থিয়োরি না বুঝলেও চলবে, কিন্তু প্র্যাক্টিক্যাল যদি দেখতে চান, তাহলে আগামী ক’মাস বিজেপির নবাগত সদস্যগুলোর নামগুলোর দিকে তাকান। গায়ের জামা পরিবর্তন করার সময় হয়ে এলো যে।
আর যারা এটা বলেন যে, এবারের ভোটে বিজেপি নাকি প্রচুর সংখ্যাঘুঘু ভোট পেয়েছে, তাদের জানাই, না সংখ্যাঘুঘু ভোট বিজেপি কস্মিনকালেও পায়নি, আর আজও পায়নি। হ্যাঁ, কিছু সংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মুসলিম মেয়েদের ভোট বিজেপি পেয়েছে বটে তিন-তালাক আর শাদী-সগুন প্রকল্পের সৌজন্যে, কিন্তু সেই ভোট বিজেপি না পেলেও ভোটের ফলাফল একই হতো।
আসুন কিছু পরিসংখ্যান দেখি।
১) বারাসাত লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী ডঃ মৃণাল কান্তি দেবনাথ যে প্রায় ১,১০,০০০ ভোটে হেরেছে, তার মধ্যে ৭৮,০০০ ভোটই ছিল বারাসাত লোকসভার সব থেকে সংখ্যাঘুঘু বিধানসভা দেগঙ্গা বিধানসভার।
২) শ্রীরামপুর লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী দেবজিৎ সরকার যে ৯৮,৬০০ ভোটে হেরেছে, তার মধ্যে সংখ্যাঘুঘু অধ্যুষিত জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা ও ডোমজুর বিধানসভায় যথাক্রমে প্রায় ১২ হাজার, ১৮ হাজার ও ৫৫ হাজার ভোটে হেরেছে, যদিও এই তিন বিধানসভায় তাদের সংখ্যা ৩০% থেকে মোটামুটি ৫০%।
৩) উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহা মূলতঃ পিছিয়ে পড়েছে এন্টালি, বেলেঘাটা ও চৌরঙ্গী বিধানসভার সংখ্যাঘুঘু বুথগুলোতেই।
৪) দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসু নিজেকে একজন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবী করলেও তার সাংসদ হওয়ার স্বপ্নভঙ্গ করেছে তার প্রিয় ভাইয়েরাই। ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড বা বুথ বাই বুথ ভোটের পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু ভোট তৃণমূল-সিপিএম-বিজেপির মধ্যে ভাগ হলেও কিছুমাত্র মার্জিন নিয়ে সেখানে বিজেপিই এগিয়ে ছিল, কিন্তু সংখ্যাঘুঘু এলাকার ভোট গণনা শুরু হতেই তিনি সেই যে পিছোলেন, আর এগোতে পারলেন না।
৫) বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মন্ডল মূলতঃ পরাজিত হয়েছেন সংখ্যাঘুঘু অধ্যুষিত নানুর বিধানসভা অঞ্চলেই। তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় এক ওখান থেকেই যা লিড নিয়েছেন, তারপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ভোটের আগে ফেজ টুপি পরেও দুধকুমার মন্ডলের আর সংসদে যাওয়া হলো না।
৬) ব্যারাকপুর লোকসভার সব থেকে সংখ্যাঘুঘু অধ্যুষিত বিধানসভা হলো আমডাঙ্গা বিধানসভা। নোয়াপাড়া বিধানসভা বাদ দিয়ে (মাত্র ৫০০ ভোটে এখানে এগিয়ে ছিল তৃণমূল) আর সব কটা বিধানসভাতেই এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং, ব্যতিক্রম শুধুমাত্র এই আমডাঙ্গা বিধানসভা। এখানে তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী অর্জুন সিংয়ের থেকে প্রায় ২৬,৫০০ ভোটে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
এ ছাড়া, প্রত্যেকটি বিধানসভা কেন্দ্র, যেখানে সংখ্যাঘুঘুরা মোটামুটি ৪০%-এর উপরে, সেখানে একটি জায়গাতেও বিজেপি জিততে পারেনি, কারণ হিন্দু ভোট তৃণমূল-সিপিএম-বিজেপির মধ্যে ভাগ হলেও সংখ্যাঘুঘু ভোট এককাট্টা হয়ে তৃণমূলেই পড়েছে। কয়েকটি বিধানসভা ব্যতিক্রমী হতে পারে, যেখানে হিন্দু ভোট কনসলিডেটেড হয়ে বিজেপিতে পড়েছে, যেখানে হিন্দু ভোট এই তিন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভাগ হয়নি।
এরপরেও যদি বলেন, বিজেপির জয়লাভের পিছনে সংখ্যাঘুঘুদেরও ব্যাপক অবদান আছে, তাহলে আপনি হয় ভাবের ঘরে চুরি করছেন অথবা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন!!!
এরপর আপনারাই ঠিক করুন, “সব কা সাথ, সব কা বিকাশ” করবেন নাকি শুধুমাত্র “হিন্দু কা সাথ, হিন্দু কা বিকাশ” করবেন!!!!
এরপর আপনারাই ঠিক করুন, রাজনৈতিক জামা বদলে এই সংখ্যাঘুঘুরা যখন আপনার দলে ঢুকে নিজের জানমাল সুরক্ষিত করতে চাইবে, তাদেরকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের ভিসা ধরাবেন নাকি আরেকবার নিজে ভুমিচ্যুত হওয়ার জন্য কুড়ুলের উপর নিজের পা’খানি রাখবেন!!!
মনে রাখবেন, ব্ল্যাক মাম্বার স্থান এদেশের মাটিতে বড়জোর চিড়িয়াখানায় হতে পারে, কিন্তু কিছুতেই আপনার শোয়ার ঘরে নয়।
প্রসঙ্গত, “তাকিয়া” অর্থ্যাৎ দ্বিনের স্বার্থে মিথ্যা, প্রতারণা, চক্রান্ত করার যে অনুমতি। তবে এমন নয় যে, “তাকিয়া” নামে কোন সুনির্দিষ্ট বিধান কুরআনে নাযিল করা হয়েছে। তাই “তাকিয়া” বলতে হাদিস ও কুরআন থেকে কোন নির্দিষ্ট শব্দ খুঁজে পাবেন না। দ্বিনের স্বার্থে মিথ্যা বলা জায়েজ- এটিকেই ইসলামী স্কলারদের পরিভাষায় “তাকিয়া” নামকরণ হয়েছে। হাদিস থেকে জানা যাচ্ছে ইসলামের স্বার্থে প্রতারণা, শঠতা, মিথ্যা বলা জায়েজ!