দেশের করোনার বাড়বাড়ন্তের জন্য সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট । পশ্চিমবঙ্গ সহ চার রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোট পর্বের মধ্যেই দেশে হু হু করে বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা সংক্রমণ । এর জন্য মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান৷ কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনার প্রতিষ্ঠান একা দায়ী করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য৷ আপনাদের অফিসারদের খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা উচিৎ’’৷দেশে যখন করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী তখন চারটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে কমিশন৷ নির্ঘণ্ট প্রকাশের দিন কমিশন জানিয়েছিল, কোভিড বিধি মেনে ভোট পরিচালনা করা হবে৷ কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো ছবি চোখে পড়ে৷ রাজনৈতিক দলগুলির জনসভা, ব়্যালিতে মানুষের থিকথিকে ভিড়৷ খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও জনসভাগুলিতে মানুষের ভিড় দেখে উচ্চ প্রশংসা করেন৷ কিন্তু সেই ভিড়ই বিপদ ডেকে আনে৷ দ্রুত ছড়াতে থাকে করোনা৷ সংক্রমণ বাড়ছে দেখেও কেন কমিশন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নাগরিক সমাজ৷ অনেক পরে ঘুম ভাঙে কমিশনের কর্তাদের৷ তখন রাজনৈতিক দলগুলির জনসভা, প্রচারে রাশ টানেন তাঁরা৷ কিন্তু ততদিনে ভারতে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় তিন লাখ ছুঁইছুঁই৷ করোনায় আক্রান্ত হতে শুরু করেন প্রার্থীরা৷ বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মৃত্যুও হয়৷মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এজন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেন ৷ এদিন মাদ্রাস হাইকোর্টের তরফে কমিশনকে তোপ দেগে বলা হয়, ‘যখন রাজনৈতিক সভাগুলি চলছিল, তখন কি আপনারা অন্য গ্রহে ছিলেন?’ এরপর আদালতের তরফে বলা হয়, ‘জনসাধারণের স্বাস্থ্য সবথেকে বেশি গুরুত্বের বিষয়। এটা দুঃখের যে সাংবিধানিক সংস্থাকে এই কথাটি মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে। জনগণ বাঁচলে তবেই না তারা তাদের অধিকার উপভোগ করবে। এখন বাঁচার লড়াই চলছে। এছাড়া বাকি সবকিছু পিছনের সারিতে থাকবে।’ এদিন মাদ্রাস হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে করোনা বিধি লাগু করে পদক্ষেপ নিতে হবে। নজিরবিহীন হুঁশিয়ারি দিয়ে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেয়, এখনই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ না নিলে ২ মে-এর ভোট গণনা বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি কমিশনকে তোপ দেগে হাইকোর্টের তরফে বলা হয়, আপনাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা উচিত। তাছাড়া আদালতের বক্তব্য, ‘কোনও ভাবে যদি ভোট গণনা করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করে তাহলে তা অবিলম্বে পিছিয়ে দেওয়া উচিত। নিয়ম মেনে গণনা হোক অথবা তা পিছিয়ে দেওয়া হোক।’ পাশাপাশি ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তরফে জানাতে হবে যে ভোট গণনার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
2021-04-26