মহারাষ্ট্রে মধ্যরাতের ক্যু-র পর বহু প্রহর কেটে গিয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে আশ্চর্যরকম ভাবেই কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও জানায়নি তৃণমূল।
এমনিতে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে যে কোনওরকম ঘটনা-অঘটন নিয়ে হামেশাই তাঁর মতামত জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বা তাঁর নির্দেশে তৃণমূলের মুখপাত্ররা। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টু-শব্দও নেই তৃণমূলের মুখে!
তবে কি তৃণমূলও আতঙ্কিত!
দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোভাব এ ব্যাপারে বাস্তবেই পরিষ্কার নয়। তবে তৃণমূলের একাংশ যে মহারাষ্ট্রের ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ঘরোয়া আলোচনায় খোলামেলা স্বীকারও করছেন তাঁরা। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, মহারাষ্ট্রে যা হল তারপর আর সংবিধান-রীতি-নীতির প্রশ্ন নেই। চাইলেই ওঁরা যা কিছু করতে পারেন। ক’দিন আগে এ ভাবেই কর্ণাটকে কংগ্রেস সরকার ফেলে ইয়েদুরাপ্পার সরকার হয়েছে। এ বার মহারাষ্ট্র। বাংলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভা ভোটের আগে এসেই দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে নাকি তৃণমূলের চল্লিশ জন বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন। আর মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের ভূমিকা তো অভূতপূর্ব। রাষ্ট্রপতি শাসনে থাকা একটি রাজ্যে সরকার গঠনে রাজ্যপালের এত তাড়া যে মাঝরাতেই হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। আর সকালে কেউ টের পাওয়ার আগেই শপথবাক্যও পাঠ করিয়ে দিলেন তিনি। তৃণমূলের একাংশ নেতার কথায়, এরকম হলে কেন্দ্রের সরকারকে ব্যবহার করে তো যে কোনও দিন যে কোনও রাজ্যে সরকার ফেলতে পারে বা বানাতে পারে বিজেপি।
পাল্টা যুক্তি অবশ্য সাজিয়ে রেখেছেন বিজেপি নেতারা। তাঁরা বলছেন, মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়েছিল শিবসেনা। প্রাক ভোট শর্ত ছিল না যে সরকার গঠন করতে পারলে অর্ধেক মেয়াদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদ শিবসেনাকে ছাড়তে হবে। হিসাব মতো শিবসেনার দ্বিগুণ আসন পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু তারপর শিবসেনা যে ভাবে বিজেপিকে ছেড়ে কংগ্রেস-এনসিপি-র সঙ্গে সরকার গঠন করতে ছুটেছিল তাতে কৌনসা নৈতিকতা ছিল? বিজেপি-র এক রাজ্য নেতার কথায়, ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শরদ পওয়ার। অনেকে ভাবছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেই বোধহয় তিনি আপস করে নেবেন। হয়তো সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সে কথা ভেবে চলছেন। কিন্তু এসব যে বিজেপির রাজনীতিকে প্রভাবিত করে না, তা তাঁরা নিশ্চয় এখনই বুঝতে পারছেন।
প্রসঙ্গত, শরদ পওয়ারের ভাইপো তথা মহারাষ্ট্রে সদ্য শপথ নেওয়া বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। বিধানসভা ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি অস্ত্রে প্রচার করেছিল বিজেপিও। এও বলেছিল যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে অজিত জেলে যাবেন। অনেকের মতে, দুর্নীতি মামলার জুজু দেখিয়েই অজিতকে তাঁদের দিকে টেনেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সিপিএমের এক বাংলার নেতার কথায় এ সব দেখে তৃণমূলের ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কারণ, দুর্নীতির মামলা বা তদন্ত থেকে বাঁচতে তৃণমূলের অনেকে বিজেপির সঙ্গে এমনিতেই যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। সুযোগ বুঝে যে কোনও সময়ে তাঁরা ডিগবাজি খেতে পারেন। তাতে তৃণমূলের সরকারও কুপোকাত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, তৃণমূল নৈতিক ভাবেও দুর্বল স্থানে রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না যে মানস ভুইঞাঁর বিরুদ্ধে ভোটের আগে খুনের মামলা দায়ের হয়েছিল, তিনি তৃণমূলে যোগ দিতেই খুনের মামলা প্রত্যাহার হয়ে গেল। সেই সঙ্গে রাজ্যসভার সদস্যও হয়ে গেলেন মানস। তা ছাড়া ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে একের পর এক জেলা, পুরসভা ও পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। সুতরাং বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ফারাক কোথায়। বরং তৃণমূলই ভাল করে বলতে পারবে ঠিক কী ভাবে তাদের উপর আঘাত হানতে পারে বিজেপি। তাই ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক শুধু নয়, অনিবার্যও।