মোদী মন্ত্রিসভায় রাজ্যের দুই মুখ! পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন দিলীপ ঘোষ, প্রতিমন্ত্রী হবেন রাজ্যের আর এক সাংসদ

গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার দীর্ঘ বৈঠকের পর থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। আর মন্ত্রিসভার এই রদবদলে বাংলা বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলেও গুঞ্জন ছিল। রাজধানীর রাজনৈতিক অলি- গলির সেই গুঞ্জনে সীলমোহর পড়তে চলেছে বলেই খবর। বাংলা থেকে আরো দুজন এবার মোদীর মন্ত্রিসভায় জায়গা পাচ্ছেন। আর সবচেয়ে বড় জল্পনাকে সত্যি করে পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। এছাড়াও রাজ্যের আরো এক সাংসদ প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন। এক্ষেত্রে নিশীথ প্রামাণিককেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বেছে নিয়েছেন।

গত লোকসভা নির্বাচন থেকে উত্তরবঙ্গের ভালো ফল করে আসছে বিজেপি। এবারের বিধানসভাতেও নিশীথ প্রামানিকের জেলা কোচবিহার সহ গোটা উত্তরবঙ্গে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় পদ্ম শিবির ভালো ফল করেছে। এর আগে উত্তরবঙ্গ থেকে দেবশ্রী চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হলেও তেমন উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব এখনো পর্যন্ত দেখাতে পারেননি তিনি বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। তাই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিশীথ প্রামানিককে বেছে নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাছাড়া বিধানসভা ভোটের পর দলবদলের হিড়িকে নিশীথকে গা ভাসাতে দেখা যায়নি বা তেমন কোনো খবরও নেই। বরং দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গেছেন বিজেপির এই তরুণ সাংসদ। ফলস্বরূপ তাঁর সংসদীয় এলাকায় ৭ টি বিধানসভার মধ্যে ৬টিতেই জয়লাভ করেছে বিজেপি। তাই উত্তরবঙ্গে সংগঠনকে আরও মজবুত করতে নিশীথ প্রামানিকের মতো নতুন মুখকে মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

অন্যদিকে সূত্রের খবর, অনুযায়ী দিলীপ ঘোষকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হবে। এক্ষেত্রে তাঁকে স্বাস্থ্য অথবা কয়লা খনি মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জানা। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব পেলে এরাজ্যের ক্ষেত্রে তাঁর সামনে বিস্তর কাজ করার সুযোগ থাকবে। ঠিক তেমনি কয়লাখনি মন্ত্রক এলেও তার সামনে কাজের সুযোগ যেমন থাকবে, একই সঙ্গে কয়লাপাচার কাণ্ডে মে তদন্ত শুরু হয়েছে তা থমকে যাবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আগামী নভেম্বর মাসে রাজ্য সভাপতি হিসেবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে দিলীপ ঘোষের। বিজেপির নিয়ম অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি দু’বারের বেশি রাজ্য সভাপতি পদে থাকতে পারেন না। এছাড়া বিধানসভা ভোটের পর দলের ভেতর চলছে চাপানউতোর। সেই সব কিছু সামাল দিতেও দিলীপ ঘোষকে পূর্ণমন্ত্রী করার সিদ্ধান্তই ঠিক বলে মনে করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলে খবর। এছাড়াও এই দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বেই এরাজ্যে বিজেপির সংগঠন গতি পায়। ১৯-এর লোকসভায় ১৮টি আসনও জিতেছিল বিজেপি। তার পুরস্কার স্বরূপও দিলীপ ঘোষকে কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রী করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলে খবর।

শুধু তাই নয় দিলীপ ঘোষকে মন্ত্রী করার পেছনে আরো দুটি ইকুয়েশন কাজ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই সময়কালে বঙ্গ বিজেপির ভেতর নব্য ও পুরাতন নিয়ে মতো বিরোধ মত পার্থক্য বড় আকার ধারণ করেছে। দলে পুরাতনদের গুরুত্ব কমছে বলে মনে করতে শুরু করেছেন। দিলীপ ঘোষকে কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রী করে তাদেরকে একটা বার্তা দিতে চাইছে আরএসএস এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। স্পষ্ট করলেন দলে কারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও দলের ভেতর সংঘের প্রভাব কমে যাচ্ছে বলে একটা হিড়িক উঠেছিল। সেই বিতর্ককেও থামানো সম্ভব হলো এই সিদ্ধান্তের কারণে। সংঘের মতামতের ভিত্তিতেই যে দল চলে এবং আগামী দিনেও চলবে তার আবারও স্পষ্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারবেন তাঁরা। এছাড়াও সংঘের কাউকেই রাজ্য সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে অদূর ভবিষ্যতে যিনি কিনা দিলীপ ঘোষের পরামর্শ শুনেই কাজ করবেন, সেই পথও খোলা রাখলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মন্ত্রী হিসাবে গোটা রাজ্য চষে বেড়াতে পারবেন দিলীপ ঘোষ। পাশাপাশি নতুন রাজ্য সভাপতিকেও পরামর্শ দিতে পারবেন। অর্থাৎ দলের নিয়ন্ত্রন যে সংঘের হাতের বাইরে যায়নি সেই বার্তাও দেওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.