শান্তিনিকেতন: অধ্যাপক থেকে অধ্যক্ষ, এমনকি ডিরেক্টর। সকলকেই শান্তিনিকেতন ছেড়ে বাইরে যেতে গেলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। এই মর্মে সব ভবনের অধ্যক্ষ, নির্দেশক, অধ্যাপকদের উদ্দেশ্য নোটিশ জারি করল বিশ্বভারতী। তবে সকল কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের জন্য এই আইন থাকলেও কেন হঠাৎ করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কে এহেন বিজ্ঞাপন দিতে হল? এই নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন । অবশ্য এই নিয়ে বিশ্বভারতী সাফাই, পড়াশুনা মান উন্নয়নে, ইউজিসি সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে অধ্যাপকরা অনেক সময় না জানিয়ে বাইরে চলে গেলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কে অসুবিধায পরতে হয়।
দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে স্থায়ী উপাচার্য ছিলেন না। আর রোগ টা শুরু হয় সেই সময় থেকেই। অভিযোগ উঠেছিল, সেই সময় অনেকেই প্রায়ই ছুটির আগে পরে হুটহাট চলে যেতেন। এই সব নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ও জমা পেরেছিল কর্তৃপক্ষের কাছে। এর ফলে পঠন–পাঠনে ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তার খেসারত দিতে হয় এই কেন্দ্রীয প্রতিষ্ঠান কে। কারন ন্যাকের মূল্যায়নে বিশ্বভারতীর কপালে জোটে ‘বি’ প্লাস গ্রেড। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সার্বিক এই মান নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাই এবার আগাম সতর্ক বিশ্বভারতী। তাই এবার শিক্ষা মান উন্নয়ন, নিয়মিত ক্লাস, সহ একাধিক বিষয়ে কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তারই ফর স্বরুপ এবার বিশ্বভারতী সব স্তরের অধ্যাপক, অধ্যক্ষ, নির্দেশক সকল কে শান্তিনিকেতন ছাড়ার আগে নিজ নিজ উরধতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল বিশ্বভারতী। বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মসচিব সৌগত চট্টোপাধ্যায় এক নির্দেশিকায় জানান, স্কুল শিক্ষা বিভাগ সহ সমস্ত ভবনের অধ্যক্ষ, আধিকারিকদের উপাচার্যের কাছ থেকে ‘স্টেশন লিভে’র আগে অনুমতি নিতে হবে। একইভাবে, বিভিন্ন বিভাগের ক্ষেত্রেও একই ভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কেন এমন নির্দেশিকা?
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, বিশ্বভারতীতে এমনিতে বুধ ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। মঙ্গল বার ক্লাস নিয়ে দুপুরের দিকে তাড়াতাড়ি কেউ কেউ ট্রেন ধরে বাড়ি চলে যাচ্ছিলেন। ফের শুক্রবার এসে ক্লাসে যোগদান করছিলেন তাঁরা। যদিও এই দু’দিন ছুটি। ক্লাস বন্ধ। কিন্তু স্কুল ছুটের মত ‘আশ্রম ছুট’ ব্যাপারটা আঁটকাতে এই নির্দেশিকা কিনা তা বিজ্ঞপ্তির কোথাও লেখা নেই। একই সঙ্গে ন্যাকের র্যাঙ্কে বি প্লাস পেয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে বিশ্বভারতী। আর সেটা মোটেই সম্মানজনক নয় বিশ্বভারতীর মত ঐতিহ্য মণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সুনামের পক্ষে। তাই হৃত গৌরব উদ্ধার করতে বিশ্বভারতী পঠন পাঠন জোড় দিতেই এই উদ্যোগ । এছাড়াও, বিশ্বভারতীর যুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার পঠন পাঠন বন্ধ থাকে। কিন্তু ইউ জি সি খোলা থাকায় ওই দুদিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন বিষয়ে চিঠি আসে। জরুরী ভিত্তিতে তার রিপোর্ট পাঠাতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোন ভবনের কোন অধ্যাপক অধ্যক্ষ কে দরকার হতে হাতের নাগালে পাওয়া যায় না দরকার সময। তাই এবার ছুটি নেবার ক্ষেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে থাকবে সমস্ত বিষয়।
অধ্যাপক দের ছুটিতে বাইরে যাবার আগে লিখিত অনুমতি নিতে হবে বলে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কে ভালো চোখে দেখছে না বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সভা। সংগঠনের সম্পাদক গৌতম সাহা বলেন, “আমরা সবাই জানি এটা সরকারি নিয়ম। আমরা এতদিন বাইরে গেলে হেড কে বলে যেতাম। পরে ফর্ম ফিলাপ করে দিতাম। এর জন্য আলাদা করে নোটিশ দেবার দরকার ছিল না। মুখে বললেই ভালো হত। তাহলে শিক্ষকদের ছোট হতে হত না।”
যদিও বিশ্বভারতী জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন,” বিশ্বভারতী সব স্তরের অধ্যাপক অধ্যক্ষ নির্দেশকদের এবার থেকে স্টেশন লিভে’র আগে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।এর মুল লক্ষ্য শিক্ষা মান উন্নয়ন, ইউজিসি সংগে যোগাযোগ রক্ষা করা সুবিধার জন্য। “