শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়ার আগের অধ্যায় মনে পড়ে?
অন্তত টানা পনেরো দিন ধরে কাকলি ঘোষদস্তিদার, কুণাল ঘোষ-সহ তৃণমূলের মুখপাত্ররা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, শুভেন্দু দলের বিশিষ্ট নেতা। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির সদস্য এবং মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দফতরের মন্ত্রী।
শুভেন্দু দল ছাড়তেই সেই বিশেষণ বদলে যায়। আর এখন দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভা থেকে বলছেন, শুভেন্দু অধিকারী ঘুষখোর। এও বলেছেন, টিভিতে তাঁকেই দেখা গিয়েছিল টাকা নিতে।
এ হেন সমালোচনার মুখে পড়ে সোমবার এই প্রথম, ২ ডিসেম্বর শ্যামবাজারের মিটিংয়ের কথা ফাঁস করে দিয়ে অভিষেককে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইলেন শুভেন্দু।
শুভেন্দুকে তৃণমূলে ধরে রাখতে সে দিন মরিয়া চেষ্টা দেখা গিয়েছিল শাসক দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে। শ্যামবাজারে জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌগত রায়। শুভেন্দুর দাবি, সেই মিটিংয়ে প্রশান্ত কিশোর ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকার কথা ছিল না। কিন্তু তিনি পৌঁছে দেখেন, তাঁরাও বসে রয়েছেন।
এদিন তমলুকের সভায় অভিষেকের নাম না করে শুভেন্দু বলেন, “শুধু বড় বড় কথা। ১০ বছর মধু খেয়েছি না? তা হলে ২ ডিসেম্বর শ্যামবাজারে ক্যাবলার বাড়িতে আমার হাত পা ধরেছিলিস কেন?” তাঁর কথায়, “আমি সচরাচর তুই-তোকারি করি না। বন্ধুদেরও তুমি বলি। কিন্তু এর ভাষা শুনেছেন। আমি ওর থেকে ১৮ বছরের বড়।”
রবিবার শুভেন্দুর সমালোচনা করতে গিয়ে ‘তুই’ বলেছিলেন অভিষেক। সেই প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেন, “আরে ঝাড়ে তো একই বাঁশ হবে। মাননীয়া মোদিজিকে তুই তোকারি-করছেন।”
শ্যামবাজারের মিটিংয়ের কথা এর আগে কখনও প্রকাশ্যে বলেননি শুভেন্দু। বরং তাঁর বক্তব্য ছিল, দলের মধ্যে মিটিং বাইরে বলা শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে না। তবে সৌগত রায় ওই বৈঠকের অনেক কথাই বাইরে বলছিলেন। এমনকি কী কী খাওয়াদাওয়া হয়েছে তাও বলছিলেন। শুভেন্দু এদিন বোঝাতে চান, তাঁকে দলে ধরে রাখতে তাঁর হাতে পায়ে ধরা হয়েছিল।
শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ওই বৈঠকের আগেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে তাঁর সমালোচনা করেছিলেন। সেই সঙ্গে ডায়মন্ডহারবারের সভা থেকেও তাঁর উদ্দেশে নানারকম বলা হয়েছিল। কিন্তু সে সব যে ভুল হয়েছিল তাও ওই বৈঠকে স্বীকার করে নেওয়া হয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এ কথা বলে তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছেন শুভেন্দু। তিনি তোলাবাজ ও ঘুষখোর জেনেও কেন তাঁকে মন্ত্রিসভায়, দলের নীতি নির্ধারক কমিটিতে রাখা হয়েছিল, সেটা বিষ্ময়ের বিষয় নয় কি! কারণ, এমন নেতাকে তো তা হলে অনেক আগেই বহিষ্কার করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে কেনই বা তাঁকে বিশিষ্ট নেতা বলে ধারাবাহিক ভাবে বলা হয়েছিল, তার ব্যাখ্যাও তা হলে দেওয়া হোক।
নারদা স্টিং অপারেশনের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দুকে ঘুষখোর বলেছেন অভিষেক। এদিন তার জবাবে শুভেন্দু বলেন, “আচ্ছা তোলাবাজ ভাইপো তোমার জ্যাঠামশাই সুব্রত মুখার্জি, মেজো জ্যাঠামশাই সৌগত রায়, কাকু ববি হাকিম, পিসিমণি কাকলি ঘোষদস্তিদারের কী হবে? তাঁদেরও তো ক্যামেরায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল।” শুভেন্দু অভিযোগ করেন, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কেডি সিংয়ের টাকায় নারদা স্টিং অপারেশন হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যেও ছিলেন ‘ভাইপো’।
এখানেই থামেননি নবাগত বিজেপি নেতা। তিনি জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই ডায়মন্ডহারবারে সভা করে আরও তথ্য ফাঁস করবেন তিনি।