‘ফের বঞ্চিত বাংলা! মোদী মন্ত্রীসভায় রাজ্য থেকে মাত্র ২’ এই শিরোনামে আজ আনন্দবাজার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রথমতঃ ২০০৪ বা ২০০৯ এর মত রাজদীপ সরদেশাই ও বরখা দত্ত মন্ত্রীসভার সদস্য কারা কারা হবেন ও কে কোন মন্ত্রক পাবেন তা মন্ত্রীসভার শপথের আগেই জেনে যেতেন, আর এখন খবর করছেন রাষ্ট্রপতি’ ভবনের অতিথিদের পরিবেশন করা হবে ‘পনীর টিক্কা’ ও ‘ডাল রাইসিনা’। আনন্দবাজারের এবং অন্য সাংবাদিকদের অবস্থাও এরকমই। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত মন্ত্রীসভার গঠন করে তাতে পশ্চিমবঙ্গের অনেক সাংসদকেই মন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছিল সংবাদমাধ্যমগুলি। এমনকি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বারবার বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থে তিনি মন্ত্রীত্বের সুযোগ পেলেও মন্ত্রী হবেন না, তাকেও মন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। এমনকি মুকুল রায় যিনি লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য কৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, ওনাকেও নাকি মন্ত্রী পদে বিবেচনা করা হবে এরকম খবরও ছড়িয়েছে সংবাদ মাধ্যমগুলি। ভুল খবর বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর প্রচারের মাধ্যমে জনগণের মতামতকে প্রভাবিত করবার প্রচেষ্টা গজদন্ত মিনারে বসবাসকারী সাংবাদিককুল করেই থাকেন, তাই ওনারা চমৎকৃত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিজেপির ১৮টি সাংসদকে নির্বাচনে জয়ী করায়। আর এখন প্রচেষ্টা করছেন আগে বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্করহিত খবর পরিবেশন করে, পরে বঞ্চনার অভিযোগ করে মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি করবার জন্য। প্রাদেশিকতার যে বিভেদকারী দিশা মমতা ব্যানার্জীর কন্ঠে শোনা যাচ্ছে সেটাই এইসব সাংবাদিককুল বলছেন ‘মন্ত্রীত্ব পাওয়ার প্রশ্নে বঞ্চিত থেকে গেল বাংলা’।
মন্ত্রী হিসেবে কাল শপথ নিয়েছেন পূর্বতন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং রায়গঞ্জের নবনির্বাচিত সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। বাবুল সুপ্রিয় বিগত সরকারে প্রতিমন্ত্রী থাকলেও তার সংসদক্ষেত্রে বিজেপি কর্মীদের ওপর আক্রমণ ও বিবিধ ঝামেলার জন্য সেরকমভাবে সময় দিতে না পারায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেছেন বাবুল বাবু এইবার নিশ্চয় সময় দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করবেন। বাবুল সুপ্রিয় বোধহয় নিজেও মনে করতে পারবেন না ওনার গাড়ি কতবার ভাঙচুর করা হয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দ্বারা, কাজ কখন করবেন? আর অন্যদিকে ছাত্র সংগঠন থেকে উঠে আসা দেবশ্রী চৌধুরীকে বেছে নেওয়া হয়েছে তার সাংগাঠনিক দক্ষতা, জনপ্রিয়তা এবং বিশেষভাবে উত্তরবঙ্গ থেকে মন্ত্রীসভায় এক প্রতিনিধি রাখবার জন্যই বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গনি খান চৌধুরী ও প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর পর আর উত্তরবঙ্গ থেকে মন্ত্রী কেউ হতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কেন্দ্রবিরোধী নীতির জন্য। কিন্তু এখানে পরিকল্পিতভাবে বিজেপির জয়ের দুই কান্ডারী দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের খবর বানিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে জনগণকে বিভ্রান্ত করবার জন্য। কারণ সমর্থক ও কার্যকর্তারা পরিস্কারভাবে বক্তব্য রাখছেন আগামীর বিধানসভা যুদ্ধে এই দুইজনকেই তাদের সেনাপতি হিসেবে চান। সেরকমই এক কল্পিত লড়াইের প্রস্তাবনাও আছে লকেট চ্যাটার্জী ও দেবশ্রী চৌধুরীর মধ্যে। কিন্তু সাংবাদিকদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে মোদী শাহ জুটি আরো একবার দেখিয়ে দিলেন ওনারা বাস্তবের জমিতে পা রেখে রাজনীতি করেন, কল্পবিলাসে সময় নষ্ট করেন না, এবং পশ্চিমবঙ্গে পাখির চোখ বিধানসভা নির্বাচন।
এখন আসি বঞ্চনার কথায়। মমতা ব্যানর্জী আয়ুস্মান ভারতের সুবিধে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের নিতে দিচ্ছেননা, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলিতে স্টিকার লাগিয়ে ক্যাডারদের মাধ্যমে নিজের নামে চালাচ্ছেন, এবং একটু খবর নিলেই প্রজ্ঞাধর সাংবাদিকেরা জানতে পারবেন কোনো সুবিধে পাওয়ার জন্য কত টাকা ক্যাডারদের দিতে হবে। মানুষ বঞ্চিত হয়েছে বলেই বর্তমান রাজ্য সরকারে এই ফলাফল সে বিষয়ে বিস্তারিত লিখুন। বিভিন্ন আত্মঘাতী নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে না হয় অন্য কোনো সময় বলা যাবে। কিন্তু জেনে রাখুন বাতানুকুল পরিবেশে গল্প লেখা সাংবাদিকতা নয়, এবং সত্যনিষ্ঠ হওয়া জার্নালিস্টিক এথিক এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।