ফোনে আড়িপাতাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। আড়িপাতাকাণ্ডে রাজ্য যে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল, তার উপর স্থগিতাদেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
ইতিমধ্যেই আড়িপাতাকাণ্ডে তদন্তের জন্য বিশেষ দল বা সিট গঠন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তিন সদস্যর এই প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। তারা তদন্ত করছে। সেখানে আবার সমান্তরালভাবে রাজ্যের তদন্তের কোনও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে না সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনার বেঞ্চ। শুক্রবার বিষয়টি স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবারই আদালতে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টে না করার পরও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গঠিত কমিশন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, রাজ্য শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছিল সমান্তরাল কোনও তদন্ত চালানো হবে না। এরপরই ২৪ ঘণ্টা সময় চায় রাজ্য। শুক্রবার ফের মামলার শুনানি চলাকালীন রাজ্যের কৌঁসুলি হাজির হলেও এতে উষ্মা প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই লোকুর কমিশনের তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
গত জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন লোকুরের নেতৃত্বে দুই সদস্যর তদন্ত কমিশন গঠন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ফোনে আড়িপাতা ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের হয়। অগস্টে রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনুসিংভি শীর্ষ আদালতে জানান, বিষয়টি আইনি ফয়সলা হওয়ার আগে লকুর কমিশন আর এগোবে না।
অক্টোবরে এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। যদিও লোকুর কমিশনের সামনে ইতিমধ্যেই অনেকে সাক্ষ্য দিয়েছেন বলেই সূত্রের খবর। একাধিক ব্যক্তিত্বকে হাজিরা দিতে কমিশন নোটিসও পাঠিয়েছে বলে খবর। সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়ায় আরও একটি সমান্তরাল তদন্ত কমিশনের কাজে স্থগিতাদেশ চেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় শুক্রবার প্রধান বিচারপতি লোকুর কমিশনের সমস্ত কাজে স্থগিতাদেশ দিল।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “বিধানসভায় এরা মনে করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, তাই ভারতের সংবিধান, ভারতের আইনকানুন এসবের তোয়াক্কা করার দরকার নেই। পুরো রাজ্যটাই চলে মমতা-আইনের উপরে। এই আড়িপাতাকাণ্ডে ওরা নিজে থেকেই বলে দিল তদন্ত করবে। আসল লক্ষ্য ওদের ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথার উপর যে সমস্ত খাঁড়া ঝুলছে, সিবিআই ইডি ইত্যাদি সেগুলির একটা রক্ষা কবচ পাওয়া। আড়িপাতাকাণ্ডে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করে সেটা হাসিলের চেষ্টা করছিল। ভারতে একটা আইন ব্যবস্থা আছে। মমতা-আইনে তা চলতে পারে না। এই শিক্ষাটা নেওয়া দরকার।”
এর আগেই রাজ্যের কমিশন গঠন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি উঠলে রাজ্যকে ‘ধৈর্য ধরার’ পরামর্শ দেয় প্রধান বিচারপতি এনভি রমনার ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের তরফে প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবী, সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি জানান, আদালতের বার্তা তিনি সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন। সে সময়ই রাজ্য সরকারের স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গঠিত এই তদন্ত কমিশনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল ‘গ্লোবাল ভিলেজ ফাউন্ডেশন’ নামক একটি সংগঠন।
মামলাকারীর আইনজীবী হরিশ সালভে সে সময়ই দাবি করেছিলেন, যখন সুপ্রিম কোর্ট গোটা বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, তখন কোনও ‘সমান্তরাল তদন্ত’ চলতে পারে না। তথ্য প্রযুক্তির বিষয়টি যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, তাই এমন তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার কোনও এক্তিয়ারও রাজ্যের নেই বলেই দাবি করা হয়। এরপরই কমিশন কাজ করছিল বলেই অভিযোগ ওঠে। শুক্রবার কমিশনের সমস্ত কাজেই স্থগিতাদেশ দিল শীর্ষ আদালত।