। তিনি দক্ষিন ও পশ্চিম ভারত এবং বৃন্দাবনেও ভ্রমন করেছিলেন। মুক্তির একমাত্র উপায় হিসাবে তিনি জোর দিয়েছিলেন ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এবং পুরানের বিভিন্ন অংশ বর্ণনার উপর।
বৃন্দাবনের অনেক পবিত্র স্থানই মানুষের অগোচরে চলে গিয়েছিলো। চৈতন্যের উপস্থিতিতে বাঙ্গালার বৈষ্ণবরা সেগুলোর পুনরুদ্ধার এবং ধর্মস্থান রুপে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এই ঘটনা অবশ্যই বৈষ্ণব আন্দোলনের ইতিহাসে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভলিউম ৬‚ পৃষ্ঠা -৫৭৬
উল্লেখ্য যে সন্ন্যাসী হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার পর ২৪ বছরের মধ্যে তিনি মাত্র ১ বছরই হুসেইন শাহের ইসলামী শাসনে ছিলেন। আর হিন্দু রাজ্য উড়িষ্যায় ছিলেন ২০ বছরেরও বেশী। ভলিউম ৬‚ পৃষ্ঠা xxxii।
৩০০ বছর ব্যাপী রাজনৈতিক দাসত্ব ও ধর্মীয় নিপীড়নের ফলে ধ্বংসপ্রায় বাঙ্গালী হিন্দুদের নবরূপে জাগিয়ে তুলেছিলেন চৈতন্য। রামমোহন রায় মুসলমানদের ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং ধর্ম প্রচারের প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, “আমরা প্রায় নয় শতাব্দী ধরে এই জাতীয় অপমানের শিকার হয়েছিলাম।” ভলিউম ১০‚ পৃষ্ঠা ৪.
১৮৩৮ সালের ৬ই ডিসেম্বর দ্বারকানাথ ঠাকুর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে “শিক্ষা ও বিজ্ঞানের পুরোপুরি ধ্বংস ছিলো ইসলামী শাদন ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ”! ভলিউম ১০‚পৃষ্ঠা ১৩। এছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য প্রগতিশীল শক্তির সাথে যোগাযোগ না রাখাটাও হিন্দুদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ ছিলো।
১৫৩৩ সালে চৈতন্য মহাপ্রভু দেহত্যাগ করেন। পরবর্তী আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব বাঙ্গালায় জন্ম নেয় ১৭১৮ সালে। রামপ্রসাদ রূপে।
৩. রামপ্রসাদ সেন (১৭১৮-১৭৭৫)
কলকাতায় জম্ম নেওয়া রামপ্রসাদ সেন ১৮ শতক থেকেই তাঁর ভক্তিমূলক কবিতা ও গানের সাহায্যে বাঙ্গালীর জীবনে স্থায়ী আসন বানিয়ে নিয়েছেন। মা কালীকে নিয়ে প্রায় ১০০০ এর উপরে গান লিখেছেন তিনি। রামপ্রসাদী গানগুলো হতো আত্মা ও মনের মধ্যে কথোপকথনমূলক। গানের মাধ্যমেই তিনি আধ্যাত্মিক জীবনের মর্ম এবং সনাতন ভারতীয় দর্শনের নীতিগুলি ব্যাখ্যা করতেন।
[উৎস – https://www.shreemaa.org/ramprasad-sen/]
“রামপ্রসাদী নামক তাঁর ভক্তি গীতি কবিতা গুলো এখনও সারা বাঙ্গালায় গাওয়া হয়। মনের দিক থেকে একজন সাধারণ ঈশ্বরপ্রেমী হয়েও তিনি মাতৃ উপাসনার তান্ত্রিক মার্গের একজন সাধক ছিলেন। পরমহংস যোগানন্দের একজন জীবনীকার বলেছেন যে কিশোর বয়সে যোগানন্দ প্রায়শই তাঁর সাথে রামপ্রসাদের গানের বই সঙ্গে রাখতেন”
[উৎস – https://thecosmicmother.org/home/friends-influences-yogananda/ramprasad-sen/]
উল্লেখ্য যে এই সময়টা ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ কোম্পানির পলাশীর যুদ্ধ জয়ের পরবর্তী সময়ের ঘটনা। কোম্পানির মাধ্যমেই ইউরোপের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। এই সময়ে (১৭০৭-১৮১৮) ইংরেজী শিক্ষার ফলে ভারতীয়দের চিন্তা, শিক্ষা, সামাজিক এবং ধর্মীয় ধারণাগুলি আরো প্রসারিত হয়ে ওঠে। ফলে ১৯ শতকে জাতীয়তাবাদী‚ সাংস্কৃতিক‚ আধ্যাত্মিক সহ বিভিন্ন ধারণার নবজাগরণ দেখা যায়।
৪. লাহিড়ী মহাসাহা বাবা ( ১৮২৮ – ১৮৯৫) –
মহাসাহা বাবার জন্ম হয়েছিল বাঙ্গালার নদীয়া জেলায়। তাঁর আসল নাম ছিলো শ্যামাচরণ লাহিড়ী। তাঁর ৫ বছর বয়সেই তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে কাশীতে চলে আসেন।
ক্রিয়াচার্য জ্যোতি বলেছেন‚ “ক্রিয়াগুরু দেখিয়েছিলেন যে কিভাবে ক্রিয়া যোগকে বহু প্রাচীন গ্রন্থে তির্যক এবং গোপণ কৌশল হিসাবে দেখানো হয়েছে‚ যা সাধককে আলোর দিকে চালিত করে। তাঁর দুটি উদ্ধৃতি এখানে দেখানো হলো –
১. “যতক্ষণ না সুষুম্নাতে প্রাণ প্রবেশ করছে এবং প্রশিক্ষিত প্রাণের দ্বারা বিন্দু স্থির না হচ্ছে‚ যতক্ষণ না চেষ্টা ছাড়াই মন ধ্যানে স্থির হচ্ছে‚ ততক্ষণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কথা বলা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।”
২. “অন্যরা আভ্যন্তরীণ প্রবণতার কাছে বাহ্যস্থ অপানকে এবং অপানকে প্রাণের কাছে সমর্পণ করে‚ বিরোধী স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা প্রতিনিয়ত প্রাণায়ামে জড়িত থাকে। ” ভগবত গীতা অধ্যায় ৪ জ্ঞান যোগ শ্লোক ২৯.
তবে গ্রন্থগুলোর কোথাওই সাধনার সম্পূর্ণ পদ্ধতি দেওয়া হয়নি। ক্রিয়া যোগ ছিল গুরু শিষ্য পরম্পরায় বাহিত হওয়া এক গোপন সাধনা। লাহিড়ী মহাসাহাই প্রথম তা গৃহস্থ এবং সাধারণ মানুষের কাছে ব্যক্ত করেন।
আমার কাছে এটিই ছিলো লাহিড়ী মহাসাহার সবথেকে বড় অবদান। তিনিই উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে কিভাবে সাধারণ মানুষও আধ্যাত্মিকতা সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে পারে।
মহাসাহার প্রধান সন্ন্যাস শিষ্য ছিলেন স্বামী শ্রী যুক্তেশ্বরী গিরি। তিনি ১৮৫৫ সালে শ্রীরামপুরে (পশ্চিমবঙ্গ) জন্মগ্রহণ করেন। নাম ছিলো প্রিয়নাথ। তাঁর শিষ্য ছিলেন পরমহংস যোগানন্দ, ১৮৯৩ সালে গোরক্ষপুরে (উত্তর প্রদেশ) মুকুন্দ লাল ঘোষ নামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
৫. শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ( ১৯৩৬ – ১৮৮৬) –
বাল্যকালে তাঁর নাম ছিলো গদাধর চট্টোপাধ্যায়। অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় তাঁর জন্ম হয়। ১৭ বছর বয়সে তিনি নিযুক্ত হয়েছিলেন কলকাতার কাছে গঙ্গার তীরবর্তী দক্ষিণেশ্বরে দেবী কালী মন্দিরে পুরোহিত হিসাবে। তিনি অত্যন্ত সরল ও ছোটো ছোটো বাক্যে আধ্যাত্মিক গভীরতাকে তুলে ধরতেন। মা কালীকে তিনি দেখতেন একজন জীবিত স্বত্তা হিসাবে‚ যার সাথে তিনি কথা বলতেন। তিনি মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের সন্ধান করতেন ও জীবসেবায় শিব সেবার কথা বলতেন। রামকৃষ্ণের বিশ্ববিখ্যাত শিষ্য ছিলেন বিবেকানন্দ। গুরু শিষ্যের এই যুগলবন্দী আধ্যাত্মিকতাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলো।
আধ্যাত্মিক জীবন ও তাকে পাওয়ার উপায় প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে বর্ণিত ছিলো। কিন্তু হয় তা হিন্দুরা ভুলে গিয়েছিল কিংবা তা বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু রামকৃষ্ণ তার সহজ সরল কথার মাধ্যমে হিন্দুদের আবার
সেই মহৎ জ্ঞানের মূল্য বোঝাতে সক্ষম হন।
ভলিউম ১০‚ পৃষ্ঠা – ১২২.
তিনি তাঁর স্ত্রী সারদা দেবীকে দীক্ষা দিয়েছিলেন‚ যিনি পরে রামকৃষ্ণের শিষ্যদের সংঘ জননী হন।
৬. শ্রী বামাক্ষ্যাপা (১৮৩৩-১৯১১)
তাঁর আসল নাম ছিলো বামাচরণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি পরিচিত ছিলেন উন্মাদ সন্ন্যাসী রূপে। বামাক্ষ্যাপা মা কালীকে তারা রূপে আরাধনা করতেন। তারাপীঠ শ্মশানে সাধনা করে তিনি বিখ্যাত তান্ত্রিক সাধক হয়ে ওঠেন। বীরভূম জেলার তারাপীঠ হলো অনেক বিখ্যাত বৈষ্ণব ও শৈব সাধকদের জন্মস্থান।
[সূত্র – https://kalimandir.org/sri-bamakhepa-of-tarapith/]
খুব শীঘ্রই বামাক্ষ্যাপা তাঁর যোগ শক্তির জন্যে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। দূর-দূরান্ত থেকে লোকে তাকে দেখতে আসতো। কেউ শুধুই তাঁর আশীর্বাদ চাইতো‚ কেউ বা চাইতো রোগ নিরাময় কিংবা সংকটমুক্তি। বামাক্ষ্যাপা তাঁর দিব্যশক্তির সাহায্যে অনেককে সুস্থ করেছিলেন বলে কিংবদন্তী আছে। এই মহাসাধক ১৯১১ সালে মহাসমাধিতে ( চূড়ান্ত মুক্তি) প্রবেশ করেন।
তাঁর সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন – http://www.sharanagotosomproday.co.in/TarabamSevashram.php
বাঙ্গালায় ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব
সংক্ষেপে বলতে গেলে কোম্পানির বাঙ্গালা জয়ের ফলে তাঁতীরা বাধ্য হয় কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বেচতে। জমিদারদের সাথে রাজস্ব সংক্রান্ত চুক্তি করে রাজস্ব ব্যবস্থা পুনর্গঠিত করা হয়। এই সময় সম্ভাব্য যে কোনো অর্থ লাভের জন্যে কোম্পানির কর্মচারীদের সামনে বিশাল দরজা খুলে যায়। কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে শুরু হয় যেকোনো প্রকারে অর্থলাভের প্রতিযোগিতা। ফলে ১৭৯৩ এর পরে বাঙ্গালায় কৃষকদের অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটে।
নীল ছিলো কোম্পানির একটি অন্যতম রপ্তানি পণ্য। সেই সময় বাঙ্গালা ও বিহার জুড়ে প্রায় ৪০০ টি ফ্যাক্টরি ছিলো এবং প্রায় ৩.৬ মিলিয়ন পাউন্ডের পণ্য রপ্তানি হতো। কিন্তু নীলচাষ কৃষকদের উপরে বয়ে এনেছিলো ব্রিটিশদের অত্যাচার।প্রত্যেকবারই যখন কোনো শাসক ব্রিটিশদের কাছে হেরে যেত‚ তাকে ব্রিটিশদের কাছে এক বিশাল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। আর এই ক্ষতিপূরণের বোঝা বহন করত সাধারণ মানুষ। যেমন বক্সারের যুদ্ধে হারার ফলে সুজা-উদ-দৌলা ভারতীয় মুদ্রায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছিলো।
[উৎস – https://www.esamskriti.com/e/History/Indian-History/Why-India-is-a-poor-country-1.aspx]
বাঙ্গালায় ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম ফলাফল ছিলো দুর্ভিক্ষ। বিশেষত ১৭৬৯-৭০’এবং ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ।
[উৎস – https://en.wikipedia.org/wiki/Timeline_of_major_famines_in_India_during_British_rule]
১৭৭০ সালে দুর্ভিক্ষে মুদ্রার ভূমিকা সম্পর্কে বিশদে পড়ুন – https://thewire.in/economy/currency-famine-1770-bengal-india
অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসন বাঙ্গালায় নবজাগরণ ঘটালেও তাঁর অর্থনৈতিক বিরুপ প্রভাবও কম কিছু ছিলো না। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও আমরা যদি এই ভুল গুলো শুধরে নিতে না পারি‚ তাহলে কি আমরা ব্রিটিশদের দোষ দিতে পারি?
একজন প্রবীন বাঙ্গালী বলেছিলেন যে আমরা জানি ব্রিটিশদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিলো শাসক ও শাসিতের মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপন করা। কিন্তু এই শিক্ষার ফলেই বাঙ্গালীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে। ব্রিটিশ সংস্কৃতি ছিলো বস্তুবাদী। তারা তাদের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটানোর জন্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়েছিল এবং বিশ্ব বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও সম্পদের সংস্থানের জন্যে সারা পৃথিবীতে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলো। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী ঔপনিবেশিকদের সান্নিধ্যে আসে এবং হয়ে ওঠে শাসকের প্রয়োজনীয় অস্ত্র। ইংরেজী শিক্ষা তাদের দিয়েছিল সম্পদ এবং মর্যাদা। সেইজন্যই স্বামী বিবেকানন্দ বাঙ্গালীকে আহ্বান করেছিলেন স্বাবলম্বী হতে এবং সমস্ত কিছুর জন্য পশ্চিমের মুখাপেক্ষী থাকার অভ্যাস ত্যাগ করার জন্যে।
৭. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৮০২)
উনিশ শতকে ভারতকে পশ্চিমী সভ্যতার যে ভয়াবহ আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে সফলভাবে প্রতিহত করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি দেশবাসীকে মুক্ত কন্ঠে জানিয়েছিলেন ধর্ম ও হিন্দু সভ্যতার আধ্যাত্মিক ভিত্তির বিষয়ে তাঁর মতামত। জাতীয়তাবাদের উত্থানেও তাঁর ভূমিকা ছিলো অবিষ্মরণীয়।
১৮৯৩ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তিনি শিকাগো ধর্ম সন্মেলনে ভাষন দিয়ে হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেন। [উৎস –
https://www.esamskriti.com/e/History/Great-Indian-Leaders/Address-Parliament-of-Religions-1893-baaay-Swami-Vivekananda-1.aspx]
এছাড়াও ভারতের যোগ [https://www.esamskriti.com/e/Yoga/Darsana/Swami-Vivekananda-colon-s-Contributions-to-the-Discourse-of-Yoga-1.aspx] এবং বেদান্তকে [https://www.esamskriti.com/e/History/Great-Indian-Leaders/Swami-Vivekananda-~-Vedanta-comes-to-the-West-1.aspx] তিনি পশ্চিমের সাথে পরিচয় ঘটান।
তিনি ১৮৯৭ সালে রামকৃষ্ণ মঠের প্রতিষ্ঠা করেন যা পৃথিবী জুড়ে অনেক স্কুল [ https://www.esamskriti.com/a/Chhattisgarh/Ramakrishna-Mission-Ashrama-Narainpur.aspx] এবং হসপিটাল [https://www.esamskriti.com/a/Arunachal-Pradesh/Ramakrishna-Mission-Hospital-Itanagar.aspx] চালাচ্ছে]
তাঁর ১৮৯৩ সালের বক্তৃতা “হিন্দুদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতায় কেবল আত্মবিশ্বাসই ফিরিয়ে দেয়নি, বরং তাদের জাতীয় গর্ব ও দেশপ্রেমের বোধও ত্বরান্বিত করেছে।” ভলিউম ১০. পৃষ্ঠা – ৪৮৯. স্বামীজি আজও বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিয়মিত বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়ে চলেছেন।
৮. ঋষি অরবিন্দ (১৮৭২-১৯৫০)
শ্রী অরবিন্দ, হিজ লাইফ অ্যান্ড যোগা বইতে পি মুখার্জি লিখেছেন “গনআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যে বৈপ্লবিক ভূমিকা শ্রী অরবিন্দ পালন করেছিলেন‚ ১৫ বছর পর অরবিন্দের সেই নীলনকশা নিয়ে গান্ধীজি একই ভূমিকা পালন করেছিলেন।” পৃ – ix
অরবিন্দ বরোদা রাজ্যে ১০ বছর কাজ করেছিলেন। এটা তাঁর বাড়ির ছবি [ https://www.esamskriti.com/a/Gujarat/Sri-Aurobindo-Ashram-Baroda.aspx]
এটি বর্তমানে আশ্রমে পরিণত হয়েছে। বরোদায় জ্ঞানের উদ্দেশ্যে তীব্র সাধনার ফলে শ্রী অরবিন্দের আত্মচেতনা জাগ্রত হয়েছিলো‚ যা ছিলো তাঁর আত্মিক জ্ঞানের উৎস। বরোদাতে এক মারাঠী যোগী লেলে মহারাজের থেকে তিনি পেয়েছিলেন যোগের প্রাথমিক দিকনির্দেশনা।
স্বাধীনতা আন্দোলনের গোপন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্যে তিনি সারা ভারত ভ্রমণ করেন। বন্দেমাতরম্ এবং কর্মযোগিন এ তাঁর
অনুপ্রেরণামূলক আগুনঝরা প্রবন্ধগুলির সাহায্যে এই আন্দোলনকে দিকনির্দেশনা যোগান। পরে তিনি ১৯১০ সালে পন্ডিচেরি চলে যান।
ভারতীয়দের মধ্যে স্বাধীন মানসিকতা ও ভারতীয়দের জন্যে উপযুক্ত শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে তিনি প্রথম জাতীয় কলেজের প্রবর্তন করেন। তিনি আর্য নামে ছটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপরে একটি সিরিজ লেখেন যেখানে দর্শন‚ যোগ‚ বেদ‚ উপনিষদ‚ ভাগবত গীতা‚ মানবতার সামাজিক ও রাজনৈতিক বিকাশ ইতিহাস নিয়ে বিশদে আলোচনা করা ছিলো।
রাজনীতিতে শ্রী অরবিন্দ খুব কম সময়ের জন্যই ছিলেন। তার মধ্যে ৩.৫ বছরই আবার ছিলেন জেলে। কিন্তু এই অত্যল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শের দ্বারা জাতিকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছিলেন যে ভারতীয় জাতি নতুন ভাবে জেগে ওঠে।
তাঁর লেখা “ভারতের পুনর্জন্ম [https://www.esamskriti.com/e/History/Great-Indian-Leaders/India-colon-S-Rebirth-By-Sri-Aurobindo-1.aspx] বইটি পড়ে আমি সমৃদ্ধ হয়েছি। ভারতবর্ষকে বোঝার জন্যে এই বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বইটির বিস্তৃত জ্ঞান ও যুক্তিবাদীতা যে কাউকে আকর্ষণ করবে।
৯. মা আনন্দময়ী (১৮৯৬-১৯৬২)
মা আনন্দময়ী জন্মেছিলেন অধুনা বাঙ্গালাদেশের খেওরা নামের একটা ছোট গ্রামে।
“ঢাকাতে অর্থাৎ যেখানে প্রথম তিনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন সেখানে মানুষ কালী অর্থাৎ জীবন্ত কালী হিসাবে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়ে। কালী হলেন বাঙ্গালার প্রধান আরাধ্যা দেবী। পরে যখন তিনি অন্যান্য অন্যান্য প্রদেশে ভ্রমন করতে বেরিয়ে পড়েন‚ সেই সব জায়গাতেও তিনি মানুষের থেকে একইরকম সাড়া পান। নর্মদা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন দেবী নর্মদা হিসাবে। মাদুরাইতে তাঁকে মনে করা হতো দেবী মীনাক্ষী। পাঞ্জাবে তিনি পেয়েছিলেন পবিত্র গ্রন্থ সাহিবের মতো সম্মান তিনি পেয়েছিলেন মানুষের থেকে। আবার বৃন্দাবনে সেখানে মহাত্মা হরিবাবাজী মহারাজ তাঁর মধ্যে দেখেছিলেন নিজের আরাধ্য গৌরাঙ্গ প্রভুকে। বিস্তারিত জানতে এখানে পড়ুন –
Introduction of Sri Ma’s life [https://www.anandamayi.org/introduction-to-sri-mas-life/]
তাঁর সমস্ত বাণীর মূল কথা ছিলো যে জীবন এবং ধর্ম একই। আপনি জীবন নির্বাহের জন্যে যা কিছু করেন‚ আপনার প্রতিদিনের কাজ এবং খেলাধূলা‚ আপনার জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা – সবকিছুই আন্তরিকতা, ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে করা উচিত।
দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সত্য জীবন যাপনের অর্থ হলো মহাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কার্যত একজনের আধ্যাত্মিক অস্তিত্বকে পরিপূর্ণ করে তোলা। এটি করার জন্যে ধর্মীয় সংস্কৃতি হওয়া উচিৎ খাদ্য বা পানীয় গ্রহনের মতোই স্বাভাবিক ও সহজ।
[উৎস – https://www.ramdass.org/sri-anandamayi-ma/]
আমি মায়ের ছবি দেখলেই বুঝতে পারি যে তিনি একজন বিশেষ কেউ ছিলেন।
১০. শ্রী অনুকূল ঠাকুর ( ১৮৮৮ – ১৯৬৯)
তিনি জন্মেছিলেন বর্তমান বাঙ্গালাদেশের পাবনা জেলার শ্রী শিবচরণ চক্রবর্তী ও মনমোহিনী দেবীর ঘরে। তাঁর মা ছিলেন তাঁর জীবন শিক্ষক। অনুকূল চন্দ্র ছিলেন মানবপ্রেমিক। পাবনাতে তিনি একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন পরে যা পরিচিত হয় সৎসঙ্গ নামে। পরে ১৯৪৬ সালে তিনি দেওঘরে তাঁর আশ্রয় সরিয়ে আনেন। [উৎস – https://deoghar.nic.in/tourist-place/satsangaashram/]
তাঁর সম্পর্কে আরও জানতে এখানে দেখুন –
https://www.satsang.org.in/index.php?p=satsang
উপরের ১০ জনের মধ্যে ৪ জন আধ্যাত্মিক নেতা পূর্ব বাঙ্গালার মানুষ ছিলেন। তবে কি পূর্ব বাঙ্গালার ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ ছিলো পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় আধ্যাত্মিক নেতার সংখ্যা কম থাকা?
১১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় সংগীত বন্দেমাতমের স্রষ্টা! গানটি আজও আপামর ভারতবাসীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। লতা মঙ্গেশকরের কন্ঠে গানটি শুনুন – https://www.youtube.com/watch?v=YeJb5s6XxmI
১২. শ্রীলা প্রভুপাদ (.২৮৯৬-১৯৭৭)
তাঁর প্রকৃত নাম ছিলো অভয়চরণ দে। তিনি ছিলেন ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬৯ সালে ৬৯ বছর বয়সে তিনি একটি কার্গোশীপে করে নিউইয়র্কে পৌঁছান। তাঁর জীবনী পড়ুন এখান থেকে – https://gbc.iskcon.org/srila-prabhupada/ বা তাঁর সম্পর্কিত ভিডিও দেখুন এখানে – https://www.iskconbangalore.org/srila-prabhupada/
এছাড়া আরও কয়েকজন বিশিষ্ট বাঙ্গালীর নাম দেওয়া হলো।
১৩. জগদীশ চন্দ্র বোস ( ১৮৫৮ – ১৯৭৩)
তিনি জন্মেছিলেন বর্তমান বাঙ্গালাদেশের মুনশিগঞ্জ জেলায়। জগদীশচন্দ্রই ছিলেন রেডিও এবং মাইক্রোওয়েভ সম্পর্কিত গবেষণার অগ্রদূত। উদ্ভিদ বিজ্ঞানেও তিনি প্রচুর অবদান রেখেছেন। পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের ভিত্তিস্থাপন হয় তারই হাত ধরে।
” ১৯১৭ সালে জগদীশচন্দ্রের হাতে বোস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনিই ছিলেন উপমহাদেশে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা। এশিয়ার এটিই প্রথম আধুনিক গবেষণা কেন্দ্র যা আন্তঃশৃঙ্খলা সংক্রান্ত গবেষণায় নিবেদিত এবং গবেষণার এক শতাব্দী ব্যাপী শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য বহন করছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পদার্থবিদ্যা ও জীববিদ্যা সম্পর্কিত গবেষণায় তাঁর অবদান বিশাল।
[ উৎস – http://www.jcbose.ac.in/founder]
এছাড়াও পড়ুন Father of Radio Science ( https://theprint.in/features/j-c-bose-father-of-radio-science-who-was-forgotten-by-west-due-to-his-aversion-to-patents/552556/) এবং The voice of life ( https://theprint.in/features/j-c-bose-father-of-radio-science-who-was-forgotten-by-west-due-to-his-aversion-to-patents/552556/)
১৪. রাজা রামমোহন রায় ( ১৭৭২ – ১৮৮৩)
তিনি জন্মেছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলায়। রামমোহন ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক। তিনি ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। বাঙ্গালা ভাষায় প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র তাঁর হাত ধরেই প্রকাশ পায়। তাঁর সম্পর্কে আরো জানুন এখানে https://wbchse.nic.in/html/raja_ram_mohan.html এবং এখানে – https://www.readersdigest.in/features/story-raja-ram-mohan-roy-13-facts-you-should-know-about-this-leading-light-of-bengal-renaissance-125798
১৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৬১ -১৯৪১)
তিনি ছিলেন এশিয়ায় প্রথম সাহিত্যে নোবেল বিজেতা। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ ইংরেজিতে অনুবাদ করে তিনি এই নোবেল পেয়েছিলেন। তিনিই হলেন পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যার লেখা গান ভারত ও বাঙ্গালাদেশ – দুটি দেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে নেওয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি‚ লেখক‚ গায়ক‚ চিত্রশিল্পী‚ নাট্যকার ইত্যাদি! শিল্পজগতের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তাঁর স্পর্শ লাগেনি।
তাঁর সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পড়ুন – https://wbchse.nic.in/html/rabindra_tagore.html এছাড়াও পড়ুন তাঁর সম্পর্কে ১০ টি স্বল্পপরিচিত তথ্য – https://collegedunia.com/social/160-10-lesser-known-facts-about-rabindranath-tagore-which-show-his-prominence
১৬. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১)
তাঁর আসল নাম ছিলো ঈশ্বর চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ। তাঁর সবথেকে বড় অবদান ছিলো ছাপার জন্যে সুবিধাজনক বাঙ্গালা বর্ণমালা সৃষ্টি এবং বাঙ্গালা ভাষায় শিক্ষাদানকে সহজীকরণ করা। [ উৎস – https://www.dnaindia.com/india/report-who-is-ishwar-chandra-vidyasagar-10-things-to-know-2749515]
তিনি প্রায় ১৮৫৭ এর নভেম্বর থেকে ১৮৫৮ এর মে মাসের মধ্যে তিনি প্রায় ৩৫ টি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন এটি বিষ্ময়কর যে ৪ কোটি বাঙ্গালীর জন্ম দেওয়ার সময় ঈশ্বর কিভাবে একজন মানুষের জন্ম দিয়ে ফেলেছিলেন।
[ উৎস – https://esamskriti.com/e/History/Great-Indian-Leaders/Why-is-Ishwar-Chandra-Vidyasagar-Remembered-1.aspx ]
১৭. সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি ( ১৮৪৮- ১৯২৫)
সুরেন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল কলকাতায়। তিনি ১৮৭৬ সালে ভারতীয় জাতীয় অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠা করেন। এটা ছিলো ভারতের প্রথম রাজনৈতিক দল।
এই সম্পর্কে আরো বেশী পড়তে এখানে দেখুন – https://www.surendranathcollege.org/profile/brief-history/
১৮. নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস
লেখকের বিশ্বাস যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবথেকে বেশি অবদান ছিলো সুভাষ বোসের আজাদ হিন্দ ফৌজের। এখানে পড়ুন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ বোসের আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান।
https://www.esamskriti.com/e/History/Indian-History/How-the-Indian-National-Army-Contributed-to-India-colon-s-Independence-1.aspx
তাহলে কেন আর আগের মতো বাঙ্গালায় নেতৃত্বের জন্ম হচ্ছে না?
আধ্যাত্মিকতার জন্য প্রয়োজন শান্তি‚ আইন শৃঙ্খলা‚ খোলামেলা মানসিকতা এবং অবশ্যই অর্থনীতির সমৃদ্ধি। ব্রিটিশ আনলে বাঙ্গালা দরিদ্র হয়ে পড়েছিলো। কলকাতা ছিলো ব্যবসা‚ বাণিজ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির কেন্দ্র এবং ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এট ছিলো অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এমনিতে বর্তমানেও তাই আছে। এখানে এই বিষয়ে সঞ্জীব সান্যালের লেখা পড়ুন। https://www.youtube.com/watch?v=Npin32S_1xQ
পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষাৎকার হার ৭৬.২% যা ভারতের গড় সাক্ষরতার হারের ( ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুসারে ৭০.০২%) তুলনায় বেশী। বাঙ্গালীর বুদ্ধিমত্তাও ঈর্ষনীয়। তবুও আজ বাঙ্গালীকে বাইরের রাজ্যে কাজ খুঁজতে যেতে হয়।
মুম্বাই প্রবাসী এক বাঙ্গালী উদ্যোক্তা বলেছিলেন যে “কমিউনিস্টরা বাঙ্গালীর আত্মাকে ছিঁড়ে খেয়ে‚ মন ও দেহকে দরিদ্র করে দিয়েছে। আর তারপর মমতা কৌশলে তার আত্মাকে হত্যা করেছে। বহু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বাঙ্গালী বাঙ্গালা ত্যাগ করেছে। আধ্যাত্মিক নেতারা দেহ‚ মন এবং আত্মার পুষ্টি পায়নি। লোডশেডিং এর বাড়বাড়ন্ত‚ চাকরির অভাব‚ নোংরা রাজনীতি ও ভাংচুরের রাজনীতি দিন দিন প্রভাব বিস্তার করেছে।
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের শাসন চলেছিল প্রথম দফায় ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত। বামপন্থীরা (কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদীরা)) পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছিল ১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। আর তারপরে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এছাড়াও ইউনাইটেড ফ্রন্ট ( যার মধ্যে কমিউনিস্টরাও যুক্ত ছিলো) শাসন করেছিল ১৯৬৭-৬৯ পর্যন্ত।
সহিংসতা এবং পরিকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাবও ছিলো কিছুটা কারণ যা এই রাজ্যে নতুন বিনিয়োগকে বাধা দেয়। বনধ সংস্কৃতিও এই বিষয়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
দিল্লিতে কর্মরত এক বাঙ্গালী কর্পোরেট নেতৃত্ব বলছিলেন যে চলছে চলবে ধরনের গয়ংগচ্ছ মনোভাব‚ কঠোর পরিশ্রম করার অভ্যাসের অভাব‚ রাজনীতির দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ – এগুলোই হলো বাঙ্গালীর স্বভাব। অর্থনীতির সমস্ত বিষয়কে তারা রাজনীতি দিয়ে বিচার করতে যায়। এছাড়াও আছে জঘন্য নেতৃত্ব। ঐতিহাসিকভাবেই এই রাজ্য অনুপ্রেরণাদায়ক কোনো নেতাকে পায়নি।
নেতৃত্বরাই সব জায়গায় পার্থক্য তৈরী করে। বাঙ্গালাও তার ব্যতিক্রম নয়।
পশ্চিমবঙ্গ বিগত দশক ধরে একটি কমিউনিস্ট দুর্গ ছিল। তাদের পদ্ধতিটি সংক্ষেপে হল –
“কমিউনিজম আপনাকে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে দেবে না। ধর্মীয় যেকোনো জিনিসকে তারা ধ্বংস করে দেবে। তারা দাবি করে সম্পূর্ণ আনুগত্য। কমিউনিস্টদের আদি নেতারা বুঝতে পেরেছিলো যে সাধারণ মানুষ ঈশ্বরকেই চূড়ান্ত কর্তৃত্ব বলে মানে। অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টির থেকেও ঈশ্বরকে তারা উচ্চতর স্থান দেয়। এর ফলে মানুষের উপর তাদের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পায়। ফলে মানুষের মনের উপরে কমিউনিস্ট পার্টির সর্বগ্রাসী ক্ষমতার রাস্তা পরিস্কার রাখার জন্যেই ঈশ্বর ও ধর্মকে বিদায় নিতে হয়।
এই কারণেই কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের ও যথেষ্ট পরিমানে অনুগামী সংগ্রহের পূর্ব শর্তই হলো ধর্মের ধর্মের ধ্বংসসাধন।
কমিউনিস্ট শাসনের আরেকটি প্রভাব ছিলো এই যে কমিউনিস্টরা মানুষের মনের আকাঙ্খাকে কমিয়ে দিয়েছিলো। “লাভ” শব্দটাকে একটা নিষিদ্ধ শব্দ হিসাবে ভাবতে শিখিয়েছিলো কমিউনিস্টরা। ফলে পশ্চিমবঙ্গের থেকে বহু প্রতিভা বাইরে চলে যায়।
যখন আমি বাঙ্গালায় জন্মানো এইসব অসংখ্য নেতৃত্বের দিকে তাকাই‚ তাদের কৃতিত্ব ও অর্জনগুলো দেখি‚ আবার একইসঙ্গে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে আধ্যাত্মিক নেতার অভাব ও অর্থনৈতিক দুর্দশা দেখি‚ আমি হতবুদ্ধি হয়ে যাই। ভারতের বেশ কিছু সংখ্যক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাঙ্গালী। কিন্তু তারা কাজ করছে বাঙ্গালার বাইরে।
বাঙ্গালার নেতারা ভারতের ইতিহাসে কি বিশাল অবদান রেখেছেন তা বিবেচনা করে
ভারতের জনগণকে পশ্চিমবঙ্গে এমন একটি সরকারকে সমর্থন করতে হবে যারা আবার এই জাতীয় প্রতিভার বিকাশে সাহায্য করবে।