এবারের নির্বাচন অনেক দিক থেকে আলাদা। তা সে রাজনৈতিক সমীকরণ হোক বা সামাজিক পটপরিবর্তনের দিক দিয়ে। একাধিক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকতে চলেছে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে। তার মধ্যে অন্যতম রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে ভোটকর্মীদের আন্দোলন। উত্তর বঙ্গের বেশকিছু জেলা থেকে ভোটকর্মীদের এই আন্দোলন শুরু হলে ধিরে ধিরে এটি বিরাট আকার ধারণ করে। এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন তাদের দাবি সম্পূর্ণ সমর্থন না করলেও কিছুটা মেনে নিয়েছে। নিরাপত্তার জন্য তারা প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নামলেও শেষ নির্বাচন কমিশন প্রতিবুথে সশস্ত্র বাহিনী রাখার আশ্বাস দিয়েছে।
ভোট কর্মীদের বিক্ষোভের জেরে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের তরফে তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথা দেওয়া হলেও প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি কিন্তু মেনে নেওয়া হয়নি বদলে সশস্ত্র বাহিনী দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও এর ফলে ভোটকর্মীদের অনেকেই মনে করেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকায় ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা যে নিশ্চিত হয়েছে তার কখনোই জোর দিয়ে বলা যাবে না।
সোমবার বিভিন্ন জেলার ভোট কর্মীরা একত্রিত হয়ে কলকাতায় তাদের নিরাপত্তার দাবিতে মিছিল করে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন। এরপর তারা একটি ডেপুটেশনও দেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলেও বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার কথা দেন নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে কমিশন ভোটকর্মীদের দাবিকে কিছুটা মেনে নেওয়ার অর্থ হচ্ছে তারা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে রাজ্যের শেষ পঞ্চায়েত ভোটে চুড়ান্ত অরাজকতা হিংসার সম্মুখীন হয়েছে ভোটকর্মী ও রাজ্যবাসী।
উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, হুগলী, হাওড়া,সহ বহু জায়গায় শেষ ১০ দিন ধরে রাজ্যের ভোট কর্মীদের বিক্ষোভ সামাল দিতেই অবশেষে পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
নিরাপত্তা চেয়ে ভোট কর্মীদের বিদ্রোহ এবারের লোকসভা ভোটে একেবারে নজিরবিহীন ঘটনা। সারা রাজ্যের বিভিন্ন ভোট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কোথাও প্রশিক্ষণ বয়কট করে, কোথাও বিক্ষোভ দেখিয়ে নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছেন ভোট কর্মীরা। তাদের দাবি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া তারা ভোট করতে যেতে চান না। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবার ভোট বয়কটের ডাক দেন তারা। উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধের ঘটনা ঘটে। তাদের স্লোগান ” লোকসভা নির্বাচনে আবার হতে চাই না রাজকুমার”। একথায় রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে বলে বিক্ষোভে সোচ্চার হোন তারা।
ভোট কর্মীদের দাবি রাজ্যের বাহিনী দিয়ে ভোট করালে ভোট কর্মীরা ভোট গ্রহণ করতে যাবেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকেই তাদের এই বিক্ষোভ বলে জানান ভোট কর্মীরা। ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে কলকাতার বুকে হয় মহামিছিল। রাজ্যের সমস্ত জেলার শিক্ষক, শিক্ষা কর্মী, শিক্ষানুরাগীদের ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে এই কর্মসূচি সংগঠিত হয় ।মিছিলের পর নির্বাচন কমিশনের দপ্তর এর ডেপুটেশন দেওয়া হয়। প্রতিটি জেলা থেকে ভোট কর্মীদের সংগঠিত করে সারা রাজ্য জুড়ে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে তা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে নজিরবিহীন।