শুধু মাত্র একটা মিথ্যা “তাড়িয়ে দেওয়া হবে” দিয়েই শুরু হয়েছিল একটা সমগ্র জনগোষ্ঠী কে আতংকিত করে তোলার খেলা।তারপর “কাউকে তাড়াতে দেব না” বলে মায় খবরের কাগজে অব্দি সরকারী টাকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আরো তীব্রতার সাথে আতংকিত করে তোলার কাজটি করা হল অতি সুচারু রূপে। কিন্তু তাতেও যে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। মানুষ তো আর সব গণ্ডমূর্খ নয়।তারাও পড়তে এবং পড়ে বুঝতে চেষ্টা করল আইনে সত্যিকারের কি বলা আছে।তিন পাতার সাড়ে সাতানব্বই লাইনের আইন টা পড়ে নিলেই তো ধোঁয়াশা কেটে যায় সকলের। কিন্তু ধোঁয়াশা কাটলেই যে বিপদ, ধোঁয়াশা থাকলেই তো পাব্লিকের মাথায় কাঁঠাল রেখে ভোট ব্যাংক অক্ষুন্ন রাখা যায়।নেতারা ও তাই চায়না পাব্লিকের ধোঁয়াশা কাটুক।

এদিকে যারা ভয় দেখাতে আসছে, মানে ওই CAA কতটা খারাপ সেটা বোঝানোর নাম করে আল্টিমেটলি ভয় পাওয়াতেই যারা আসছে, তারাও তো এলাকার নিরামিষাশী ভদ্রলোক কেউ নন।

তারা এলাকায় হাতজোড় করে শিরদাড়ায় কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়া লুটেরা, তোলাবাজ,সিন্ডিকেটের দাদা। আপনি বাড়ি করবেন বলে দু গাড়ি ইট কিনলেই যার বুলেটের শব্দে আপনার বাড়ির সামনের খড়কুটো উড়ে যায়।

তো তিনি এয়েচেন আপনাকে CAAবোঝাতে। কি বোঝাবেন তিনি নিজেও খুব একটা জানেন না। মানে যখন তিনি ট্রেনিং নিচ্ছিলেন পার্টি অফিসে বসে তখনও বারবার সেই বালির গাড়ি থেকে ফোন আসছিল, সিন্ডিকেটের দাদা বলে কথা। কচুর ট্রেনিং টাও ঠিক করে নেওয়া হয়নি। মাথায় একটা হ্যাং ওভার ও ছিল আগের দিন রাতের ব্লেন্ডার্স প্রাইডের।

তো তিনি বলতে শুরু করেছেন আমাদের দিদি যদ্দিন আছে তদ্দিন কেউ আপনাদের কিচ্চুটি…… এই রকম আর কত কি। যতবার আইনের কথা বলে তার থেকে তিনশ বার বেশী বলে দিদির কথা। দিদিই তো এখন তার ” খেটে খাওয়ার” ইউ এস পি।

আসলে আমার মতে, করে কম্মে খাওয়া এই মানুষ গুলো ততটা ভয়ংকর নয়।এরা চাট্টি পয়সা পেলেই আপনার পায়খানা অব্দি পরিষ্কার করে দিয়ে আসবে।এদের কাছে পয়সাই শুরুর কথা পয়সাই শেষের কথা। দল টা করে বলেই গেল গরমে বাড়িতে ভোল্টাসের দেড় টন এসি লেগেছে। বুড়ো বাবা এখন আর হকারি করতে ট্রেনে ওঠে না । মেয়েটাকে পয়সা ওয়ালা ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করেছে। সব ই তো ওই দলের দয়ায়। মানে এদের কাছে দল নেই তো বল নেই।দল হ্যায় তো সব কুছ মুমকিন হ্যায়। তো এদেরকে আপনি ধান্দাবাজ বলতেই পারেন, কিন্তু কে ধান্দাবাজ নয়?

যে ছেলেটা এই কয়েক বছর আগেই ভিটে মাটি ফেলে পালিয়ে এসে, “স্বদেশ আমার স্বপ্ন আমার” ফেলে রেখে এখন মুরগীর দোকানে খাতা লেখে। গেল বার পাক্কা দশ হাজার টাকা পাড়ার নেতার হাতে দিয়ে বউ আর নিজের নাম ভোটার লিস্টে তুলেছে টাকা দিয়ে সেও মিছিলে হাঁটছে আর বলছে
” সি এ এ মানছি না, মানব না”/ ” নুতন করে দেশ ভাগের চক্রান্ত মানছি না, মানব না”।

সি এ এ র পুরো কথা কি হয় সে জানে না, জানার কথাও নয়। সে শুধু জানে মুরগীর দোকানের মালিকের দোকান টা বাজারের ফুটপাথে। যে কোন মুহূর্তে কোন এক দাদা এসে লাল চোখ দেখালেই উঠে যেতে পারে দোকান পাট সব। তাই নিজের জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা ” আইন” এর বিরুদ্ধেও সে পথ হাটে নিরুত্তাপ। পেটের জ্বালা বড় জ্বালা রে পাগল। পেট দেশ বোঝেনা, কাঁটাতার বোঝেনা। তাই সে কোন আইন বোঝে না। সে শুধুই দাও দাও করে, রুটি দাও ভাত দাও এইসব।এর পরেও আছে কাপড়া আর মকান। ওগুলো স্বপ্ন। আর স্বপ্ন ঘিরেই তো বেঁচে থাকি আমি তুমি আমরা সবাই, তাই না?

তাই সকলকে অবাক করে দিয়ে মিছিলে হাটে লক্ষ লক্ষ ভিটে হারা, উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দু। হ্যাঁ ওপার থেকে তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসা হিন্দুরাও মিছিলে পা মেলায়। বেশীর ভাগ পেটের দায়ে। ওদের চাল টা মুলো টা কলা টা কোন না কোন দাদার কাছে বাধা থাকে। বাধা থাকে জীবন যৌবন, বাধা থাকে ইচ্ছা, অনিচ্ছাও।

কিন্তু।।সেই সব শিক্ষিত বঞ্চিত এড়ে খোকারা যারা ওপারে এক ইঞ্চিও সেকুলারিজমের কপচানোর সুযোগ পায়নি, কোন এক রাতে দিদির ওড়না ধরে টেনে নিয়ে গেছিল ওপাড়ার কালু মাতব্বরের ছেলে আব্দুল, পরের দিন ভোরে ধর্ষিতা দিদি কে নিয়ে পালিয়ে এসেছিল পুরো পরিবার। আশ্রয় দিয়েছিল কে? এই ভারত মাতাই আশ্রয় দিয়েছিল সেই ছিন্নমূল পরিবার টাকে। এক রাতে দেশ হারা হয়েছিল যে মানুষ টা সে এখানে এসে আবার স্কুলে ভর্তি হয়েছে, স্কুল কলেজ পেরিয়ে এখন সে বিরাট বুদ্ধিজীবী। বিরাট সেকুলার। সাম্রাজ্যবাদী রা নিপাত যাক… এর সাথেই সে ” আজাদী” র স্লোগান তোলে, কানহাইয়া কুমারের মত স্বপ্ন দেখে আর মার্কসবাদ বুকে নিয়ে মিছিলে হেঁটে বলে ” সংবিধান বিরোধী এই কালা কানুন মানছি না মানব না”
” সি এ এ মানছি না মানব না” / ” একটা সম্প্রদায় কে বাদ দিয়ে করা এই আইন মানছি না মানব না”। ” ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে ইনসাল্লা ইনসাল্লা”।

তখন অবাক হতে হয় বই কি! যে আব্দুল তার দিদিকে পাশের মাঠে টেনে নিয়ে যেয়ে শরীর টাকে ছিন্ন ভিন্ন করেছিল তাকেও সে এখন নাগরিকত্ব দিতে চায়। সেই পাষন্ড ধর্ষক আব্দুলের নাগরিকত্বের জন্যেও সে মিছিল হাঁটে? এখন এই লোক টাকে আপনি সেকুলার বলতে পারেন, আমি তাকে ছাগল ই বলব। এদেরকে আমি সেকু- ছাগল বলে ডাকি।

শেষোক্ত যে ক্যাটেগরির কথা বললাম আপনি চোখ বুজে লিখে নিন ওরা বাম পন্থী। এরাই, যখন তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ থেকে মৌলবাদী অত্যাচারের কারনে পালিয়ে এসেছিল এই ভারত ভূমিতে, তখন অবশ্য বাংলার মসনদে এই বামেদের সরকার। সারা কোলকাতা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হল ইসলাম বিরোধী তসলিমাকে তাড়ানোর জন্য, কোলকাতা ছাড়া করার জন্য। তখন অবশ্য ” গনতন্ত্র / বাক স্বাধীনতা / মত প্রকাশের অধিকার” এসব শব্দবন্ধ গুলো জমে ক্ষীর হয়ে ঢুকে গেছে বাংলার বামেদের উদরে। মুসলিম ভোট তখন ও যেমন শাসালো ছিল এখনো ঠিক তেমন ই ” যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খেতেও রাজী” রূপ নিয়েই রয়ে গেছে এই সব নেতা গুলোর অন্দরে আর অন্তরে। মুসলিম ভোট হারানোর ভয়ে সেই তসলিমা নাসরিন কান্ডে বামেরা মুখে কুলুপ এটে বসে ছিল।তখন কিন্তু টু শব্দটি করেনি। আর এখনো ঠিক তেমন ই CAA র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আস্ত ট্রেন জ্বালিয়ে দিয়ে, স্টেশনে লুটপাট চালালেও মুখে কুলুপ এটে থাকে দিদিমনির পুলিশ।

কোন পুলিশ? আরে সেই পুলিশ। যারা দাড়িভিটে দুই কিশোরের বুকে গরম সিসে ঢুকিয়ে দিয়ে শেষ করে দিয়েছিল দুটি তাজা প্রান। কেন? কারন ওরা স্কুলে কোন আরবীর শিক্ষক চায়নি। কারন ওদের স্কুলে আরবি সাবজেক্ট টাই নেই। ওরা বাঙলা পড়তে চেয়েছিল। বাংলার শিক্ষক চেয়েছিল। তারা সেদিন দেখেছিল পুলিশের সে কি বীরত্ব। উফ। কি দাপটের পুলিশ। অথচ রেল লাইন উপড়ে ফেলা হল, স্টেশন লুট করে ধ্বংসলীলা চালাল যারা তাদের দেখেও দেখল না এই অকেজো পুলিশ প্রশাসন।তান্ডব চল্ল টানা তিন দিন। একটা গোটা রাজ্য গোটা তিনটে দিন জুড়ে অভিভাবক হীন, প্রশাসন হীন হয়ে পড়ে রইল। রক্ষে করো রঘুবীর।

তো যেটা বলছিলাম।এই বিল মানে এই আইন মানে এই CAA কটা লোক পড়েছেন আমি জানিনা। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত করে বলতে পারি যারা এই ” আইন” টা অনিচ্ছা স্বত্বেও একটি বার পড়েছেন তারা মিছিলে হাটবেন বলে মনে হয়না যদি না তার কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ তৃণমূল দলটার কাছে বাধা না থাকে। প্রচুর মানুষের এখন এই আলুটা মুলোটা তো জোগাড় হয় এই দল টা করার সুবাদে। তো তাদের আইন টা পড়ার দরকার ই নেই। পাড়ার আজগর ভাই অথবা নরেন জ্যেঠা বলে দিয়েছেন মানে মিছিলে যেতেই হবে।অতশত ভাবার অবসর অবকাশ কোনটাই নেই।

এই আইনে একটি বার চোখ বুলোলে পথে নামতে হবে না সেকুলার সংদের কেও। যদিও সেকুলার বামেরা এখন মুসলিম দরদী সাজার এত বড় একটা স্কোপ পেয়েছে, হেলায় হারাতে নারাজ। আর ৩৪ বছরের বাম শাসনে এতটাই ওদের অশিক্ষিত করে রাখা গেছে যে ওরা বিল টা পড়বেই না। ওদের মগজ ধোলাই তাই সহজ, উভয় দলের কাছেই।

এই যে আইন টা পাস হল যেটাকে আদর করে আমাদের দিদি বলেছেন ” ক্যা ক্যা ছি ছি”
সেই আইনের সাথে এদেশের নাগরিক দের কোন সামান্যতম সম্পর্কই নেই। এদেশের হিন্দুদের সাথে না কোন সম্পর্ক, এ দেশের মুসলিমদের সাথেও এই বিলের না কোন সম্পর্ক। সম্পর্ক আছে সেই ওদেশের কালু মাতব্বরের ছেলে আব্দুলের। ওদেশের আব্দুল রাও যারা দলে দলে চলে এসেছে এই দেশ টাকে ” গাজোয়ায়ে হিন্দ” বানানোর জন্যে তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। তাহলে নাগরিকত্ব কাদের দেওয়া হবে?

ওই যে ওপার থেকে নির্যাতিত হয়ে, অত্যাচারিত হয়ে, ধর্ষিতা হয়ে যেসব মা বোনেরা এসেছেন, ভিটে মাটি ফেলে রাতারাতি দেশ হীন হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভার‍ত মায়ের নিরাপদ কোলে তাদের জন্যেই এই আইন।তা সে এখানে এসে বড় সেকুলার হয়ে গেলেও, এই আইন কে সংবিধানের স্পিরিটের বিরোধী বলে পাড়া কাপানো মিছিল করা সেকুলার ছাগল টির জন্যেও এই আইন।আর কারোর জন্যেই নয়।

এই আইন কোন ভারতীয় ভূমিপুত্রের জন্য নয়।কিন্তু গোয়েবলসীয় কায়দায়, যে শিল্পে তৃণমূলিদের চেয়েও অনেক বেশী দড় বামেরা, তারা এটাকে এমন ভাবে আপনার কাছে পরিবেশন করছেন যেন এই আইনের বলে দেশের সব মুসলিমদের ই তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এটা ওদের অনেক পুরনো কলা। কলা নয় বরং ছলাকলা বলাই ভাল।মানুষের সাথে ওদের এই ছলাকলার জন্যেই মানুষ ওদের ভাগাড়ে নিক্ষেপ করেছে, এখন ভোট শতাংশ নামতে নামতে ৭% এ ঠেকেছে তবুও বাবুদের অবস্থা খানিক টা ওই ডাক্তার বাবুর ” ফার্নিচার বেচে খাব তবুও ভিজিট কমাবো না” টাইপের।

ওদের মিথ্যাচারের মুখোশ মানুষ ই খুলে দেবে খুব শিজ্ঞির। যারা এই CAA নিয়ে মিথ্যাচার করছেন তাদের সবার মুখোশ খুলে দেবে মানুষ ই। জাস্ট ওয়েট করুন। সময়ের অপেক্ষায় আছে সেই সব নিরীহ ছাপোষা মানুষ গুলো যাদের আজন্মলালিত স্বপ্ন পূরন করল দুই গুজরাটি। যারা জানে চুপটি করে থাকাই ভাল আপাতত। কারন তারা জানে তাদের সাথে আছে গুজরাটের মোটা ভাই অমিত শা, আর হিন্দু হৃদয় সম্রাট নরেন্দ্র ভাই।

সজল মন্ডল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.