আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে ২১ জুলাই শহীদ দিবস। ধর্মতলায় মঞ্চ বাধার কাজ অর্ধেকের বেশি এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ২৬ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক ঘটনার বিচার হয়নি আজও। অথচ সময়ের অতল নদীতে ভর করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার নেতৃত্বে “নো এপিক কার্ড নো ভোটে”-র দাবিতে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন যুব কংগ্রেসের কর্মীরা। আর সেই আন্দোলনে এসে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন তরতাজা ১৩ জন যুবক। সেই মৃত্যুর বিচার আজও হয়নি।
অথচ ক্ষমতায় আসার পর প্রাক্তন বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে ২১ জুলাই কমিশনের গঠন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশন তার কাজ শেষ করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরে। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এই রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করার দাবি জানিয়েছেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মুখ্যমন্ত্রী রিপোর্ট এখনও সেই রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করেননি বলেই জানিয়েছেন এই দুই নেতা। কমিশনের সুপারিশ মেনে নিহত ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনের পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করেছিল প্রাক্তন বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কমিশন। কিন্তু মমতার সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে মাত্র দু’লক্ষ টাকা।
সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আজও মৃতদের পরিবারের তাকিয়ে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। সেই হত্যাকান্ডের সাক্ষী নেতারা আজ কেউবা রাজ্যসভার সাংসদ! কেউবা লোকসভার, কেউবা আবার রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য। নিহত কর্মীদের মৃত্যুর বিচারের দাবি যে অযৌক্তিক নয় তা আড়ালে-আবডালে স্বীকার করে নিচ্ছেন ওই নেতারা। কিন্তু নেত্রীর রোষানলে পড়ার ভয় মুখ খুলছেন না তারাও। ২০১৭ সালে ২১ জুলাইয়ের দিন সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন “২১ জুলাই কমিশন” নিয়ে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করবে রাজ্য সরকার।
তারপর এক ২১ জুলাই ঘুরে আরো এক ২১ জুলাইয়ের সম্মুখীন তৃণমূল কর্মীরা। বিচারের বাণী এখনও নিভৃতেই কাঁদছে!
ঘটনাচক্রে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পুলিশ ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর উপর গুলি চালিয়েছিল। সেদিন যিনি স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন, বর্তমানে তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। তিনি মণীশ গুপ্ত। ২০১১-১৬ যাদবপুর বিধানসভা থেকে জিতে বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি যে বিচারের ক্ষেত্রে একটি অন্তরায়, তা মেনে নিচ্ছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা। কিন্তু শুধুমাত্র এই কারণের জন্যই ২১ জুলাইয়ের শহীদ পরিবাররা বিচার পেল না, তা মানতে নারাজ মমতার কট্টর অনুগামীরাও।