বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ। রাজ্যের লোকসভা নির্বাচন বিরোধীশূন্য করার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্টোদিকে মুকুল রায় বলছেন বিজেপি ৩০ টা আসন পাবে। ৩০ সংখ্যাটি অবশ্য অনেকেরই বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। তাঁরা বলছেন ভোটের হাওয়া তুলতেই মুকুল এমন দাবি করছেন। তর্কের খাতিরে তাঁদের যুক্তি সঠিক মেনে নিলেও, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সব দিক খতিয়ে বিচার করে যে সংখ্যাটি পাচ্ছেন, সেটিও নেহাত কম নয়। বরং বেশি! বিজেপির আভ্যন্তরীণ হিসেবে ২৩ টি আসনে এবার পদ্ম ফুটবে। তবে এইসব হিসেব নিকেষ ছাড়িয়ে সম্প্রতি যে খবরটি বেরিয়ে আসছে বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মারফৎ, সেটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। অন্তত এমনটাই মনে করছে দিল্লি ও কলকাতার রাজনৈতিক মহলের বড় খেলোয়াড়রা।
খবরটি এইরকম :
উত্তরপ্রদেশ বা দেশের অন্যান্য রাজ্যে, বিশেষ করে দক্ষিণের কর্ণাটক বা পশ্চিম ঘেষা রাজস্থানে এনডিএ যদি ভাল ফল না করে তাহলে সরকার গড়তে অন্য দলের সমর্থন চাইতে হতে পারে। এ হেন পরিস্থিতিতে মায়াবতী শেষ পর্যন্ত ঠিক কি করবেন, দেবা না জানন্তি, কুতঃ মনুষ্যা! উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা জোটের কৌশলের পাল্টা বিজেপির সহযোগী আপনা দল, বুয়া ভাতিজার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। যদি তা নাও হয় তাহলে বিজেপি মায়াবতীর সঙ্গে ডায়ালগ ওপেন করতে সময় নষ্ট করবে না বলেই খবর। বহেনজির ঘনিষ্ঠরা বলেন, তাঁর মনে গেস্টহাউস কাণ্ডের স্মৃতি এখনও তাজা। ১৯৯৫ তে সপা-র সঙ্গে জোট করার ফল কি ভয়ানক হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন মায়াবতী। তাঁর বিধায়কদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে একটি গেস্টহাউসে আটকে রেখে ছিল সপা-র বাহুবলী বাহিনী। তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে খুন করতে চাওয়া হয়েছিল বলেও সে সময় খবর হয়। কয়েকজন বিজেপি নেতার তৎপরতায় সেদিন প্রাণে বেঁচেছিলেন বহেনজি।
এ হেন মায়াবতী শেষ পর্যন্ত বিজেপির দিকে ঝুঁকে যাবেন না, তার নিশ্চয়তা নেই।
উল্টোদিকে, বিজেপিকে পরাস্ত করতে অখিলেশ মায়াবতীকে নিয়ে ময়দানে নামলেও, যাদব বংশের প্রধান নেতাজী মুলায়ম ইতিমধ্যেই সংসদে অন রেকর্ড মোদিকে আরও একবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সীতে বসতে সাধ ব্যক্ত করে এসেছেন। নির্বাচন পরবর্তী সমঝোতার পথ সেদিন সবার আগেই খুলে রেখে এসেছেন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক, অভিজ্ঞ মুলায়ম। উত্তরপ্রদেশ ম্যানেজ হয়ে গেলে মোদি-অমিতের চাপ এক ঝটকায় অনেকটা কমে যাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অনেকদিন ধরে শোনা যাচ্ছে, তিনি মুখে যতই মোদি বিরোধিতা করুন, তিনিও সমঝোতার পথ খোলা রাখতেই চাইছেন। চেষ্টাও নাকি করেছেন অনেকবার, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। এমনিতেই সারধা নারদার কাঁটা মমতার গলায় আটকে রয়েছে। অন্যদিকে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া সাম্প্রতিক বৌমা কাণ্ড। তার ওপর বিজেপির একেবারে শীর্ষ সূত্রের খবর, সরকার গড়তে সাংসদ প্রয়োজন হলেও, মমতার সঙ্গে কোনও কথায় যাবে না, মোদি-শাহ জুটি। সূত্রের দাবি, এমন অনেকে তৃণমূল থেকে সাংসদ হবেন কিন্তু প্রয়োজন পড়লেই চলে আসবেন মোদিকে সমর্থন জানাতে। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী একসঙ্গে দুই তৃতীয়াংশ সাংসদ বেরিয়ে না এলে বা বার করতে আনতে না পারলে কোনও লাভই হবে না। সূত্রের দাবি, বেরোবে যখন, তখন দুই-তৃতীয়াংশই বেরোবে। শোনা যাচ্ছে তৃণমূলেই এমন প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা মমতার টিকিটে জিতেও, প্রয়োজনে মোদির ডাকে সাড়া দিয়ে দল বেঁধে চলে যাবেন।
এই সম্ভাবনা যে রয়েছে তা স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও।
সব মিলিয়ে যা অবস্থা, তাতে মমতার এখন শাঁখের করাত। তাঁর প্রার্থীরা লাইন দিয়ে হারলে তো কথাই নেই, জিতলেও স্বস্তি নেই মমতার। কে যে এখন কার, যত ভোটের দিন ঘনিয়ে আসছে তা বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়ছে।
তবে এ সবই বিজেপির সেকেন্ড লাইন অব অ্যকসান। এমনিতে বিজেপি মনে করছে সর্বভারতীয় স্তরে তো বটেই পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি অত্যন্ত ভাল রেজাল্ট করবে।