মেডিক্যাল কলেজে টলিসিজুম্যাব কাণ্ডের রেশ এখনও মেটেনি। তার আগেই এসএসকেএম (SSKM Hospital) হাসপাতালে মিলল ‘ক্রিটিক্যাল’ কেলেঙ্কারির হদিশ। সূত্রের খবর, টসিলিজুমাব কাণ্ডের পরে এ বার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্র। যে যন্ত্রের দাম আনুমানিক প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বলে খবর। যন্ত্র উধাওয়ের রহস্য ভেদ করতে তাই ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করেছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। তবে যন্ত্র উধাওয়ের অভিযোগের মধ্যেই বড়সড় কেলেঙ্কারির মাত্রা যোগ করেছে বাক্স রহস্য।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে বাক্সের মধ্যে সিসিইউয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য অত্যাধুনিক ইউএসজি-ইকো যন্ত্র থাকার কথা, সেখানে নতুন বাক্সের মধ্যে রাখা ছিল পুরনো যন্ত্র! এখানেই শেষ নয়। যন্ত্র উধাওয়ের খোঁজখবর শুরু হতেই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়ল কেউটে। দেখা গেল, শুধু ইউএসজি-ইকো যন্ত্র নয়, হদিশ মিলছে না আরও বহু যন্ত্রের। পরিস্থিতি এমনই যে মাস দুয়েক আগে বদলি হয়ে আসা বিভাগীয় প্রধান বিভাগের কোনও যন্ত্রের ভার নিতেই চাননি। লিখিতভাবে এসএসকেএমের ডিরেক্টরকে সে কথা জানিয়েও দিয়েছেন তিনি। এমনটাই খবর সূত্রের। কেলেঙ্কারির উৎস খুঁজতেই তাই ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিগত কয়েক মাস আগেও মিটু কাণ্ডে শিরোনামে উঠে আসে এসএসকেএম হাসপাতাল। একটি বাংলা চ্যানেলে সেই খবর সম্প্রচার হওয়ার পরই বদলি করা হয় হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে। আগের চিকিৎসক বদলি হওয়ার পর চিকিৎসক অসীম কুণ্ডু নতুন দায়িত্ব নেন। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিভাগে কী কী যন্ত্র নতুন চিকিৎসক পেলেন, তা কাগজে-কলমে বুঝে নিতে হয়। সেই সময়ই দেখা যায়, একটি সিল প্যাক বাক্সে (যেখানে নতুন ইউএসজি-ইকো মেশিন থাকার কথা) পড়ে রয়েছে মান্ধাতার আমলের একটি মেশিন। যে মডেলটির বহু প্রাচীন। এমনকি, বাক্সের গায়ে যে নতুন মেশিনের যে যে প্রযুক্তিগত সুবিধার কথা লেখা ছিল, তার সঙ্গে ওই মেশিনের কোনও বিশেষত্বের মিল নেই।
কী ভাবে নতুন বাক্সে এই পুরনো যন্ত্র এল? এই সম্পর্কিত কোনও তথ্যই এসএসকেএম হাসপাতালের লগ বুকে (তথ্যপঞ্জী) নেই। এসএসকেএম সূত্রে খবর, এই ধরনের যন্ত্র একটি সরকারি হাসপাতালে আসে, তখন তা কোথা থেকে এল সেই বিষয়ক তথ্য সরকারি কোনও আধিকারিকের কাছে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এই যন্ত্রের কোনও উৎস-সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখানেই শেষ নয়, বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করার পর হাসপাতালেরই বেশ কিছু চিকিৎসক-নার্সরা জানান, এমন বহু যন্ত্রই রয়েছে যেগুলির কথা তাঁরা কেবলই শুনেছেন, কিন্তু কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে বহুমূল্য এই যন্ত্র রাতারাতি ‘হাপিস’ হয়ে যাওয়ায় রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের অন্দরে। যে কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন গোটা ঘটনা অনুসন্ধানে।