ইভিএম নিয়ে বিতর্ক, সংশয়ের আবহেই পশ্চিমবঙ্গে ভোট

ভারতবর্ষের নির্বাচনে ইভিএমকে নিয়ে বিতর্ক এবং সংশয়ের শেষ নেই। বিশেষ করে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর থেকেই এই নিয়ে বিতর্ক বেড়েছে। প্রয়াত নাট্যকার সফদার হাসমির বোন শবনম হাসমি-রা তো একটা ক্যাম্পেনই চালিয়েছিলেন, ‘ব্যাক টু পেপার ব্যালট’। দিল্লিতে, মুম্বইতে ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফিরে যাওয়ার জন্য তাঁরা নাগরিক কনভেনশনও করেছেন।

লিখলেন– সুমন ভট্টাচার্য
শবনম হাসমি বা তিস্তা শীতলবাদ-এর মতো সমাজকর্মীদের দাবি, ইভিএম কিভাবে ‘হ্যাক’ করা যায়, তার বহু প্রমাণ বিদেশে বা দেশের বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদ হাতে কলমে সাংবাদিক সম্মেলন করে বা ভিডিও করে দেখিয়েছেন। ইভিএম নিয়ে এই সংশয়ের কারণেই বিশ্বের বহু উন্নত গণতন্ত্র আবার ব্যালট পেপারে ফিরে গিয়েছে। যাঁরা ইভিএমের বিরোধী, তাঁরা মূলত মার্কিন গণতন্ত্রের উদাহরণ দেন, যেখানে ব্যাটল পেপারেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সাড়া হয়।

পশ্চিমবঙ্গ সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের আগে আবার ইভিএম বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। বিতর্ক ঢাকতে নির্বাচন কমিশনকে ইতিমধ্যেই দেশের প্রায় সব প্রধান সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপণ দিয়ে দেখাতে হয়েছে যে ইভিএম শুধুমাত্র বিজেপিকে সুবিধে পাইয়ে দেয়, এই অভিযোগ ঠিক নয়। বরং কোন্ কোন্ বিধানসভা এবং কোন্ লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী কংগ্রেস বা অন্যদল নির্বাচনে জিতেছে, তার সবিস্তার উল্লেখ করতে হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন যতই বিজ্ঞাপন দিক বা নিজেদের বিতর্কের উর্ধে রাখার চেষ্টা করুক, এই নিয়ে কিন্তু সংশয় বা অভিযোগের বন্যা থামছে না। বিজেপি ছাড়া দেশের সব ক’টি প্রধান রাজনৈতিক দল কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিতভাবে আর্জি জানিয়েছিল ইভিএম বাতিল করে ব্যালট পেপার চালু করার জন্য।

এটা সত্যি যে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ইভিএমে বিজেপির হার হয়েছে। যেমন ২০১৮-র ডিসেম্বরে যখন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে বিধানসভার ভোট হয়, তখন সেখানে কংগ্রেস জিতে যায়। বিজেপির প্রশ্ন যখন বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধিরা জেতে, তখন তো ইভিএম নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠে না। তাহলে যে নির্বাচনের রায় বিজেপির পক্ষে যায়, সেখানেই বিরোধীরা ইভিএমে কারচুপির কথা তোলেন কেন?

শবনম বা তিস্তা শীতলবাদের মতো কট্টর নরেন্দ্র মোদী বিরোধীরা বলেন, এটাই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সুকৌশলে সবাইকে বোকা বানানোর চেষ্টা। যেহেতু রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে হারা-জেতার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় থাকার কোনও সম্পর্ক নেই, তাই সেক্ষেত্রে তাঁরা ইভিএমে কোনও কারচুপি করেন না। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন, যেখানে দেশের শাসন ক্ষমতা দখলের প্রশ্ন, সেখানেই এই ধরনের কারচুপি হয়।

বিরোধীদের এই অভিযোগ শানানোর পিছনে তাঁরা ইভিএমের বরাত কোন্ সংস্থা পেয়েছে বা ইভিএমের সফটওয়ারের বরাত নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ট কোনও সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে কিনা, এই সব প্রশ্ন সামনে তুলে আনেন।

ইভিএম নিয়ে বিতর্ক থাকুক, কিন্তু ভারতের মতো ১৩০ কোটি মানুষের দেশে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং নির্বাচন কমিশন কিভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে, সেদিকে সকলেই তাকিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা বা গুজরাটে রাজ্যসভার নির্বাচনের সময় যেভাবে একই সঙ্গে দুটি আসনের ভোট নির্বাচন কমিশন করিয়েছিল, তাতে কেন্দ্রের শাসক দলেরই সুবিধা হয়েছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.