অনেক নাটকের পর কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার তৃণমূলের একইদা মেরুদণ্ড শোভন চট্টোপাধ্যায় আপাতত বিজেপি-তে। শোভনবাবুর এককালের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তথা রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়ও যে কোনও দিন পা রাখবেন মুরলীধর সেন লেনের গেরুয়া বাড়িতে। তৃণমূলের অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নেন, গত দেড় বছর ধরে শোভনের সাংগঠনিক নিস্ক্রিয়তা দলের ক্ষতিই করেছে। তাই এ বার দক্ষিণ চব্বিশের সংগঠনের হাল ফেরাতে সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে দলে টানতে চাইছে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতৃত্ব। শাসক দলের সর্বচ্চ নেতৃত্বের তরফে কান্তিবাবুকে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলেও খবর।
কান্তিবাবু দীর্ঘদিনের সিপিএম নেতা। মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি সুন্দর বনের সাংগঠনিক দায়িত্বও তাঁর কাঁধেই। এখনও এই বৃদ্ধ বয়সে প্রায় রোজ নৌকো চেপে সুন্দরবনের এ গ্রাম সে গ্রাম ঘুরে বেড়ান। তৃণমূল কান্তিবাবুকে দিয়েই শোভনের শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছে।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় তৃণমূল সবকটি লোকসভা আসনে জিতেছে। কিন্তু তা-ও দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, সংগঠনের হাল ঠিক নেই। তার উপর শোভন এখন বিজেপি-তে। গেরুয়া শিবির তাঁকে ব্যবহার করতে পারে এই জেলার সংগঠনে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলকে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলেই মনে করছেন পর্যববেক্ষকদের অনেকে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় এমন কিছু মন্তব্য করেছিলেন যাতে অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কাটমানি ইস্যু নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি উত্তাল, তখন এই বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বলেছিলেন, “বাম আমলেও কাটমানি সংস্কৃতি ছিল। এটা নতুন কিছু নয়।”
তাহলে কি সত্যি সত্যি কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়-এর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে সিপিএমের? তিনি কি পা বাড়াবেন তৃণমূলে?
তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বর্ষীয়ান এই সিপিএম নেতা অবশ্য সব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি যে, আমি তৃণমূলে যোগ দেব?” তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল, বিজেপি কোনও দলেই তিনি যাবেন না। সিপিএমে ছিলেন। সিপিএমেই থাকবেন।
কিন্তু কথায় বলে রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু হয় না। কখন কে কোথায় যাবেন, ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। কে জানত জনসভায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে ‘কালীঘাটের ময়না, সত্যি কথা কয় না’ বলা আবদুর রেজ্জাক মোল্লা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ক্যাবিনেটে জায়গা করে নেবেন? কে জানত তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায় হয়ে উঠবেন মমতার কাছে প্রতিপক্ষ? কে-ই বা জানত দিদির স্নেহের কানন (শোভন চট্টোপাধ্যায়) সংবাদ মাধ্যমে বসে বলবেন, ‘বাংলায় গণতন্ত্র নেই। রাজ্যে পুলিশ রাজ চলছে!’ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র এই চার মাস আগের লোকসভা ভোটেও বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামেদের সঙ্গে জোটের সলতে পাকাতে চেয়েছিলেন। তিনিই বুধবার দুপুরে বিধানসভায় মমতার সঙ্গে দেখা করে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়ে ফেলেছেন। তাই অনেকেই মনে করছেন, কোনওটাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজনীতি সম্ভাবনার খেলা।