শান্ত হচ্ছে না ভাঙড়। ভোজেরহাটে বাসন্তী হাইওয়ের উপর কার্যত খণ্ডযুদ্ধ পুলিশ ও আইএসএফ কর্মীদের মধ্যে। বিক্ষোভকারীদরে জমায়েত থেকে ইটবৃষ্টি হওয়ার পরেই কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। এদিকে, ইটবৃষ্টির জেরে গুরুতর জখম ৪ পুলিশ কর্মী। অন্যদিকে, যে সভাকে কেন্দ্র করে এত অশান্তি সেই সভার ভবিষ্যত্ কার্যত অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী।
ঠিক কী হয়েছিল? করোনা পরিস্থিতিতে অনুমতি ছাড়াই পদ্মপুকুরের মাঠে একটি ধর্মীয়সভা করার কথা ছিল আইএসএফ চেয়ারপার্সন আব্বাস সিদ্দিকীর। কিন্তু, কোভিড পরিস্থিতি প্রোটোকল না মেনে কোনও রকম সভা করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় প্রশাসন। তারপরেও সভায় যোগ দিতে দলে দলে আইএসএফ কর্মীদের জমায়েত হতে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করে পুলিশ। ভোজেরহাট জুড়ে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনী।
এদিকে, আইএসএফ কর্মী সমর্থকেরা সভাস্থলের দিকে অগ্রসর হওয়ায় পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকী লাঠিচার্জ করা হয় বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ইটবৃষ্টি শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে শুরু করে পুলিশ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিক্ষোভকারীদের দল। কিছুজন পালিয়ে যায় গ্রামের দিকে। ধাওয়া করে পুলিশও। ঘটনাস্থল থেকেই মোট ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
অন্য়দিকে, আইএসএফ কর্মী ও পুলিশের মধ্যে এই খণ্ডযুদ্ধের জেরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর কথায়. “এই সভা আইএসএফের সভা নয়, নবী সম্মেলন। এটি পুরোপুরিই ধর্মীয় সভা। আব্বাস এই সভায় বক্তব্য রাখতে আসবেন এমনটাই ঠিক হয়েছিল। কিন্তু, ইচ্ছে করে এই সভা আটকে দেওয়া হল। ফুটবল খেলার অজুহাত দিয়ে সভা করতে দেওয়া হল না। কোনও প্ররোচনা ছাড়াই লাঠিচার্জ করা হল। এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত।”
ঘটনায় আব্বাস সিদ্দিকীর মন্তব্য, “আমি যখন যাচ্ছি, আমাকে ভোজেরহাটে আটকে দেওয়া হয়। পুলিশকে দেখলাম আমাদের ছেলেদের মারধর করা হচ্ছে। আমি প্রশাসনকে সম্মান করি। আমায় আটকানোতে গাড়ি সরিয়ে নিয়ে এসেছি।” সূ্ত্রের খবর, এরপর আর আব্বাস সিদ্দিকীকে দেখা যায়নি। সম্ভবত তিনি কলকাতার পথে রওনা দিয়েছেন বলেই খবর সূত্রের।
পাল্টা, তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদ বলেন, “আব্বাস সাহেব ভোজেরহাটে কোনও সভা করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, পদ্মপুকুরের ওই মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছে। সেখানে কী করে সভা করবেন! ও আর ওর ভাই দুইজনে যা মনে করবেন তাই হবে নাকি! এমনটা কী সম্ভব! কোনও অনুমতি ছাড়াই তাঁরা যদি হুজ্জুতি করে সভা করতে যান, তাহলে কী করে হবে!”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশ অধিকর্তা জানিয়েছেন, তৃণমূলের ওই ফুটবল টুর্নামেন্টের অনুমতি থাকলেও আব্বাসের সভার কোনও অনুমতি ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই বিক্ষোভকারীদের আটকাতে হয়। প্রথমে কথা বলেই জমায়েত করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু, সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইটবৃষ্টি করা হলে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়।
গোটা একদিন কাটলেও শান্ত হচ্ছে না ভাঙড়। দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে গোটা এলাকা। আইএসএফ কর্মীদের অভিযোগ, আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে ধর্মীয় সভায় যাওয়ার সময়ে আচমকাই লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সভায় যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আইএসএফ কর্মীদের আরও অভিযোগ, ইচ্ছে করে সভায় যেতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তারাই পুলিশ সেজে মারধর করছে বলে অভিযোগ।
এক আইএসএফ কর্মীর কথায়, “আমরা এই রাজ্যে থেকে কি নিজেদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে পারব না? আমাদের যদি মনে হয় আমরা ভাইজানের সভায় যাব, আমরা যেতে পারব না! কেন আমাদের যেতে দেওয়া হবে না! ইচ্ছে করে আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ আমাদের উপর হামলা করছে। লাঠিপেটা করছে।”
অন্য আরেক কর্মী সমর্থক বলেন, “কাইজার আহমেদ গোটা ভাঙড় জুড়ে সন্ত্রাস জারি করেছে। আমাদের সভা ভণ্ডুল করার চক্রান্ত চলছে। আমরা এটা মেনে নেব না। ইচ্ছে করে আমাদের আটকানো হচ্ছে।”
ঘটনাস্থলে, খবর করতে গিয়ে এদিকে আক্রান্ত হলেন এক সাংবাদিক। ঘটনাস্থলে ইতিমধ্যেই মোতায়েন হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।