শুভ জন্মদিন কলকাতা।
দীর্ঘ ৩২৯ বছর ধরে ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছে কল্লোলিনী তিলোত্তমা। এ শহরের আনাচে-কানাচে জড়িয়ে রয়েছে কত স্মৃতি। প্রতিটা ইট-কাঠ-পাথর সাক্ষী রয়েছে কতশত ইতিহাসের। অলিতে গলিতে রয়েছে নস্ট্যালজিয়া। আজ বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় শহরের জন্মদিন। সেই ১৬৯০ থেকে আজকের ২০১৯, জার্নিটা নেহাত কম নয়। চালচিত্র আমূল বদলে গেলেও এ শহরের প্রাণ কিন্তু এখনও যায়নি। নয় নয় করে ৩০০ পেরিয়েছে তিলোত্তমা। তবুও মহানগরীর প্রতি মানুষের টান আজও সেই প্রথম দিনের মতোই অটুট।
ডিহি কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর মূলত এই তিনটি গ্রাম নিয়েই কলকাতার জন্ম হয়েছিল ১৬৯০ সালে। তার আগে পর্যন্ত এই তিনটি গ্রাম শাসন করতেন মুঘল সম্রাটের অধীনস্থ বাংলার নবাবরা। কিন্তু এই বছরই প্রথম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের কাছে থেকে বাংলায় বাণিজ্য সনদ লাভ করে। ১৬৯০ সালের ২৪ অগস্ট কলকাতায় আসেন জব চার্নক। আর তারপরেই শুরু হয় মহানগরীর উত্থান। গ্রামের বদলে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে কলকাতা।
দিল্লির মসনদে তখন রাজ করছেন ঔরঙ্গজেব। ১৬৯০ সালের ২৩ এপ্রিল এক আদেশনামায় সম্রাট বার্ষিক তিন হাজার টাকা শুল্কের বিনিময়ে ইংরেজদের বাংলায় বাণিজ্যের অনুমতি দেন। এরপর ইব্রাহিম খাঁর আমন্ত্রণে জব চার্নক ফিরে আসেন কলকাতায়। চার্নকের সুতানুটিতে আসার তারিখ ছিল ২৪ অগস্ট। তাই কেবল ইংরেজরা নন, দেশীয় ইতিহাসবিদদের অনেকেও এই তারিখটিকেই কলকাতা শহরের জন্মদিন বলে মনে করেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালের প্রথম দিকে কলকাতা ছিল ভারতের ব্রিটিশ-অধিকৃত দেশের রাজধানী। এমনকী সে সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্রও ছিল কলকাতা। উনিশ শতকের শেষের দিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই শহর। ১৯১১ সালের আগে পর্যন্ত রাজধানীর শিরোপাও পেয়েছিল এই কলকাতাই। পড়ে তা স্থানান্তরিত হয় দিল্লিতে।
আজ এই শহর কলকাতার ৩২৯তম জন্মদিন। সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে পুরনো কলকাতার নানা ছবি। শতাব্দী প্রাচীন যানবাহন থেকে আম জনতার বেশভূষা, প্রসিদ্ধ খাবারের দোকান, বিখ্যাত অলগলি কিংবা দর্শনীয় স্থান, বাদ যায়নি কিছুই। নেট দুনিয়ায় উৎসাহ-উদ্দীপনা-উন্মাদনা বুঝিয়ে দিচ্ছে বয়স যতই বাড়ুক তা কেবল সংখ্যায়। এ শহরের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা একচুলও কমেনি। বরং আগামী দিনে বাড়বে।