আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। রাত পোহালেই মকর সংক্রান্তির পুণ্য লগ্নে ভোর থেকেই পুণ্যার্থীদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠবে বাঁকুড়ার নদী ঘাট গুলি। একই সঙ্গে রাঢ় বঙ্গের এই জেলার দক্ষিণাংশের একটা বড় অংশের মানুষ প্রাচীন টুসু উৎসবে অংশ নেবেন।
একই সঙ্গে আগামী বুধবার থেকেই মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে, বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কের ঠিক পাশেই সিমলাপাল নদী ঘাটে খাতড়া মহকুমা এলাকার সর্ববৃহৎ গঙ্গা মেলা শুরু হচ্ছে।
খাতড়া এলাকার কংসাবতী তীরবর্তী পরকুল গ্রাম টুসু উৎসবের জন্য বিখ্যাত। জেলার সব থেকে বড় একদিনের এই টুসু মেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নেবেন। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বাড়িতে টানা এক মাস ‘টুসু’ পুজো’ শেষে ঐদিন সকাল থেকেই নদীতে টুসু চৌদল ভাসানোর কাজ চলবে। আধুনিক নগর সভ্যতার চাপে বাংলার লোকসংস্কৃতির প্রসারে ভাঁটা পড়লেও বছরে মাত্র ঐ একটা দিন আজও টুসু উৎসবকে নিয়ে মানুষের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো।
বাড়িতে টুসু জাগরণের ফাঁকে সরস্বতী মাল, কৃষ্ণা মাকুড়রা বলেন, সারা পৌষ মাস বাড়িতে টুসু প্রতিমা রেখে প্রতি সন্ধ্যায় পাড়ার সমস্ত মহিলাদের সমবেত গানের মাধ্যমে পুজো করা হয়। নৈবেদ্য হিসেবে বাড়িতে তৈরী মুড়ি, চিঁড়ে দেওয়া হয়। টুসুকে কোনও দেবী নয়, ঘরের মেয়ে হিসেবেই দেখা হয় বলে তাঁরা জানান।
দীর্ঘ দিন ধরে লোক সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক পার্থ সারথী গোস্বামী বলেন, টুসু হল প্রচলিত বিশ্বাস ও শস্য কাটার আনন্দোৎসবের এক মিলিত রূপ। টুসু উৎসব মূলত শুরু হয় অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে। আবার কোনও কোনও জায়গায় পৌষের প্রথম দিন। আর তা শেষ হয় পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির দিন। টুসু মূলত লৌকিক দেবী। তাঁকে কুমারী বালিকা হিসেবে পুজো করা হয়। এই উৎসবের মূল অঙ্গ যেমন গান, তেমনি মেয়েরাই এই পুজোর প্রধান ব্রতী। মাটির মূর্তি বা রঙ্গিন কাগজে চৌদল দেবীর প্রতীক হিসেবে স্থাপন করা হয়। যা মকর সংক্রান্তির দিন নদী বা কোনও জলাশয়ে ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা হয় বলে তিনি জানান।