মতুয়া সমাজের বড়মা এই বদলটা দেখে যেতে পারলেন না। অনেক রাজনৈতিক পালাবদল দেখেছেন তিনি। নিজের পরিবারেও দেখেছেন অনেক বদল। কিন্তু সবুজ মতুয়া মন যে গেরুয়া হয়ে যাবে সেটা দেখে যেতে পারলেন না।
নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণার কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন বড়মা বীনাপাণি ঠাকুর। তার আগে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রণাম পেয়ে গিয়েছিলেন। ঠাকুরনগরে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সমাবেশের ভিড় দেখে হয়তো বদলের আন্দাজও করেছিলেন বীনাপাণি দেবী, কিন্তু এমন বদল কি আশা করেছিলেন! তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বড় বউমা মমতাবালাকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দিলেন ছোট পক্ষের নাতি শান্তনু। সর্বশেষ হিসেব বলছে, বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর জিতেছেন লক্ষাধিক ভোটে।
মতুয়া সমাজের আবেগ-কেন্দ্র ঠাকুরবাড়ি অনেক রাজনীতি দেখেছে। ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা তথা মতুয়াদের ধর্মগুরু প্রমথরঞ্জন ঠাকুর কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক, মন্ত্রী হয়েছিলেন। বিধায়ক হয়েছিলেন বাংলা কংগ্রেস থেকে দাঁড়িয়ে। পরবর্তী সময়ে তাঁর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ তৃণমূলের টিকিটে জিতে রাজ্যের মন্ত্রীও হন।
এর পরে ঠাকুরবাড়িতে বিজেপির প্রবেশ। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল মঞ্জুলের দাদা কপিলকৃষ্ণকে। কারণ, ততদিনে মঞ্জুল ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মে। কপিলকৃষ্ণ সাংসদ হন এবং তাঁর মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে জেতেন স্ত্রী মমতাবালা। এই উপনির্বাচনেই প্রথমবার পারিবারিক যুদ্ধ। মমতাবালার বিরুদ্ধে মঞ্জুলকৃষ্ণের বড় ছেলে সুব্রত বিজেপির টিকিটে ভোট লড়েন। এবার জ্যেঠিমার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী হন সুব্রতর ভাই শান্তনু। এবং জয় পেলেন।
এতদিন মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক অকাতরে ঘাসফুলের পক্ষেই রায় দিয়ে এসেছে। এই প্রথমবার সেটা আর হল না। শুধু বনগাঁ কেন্দ্রই নয়, রাণাঘাট এমনকী হুগলি কেন্দ্রেও রয়েছে মতুয়া সমাজের ভোট। আর সেই আসনগুলিতেও বিজেপির জয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে মতুয়া ভোট। এমনটাই দাবি বিজেপির। না, এসব কিছুই দেখতে পেলেন না কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি-লিট তথা বঙ্গবিভূষণে সম্মানিত বড়মা। দেখতে পেলেন না এতদিনের মতুয়া-তৃণমূল সম্পর্কের ছন্দপতন।
কিন্তু কেন এই বদল? মতুয়ারা যে বদলাচ্ছেন সেটা অবশ্য আগেই টের পাওয়া গিয়েছে। ভোট প্রচারের সময় থেকেই বিজেপি এই কেন্দ্র বেশি গুরুত্ব দেয় এনআরসি ইস্যুকে। আর তাতেই কিস্তিমাত হয়েছে বলে মনে করছে বিজেপি। একই সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রের নাগরিকত্ব বিলে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন না দেওয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ। সেই সঙ্গে বড়মা বীনাপাণি দেবীকে নিয়ে মতুয়া আবেগও কাজে লাগায় বিজেপি। শান্তনু ঠাকুর ভোটের প্রচারে বড় ইস্যু করেছিলেন বীনাপাণি দেবীর সেই বিতর্কিত চিঠিকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো বড়মার সই করা সেই চিঠিতে কেন্দ্রের নাগরিকত্ব বিলে সমর্থন না দিলে মতুয়ারা আর তৃণমূলের সঙ্গে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি ছিল। যদিও সেটি জাল সই বলে দাবি করেন মমতাবালা ঠাকুর তথা তৃণমূল কংগ্রেস।