ম্যানগ্রোভের অভিযোজন এবং ব্যাপক হারে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হওয়ায় সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র বদলে যেতে বসেছে। খাদ্য-খাদক সকলেরই বিপদ ঘনিয়ে আসছে।
সঙ্কটে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও। পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশে বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের পৃথিবীর বুক থেকে মুছে যাওয়ার অর্থ বহু দুস্প্রাপ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির সঙ্গে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেবে ভীষণ সুন্দর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও। ধ্বংস হবে বাঘেদের বাসস্থান। এই অশনি সংকেতের ইঙ্গিত দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনল ইউনিয়ন ফর কনসার্ভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)। ভারত মহাসাগরের উত্তর উপকূলে অবস্থিত এই ব-দ্বীপের ম্যানগ্রোভ অরণ্যেই রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম বাঘ পপুলেশন।
প্রতিদিন যে হারে গাছ কাটা হয়, তার ফলে ঝড়ের আঘাত এবার সরাসরি জনবসতিতে পড়তে শুরু করেছে ৷ ফলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করেন উপকূলের বাসিন্দারা। এর মধ্যেই আবর্তিত হয়েছে সুন্দরবনের বাঁধজনিত জটিলতা। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনে গিয়ে বলেন, “দরিদ্ররা যেন ঠিকমতো ত্রাণ পায়, দেখতে হবে। কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।’’ কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারাই যে প্রতিদিন একটু একটু করে সুন্দরবনকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিচ্ছেন, এই রূঢ় বাস্তবটা আমরা দেখিনা। বা দেখলেও না বোঝার ভান করি। যেহেতু ওরা ভোটদাতা। বছরভর গাছ কেটে সাফ করে দিক ক্ষতি নেই, ভোটব্যাঙ্ক যেন অটুট থাকে। ম্যানগ্রোভ ধ্বংসে শুধুমাত্র যে উপকূল এলাকারই ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, বিপন্ন হচ্ছে পারশে, তোপসে, গুর্জালি, ট্যাংরা, খোলসে, ফলুইয়ের মতো বহু প্রজাতির দেশিয় মাছ৷ ওই এলাকায় মীন ধরতে গিয়ে শুধুমাত্র যে বাগদার মীনই ধরা হচ্ছে তাই নয়, নির্বিচারে ধরা পড়ছে দেশিয় ওই প্রজাতিগুলির মাছের চারাও৷ মানুষের এই কাজ-কারবারে ক্রমশ ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা দেশিয় এই মাছগুলি৷
সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সতীনাথ পাত্র জানান, গোসাবা , কুলতলি, ঝড়খালি, রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা, দুর্বাচটির মতো এলাকাগুলিতে ডিঙি নৌকা ব্যবহার করে মাছ এবং মীন ধরার ওপর নির্ভরশীল প্রায় এক লক্ষ প্রান্তিক মানুষ৷ তিনি জানান, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে সেই প্রবণতা অনেকটাই কমবে বলে মনে করেন তিনি৷ একই সঙ্গে বড় ট্রলারদের উপরও কিছু বিধিনিষেধ জারি এবং মৎস্যজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন তিনি৷
2021-05-30