শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার মামলার রায় জানাবে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এই রায় ঘোষণা করবেন বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্যে শেষ দফার ভোটের মুখে এই মামলার রায় রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পর্যবেক্ষকদের মতে, যদি আদালত রাজীবকে সিবিআই হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় তা হলে ভোটের আগে বিজেপি-র হাতিয়ার হবে। অন্যদিকে তা যদি না হয়, তাহলে নৈতিক জয় হবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল সিবিআই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই রাজীবকে শিলং-এ গিয়ে সিবিআই-এর জেরার মুখোমুখি হতে হয়। তারপর দীর্ঘ শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। সেই শুনানিতে সিবিআই রাজীবকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আবেদন জানায়। পাল্টা রাজীবের তরফে বলা হয়, সিবিআই যা কর ছে সবটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গত ২ মে রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে বুধবার বিকেলে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালেই রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। কালকেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, সিবিআই রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে পারবে কি না।
এখন সুপ্রিম কোর্টে গ্রীস্মকালীন ছুটি চলছে। ২ মে যখন রায়দান স্থগিত করল দেশের শীর্ষ আদালত, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন ভোটের মধ্যে আর এই মামলা নিয়ে নাড়াচাড়া হবে না। কিন্তু এ দিন জানা গিয়েছে এই মামলার গুরুত্ব বুঝেই কাল রায় দেবে আদালত।
সিবিআই-এর অনেকগুলি অভিযোগ রয়েছে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। এক, এসআইটি-র প্রধান থাকার সময় তিনি প্রচুর তথ্য প্রমাণ লোপাট করেছেন। দুই, সিবিআই ফোনের কথোপকথনের যে কল রেকর্ড চেয়েছিল, তা বিকৃত করে দেওয়া হয়েছিল। তিন, টানা পাঁচ দিন শিলং-এ জেরায় রাজীব কুমার হয় প্রশ্নের উত্তর দেননি, নয়তো এড়িয়ে গিয়েছেন। তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা আর্জি জানিয়েছিলেন, রাজীবকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। না হলে বাংলার চিটফান্ড কেলেঙ্কারির উৎসে যাওয়া যাবে না।
পাল্টা রাজীবের পক্ষে আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং বলেন, রাজনৈতিক কারণেই ফাঁসানো হচ্ছে রাজীবকে। হলফনামা, পাল্টা হলফনামায় রাজীবের তরফে মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ফোনের কথাও বলা হয়। রাজীবের আইনজীবীরা দাবি করেন, শিলং-এর ভিডিও ফুটেজ দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে রাজীব তদন্তে সহায়তা করেছেন কি করেননি।
আদালতে সওয়াল করার পাশাপাশি সিবিআইয়ের তরফে সুপ্রিম কোর্টে চারটি মুখবন্ধ খাম পেশ করা হয়েছিল। তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগের সপক্ষে সিবিআইয়ের থেকে অকাট্য এবং সন্তোষজনক প্রমাণ চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার জবাবেই ওই মুখবন্ধ খামগুলি আদালতে পেশ করেছিল সিবিআই। সেখান সিবিআই অবশ্য কী দাবি করেছে, তা প্রকাশ্যে আসেনি।
বুধবার সন্ধেবেলা নির্বাচন কমিশন এডিজি সিআইডি পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দেয়। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপোর্ট করতে। এ দিন দুপুরেই দিল্লি পৌঁছেছেন এই আইপিএস। শুক্রবার সকালে তাঁর মামলার রায়। এখন দেখার কী রায় দেয় দেশের শীর্ষ আদালত।