’সুশাসক হিসেবে ব্যর্থ’ মমতার সঙ্গ ছাড়তে চাইছেন এই তৃণমূল নেতারা

তাঁর ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি কার্যত রাজ্যবাসীর কাছে হাসির খোরাক হয়ে উঠেছে। ট্রেন-বাস থেকে গলির আড্ডা, সর্বত্রই তাঁর ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি নিয়ে ঠাট্টা করছেন সাধারণ রাজ্যবাসী। এই পরিস্থিতিতে এনআরসি বিরোধিতার রাস্তায় হেঁটে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে মরিয়া তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু, ’দ্বিচারিতা’র জন্য তাঁর প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়েছেন বলেই বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। সূত্রের খবর, সেই কারণেই এনআরসি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদী ভূমিকাকে তেমন একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ। কিন্তু, এখনই দল ছাড়লে নানা হেনস্তার মুখে পড়তে হবে। এই ভয়ে চুপ থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেসের ওই নেতারা গোপনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলেই  বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের মতে, বাঙালি বিদ্বেষী বিজেপিতে গিয়ে লাভ নেই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসে তাঁর অনুগামীদের দাবি, বর্তমান রাজ্য সরকার অনেক কাজ করেছে। বাম আমলে এই রাজ্য ছিল দুর্গতির মধ্যে। সেখান থেকে এই রাজ্যকে তুলে ধরেছেন মমতা। যা ভালো, সব কিছু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর, এখানেই তৃণমূল কংগ্রেসে মমতার প্রতি ক্ষুব্ধ নেতাদের প্রশ্ন, এত কিছু হলে আর দিদিকে বলতে হবে কেন? সব কাজ তো হয়েই গিয়েছে। তাহলে আর বলার প্রয়োজন কী? তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের দাবি, যে কাজ হয়নি, সেটা শুধু নিচুতলার কিছু নেতা ও প্রশাসনের দুর্নীতির জন্য। আর, এখানেই তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের প্রশ্ন, ‘তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সুশাসক বলা যায়?’ তাঁর সরকারের আমলে দুর্নীতি হয়েছে। দলের নেতা ও প্রশাসনের একাংশ সেই দুর্নীতি করেছে। কিন্তু, প্রশাসনের প্রধান হয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটাই তো প্রশাসক হিসেবে অযোগ্যতা।

এর পাশাপাশি, এনআরসি নিয়ে মমতার প্রতিবাদকেও আমল দিচ্ছেন না তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, এটা স্রেফ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিরাচরিত অতিনাটকীয় অপচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। তাঁদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে সংসদে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। কংগ্রেস আমলে যখন এনআরসি আইন হয়েছে, তিনি বিরোধিতা করেননি। শুধু তাই নয়, এখনও তিনি এনআরসি নিয়ে দ্বিচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন এনআরসির খসড়া তালিকা প্রকাশ হল, তখন তৃণমূল নেতারা অসমে গিয়ে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু, সেই তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন তখন নাকি সীমান্ত সিল করে দিয়েছিল। যাতে কোনও এনআরসি-ছুট এরাজ্যে প্রবেশ করতে না-পারে।

তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, এই দ্বিচারিতা দেখেই লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে অসমবাসী। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের একাংশের অভিযোগ, এবারও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের পর এনআরসি নিয়ে দ্বিচারিতা করছেন মমতা। জঙ্গিহানার আশঙ্কার ধুয়ো তুলে গোটা অসম-বাংলা সীমান্তের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে সিদ্ধিনাথ গুপ্তার মতো পোড়খাওয়া পুলিশ অফিসারকে। লক্ষ্য, সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনও এনআরসি-ছুট এরাজ্যে ঢুকতে না-পারে। আর, মুখে এনআরসি বিরোধিতার বুলি আওড়াচ্ছেন।

বিক্ষুব্ধ এক বাঙাল তৃণমূল নেতার কটাক্ষ, ‘আসলে মাচা (ঘটি) আর লোটাদের (বিহারি) বরাবরই ভালো সম্পর্ক। এই সম্পর্কের জন্যই ওরা নিজেদের শহর কলকাতাকে এখন পুরো লোটাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। যেক’জন মাচা এখনও কলকাতায় রয়েছেন, লোটারা সংখ্যায় বেড়ে তাঁদেরও লাথি মেরে ওখান থেকে তাড়াবে। মমতা নিজেও তো মাচা। লোটা অর্জুনকে নিয়ে নেচেছিল, ফলও পেয়েছে। তবে, অর্জুন একটা কথা ঠিক বলেছে। দু’দিন পরে দেখবে, ভাইপোকে নিয়ে মমতা কালীঘাটে গালে হাত দিয়ে বসে রয়েছেন। সঙ্গে আর কেউ নেই।’

চিন্ময় ভট্টাচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.