দেশজুড়ে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিতর্ক চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও এনআরসি বিধি ঘোষণা না করলেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে নানা মহলে। এরই মধ্যে ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে এনপিআর-এর কাজ শুরু করবে সেনসাস কমিশন। ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। ৩০ লাখ কর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে। সব রাজ্যেই চলবে এনপিআর-এর কাজ। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল আপাতত স্থগিত রেখেছে সেই কাজ। তাতেও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। সত্যিই কি এনপিআর বন্ধ রাখা যায়! এমনই সব জল্পনার থেকে দূরে থাকতে জেনে নিন এনপিআর সম্পর্কে তৈরি হওয়া সব প্রশ্নের উত্তর।
এনপিআর কী?
এনপিআর হল দেশের সাধারণ বাসিন্দাদের এক তালিকা। যাঁরা অন্তত গত ৬ মাস ধরে একটি এলাকায় থাকছেন, বা পরবর্তী ৬ মাস ধরে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় থাকার পরিকল্পনা করছেন তাঁরাই দেশের সাধারণ বাসিন্দা। এনআরসি-তে যেমন নাগরিকত্বের বিষয় রয়েছে, এনপিআর তেমন কিছু নয়। ছ’মাসের বেশি সময় ধরে কোনও ভিনদেশি কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় বসবাস করলে তাঁর নামও এই তালিকায় থাকবে।
এনপিআর-এর উদ্দেশ্য কী?
কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি সাধারণ নাগরিকের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করে তা সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তাঁদের সম্পর্কে তথ্য দেবেন। বাসিন্দারা যাতে অনলাইনে এনপিআর আপডেট করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রেখেছে মন্ত্রক।
কোন আইনে এনপিআর হবে?
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন ও ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব (নাগরিকের নথিভুক্তিকরণ ও জাতীয় আইডেন্টিটি কার্ড) বিধি অনুসারে এনপিআর তৈরি হচ্ছে। ভারতের প্রত্যেক সাধারণ বাসিন্দার এনপিআরে নাম নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক।
অসমে কেন এনপিআর হবে না?
২০২১ সালের জনগণনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর এই কাজ চালাবে। আসামে যেহেতু সদ্য এনআরসি-র কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে এনপিআর হবে না।
এনপিআর কি নতুন ধারণা নাকি আগেও হয়েছে?
২০১০ সালে এনপিআরের তথ্য প্রথম সংগ্রহ করা হয়, ২০১১-র জনগণনার জন্য। ২০১৫ সালে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সার্ভের মাধ্যমে সে তথ্য আরও আপডেট করা হয়।
এনপিআর কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবে?
জনবিন্যাসের তথ্য এবং বায়োমেট্রিক তথ্য দুইই সংগ্রহ করবে এনপিআর। জনবিন্যাসের তথ্যের ১৫টি বিভাগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নাম, জন্মস্থান, শিক্ষা ও পেশা যা রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর সংগ্রহ করবে। বায়োমেট্রিক তথ্যের জন্য নির্ভর করা হবে আধারের উপর। সে জন্য বাসিন্দাদের আধার তথ্য চাওয়া হবে।
এনপিআর-এর মাধ্যমে সরকার এত তথ্য চাইছে কেন?
সরকারের এত তথ্য সংগ্রহের কারণ হিসেবে সরকার বলছে, সব দেশের কাছেই তার বাসিন্দাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য থাকা প্রয়োজন কারণ, তাতে সরকার আরও ভালভাবে নীতিনির্ধারণ করতে পারবে এবং জাতীয় নিরাপত্তাকেও সাহায্য করবে।
এনপিআর-এর সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি?
সরকারের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, না, এর সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্কই নেই। এনআরসি বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করার জন্য। আর এনপিআর-এ সব নাগরিকের তথ্যই নেওয়া হয়। গত ছ’মাস দেশের কোথাও বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের নামও এনপিআর-এ থাকবে।