শুধু বিজেপি নেতারা নয়, ওরাও চৌকিদার। নিজের এলাকার কতটা তাঁরা রক্ষা করতে সক্ষম বা কিভাবে রক্ষা করবেন তাও জানা নেই।চৌকিদারির মোদীয় অর্থ তারা বুঝুন কিংবা না বুঝুন সবাই চৌকিদার। ব্রিগেডমুখী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিজেপি সমর্থকরা যেন এইটুকইু জানেন, নরেন্দ্র মোদী বলেছেন ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ মানে তারাও প্রত্যেকে চৌকিদার। মাথায় মাথায় চৌকিদার লেখা টুপি যেন তারই প্রমাণ।
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে আগে পশ্চিমবঙ্গে জোড়া সভা করলেন নরেন্দ্র মোদী। একটি কোচবিহারে, অপরটি কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। সেই সভা দেখতে, শুনতে কিংবা স্রেফ কলকাতা শহরটা একটু ঘুরে দেখতে কেউ ছুটে এসেছেন হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে কেউ এসেছেন নবদ্বীপ থেকে।
কেউবা সকাল থেকে নরেন্দ্র মোদীর একঝলক পাবার জন্য ছুটে এসেছেন মেদিনীপুরের গেঁওখালি থেকে। তাঁদের কারও ভাষায় নরেন্দ্র মোদী অপভ্রংশ হয়ে ‘নরেন মোদী’ বা ‘নরেন্দ্র মুদি’। কিন্তু একটি বিষয়ে তাঁরা সবাই এক। তাঁরা সবাই ‘চৌকিদার’।
উলুবেড়িয়া থেকে বৃদ্ধ মা আর মেয়েকে নিয়ে ব্রিগেডে এসেছিলেন অসীম বেরা। রোদ এড়াতে মাথায় ‘চৌকিদার’ টুপি পড়েছেন। তিনি বললেন , “আমরা শুধু নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ শোনবার জন্য এসেছি। সামনে থেকে দেখতে পাব কি না জানা নেই। মনে হয় না হবে বলে, কিন্তু উনি কি বলেন আমি শুনতে চাই।” আচ্ছা চৌকিদার হিসাবে কি করতে চান ? সোজাসাপটা উত্তর দিলেন মাঝবয়সী অসীম বেরা। তার কথায় , “নরেন্দ্র মোদী যেমন দেশের মানুষকে রক্ষা করছেন তেমন আমিও আমার এলাকার মানুষদের সাহায্য করে , কোনও সমস্যা হলে তার সাহায্য করে চৌকিদারি পালন করতে চাই।”
পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ব্লকের তপন প্রামানিক আবার ছেলে বউ নিয়ে সকাল বেলাতেই চলে এসেছিলেন ব্রিগেডে। তিনি বললেন , “চৌকিদারের মানে ঠিক কি আমরা তো জানি না। কেন নরেন্দ্র মোদী এটা নিজেকে বলেন তাও জানি না। কোনও একটা কারণ হবে হয়তো।” একইসঙ্গে তিনি বলেন , “ছেলের রোদ লাগবে বলে চৌকিদার লেখা টুপিটা ওকে পড়িয়ে দিয়েছি। জানি না কিভাবে চৌকিদারি করব।”
দলের সমর্থকের ‘চৌকিদারি অজ্ঞতা’ ঢাকতে নিজে থেকেই এগিয়ে এলেন সমীর দেবনাথ। তিনি নবদ্বীপ থেকে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি যা বললেন তা আরও চমকে ভরা। জানালেন , “চৌকিদার মানে পাহারাদার। নরেন্দ্র মোদী সেটাই করছেন। আমি বা আমরা চৌকিদারি করব কেন ? আমরা ওনাদের কেন্দ্রের আসনে আবার বসাবো চৌকিদারি করার জন্য। ওনারা আমাদের রক্ষা করবেন। আমরা চৌকিদারি কাজ তো ওনাদের এগিয়ে দেওয়া। সেটা আমরা ভোট দিয়ে করব। তারপরের কাজ ওনাদের।” একইসঙ্গে তিনি আগ বাড়িয়ে বললেন , “এবারে ওনাদের চৌকিদারিটা এমনভাবে করতে হবে যাতে আরও একটা নীরব মোদী তৈরি না হয়।” দিনের শেষে চৌকিদার কথাটা কিন্তু ঠোঁটের ডগায় লেখে থাকতেই হবে।