কেন বিজেপিকেই বাছলেন অগ্নিমিত্রা, জানুন তাঁর মুখ থেকেই

কলকাতার অন্যতম ফ্যাশন আইকন। পেজ থ্রি-তে নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে। সেখান থেকে হঠাৎই তাঁর আবির্ভাব সক্রিয় রাজনীতিতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। কিন্তু গ্ল্যামার দুনিয়া থেকে কেন হঠাৎ কাঠফাটা রাজনীতিতে আসতে গেলেন, যাদবপুরের ঘটনার আসল সত্যিটাই বা কী? সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন শহরের প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার তথা বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল।

হঠাৎ কেন রাজনীতিতে- আমি বরাবরই সামাজিক ক্ষেত্রে অ্যাকটিভ একজন মানুষ। কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘প্রণাম’ নামের একটি প্রজেক্টে আমি কনভেনার। সেখানে শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিয়ে কাজ করি। তাঁদের প্রয়োজনে চিকিৎসক কিংবা অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো ইত্যাদি কাজ হয়। এছাড়া লরেটো স্কুলগুলির উদ্যোগে ফুটপাথের মেয়েদের নিয়ে কাজ হয়।

তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করানো, নাচ-গান-আবৃত্তি শেখানো হয়। সেই উদ্যোগের সঙ্গেও আমি যুক্ত। অনেকে আছে যারা নিজের মধ্যেই থাকতে ভালোবাসে। আমি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে, আলাপ করতে ভালোবাসি। মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তাই সেই কাজটাই আরও বৃহত্তর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনীতিতে আসা।

রাজনীতি মানেই খারাপ নয়- রাজনীতি মানেই কি খারাপ? যদি সেটা হয়ে থাকে তাহলে সে শুধু আমাদের মত শিক্ষিত মানুষদের জন্য। আমরা ড্রয়িং রূমে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সমালোচনা করতে ভালোবাসি। বলতে ভালোবাসি- দেশটা তো উচ্ছন্নে যাচ্ছে…! কিন্তু আমি মনে করি শুধু সমালোচনা না করে কিছু করে দেখানো উচিৎ। সেজন্যই আমি রাজনীতিতে এসেছি।

বিজেপিকেই কেন বাছলেন – রামচন্দ্র যখন সেতুবন্ধন করেছিলেন, তখন কাঠবেড়ালিরা সাহায্য করেছিল। ঠিক সেভাবে মোদীজি দেশের জন্য যে কাজ করছেন, তাতে আমি একটা কাঠবেড়ালির ভূমিকা নিতে চাই। শুধুমাত্র মোদীজির সঙ্গে কাজ করার জন্যই আমি বিজেপিতে এসেছি।

যাদবপুরে কী হয়েছিল – মাস খানেক আগে এবিভিপির ছাত্ররা আমাকে ফ্রেশার্স ওয়েলকাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ করেছিল। শুনেছিলাম অনুষ্ঠানে থাকবেন বাবুল সুপ্রিয়। এরপর অনুষ্ঠানের দিন দুয়েক আগে থেকেই শুনতে পাই, বাম এবং অতি বামপন্থী কিছু ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভ দেখা বলে পরিকল্পনা করেছি। বিশেষ গুরুত্ব দিইনি বিষয়টাকে।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে ওই ছাত্ররা আমাকে নিতে আসে আমার স্টুডিওতে। যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে যখন গাড়িতে করে অডিটোরিয়ামের দিকে যাচ্ছি, তখন দেখলাম প্রচুর ছাত্রছাত্রী আমার গাড়িটাকে আটকানোর জন্য ঘিরে ফেলেছে। আমি তখন গাড়ি থেকে নামলাম। শ’য়ে শ’য়ে ছেলেমেয়ে আমার মুখের সামনে এসে এক ভয়ঙ্কর অঙ্গভঙ্গি করে স্লোগান দিতে শুরু করল ‘গো ব্যাক অগ্নিমিত্রা’, ‘গো ব্যাক অগ্নিমিত্রা।’ আমি শাড়ি পরে ছিলাম, চোখে সানগ্লাস, পায়ে হিল। আমাকে ওরা ঠেলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করল।

এবিভিপির চারটে ছাত্রছাত্রীকে ধরে আমি কোনোরকমে এগোতে শুরু করলাম। একজন এসে আমার শাড়িটা টানল। টানতে টানতে ছিঁড়ে দিল। একজন পিছন থেকে আমাকে মলেস্ট করার চেষ্টা করল। এবিভিপির ছেলেরা আমাকে কোনোক্রমে অডিটোরিয়ামে ঢোকাল। বাবুল সুপ্রিয় আসতেও ওর একই অবস্থা হল। বিধ্বস্ত অবস্থায় ও অডিটোরিয়ামে ঢুকল।

কেউ পুলিশ ডাকল না- আমি সিপি-কে ফোন করলাম। উনি বললেন, ভিসি না ডাকলে আমি ফোর্স পাঠাতে পারব না। ভিসি সুরঞ্জন দাসকে বললাম, পুলিশ ডাকুন। উনি ডাকলেন না। কোনও অধ্যাপকই পুলিশ ডাকতে চাইলেন না। শেষ পর্যন্ত আমি রাজ্যপালকে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম। উনি তৎপরতার সঙ্গে ছুটে এসে আমাদের উদ্ধার করলেন।

ভিসি পদত্যাগ করুন- আপনি আপনার ছাত্রদের সামলাতে পারেন না। আপনার পদত্যাগ করা উচিৎ। আমি আর বাবুল সুপ্রিয় অপদস্থ হলাম আর উনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলেন? এ আবার কি! আর উনি তো অনুষ্ঠানটার কথা জানতেন। উনি তো অনুমতি দিয়েছেন।

দিলীপ ঘোষের মন্তব্য-

(বিজেপির রাজ্য সভাপতি যাদবপুরের ঘটনার পর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন ওখানকার ছাত্রীরা কোন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। অন্য একটি মন্তব্যে তিনি বলেন যাদবপুরে বিজেপি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাবেন)

আমার পাশে বসেই দিলীপ বাবু প্রেস কনফারেন্স করেন। আমি এরকম কিছু শুনিনি। আমার মনে হয়েছে উনি ছাত্রীদের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে যদি সত্যিই একথা বলে থাকেন, তাহলে মেয়ে হিসেবে আমার খারাপ লাগবে। আর যদি বাড়িতে আপনার মা বা দিদি বিপদে পড়েন, তখন কি আপনি চুপ করে বসে থাকবেন? না কি দরজা ভেঙে লোকজন ডাকার চেষ্টা করবেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা সেইজন্যই বলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.