সম্প্রতি বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার বরিশাল গ্রামের পূর্ণেন্দু শেখর চক্রবর্তীর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী ইসলাম গ্রহণ করেছে। প্রিয়াঙ্কা তার হলফনামায় উল্লেখ করেন মুসলমান বন্ধু-বান্ধবদের সংস্পর্শে এসে ইসলাম সম্পর্কে জানেন ও বােঝেন। এই সময় পবিত্র কুরান হাদিস ও মহম্মদের জীবনী পড়ে তিনি ইসলামের সৌন্দর্য ও আচার-আচরণে মুগ্ধ হন এবং সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ৩ আগস্ট ইসলাম। গ্রহণ করেন | নাম হয়েছে আয়েশা সিদ্দিকা।ইসলাম গ্রহণের পর ৮ আগস্ট হবিগঞ্জ জেলার কামারগাঁও গ্রামের আব্দুল মুক্তারের ছেলে সাবির আহম্মদ রনিকে বিবাহ করেন প্রিয়াঙ্কা। প্রথম কথা, এই বিয়ের ফলে ব্রাহ্মণ তরুণীর সঙ্গে পিতা-মাতার সম্পর্ক শেষ হলাে। কারণ তার পিতা-মাতা কাফের। | ‘তােমরা নিজেদের পিতৃদেবকে ও ভ্রাতাদেরও বন্ধুরূপে গ্রহণ করাে
যদি তারা ইমামের চেয়ে কাফেরকে প্রিয় মনে করে, আর তােমাদের মধ্যে যারা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে, বস্তুত এই সব লােকেরাই বড়াে জালেম। সবচেয়ে বড়াে কথা তার পিতা-মাতার মৃত্যু হলেও সে নিজে কাফের পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা দোয়া করতে পারবে না।
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা। কর (উভয়েই সমান) যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তবুও আল্লা তাদের ক্ষমা করবেন না, এর কারণ এই যে তারা আল্লা ও রসুলের সঙ্গে কুফুরি করেছে। আর আল্লা এরূপ অবাধ্য লােকদের পথ প্রদর্শন করেন না”। (৯/২৩)
“আল্লাপাক বলছেন নবি ও মুমিনদের জন্য শােভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। তারা আত্মীয় স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের। কাছে সুস্পষ্ট যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী। (৯/২৩)
কুরানের এই আয়াতগুলােকে কখনােই প্রিয়াঙ্কাকে বলা হয়নি।
মুসলমান হয়ে কুরান অনুসারে মেয়েটি স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছে, কিন্তু | তার পিতা-মাতা, ভাই-বােন, আত্মীয়স্বজন সবাই সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব হিসেবে। পরিগণিত হবে।
“নিশ্চয় যারা আমার নির্দেশসমুহের প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে তাদের আমি অগ্নিকুণ্ডে দাখিল করব, যখন তাদের চর্ম দগ্ধ হবে, আমি তৎপরিবর্তে তাদের চর্ম পরিবর্তিত করে দিব যেন তারা শান্তির আস্বাদ গ্রহণ করে। (সুরা নীসার আয়াত ৫৬)| ‘নিশ্চয় আল্লার নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই যারা কুফুরি করে, সুতরাং তারা ইমাম আনে না”। (৮/৫৫) | “হে মুমিনগণ! মুশকিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পর মজজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে, আর যদি তােমরা দারিদ্র্যের ভয় কর তবে আল্লা নিজ অনুগ্রহে তােমাদের অভাব মুক্ত করে দিবেন…’। (৯/২৮)
সুতরাং কুরান থেকে দেখলাম প্রিয়াঙ্কার পিতা-মাতা, ভাই-বােন সকল আত্মীয় অপবিত্র ও নিকৃষ্ট জীব। তারা সকলেই জাহান্নামের আগুনে পুড়বে।
এবার দেখবাে কুরান তরুণীটিকে কী মর্যাদা দিল। “তােমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত্রস্বরূপ, অতএব তােমরা যেভাবে ইচ্ছা গমন কর এবং স্বীয় জীবনের জন্যে পাথেয় পূর্বেই প্রেরণ কর এবং আলাকে ভয় কর ও জেনে রেখাে যে, তােমাদের সবাইকে তার। মুখােমুখি হতে হবে এবং বিশ্বাসীগণকেও সুসংবাদ প্রদান কর। (সুরা বাকারার ২২৩) | কুরান বলছে তরুণীটি স্বামীর জন্য শস্যক্ষেত্র। তার স্বামী তার সঙ্গে যে ভাবে ইচ্ছা ভােগ করতে পারবে। তাফসীর ইবনে কাসীরের এই আয়াতের ব্যাখ্যাতে বলা হচ্ছে, এরপর আল্লাতালা বলেন তোমাদের স্ত্রী ক্ষেত্র বিশেষ অর্থাৎ সন্তান বের হওয়ার স্থানে তােমাদের যেভাবে চাওঁ তােমাদের ক্ষেত্রে এসাে।নিয়ম ও পদ্ধতি আলাদা হলেও স্থান একই অর্থাৎ সম্মুখে করে অথবা তার বিপরীত। সহীহ বুখারী শরীফেইহুদিরা বলত যে | সম্মুখ দিয়ে সহবাস না করে যদি গর্ভবতী হয় তবে টেরা চক্ষুবিশিষ্ট সন্তান
জন্ম লাভ করবে। তাদের একথার খণ্ডনে এই বাক্যটি অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয় স্বামীর এই ব্যাপারে স্বাধীনতা রয়েছে। ইবনে জুরায়াস বলেন যে এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রসুলুল্লা এই স্বাধীনতা দিয়েছে যে সম্মুখ দিয়ে আসতে পারে বা পিছন দিকে দিয়েও আসতে পারে, কিন্তু স্থান একটিই হয়। তাহলে প্রিয়াঙ্কাকে তার স্বামী যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারে। ইসলামে নারী ভােগ্যবস্তু। মুসলমান পুরুষ যে পদ্ধতিতে তৃপ্তি পান তা তিনি অবলম্বন করতে পারেন এবং যথেচ্ছ ভােগ করতে পারেন। তার স্ত্রীকে।
৩।পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল, যেহেতু আল্লা তাদের মধ্যে | একের উপর অপরকে প্রাধান্য দান করেছেন এবং এহেতু যে, তারা স্বীয় ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে থাকে, সুতরাং যে সমস্ত নারী পুণ্যবতী তারা। আনুগত্য করে, আল্লাহর সংরক্ষিত প্রচ্ছন্ন বিষয় সংরক্ষণ করে এবং যদি নারীগণের অবাধ্যতার আশঙ্কা হয় তবে তাদের সদুপদেশ দান কর এবং তাদের শয্যা হতে পৃথক কর ও তাদের প্রহার কর, অনন্তর তারা যদি তােমাদের অনুগত হয় তবে তাদের জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করাে না। (সুরা নীসা/৩৪) | প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তীকে তার স্বামী মারতে পারবে কুরান সে অধিকার দিয়েছে , কিন্তু আমরা শতভাগ নিশ্চিত এই আয়াত প্রিয়াঙ্কাকে বাংলায় বলা হয়নি। যত গভীরে প্রবেশ করবাে ততই জানবাে প্রিয়াঙ্কা কোন নরকে ঝাঁপ দিয়েছে। | s। এবার দেখবাে প্রিয়াঙ্কা কি তার স্বামীর একমাত্র স্ত্রী হয়ে থাকবে? উত্তর-না। (সুরা নীসা/৩)। | ‘আর যদি তােমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথার্থভাবে পূরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়ের মধ্যে থেকে যাদের ভালাে লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তােমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের, এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।
তাফসীরে ইবনে কাসিরের এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে।
ইমাম শাফিঈ কুরান কারিমের ব্যাখ্যাকারী হাদিস স্বরূপ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, রসুলুল্লাহ ছাড়া আর কারাে জন্য একই সঙ্গে চারটির বেশি স্ত্রী একত্রিত করা বৈধ নয়। এর উপরেই উলামা-ই-কিরামের ইজমা। হয়েছে। অতএব কোনাে কোনাে শিয়ার মতে তা ৯টি পর্যন্ত একত্রিত করা বৈধ। বরং কোনাে কোনাে শিয়ার মতে তা ৯টির বেশি একত্রিত করলেও কোনাে দোষ নেই। তাদের মতে কোনাে সংখ্যাই নির্ধারিত নেই। তাদের দলিল হচ্ছে রসুলুল্লাহর কাজ। যেমন সহীহ হাদিসে রয়েছে তার ৯ জন। পত্নী ছিলেন। সহীহ বুখারী কাফের মুআল্লাক হাদিসের কোনাে কোনাে বর্ণনাকারী ১১ জন বলেছেন। | হযরত আনাস আছে যে, “রসুলুল্লাহ ১৫ জন স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তেরােজনের সঙ্গে তাঁর সহবাস হয়েছিল। একইসময়ে। ১১ জন পত্নী তার নিকট বিদ্যমান ছিলেন। রসুলুল্লাহ ৯ জন পত্নী রেখে মৃত্যুবরণ করেন। আমার পক্ষ হতে এর উত্তর এই যে, এটা একমাত্র রসুলুল্লাহর জন্য বৈধ ছিল। তার উন্মতের জন্য একই সঙ্গে ৪টির বেশি স্ত্রী রাখার অনুমতি নেই।
| (সুত্র তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে। পৃষ্ঠা-২৮০) সুতরাং দেখা গেল প্রিয়াঙ্কার স্বামীইসলাম অনুযায়ী আরও ৩টি বিবাহ করার অধিকার পেয়েছে। স্বামীকে ৩ জন নারীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার কথা প্রিয়াঙ্কা কি দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিল?
৫। ধরে নিলাম প্রিয়াঙ্কা বিবাহ মেনে নিল কিন্তু নীচের আয়াতগুলােকে কোনাে ধার্মিক মুসলমান নারীও মেনে নিবে না।
‘যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। (২৩৫) নিজেদের পত্নী। অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।
| প্রিয়াঙ্কার (আয়েশা সিদ্দিকা) স্বামী তার পাশাপাশি আরও ৩টি ও অসংখ্য দাসী গ্রহণ করতে পারবে। নিজের স্বামী যখন তার সামনে দাসী নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করবে সেই মুহুর্তে প্রিয়াঙ্কার অনুভূতি কী হবে!
এবার আরও ভয়ংকর দিক তুলে ধরবাে যা কখনাে প্রিয়াঙ্কাকে জানানাে হবে না।
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলােক তােমাদের জন্যে নিষিদ্ধ, তােমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায় অর্থাৎ লুষ্ঠিত | অন্য ধর্মের নারী- এটা তােমাদে জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তােমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তােমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য—ব্যাভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তােমরা ভােগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তােমাদের কোনাে গুনাহ হবে | না যদি নির্ধারণের পর তােমরা পরস্পরে সম্মত হও।’ (২৪/৪)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীরের বলা হয়েছে। | ‘অর্থাৎ যেসব নারীর স্বামী রয়েছে তারা তােমাদের জন্য হারাম। তবে হা কাফেরদের যেসব স্ত্রী যুদ্ধক্ষেত্রে বন্দিনী হয়ে তােমাদের অধিকারে আসবে, এক ঋতুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর তারা তোমাদের জন্য | বৈধ হবে। মুসনাদ-ই-আহমাদে হজরত আবু সাঈদ খুদরীতে আছে, | আওঁতাসের যুদ্ধে কতগুলাে সধবা স্ত্রীলােক বন্দিনী হয়ে আসে। আমরা রসুলুল্লাহকে তাদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়াকে বৈধ করা হয়। এসব কথা জামেউত, তিরমিযি, সুনান ইবনে মাজাহ, সহীহ মুসলিম, তাবরানী প্রভৃতি হাদিসে আছে (খায়বার যুদ্ধ)। পূর্ববর্তী মনীষীদের একটি দল এ আয়াতে দলিল গ্রহণ করে বলেন যে, দাসীকে বিক্রি করে দেওয়ার মানে হচ্ছে তার স্বামীর পক্ষ হতে তালাক প্রাপ্তি। হজরত ইব্রাহিমকে এ মাসালাটি জিজ্ঞেস করা তিনি হলে হজরত আব্দুল্লাকে এই ফতােয়াটিই বর্ণনা করে এ আয়াতটি পাঠ করেন। অন্য সনদ দ্বারা বর্ণিত আছে যে, হজরত আব্দুল্লাইবনে মাউসদ বলছেন, ‘যখন কোনাে সধবা নারী বিক্রি হয় তখন তার দেহের বেশি হকদার হচ্ছে তার মনিব’। হজরত উবাই ইবনে কাব, হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লা এবং হজরত আব্বাসেরও ইবনে ফতােয়া এই যে, তার বিক্রি হওয়ার মানে হচ্ছে তালাক প্রাপ্তি। তাফসীরে ইবনে কাসীর (অনুবাদ
ড. মুজিবর রহমান) | ৭| প্রিয়াঙ্কার স্বামী যদি জিহাদ করে তবে সেই জিহাদে আয়েশার পিতা-মাতা, ভাই-বােন আক্রান্ত হতে পারে। তার কাফের পিতা-মাতাকে দাস-দাসী বানিয়ে রাখতে পারবে আয়েশার শ্বশুরবাড়ি। আয়েশার মা-বােনকে গনিমতের মাল বানিয়ে বেচা-কেনা করার অধিকার ও বৈধতা তার শ্বশুরবাড়িকে ইসলাম দিয়ে দিয়েছে। মুসলমান মুজাহিদরা ভাগ বণ্টনের পরে তার মা-বােনের সঙ্গে সহবাস করতে পারবে। মুসলমানদের হাতে বন্দি হবার পর তার পিতার সঙ্গে তার মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এমনকী নারীদের সঙ্গে স্বামীর বিচ্ছেদ হয়ে যায় ইসলামি শরিয়া হুকুম অনুযায়ী। তার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় মুসলমানরা তার মাকে তুলে নিয়ে ভােগ করতে পারবে, এই কথা কি জানতে প্রিয়াঙ্কা? | না, জানে না।
৮| তাকে কোনাে দিন এসব ইসলামি হুকুম জানানাে হবে না। নওমুসলিম কাউকেই এসব ইসলামি হুকুম জানানাে হয় না। সজ্ঞানে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের আসল রূপ গােপন করা হয় নওমুসলিমের কাছে। এভাবে লাভ জিহাদ চালিয়ে হিন্দু থেকে মুসলমান করা হয় আরাে বেশি মুসলমান জন্ম দেওয়ার জন্য। এসব নওমুসলিম তাদের কাছে শুধু মাত্র তাদের কাছে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মেশিন ছাড়া আর কিছুই না। সরল অল্পবয়সি মেয়েগুলাে প্রেমের ফাঁদে পড়ে পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাদের ফিরে যাওয়ার পথ থাকে না।
সুদীপ নারায়ণ ঘােষ