এবার আর বিধানসভা নির্বাচনের কোনও বুথ দোতলা, তিনতলায় হবে না। সব বুথ করতে হবে একতলায়। মুখ্য নর্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা কলকাতায় এসে এই বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনকে। তবে এই কাজ করতে গিয়ে জেলা প্রশাসন সঙ্কটের মধ্যে পড়ছে। কারণ এবার বুথের সংখ্যা বাড়ছে। তার ওপর এতো সংখক বুথ একতলায় করার মতো জায়গা নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার ওপর দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং নদীয়া জেলায় বহু স্কুল বাড়ি আম্ফান-এর তান্ডবে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছিল। সেই স্কুল বাড়িগুলির সবকটি সঠিক ভাবে এখনও সংস্কার করা হয়নি। তাই এই সমস্ত জেলায় অস্থায়ী বুথের ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসন। কারণ কমিশনের নির্দেশে একতলায় এবার বুথ করতে হবে। কমিশনার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অস্থায়ী বুথের মাপ হতে হবে কম করে ২০ বর্গফুট। বুথে প্রবেশ ও নির্গমনের রাস্তা আলাদা হতে হবে। মূলত করোনা বিধি মানার জন্যই এই ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, কমিশন সূত্রেই এই কথা জানা গেছে।
রাজ্যে এখনও করোনা সংক্রমণ নিঃশেষ হয়নি। তাই করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এবার রাজ্যে বুথের সংখ্যাও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে এমনিতে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৯০৩টি। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই বুথের সংখ্যা আরও ২২ হাজার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।তাই এবার রাজ্যে বুথের সংখ্যা সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ লক্ষ ৯০৩টি। তবে এই সংখক বুথ করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা কোথায় পাওয়া যাবে সেটাই জেলা প্রশাসনের প্রধান চিন্তা । তার ওপর আবার সব বুথ এবার একতলায় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই স্বাভাবিক কারণেই চিন্তায় পড়েছে জেলা প্রশাসন। এতো সংখক ঘর ,একতলায় এবং সঠিক মাপের পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরী হয়েছে।
বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে করোনা বিধি মেনে যে ভাবে নির্বাচন হয়েছে, সেই মডেলই পশ্চিমবঙ্গে অনুসরণ করছে দেশের নির্বাচন কমিশন। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই একতলায় সব বুথ হতে হবে,বুথে ভোটারদের প্রবেশ ও নির্গমনের জন্য আলাদা রাস্তা রাখতে হবে, ভোটারদের বুথে গ্লাভস পরে প্রবেশ করতে হবে, ভোট দেওয়ার সময় ভোটারদের আঙুলে যে কালির দাগ লাগিয়ে দেওয়া হয় সেই কালি লাগিয়ে আবার গ্লাভস পরে নিতে হবে।
নির্বাচনের সময় বুথের ভেতরকার সমস্ত চিত্র যাতে নির্বাচন কমিশনার নজর এড়িয়ে না যায় তার জন্য একটি বিশেষ app তৈরী করা হয়েছে। এই app টি প্রিসাইডিং অফিসারের মোবাইল ফোন ডাউনলোড করা থাকবে। বুথে কোনও গোলমাল, ছাপ্পা ভোট, অনাবশ্যক উত্তেজনা তৈরী হলের এই app টির মোবাইলের স্ক্রিন স্পর্শ করলেই খুলে যাবে এবং নির্বাচন কমিশনার নজরে পুরো বিষয়টি চলে আসবে।বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে এই app ব্যবহার করেছিল কমিশন।
এবার নির্বাচনে প্রার্থীপিছু খরচের পরিমাণ বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগের নির্বাচনে প্রার্থী পিছু খরচের টাকা ধার্য্য ছিল ২৮ লক্ষ টাকা। এবারের নির্বাচনে সেটা বাড়িয়ে ৩০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনেও খরচের উর্দ্ধসীমা ৭০ লক্ষ টাকার থেকে বাড়িয়ে ৭৭ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। বদল করা হয়েছে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার নিয়মও । আগে প্রার্থীর সঙ্গে ৪জন যেতে পারতেন মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময়। প্রার্থীর সঙ্গে থাকতে পারতেন ৪জন। এবার প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় সর্বাধিক ২জন থাকতে পারবেন এবং দুটো গাড়ি ব্যবহার করা যাবে। মূলত করোনা বিধি মেনে ভোট করতে গিয়েই জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে এই সমস্ত বিধি কার্যকর করতে হচ্ছে। তবে বুথ সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সব বুথ একতলায় হওয়া এবং বুথে ভোটারদের প্রবেশ ও নির্গমনের আলাদা পথ রাখার নির্দেশ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে জেলা প্রশাসন। কারণ এই রাজ্যে স্কুলগুলোর একতলা, দোতলা , তিনতলা যেখানে যেমন ব্যবস্থা সেভাবেই এতকাল ভোটের বুথ হয়েছে। ক্লাবেও বুথ হয়েছে। বুথে প্রবেশ ও নির্গমনের জন্য ভোটারদের একই পথ ব্যবহার করতে হয়েছে। তাই করোনা পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশ কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে ভোট পরিচলনায় কমিশনের নির্দেশ পালনে কোনও গাফিলতি করা যাবে না বলে কমিশন জেলা প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।