রাজ্য জুড়ে ১ মে থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়ে সঙ্কট

রাজ্য জুড়ে ভ্যাকসিনের অকাল (Vaccine crisis in Bengal)। করোনা (Corona) আতঙ্কে মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন না পেয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। শুক্রবার ভোর রাত থেকে রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড়। কিন্তু কোথায় ভ্যাকসিন? তা ভেবে স্বাস্থ্যকর্মীরা (Health Worker) দিশেহারা।

শুক্রবার বাগবাজারের মেডিক্যাল স্টোর (Central medical Store) থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। কিন্তু ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে রয়েছেন এমন মানুষদের ১ মে থেকে করোনা ভ্যাকসিন দিতে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন লাগবে সেটা স্বাস্থ্য দফতরের হাতে নেই। তাই সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের মাথায় চিন্তা। এই পরিস্থিতিতে সবটাই যাতে নাগালের বাইরে চলে না যায় তার জন্য রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতর পুলিশের সাহায্য আগাম চেয়ে রেখেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, “সরকারি অপরিকল্পনার ফলেই ভ্যাকসিন নিতে এসে মানুষ হয়রান হচ্ছেন। আর ভ্যাকসিনের লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষের করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কি করে ১ মে থেকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হবে?”

কেন্দ্র ১ মে থেকে সারা দেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ও ৪৫ বছরের মধ্যে যাদের বয়েস তাদের টিকাকরণ হবে বলে জানিয়েছে। তবে টিকার ঘাটতি রয়েছে ব্যাপক ভাবে । সল্টলেকে থেকে শুরু করে বাইপাস সংলগ্ন সবকটি বেসরকারি হাসতাপাতে ভ্যাকসিনের হাহাকার। বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্তা জানিয়েছেন, “আমাদের হাতে এখন ভ্যাকসিন নেই। সরকারের থেকে আমাদের বলা হয়েছে ভ্যাকসিন উৎপাদক সংস্থার কাছ থেকে ভ্যাকসিন কিনে নিতে। আমরা আজ চাইলেই কাল ভ্যাকসিন পেয়ে যেতে পারি না। আমরা অর্ডার করেছি। তাই যতক্ষণ হাতে ভ্যাকসিন এসে না পৌঁছয় ততক্ষণ বলতে পারবো না কবে থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করা যাবে। এছাড়া প্রথম ডোজ এখন আর পাওয়া যাবে না। যাদের প্রথম ডোজ নেওয়া হয়েছে তারা দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন।”

প্রসঙ্গত ভ্যাকসিন নিয়ে যে সঙ্কট দেখা দেবে সেটা বোঝা যাচ্ছিল। কারণ যেদিন কেন্দ্রের তরফে ১ মে থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধে ও ৪৫ বছরের মধ্যে মানুষদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলো সেদিনই দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতি ছিল। প্রথম দফায় ভ্যাকসিন দেওয়ার পর যখন ৪৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয় তখনই দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতি ছিল। আসলে ভ্যাকসিন উৎপাদক সংস্থা তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ৫০ শতাংশ কেন্দ্রকে আর ৫০ শতাংশ বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েছে। এর ফলে ভ্যাকসিনের ঘাটতি শুরু হয়ে যায়। কারণ বেশিরভাগ মানুষ সরকারি পরিষেবায় ভ্যাকসিন নেওয়ার দিকে ঝুঁকেছিলেন। তাই সরকারি ভ্যাকসিন সেন্টারে ভ্যাকসিনের ঘাটতি দেখা দেয়। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী করোনা নিয়ে ভ্যাকসিন উৎপাদক সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে সরকারকে আরও বেশি ও দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু এরই সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রের তরফে ঘোষণা করা হয় ১ মে থেকে ১৮ ঊর্ধ ও ৪৫ বছরের মধ্যে মানুষদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর থেকেই সঙ্কটের শুরু। তাছাড়া “কো-উইন” app -এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের জন্য নাম লেখানোর জন্য মানুষকে আবেদন করতে বলা হলেও ওই app-এ আবেদন করতে সবাই পারছেন না। আসছে না ওটিপি। এসব নিয়েই চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে ভ্যাকসিন সঙ্কট ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.