ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে উত্তপ্ত সিতাই, দলীয় বিধায়কের সভাতেই ‘উদয়নগোষ্ঠীর’ বোমাবাজির অভিযোগ।

ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সিতাই। বিধায়ক জগদীশ বর্মণ বসুনিয়ার সভায় বোমাবাজির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, সভা চলাকালীন সেখানেই বাইকে করে এসে বোমা মেরে পালিয়ে যায় দুই দুষ্কৃতী। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

জানা গিয়েছে, সিতাইয়ের ওই সভায় জগদীশ বসুনিয়া ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ-সহ একাধিক তৃণমূল নেতৃত্ব। সভা শুরু হওয়ার পর আচমকা দুই দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। তারপর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। বাইকে আসা ওই দুই দুষ্কৃতীকে ধরতে না পারলেও বোমাবাজির ঘটনায় সভাস্থলে হুলস্থুল পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত হয় পরিস্থিতি। তারপর ফের সভা শুরু হয়।

ঘটনায়, খোদ বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বলেন, “কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেসে একনায়কতন্ত্র চলছে। এখানে দল চালাচ্ছে উদয়ন গুহ ও গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ। তৃণমূলের জেলা কমিটির কোনও বৈঠক হয় না। তাঁরা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো দল চালাচ্ছেন। গিরিনবাবু মাথাভাঙ্গা কেন্দ্রে কত  ভোট পেয়েছেন আর আমি সিতাই-তে কত ভোট পেয়েছি তা দেখা হোক। তাহলেই সব ষ্পষ্ট হবে। এভাবে আমার সভায় বোমাবাজি করে আমাকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। সাধারণ মানুষ তা দেখছেন। সব কিছুরই বিচার হবে।”

অন্যদিকে, এই ঘটনায় যদিও উদয়ন গুহ বা তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এই সমস্যার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সকালে। এদিন সকালে শ্রমিক সংগঠনের সভা মঞ্চ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে উদয়ন অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ডাকে এদিন সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বড় আটিয়াবাড়ি গ্রামে সভা হওয়ার  কথা ছিল। সভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল, সম্প্রতি দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা নূর আলম হোসেনের।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতে মঞ্চ তৈরি হওয়ার পর বুধবার সকালে ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে সভামঞ্চ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও ছিড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে। তারপর সেই ভাঙা সভামঞ্চেই এদিন বিকেলে সভা করতে আসেন বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া।

নেত্রী বারবার সতর্ক করেছেন । কিন্তু কে শোনে কার কথা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিরাম নেই কোচবিহার জেলা তৃণমূলের। কোচবিহারে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামছে কই? ঘাসফুলের কোন্দল আরও তীব্র হয়ে উঠছে। একদিকে সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া। অন্যদিকে জেলা তৃণমূল সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মন ও দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। কিছুদিন আগেই গীতালদহ এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থার পর বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়া ঘনিষ্ঠ অঞ্চল সভাপতি মফুজার রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয় দল থেকে।  ইতিপূর্বে বিধায়ক জগদীশ বাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জেলা পরিষদ সদস্য নুর আলম হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি বীরেন্দ্র নাথ বর্মণ ও উদয়ন গুহ। বিরোধের সূত্রপাত সেখান থেকেই।

উপনির্বাচনের আবহেও দলের প্রচারে উদয়নপন্থীরা কার্যত স্পষ্টই ‘হুমকি’ দেন কোচবিহারে উদয়ন গুহ ছাড়া আর কাউকে নেতা হিসেবে মানা হবে না। কোচবিহারে বিশেষ করে দিনহাটায় রাজনীতি করতে গেলে উদয়ন গুহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে কার্যত হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকড় কত গভীরে তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি কোচবিহারের দিনহাটা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও। নিজের কেন্দ্রেই গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে ভোটে ব্রাত্য ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ভোটের দিন সময় কাটান টিভি দেখেই। কান পাতলে শোনা যায় গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই বিরোধী পক্ষের নেতাদের সুপারিশে কোচবিহারে ভোটের সময় তাঁকে শান্তিপুরের নির্বাচনে পাঠিয়ে কার্যত দূরে সরিয়ে রাখেন সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। এ বার ফের খোদ বিধায়কের সভায় বোমাবাজির ঘটনায় যে ঘাসফুলের অন্তর্কলহই প্রকাশ পেল এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.