কলকাতার তাপমাত্রা আজ কত জানেন? ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। না, তাপমাত্রার পারদে নয়। তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু রিয়্যালফিলের পারদ এতটাই বেশি বলছে। ঠিক যেমন গত কাল, নতুন বাংলা বছরের পয়লা দিনে তাপমাত্রা ৩৫.৬ ডিগ্রি থাকলেও, রিয়্যালফিলে তা দেখিয়েছিল ৪৮! ফলে যতটা না তীব্র গরম, তার চেয়ে অনেক বেশি নাজেহাল হচ্ছে মানুষ।
কিন্তু এই রিয়্যালফিল আসলে কী?
আবহবিদেরা বলছেন, তাপমাত্রার সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা অর্থাৎ জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকার ফলে, মানুষের অস্বস্তি যতটা হওয়ার কথা, তার চেয়ে আরও বেশি করে হয়। যন্ত্রে ধরা পড়া তাপমাত্রার চেয়েও বেশি জ্বালাপোড়া অনুভব করে মানুষ। সেটার যে আগাম হিসেব, অর্থাৎ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মিশেলে গরমের যে অনুভূতি সাধারণ মানুষের মধ্যে হয়, সেটাই রিয়্যালফিল।
এ সবের মধ্যেই গত কাল উদযাপনে আনন্দ সঙ্গে নিয়ে এসে পড়েছে বাংলার নতুন বছর। সঙ্গে করে যেন নিয়ে এসেছে গরমের তুমুল হলকা। আনুষ্ঠানিক ভাবে পয়লা বৈশাখ থেকে গ্রীষ্মকাল শুরু হতেই স্বমূর্তি ধারণ করল প্রকৃতি। কাল থেকেই প্রচণ্ড দাপটের সঙ্গে মাঠে নেমেছে গ্রীষ্ম। ভোর থেকে বেলা দশটা-এগারোটা পর্যন্ত কাজকর্ম সারতে পথে বেরোনো যাচ্ছে। কিন্তু তার পরে যেন নেহাৎ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো কার্যত অসম্ভব ব্যাপার! প্রবল রোদ্দুরের তাপে, ঘামে, ক্লান্তিতে নাভিশ্বাস উঠছে শহরের।আবহায়া দফতর সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু রিয়্যালফিলে সেই তাপমাত্রা ঠেকেছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সঙ্গে অস্বাভাবিক আর্দ্রতা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, মরসুমের উষ্ণতম দিনটি সাধারণত এপ্রিল মাসেই হয়ে থাকে। সেই হিসেবে এখনই আসল গরমের সময়। এবং কলকাতা যেহেতু উপকূলবর্তী এলাকা, তাই এখানকার আর্দ্রতাও অনেক বেশি। ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় অস্বস্তি আরও বেশি করে হয়। উষ্ণতার পারদ ৩৬ ডিগ্রি থাকলেও, ৪০ ডিগ্রি বা তারও বেশি তাপমাত্রার অনুভূতি হয়। মঙ্গলবারও কলকাতায় তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি। রিয়্যালফিল সেটাই বলছে ৪৫।এই অবস্থায় দু’দিন বৃষ্টি হয়নি শহরে। ফলে সব মিলিয়ে কষ্ট বাড়ছে গরমে। রাস্তাঘাটে নাজেহাল হচ্ছেন মানুষ। তবে অধিকর্তার আশ্বাস, কালবৈশাখীর সব রকম উপকরণ মজুত আছে বাতাসে। মঙ্গলবার যদি না-ও হয়, তা হলেও বুধ বা বৃহস্পতিবার শহরে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গরম থেকে সামান্য নিস্তার মিলবে বলে আশা জুগিয়েছেন তিনি।
এর মধ্যেই আবার প্রশান্ত মহাসাগরে দানা বাঁধছে ঘূর্ণিঝড় ‘এল নিনো’। তাই দেখে আবহবিদদের আশ্বাস, এই বছর স্বাভাবিকের ৯৬% বৃষ্টি পাবে দেশ। মরসুম জুড়ে অতিবর্ষণের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে এই আভাস গোটা দেশের নিরিখে হওয়ায়, আঞ্চলিক ফারাক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যার অর্থ, কোথাও বন্যা হতে পারে, কোথাও খরা। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ‘এল নিনো’ আপাতত দুর্বল স্তরে রয়েছে। বর্ষার শুরুতেও তার উপস্থিতি থাকবে। তবে বর্ষার দ্বিতীয় ভাগে ‘এল নিনো’র প্রভাব ক্রমশ কমবে।
তবে সে যা-ই হোক, আপাতত গরমের দাপটে নাকাল শুধু শহরবাসী নয়, গোটা রাজ্যবাসী। আবহবিদেরা অবশ্য সান্ত্বনার সুরে বলছেন, বর্ষা ভালো হওয়ার পিছনে তাপমাত্রার বৃদ্ধিও জরুরি। সে সান্ত্বনায় অবশ্য মোটেও ভুলছেন না গরমে নাজেহাল মানুষ।
এ দিন দেশের উষ্ণতম স্থান ছিল বিদর্ভের চন্দ্রপুর (৪৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। দিল্লির তাপমাত্রাও চল্লিশ ছুঁয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তাপপ্রবাহ প্রায় থাবা বসিয়ে ফেলেছে বাঁকুড়ায়। নববর্ষের প্রথম দিন সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৪৩.৩ ডিগ্রি, যা স্বাভাবিকের চেয়ে চার ডিগ্রি বেশি। আবহবিদেরা বলছেন, আর এক ডিগ্রি বেশি হলেই শুরু হয়ে যাবে তাপপ্রবাহ। তীব্র সেই দাবদাহে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
আসানসোলে এ দিন তাপমাত্রা ছিল ৪০.৮ ডিগ্রি। কলকাতায় এখনও দহন তুলনামূলক কম থাকলেও, নাকাল করে ছেড়েছে আর্দ্রতা। আপাতত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়াই থাকবে। মঙ্গলবার চড়া গরমের পরে বুধবার বা তার পরে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।