ব্যস্ততা বেড়েছে লালুভুলুদের নিয়ে : ড. অভিজিৎ চক্রবর্তী

সল্টলেকে সিই ব্লকে তিন তলা বিশাল বাড়ি। নিজের ঘরে কিছুকাল আগেও ছিল চারটি কুকুর। এর তিনটি একে একে মারা গিয়েছে। এখন আছে খালি জোজো। ছাদে আছে আরও চারটি। কারও পা নেই, কেউ চোখে দেখেনা– এক কথায় প্রতিবন্ধী। এ কুকুরগুলি কিন্তু কোনওটা বিদেশি বা উঁচু প্রজাতির নয়। একেবারেই রাস্তার লালু ভুলু। এ রকম অন্তত পৌনে দু’শ বেওয়ারিশ কুকুরকে সন্তানস্নেহে পালন করেন অধ্যাপক ড. অভিজিৎ চক্রবর্তী( Dr. Abhijit Chakraborty )। লকডাউনের জেরে সংখ্যাটা আরও শখানেক বেড়েছে। এক অদ্ভুত মানুষ দেশের অন্যতম অগ্রণী প্রযুক্তি-গবেষক তথা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এই বরিষ্ঠ অধ্যাপক। দুই পর্যায়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পশ্চিমবঙ্গ(west bengal) উচ্চ শিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভৃতি বিভিন্ন পদে বেশ কিছুকাল কাটিয়েছেন। বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের প্রাক্তনী অভিজিৎবাবু কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বাণিজ্যিক সংস্থা। একাধিক নামী সংস্থায় বছর সাত কাজ করার পর ৯০-এর দশকের গোড়ায় আসেন শিক্ষকতায়।  হিন্দুস্থান  সমাচার-কে জানান, “তখন থেকেই আমার এই সারমেয় প্রেম। যত দিন গিয়েছে, বেড়েছে ওদের প্রতি ভালবাসা।” অভিজিৎবাবুর দিনলিপি ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠে প্রায় আড়াই, তিন ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে পড়াশোনা, গবেষণা। নিজের কথায় , “তার পর সকাল সাতটা থেকে ন’টা বাড়ির পাঁচটি কুকুরের পরিচর্যা। পাড়ায় আশপাশে প্রায় ৩৫ টি কুকুর আছে। তাদের খাওয়ানোর পালা চলে কেবল সকালে নয় বিকেলেও। কলেজ মানে শিবপুরের আইআইইএসটি-তে ঢোকামাত্র আমাকে ঘিরে ধরে ৪০ – ৫০ টি কুকুর। ওদের জন্য বাড়ি থেকে রান্না করিয়ে নিয়ে যাই। লকডাউনে দিনলিপির পরিবর্তন কতটা হল? কলেজ বন্ধ।সময় পেলে গান শুনি – রবীন্দ্র সংগীত, পুরনো আধুনিক।প্রতি দিনের কাজগুলো তদারকি করতে হয়।“অভিজিৎবাবু এ কথা জানিয়ে বলেন, সল্টলেকের বিভিন্ন রাস্তার প্রায় ১৭৫ বেওয়ারিশ কুকুরকে রোজ রান্না করা খাবার খাওয়ানো। ওদের খাবার পরিবেশনের জন্য দু’জন লোক রেখেছি।এছাড়াও এদের কারও কোনও অসুখ হলে তার দায়টাও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে অনেকটা নিজেই নিই। ছোটখাটো অসুখ হলে আমি সারিয়ে দিতে পারি। বড় কিছু হলে নিয়ে যেতে হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা চিকিৎসকের কাছে। ওদের প্রতিষেধক, নির্বীজকরণের পিছনে সময় দিতে হয়। লকডাউনে এখন তো আমার দায়িত্ব বেড়েছে। অভিজিৎবাবু বলেন, “আইআইইএসটি-র ভেতর বা আশপাশে অন্তত দেড়শ কুকুর রয়েছে।এখন তো কলেজ বন্ধ। এ কারণে ক্যান্টিন ও গেটের পাশের দোকানগুলিও বন্ধ। কুকুরগুলো খাবার পাবে কোথা থেকে?তাই শিবপুরের প্রায় দেড়শ, সল্টলেকের পৌনে দু’শ এবং বাড়ির এইসব কুকুরের দু’বেলা খাবার আর তদারকির দায়িত্ব এসে বর্তেছে। কী খাওয়ান কুকুরদের? অভিজিৎবাবুর জবাব, “প্রত্যেককে মাংস-ভাত. স্ত্রীর কোনও আপত্তি থাকে না?” না। বরং সুযোগ হলে ও নিজেও দু একটা জায়গায় আমার সঙ্গে যায়। ছেলে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকে সেখানে ইঞ্জিনিয়ার। ওর জন্যও চিন্তা হয়। কারণ ওখানেও করোনা ছোবল মেরেছে মারাত্মকভাবে. কতদিন ধরে চলতে পারি দশা? উত্তরে অভিজিত বাবু বলেন চারিদিকে যা দেখছি ও শুনছি তাতে মনে হয় না চট করে এটা কমে যাবে। থার্ড ষ্টেজে ঢুকে গেলে আমাদের ভারতের মত দেশে যে কী যে হবে! আর অর্থনীতির বেহাল দশা হবে। কতটা বেহাল হবে। তার উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.