নির্বাচন কমিশন পুলিশ কর্তাদের বদলি করলে গোঁসা হয়। কিন্তু ২০১৯ এ দাঁড়িয়ে বাংলায় ভোটে হিংসা, বুথে বুথে ছাপ্পা, বাড়ি বয়ে গিয়ে হুমকি, প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর হলে দায় কে নেবে!
বাংলায় প্রথম তিন দফার ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া যে ষোলো আনা শান্ত ছিল, বলা যায় না। তবে বিক্ষিপ্ত ভাবে অশান্তি ও হিংসার ঘটনা ছিল খুবই কম। কিন্তু চতুর্থ দফার ভোটে বাংলা ফিরে এলো বাংলাতেই।
এ দফায় আটটি আসনে ভোট গ্রহণ চলছে। সে গুলি হল বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর ও বীরভূম। এর মধ্যে কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনও অশান্তির খবর মেলেনি। কিন্তু সকাল থেকেই প্রবল অশান্তি শুরু হয়ে যায় আসানসোল লোকসভার বিভিন্ন বুথে। বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্রের একাধিক জায়গায় বিজেপি এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দিয়ে ছাপ্পার অভিযোগ এসেছে। খবর পেয়ে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় সেখানে গেলে তৃণমূল সমর্থকরা তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায়। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করে।
ওদিকে বর্ধমান দুর্গাপুরের জেমুয়াতে সকাল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল। জেমুয়া হাই স্কুলে পাঁচটি বুথ রয়েছে। সকাল থেকে লম্বা লাইন থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী অনুপস্থিত থাকায় সেখানে স্থানীয়রাই ভোট শুরু করতে দেননি। এর পর ভোট চালু করার দাবি করে তৃণমূল। তা থেকেই বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়। পরে পুলিশ এসে এলোপাথাড়ি লাঠি চার্জ করে।
তবে হিংসার তীব্রতা অনেক বেশি অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূমে। অনুব্রতকে নজরবন্দি করে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এ দিনও ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে অনুব্রত বলেন, ওসবে আমি পরোয়া করি না। যা ব্যবস্থা করার করা হয়েছে। এমনকি এও দাবি করেন, তাঁর নকুলদানার কাছে দশ গোল খেয়েছে নজরবন্দী।
অনুব্রত যখন এমন মন্তব্য করছেন, তখন গোটা বীরভূম জুড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট গ্রহণকে ঘিরে হিংসার ঘটনা। এ ব্যাপারে নানুর বরাবরই এপিসেন্টার। সেখানে তৃণমূল কর্মীরা গ্রামবাসীদের ভোট দানে বাধা দিলে মহিলারা লাঠিসোটা নিয়ে রুখে দাঁড়ান। তবে সব জায়গায় মানুষ প্রতিরোধ করতে পেরেছেন এমনও নয়। সিউড়ি, রামপুরহারট, নলহাটি, ময়ূরেশ্বর, ইলামবাজার, মহম্মদবাজার এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে লাগাতার অভিযোগ উঠতে থাকে।
বীরভূমের এ হেন হিংসার ঘটনায় অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে ঘটনাক্রম। খাস বহরমপুর শহরে তৃণমূল বড় কোনও গোল পাকাতে পারেনি বলে খবর। তবে কংগ্রেসের অভিযোগ বহরমপুরের বাইরে বহু বুথে কংগ্রেসের এজেন্ট ছিল না। সেখানে এন্তার ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। এমনকি সম্ভাব্য যে গ্রামের ভোটাররা কংগ্রেসকে ভোট দিতে পারেন বলে সন্দেহ হয়েছে, তাদের বুথের ধারে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি বলে কংগ্রেসের নেতারা অভিযোগ করেছেন।
ঘটনা হল, চতুর্থ দফার নির্বাচনে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তার পরেও যে হারে হিংসার ঘটনা এ দিন ঘটেছে, তাতে বাংলায় স্বচ্ছ ও অবাধ ভোট কতটা হয়েছে তা নিয়ে ঘোর প্রশ্ন তৈরি হয়ে গেল?
পর্যবেক্ষকদের মতে, কমিশন এ বারও ফেল করছে। শুধু বুথ বুঝে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করলেই হবে না। ভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে যে ভাবে এরিয়া ডোমিনেশন করার দরকার ছিল তা হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বেলা ১১ টার মধ্যে এ দিন আটটি কেন্দ্রে গড়ে ৩৪.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেল, এই ভোট একশ শতাংশই জনমত তো! নাকি উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে জলের মাত্রা।