এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে করোনা (Corona) সংক্রমণের শতকরা হারে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার ৯.৫%। গত এক সপ্তাহে দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের শতকরা হারে পশ্চিমবঙ্গই প্রথম স্থানে রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে এই তথ্য সামনে এসেছে। গত এক সপ্তাহে কর্নাটকে করোনা সংক্রমণের শতকরা হার ৯% তে পৌঁছতেই কর্নাটকে ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে আজ মঙ্গলবার থেকে। দিল্লিতে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। দিল্লিতে করোনা বাড়তে থাকায় দিল্লি হাই কোর্ট করোনাকে “সুনামি” আখ্যা দিয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে সেই করোনা “সুনামি”-তে শীর্ষে পশ্চমবঙ্গ।
তাই এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, পশ্চিমবঙ্গে কেন লকডাউন ঘোষণা হবে না? চিকিৎসকদের আরও চিন্তা, এর পরও ২৯ এপ্রিল রাজ্যে শেষ দফার নির্বাচন (Election) আছে। ২ মে রয়েছে গণনা (Vote Counting) । তাই করোনা সংক্রমণের হার রাজ্যে যে এই দু’দিনের জনসমাগমের ফলে আরও বাড়বে সেই বিষয়ে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত। কেননা নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা না মেনে লাগামছাড়া ভিড় ও গায়ে গায়ে দাঁড়িয়েই নেতাদের আহ্বানে মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। শেষ দফার নির্বাচন ও গণনার দিনও যে এর ব্যতিক্রম হবে না সেটাই স্বাভাবিক।
তবে এর পরেও স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কর্তারা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা মনে করছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যে লকডাউন করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় নাইট কার্ফু জারি করা। লকডাউন ও নাইট কার্ফু জারি করা সম্ভব না হওয়ার এক ও অন্যতম কারণ হচ্ছে নির্বাচন ও তার পরবর্তীতে ভোট গণনা। তবে এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকরা। তবে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে এবং রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা সব মহলের। কী করে বাড়তি সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেড পাওয়া যাবে সেই চিন্তাও ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা (Ajay Bhalla) সোমবার রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, গত সাত দিনে কোনও জায়গায় সংক্রমণের হার ১০%-র বেশি হলে ও হাসপাতালে বেড এবং আইসিইউ-র ৬০% করোনা রোগীর দ্বারা ভর্তি থাকলে, সেই একালা, জেলা, শহরকে কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখতে হবে জরুরি নয় এমন সব পরিষেবা। সংক্রমণকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব না করতে পারলে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বে বলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের (Ministry of Health) নির্দেশ, করোনার জন্য প্রত্যেক রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যগুলির উচিত দ্রুত কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করে সেই চাপকে সামলানোর ব্যবস্থা করা।
প্রথমে দিল্লিতে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। তারপর মঙ্গলবার থেকে কর্নাটকে লকডাউন জারি হচ্ছে । মহারাষ্ট্র করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রক মনে করছে পশ্চিমবঙ্গে এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে স্বল্প সময়ের জন্য লকডাউ বা সমজাতীয় কঠোর বিধি জারি করা প্রয়োজন। সেটা না হলে সংক্রমণের হার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছবে সেটা ভেবে চিন্তায় স্বাস্থ্য কর্তারা।
তবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে সংক্রমণের হার বেশি যে রাজ্যে, সেই পশ্চিমবঙ্গে ২৯ এপ্রিল শেষ দফার নির্বাচন। ২ মে ভোট গণনা। তাই এখনই পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন (Lockdown) ঘোষণা করা সম্ভব নয়। কিন্তু এখনই রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করতে না পারলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়ে যাবে, এই ভেবে রাজ্যের স্বাস্থ কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কেননা তাঁরা মনে করছেন, এর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।