অতীতকালে রাজা রাজড়ারা অভীষ্ট সাধনে বলি দেওয়াটা আবশ্যিক মনে করতেন। নরবলিই গূঢ় উদ্দেশ্য সাধনে নিশ্চিত ফল দিত এমনটা তারা মানতেন। আমাদের শাসকদলের মুখে অনবরত শোনা যায় পরম্পরা রক্ষার কথা। বিশেষ করে নেত্রী বলেন, বিজেপি দলটি এই পরম্পরা সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। মানতেই হবে, এই বলির পরম্পরাটিতে তাঁর একান্ত পেটেন্ট নেওয়া আছে। এ বিষয়ে তিনি খুব স্ট্রিক্টও বটে, সদা চেষ্টা করেন যাতে কোনভাবে পরম্পরা রক্ষায় যেন ভাটা না পড়ে।
ক্ষমতায় আসার বউনি করতেই যেন কিসেনজিকে চড়িয়ে দিলেন কী সব আধিভৌতিক কারণ টারণ দেখিয়ে। এর পর থানা পুলিশকে গণতান্ত্রিক পথে সম্পূর্ণ দলধরা করতে ঢালাও হাতে অনুপ্রেরণার বীজ ছড়িয়ে দিলেন। ঘরোয়া অনুপ্রাণিত ও অনুদানিত করে একই সঙ্গে বলিকুশলও করে তুললেন। এগারো সাল থেকে এই প্রথার প্রকোপ যেন একটু রয়ে বসে করা হচ্ছিল। পরে কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার গেরুয়া সরকারের আসার সম্ভাবনায় পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এর ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে পরম্পরা রক্ষার তুমুল তাড়না পরিলক্ষিত হল। ২০১৮-র মে মাসে দলিতপ্রেমীদের প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটল পুরুলিয়ার কলেজ ছাত্র ত্রিলোচনকে যুপকাষ্ঠ দর্শন করিয়ে। এই উৎসবের সময় উৎসর্গের সংখ্যা ছিল ১৮।
সকলেই জানেন নির্বাচনের সময় ও তার পরে এই পরম্পরা সংরক্ষণের কাজ নিষ্ঠা ভরে চালিয়ে সংখ্যাটা সেঞ্চুরির ওপর নিয়ে গিয়ে বিরল কৃতিত্বের আধিকারী হয়েছেন নেত্রী। বাঙালি হিসেবে এই গণতন্ত্রের পূজারীর আশীর্বাদধন্য রাজ্যবাসী হিসেবে গর্ব করার অধিকার আমাদের ন্যায্য নয় কি?
কিন্তু, বলিপ্রদানে কোনও ত্রুটি হয়েছিল কিনা তার নিশ্ছিদ্র অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তবে, হয়েছিল নিশ্চিত। এভিএম বেইমানি করে ৪২ এ ৪২ থেকে ১৮ টা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। রক্তলোলুপদেবী মুখ তুলে চায়নি। কিন্তু গণতন্ত্রে অন্য দল যে জিততে পারে এমন বেয়াড়া ঘটনা তো মেনে নেওয়া যায় না।
প্রথমে হল, সবাই হাত মিলিয়ে আমাকে বাঁচাও। বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্য হওয়ায় সবাই ভাগিয়ে দিল। ‘মোদি হটাও দেশ বাঁচাও’ খাল দিয়ে ভেসে গেল। এখন ছবি বিক্রির ৪০০ কোটিতে ঝাড় ফুঁক করতে প্রশান্ত ওঝা এসেছে। কড়া কড়া টোটকা দিচ্ছে। কয়েক মাস ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত। ওষুধ কতটা নিরাময় করছে জানা না গেলেও খারাপ উপসর্গ মাথা চড়া দিচ্ছে।আরাজকতায় অনুপ্রাণিত ছেলেরা ওষুধের সাময়িক প্রভাব কেটে যাওয়ার পরেই তেড়ে ফুঁড়ে উঠছে। আজকের তারিখেই টালিগঞ্জ থানায় গিয়ে লড়াকু মেয়ে-মাতাল ছেলেরা পুলিশকে সবক শিখিয়ে এসেছে।
দলের এক ভারী মন্ত্রী এ সূত্রে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছেন, আইন মেনে পদক্ষেপ করা না হলে এমন ঘটতেই থাকবে। এমন চলতে থাকলে প্রশাসনকে কেউ মানবে না। কী ভয়ংকর কথা তার মানে প্রশাসন আছে। তবে নিশ্চয় গ্লুকোমায় আক্রান্ত। বেচারা ডাক্তারী পড়ুয়া ও তার সহপাঠীদের প্রতিভা।
তবুও সময়টা প্রধানত শোকের কারণ, সারা দেশ থেকে দাগি লোকেদের জুটিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন জীবনানন্দের সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে তার ঝড়ের আপ্ত বাক্যকে ব্যর্থ করে হায় চুর চুর হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ জন্মের মতো বুঝি হয়ে গেল হারা।
আমাদের সত্যদ্রষ্টা কবিরা সব নিদান দিয়ে গেছেন। ওগো সুদূর বিপুল সুদূর সত্যিই কবির কলমেই রইল। আদ্দেক সিট বেরিয়ে যাওয়ার পরও এভিএম ন্যাংড়াচ্ছেন। ঝুটা বাণী দিচ্ছেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও ব্যালট নিয়ে এসো’। চিফ ইলেকশন কমিশনার অরোরা ঝামা ঘষে দিয়ে বলেছেন, জিতলেই এভিএম ঠিক হারলেই ভুল। কোনও মতেই আর পেছন ফেরা নয়। এভিএমই চলবে। হায়রে সে গুড়েও বালি। মামার বাড়ি! একটা মিছিল বার করে ভিক্টিম কার্ড খেলো। কিন্তু লোক হবে না। সবাই বুঝে গেছে নইলে ১৮টা সিট কোথা থেকে বেরল।
বেনেপুকুরের এক লরি বনেদি ভোটার নেত্রীর ভাষায়, ‘দুধেল গাই জঙ্গি হয়ে লাথি’। মাথার ঘিলুটাই খুলে দিয়ে গেল। কি না ৮৫ বছরের দাদুর এন্তেকাল হচ্ছে। দিনের পর দিন মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরল ভোট ঠিক রাখতে। সেই দেখেছিলাম কড়া প্রশাসক। মানুষ গোল্লায় যাক ভোটেল গরু চটাবেন না। যাই হোক বড় বড় ডাক্তারবাবুরা ভয় দেখিয়ে সে যাত্রা মান বাঁচালেন। পচন একবারে আটকানো সোজা নয়। বাইক না পরা মুকাদ্দার-কা-শিকান্দারদের কী হবে। তারা কি প্রশাসনের বাইরে। নিশ্চয়, এক দুধেল পিজিতে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। মনে পড়ে মারিও পুজোর বিশ্বসমাদৃত গডফাদারের অমোঘ পর্যবেক্ষণ।
When The System Fails, A Power will Rise – মিশ খাচ্ছে, না? আহা কাটমনির রঙিন দুনিয়া। গরিব পিএম আবাস প্ল্যানের টাকা পেলেই আমি ছাঁট পাব। ছাঁটেই কোটিপতি। সরকার সব জানত কিন্তু, ওই সময় গডফাদারের নো গভর্নমেন্ট বিরাজমান। এখন বলছে ফেরত দাও। প্রশাসন জনতার হাতে। ভাবা যায়, নিজের টাকা নিজে আদায় কর।
অখিলেশ থেকে চন্দ্রবাবু, দেবে গৌড়া থেকে জেল বন্দি লালুদা সব পার্টি উঠে যাওয়ার খাপ। ‘বড় একা লাগে এই আঁধারে’। একা কুম্ভকেই রক্ষা করতে হবে নকল বুন্দি গড়।গণতন্ত্রের থাপ্পড় তাপ্পড় যা মারবার মারা প্রাক্টিস কর। ঋত্বিক ঘটকের ভাষায়, “ভাবা প্র্যাক্টিস করো”। তবে শেষমেষ বলিই কিন্তু ভরসা। শেষ খবর পাওয়া অব্দি, হাওড়ার শিবপুরে ভারতমাতার মূর্তি তৈরি করাকালীন পটুয়াদের এক নৈশ অভিযানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবার ভারত মাতার টার্ন নয়তো।