আজ পশ্চিমবঙ্গ(west bengal) দিবস। আমরা অনেকেই জানি না যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের যেমন বিহার, ওডিশা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কেরল, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানের আলাদা রাজ্য দিবস রয়েছে। যেমন মহারাষ্ট্রে ১ মে, কর্ণাটকে ১ নভেম্বর, পাশের রাজ্য বিহারে ২২ মার্চ, ওডিশায় ১ এপ্রিল রাজ্য দিবস পালিত হয়। এইসব রাজ্যে এই দিবসগুলি উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। আজ সেই ঐতিহাসিক পশ্চিমবঙ্গ দিবস। বিজেপি উদ্বাস্তু সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডঃ মোহিত রায় ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে জানান, “এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য রাজ্যবাসীকে জানানো কেন রাজ্যটি তৈরী হয়েছিল যেমন আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করি। আজকে যখন পশ্চিমবঙ্গের দখল চলে যাচ্ছে ভারত-বিরোধী মৌলবাদীদের হাতে, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনের অপপ্রচেষ্টা চলছে, ইচ্ছেমতন তিনদিন ধরে রাজ্য জুড়ে ট্রেন বাস রেল স্টেশনে আগুন লাগাচ্ছে মৌলবাদীরা তখন কবে ও কেন পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়েছিল তা স্মরণ করা একান্তই জরুরী।”
“পশ্চিমবঙ্গ যুক্ত বাংলার পশ্চিম ভাগের একটি মানচিত্র মাত্র নয়, এটি বাঙ্গালী হিন্দুর মুক্তির ভাবনা। সাড়ে পাঁচশ বছরের ইসলামী শাসন বাংলার কয়েক হাজার বছরের ধর্ম সংস্কৃতি ভাষাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। বাংলায় তাই নেই কোন প্রাচীন মন্দির, বৌদ্ধ বিহার। বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণে হিন্দু বৌদ্ধের বাংলাকে বানানো হয়েছে ইসলাম প্রধান বাংলা। ব্রিটিশ শাসন এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি দেয়, বাঙ্গালীর নবজাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায় যাকে বলেছেন “ ডিভাইন প্রভিডেন্স বা বিধির আশীর্বাদ”। এরপর বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, সরলা দেবী, রবীন্দ্রনাথ, প্রফুল্লচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলেন বাঙ্গালীর সভ্যতা সংস্কৃতি।”১৮৭২এর প্রথম জনগণনার পর সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত হল বাংলায় মুসলমান জনসংখ্যা হিন্দুর চেয়ে কিছু বেশী। ১৯৩১ পর্যন্ত এ পার্থক্য তেমন বেশী ছিল না। ৫৬% মুসলমান, ৪৪ শতাংশ হিন্দু। কিন্তু এই সুযোগেই ব্রিটিশ সরকার আনল ১৯৩৫ সালের সাম্প্রদায়িক চুক্তি বা কমিউনাল এ্যাওয়ার্ড। বাংলার আইনসভায় মুসলমান আসন হল ১১৯টি। হিন্দু আসন, তফসিলি আসন মিলিয়ে, মাত্র ৮০। এই চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ডাঃ নীলরতন সরকার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও অন্যন্যরা। তাঁদের বিবৃতিতে তাঁরা খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে সংখ্যায় মুসলমানরা বেশি হলেও শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, ব্যাবসা বানিজ্য সবকিছুতেই হিন্দুরা অনেক এগিয়ে। সুতরাং বাংলার ভালমন্দের সিদ্ধান্ত কেবল জনসংখ্যার মানদণ্ডে হতে পারে না। বাংলার কংগ্রেস, বিশেষতঃ সুভাষচন্দ্র বসু, এই চুক্তির বিরোধিতা করেছিল।“১৯৩৫ এর কমিউনাল এ্যাওয়ার্ড মেনে ১৯৩৭এর নির্বাচন থেকে শুরু হল আবার মুসলিম লীগের ইসলামী শাসন। স্বাধীনতা ও দেশভাগের আবহাওয়ায় তপ্ত হয়ে উঠল বাংলায় ইসলামী অত্যাচার। ১৯৪৬এর কলকাতার মহাদাঙ্গা ও নোয়াখালীর হিন্দু গণহত্যার পর বাঙ্গালী হিন্দু বুঝে গেল আগামী দিনে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলায় তাদের অবস্থা কি হবে? এগিয়ে এলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সরব হলেন বাংলার মনীষীরা। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদার, ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, শিশির মিত্র, নমশুদ্র নেতা প্রমথরঞ্জন ঠাকুর বললেন বাঙ্গালী হিন্দুর হোমল্যান্ড চাই। “এই অবস্থায় এগিয়ে এলেন বাংলার কংগ্রেস নেতারাও, ডাঃ বিধান রায়, অতুল্য ঘোষ। বাঙ্গালী হিন্দুর কয়েক হাজার বছরের ধর্ম সংস্কৃতি বাঁচাতে, হিন্দু নারীর সম্মান রক্ষার্থে, বাঙ্গালী হিন্দুর নিজের বাসস্থানের দাবীতে তৈরী হল পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৪৭ সালের ২০শে জুন বঙ্গীয় আইনসভা বাংলা ভারত বা পাকিস্তান যোগদানের প্রশ্নে একমত হল না। তখন হিন্দু প্রধান অঞ্চল নিয়ে হল পশ্চিমবঙ্গ আইন সভা ও মুসলমান প্রধান অঞ্চল নিয়ে হল পূর্ববঙ্গ আইন সভা। পশ্চিমবঙ্গ আইন সভায় সংখ্যাধিক্যের ভোটে পশ্চিমবঙ্গের ভারতভুক্তি নিশ্চিত হয়। যুক্ত বাংলার সব মুসলমান সদস্যরা পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেন, কতিপয় তফসিলি সদস্য ছাড়া সব তফসিলি সদস্য সহ সব হিন্দু সদস্যরা ভারতভুক্তির পক্ষে ভোট দেন। ২০শে জুন জন্ম নিল পশ্চিমবঙ্গ।“২০শে জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস উদযাপন এই ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার। কেউ বলছেন আমরা বাঙলায় বিভাজন করছি। বিভাজন তো হয়ে গেছে আজ থেকে আটশো বছর আগে যখন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় আগুনে পুড়িয়ে বখতিয়ার খিলজী বাঙ্গলায় ঢুকল। তারপর থেকে বাঙ্গলার একটিও পুরানো মন্দির আর দাঁড়িয়ে নেই। যতদিন না ত্রিবেনীর জাফর খানের মসজিদ, আদিনার মসজিদ অপসারিত না হচ্ছে, রমনা কালিবাড়ি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে ততদিন বিভাজন তো থাকবেই। পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করাই আমাদের প্রাথমিক কাজ। আজ খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে হবে বাংলায় কথা বললেই সে বাঙ্গালী নয়, তাকে পাঁচ হাজার বছরের ভারতীয় সভ্যতার উত্তরাধিকারও স্বীকার করতে হবে। বাংলাভাষী ও বাঙ্গালী এক নয়। “পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী হিন্দু আজ বহন করছে সেই উত্তরাধিকারের দায়িত্ব। পারসী, সিন্ধি, কাশ্মিরী পণ্ডিতদের আজ আর নিজেদের দেশ নেই, তাঁরা হারিয়ে যাচ্ছেন ভারতের বিভিন্ন কোণে, হারিয়ে যাচ্ছে তাঁদের ভাষা সংস্কৃতি। শ্যামাপ্রসাদ পশ্চিমবঙ্গ গড়েছিলেন বলেই আজও বাঙ্গালী হিন্দু তাঁর ধর্ম ভাষা সংস্কৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আর কতদিন? পশ্চিমবঙ্গকে পাকিস্তান বানাতে ইসলামী মৌলবাদী শক্তি নাগরিকত্ব আইন ও এনারসির বিরোধিতায় রাজ্য অশোক সেনগুপ্ত সরকারের প্রশ্রয়ে ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর সারা বাংলা জুড়ে হিংসাত্মক আক্রমণ চালায়। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদের পশ্চিমবঙ্গকে আমরা ধ্বংস করতে দেব না। সেজন্যই আজ প্রয়োজন পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝা ও দিকে দিকে ২০শে জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করা। “পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অন্য রাজ্যের পার্থক্য হল যে অন্য রাজ্যে সমস্যা সমাধানে কিছু দেরী হলেও চলবে, পশ্চিমবঙ্গে তা হবে না। এখানে প্রতিটি দিন আমরা পশ্চিম বাংলাদেশ হবার দিকে এগিয়ে চলেছি। গত ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ এ ইসলামী হিংসা দেখিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তাদের প্রায় দখলেই এসে গেছে। ২০শে জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস উদযাপনের গুরুত্ব না বুঝলে কে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করলো তা বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে না।“এই পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করাই আমাদের প্রাথমিক কাজ। যে পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা চালু থাকবে, বাঙ্গালী ছাত্র বিদ্যালয়ে আরবী শিখবে, বিদ্যালয়ের অভাবে হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা পড়বে মাদ্রাসায়, হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে গড়া মসজিদগুলি রাজ্যের পর্যটন বিভাগের আকর্ষণ হয়ে থাকবে, ১ কোটি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী থাকবে, ইমামরা ভাতা পাবে, কর্ণসুবর্ণ নাম মুছে গিয়ে হবে মুর্শিদাবাদ, সম্রাট শশাঙ্ক বা মহারাজ প্রতাপাদিত্যের কোন স্মারক থাকবে না – সেটি পশ্চিমবঙ্গ নয়। শ্যামাপ্রসাদেরা এই পশ্চিমবঙ্গ আমাদের উপহার দিয়ে যান নি। সেজন্যই আজ প্রয়োজন পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝা ও ২০শে জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করা।”
2020-06-20